Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বোতল ভূত হাতছাড়া

বোতল ভূত হাতছাড়া হওয়ায় আমাদের বাড়ির সবাই খুব খুশি। বড়চাচা বললেন, বাঁচা গেল, আপদ বিদায় হয়েছে। আমার বাবা বললেন, এইসব আজেবাজে। জিনিস বাড়িতে না থাকাই ভালো। অরু আপা মুখ ধাঁকা করে বললেন, একটা কুসংস্কার বাড়ি থেকে গেছে, এটা একটা সুসংবাদ।

আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেল। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে রোজ একবার করে বলি, ও ভাই বোতল ভূত, ফিরে এসো। বগা ভাইয়ের হাত থেকে তোমাকে উদ্ধার করার ক্ষমতা আমার নেই। তুমি দয়া করে নিজে নিজেই চলে এসো।

ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই মনে হয় বোতল ভূত হয়তো নিজে নিজেই চলে এসেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করি, কিছু নেই।

এদিকে বগা ভাইয়ের উপদ্রপ খুব বেড়েছে। রয়েল বেঙ্গল ক্লাবের যাকেই সে দেখে তার কপালে অনেক যন্ত্রণা। একদিন মুনিরকে ধরে ধোলাই দিয়ে দিল। বেচারা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল–বগা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। বগা ভাই হোত ইশারা করে ডাকল। মুনির না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে–বগা ভাই দৌড়ে এসে শার্টের কলার চেপে ধরল। কড়া গলায় বলল, কী, চোখে দেখতে পাস না? চড় খেতে কেমন মজা দেখবি? এই দেখ।

শুধু শুধু মারছেন কেন? ইচ্ছে হচ্ছে মারছি। মেরে ভর্তা বানিয়ে দেব–আলু ভর্তা।

এই বলে মনিরের হাত থেকে অংক বই টেনে নিয়ে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলল। মুনির কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরল।

আমিও একদিন ধরা পড়লাম। আমার সাথে তোতলা রঞ্জু। আমাদের ক্লাসে তিনজন রঞ্জু। এদের একজন শুধু রঞ্জু, অন্য দুজনের একজন তোতলা রঞ্জু, অন্যজন মাথামোটা রঞ্জু। মাথামোটা রঞ্জুর মাথাটা শবীরের তুলনায় বড় আর তোতলা রঞ্জু ভয় পেলে তোতলাতে শুরু করে।

বগা ভাইকে দেখে তার তোতলামি শুরু হয়ে গেল। বগা ভাই বলল, তারপর কী খবর?

আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, ভালো খবর।

কী রকম ভালো খবর, এখন টের পাবি। কানে ধরে একশ বাব উঠবোস কর।

তোতলা রঞ্জু সঙ্গে সঙ্গে উঠবস শুরু করল। আমি ক্ষীণ স্বাবে বললাম, কেন?

আবার মুখেমুখে কথা? সাহস বেশি হয়ে গেছে? এমন ধোলাই দেব যে দুইয়েব ঘবেব নামতা ভুলে যাবি। এখন আর সঙ্গে বোতল ভূত নেই যে বেঁচে যাবি।

আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে উঠবোস শুরু কবলাম। কী দরকার ঝামেলা কবে। কীনে ধরে উঠবোস করতে তো আর খুব কষ্ট হয় না, শুধু একটু লজ্জা।

বগা ভাই বলল, বোতল ভূত ফেরত চাস? যদি ফেবত চাস তাহলে দুশ উঠবোস করতে হবে।

দুশ বার করলে ফেরত দেবে?

ভুঁ। সেই সঙ্গে পঞ্চাশটা টাকা দিতে হবে। নাগাদ কারবার।

টাকা পাব কোথায়?

আমি তার কী জানি? টাকা নিয়ে আয়, বোতল ফেবত পাবি। এই যন্ত্রণাব বোতল ফেরত দিয়ে দেব। ভূত দিয়ে আমার দরকার নেই, আমি নিজেই ভৃত।

পঞ্চাশ টাকা জোগাড় করতে কী যে কষ্ট হলো। বযেল বেঙ্গল ফুটবল ক্লাবেব সবাই চাঁদা দিল। বড়চাচার কাছে কান্নাকাটি কবে পেলাম পাঁচ টাকা। বাবা দিলেন দশ টাকা। তবু দুটাকা কম পড়ল। সেটা অরু আপা দিয়ে দিলেন। টাকা পকেটে নিয়ে বোতল ভূত ফেরত আনতে গেলাম। সঙ্গে নিলাম মুনিরকে।

পোস্টাপিসের সামনের বট গাছেব নিচে বগা ভাই তার দুই বন্ধুকে নিয়ে আছে। আমি এবং মুনির ভয়ে ভয়ে উপস্থিত হলাম। বগা ভাই বলল, টাকা এনেছিস?

হুঁ।

বের কর।

দিলাম টাকা। বগা ভাই খুব সাবধানে দুবার গুণল। টাকাটা পকেটে রেখে থমথমে গলায় বলল, দাঁড়িয়ে আছিস কেন, বাড়ি চলে যা।

বোতল ভূত ফেরত দাও।

কথা বললে চড় খাবি। চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব।

বোতল ভূত ফেরত দেবে না, তাহলে টাকা নিলে কেন?

এটা হচ্ছে তোর ভূত পোষার খরচ। যা এখন। একটা কথা বলবি তো শিয়ালের শিং দেখিয়ে দেব। শিয়ালের শিং কখনো দেখেছিস?

টাকা ফেরত দাও।

আরে, আবার টাকা ফেরত চায়! শখ তো কম না।

বগা ভাই উঠে এসে একটা চড় বসিয়ে দিল। আমি চোখে অন্ধকার দেখলাম। মুনির বলল, আমি স্যারদের বলব।

যা বলে আয়। দাঁড়িয়ে আছিস কেন, যা।

বলতে বলতে বগা ভাই মুনিবের পেটে একটা ঘুসি দিল। মুনির কোঁক করে একটা শব্দ করে পেটে হাত দিয়ে বসে পড়ল।

দুজনে এবার গলা জড়াজড়ি করে কাঁদতে থাক। আমরা চললাম।

আমি এবং মুনির অনেকক্ষণ বসে রইলাম। তারপর বাড়ির দিকে রওনা হলাম।

দুজনই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরছি, তখনই মজার ব্যাপারটা ঘটল। চোখ মোছার রুমালের খোঁজে পকেটে হাত দিতেই হাতে ঠাণ্ডা কী যেন লাগল। বের কবে দেখি বোতল ভূত। সে চলে এসেছে।

আমি এবং মুনিব দুজনেই গলা জড়াজড়ি করে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। এবারের কান্না সুখের কান্না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress