আনন্দের আর সীমা নেই
আমাদের আনন্দের এখন আর সীমা নেই।
বড়চাচার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। আনন্দের প্রকাশ কী ধরনের হলে ভালো হবে, বুঝতে পারছি না। কী করা যায়? মুনির বলল, আমাদের ফুটবল ক্লাব ঠিকঠাক করে একটা ম্যাচ দিয়ে দিলে কেমন হয়?
আমি বললাম, অতি উত্তম হয়।
আমাদের ফুটবল ক্লাবেব নাম হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল ফুটবল ক্লাব। দুবছর আগে আমরা ফুটবল ক্লাব গঠন করি। প্রথম বৎসর আমাদের কোনো বল ছিল না। কী করব, চাঁদ উঠেছে মাত্র আঠার টাকা। সেই আঠাব টাকায় আমরা একটা ফুটবল পাম্প কিনি। আমাদের কাণ্ড দেখে অরু, আপা হেসে বাঁচে না। একটা ছড়া বানিয়ে ফেলল
বল নেই আছে পাম্পার
সার্ট নেই আছে জাম্পার।
যাই হোক, পরের বৎসর আমরা দুই নম্বরি একটা বল কিনলাম। পাড়াতে আরো তিনটে ফুটবল ক্লাব আছে। ওদের সঙ্গে ম্যাচ দিলাম। এই শুনে অরু আপা ঠোঁট উল্টে বলল, একেকজন চামচিকার মতো, তোরা ফুটবল খেলবি কী? বাতাস লাগলে উল্টে পড়ে যাস। এক কাজ করা, তোদের ক্লাবের নাম দিয়ে দে–দি রয়েল চামচিকা ক্লাব।
রাগে আমাদের গা জ্বলে গেল। ভাবলাম, এমন খেলা দেখাব যে অরু আপা ট্যারা হয়ে যাবে। হলো উল্টোটা–আমরা ট্যাবা হয়ে গেলাম। একেকটা খেলা হয়, আমরা দশটাবারোটা করে গোল খাই।
তবে এবার যাতে এরকম না হয় সে চেষ্টা অবশ্যই করব।
আমাদের কাজকর্ম শুরু হয়ে গেল। ম্যাচ দিয়ে দিলাম। বিরাট উত্তেজনা আমাদেব মধ্যে। অরু আপা সব শুনে হাসতে হাসতে বলল, দি রয়েল চামচিকা ক্লাব নাকি ম্যাচ দিয়েছে। তোদের লজ্জা-শরমও নেই নাকি?
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, যখন চ্যাম্পিযন হব, তখন বুঝবে কাকে বলে চামচিকা ক্লাব।
তোরা চ্যাম্পিয়ন হবি? খোড়া চালাবে বাইসাইকেল?
হ্যাঁ চালাব।
যদি চ্যাম্পিযন হতে পাবিস, তাহলে আমি আমার মাথাব্য চুল কেটে ফেলব। সত্যি বলছি।
এই বলে মাথাভর্তি চুল ঝাকাতে ঝাকাতে অরু আপা চলে গেল। আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম। আমাদের দলটা হচ্ছে সবচে খারাপ। আমরা যে লাডডা-গুড়া হব, এটা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। নান্টু হচ্ছে আমাদের গোলকিপার। এম্নিতে সে চোখে খুব ভালো দেখে, কিন্তু যখন বল গোলের দিকে আসে–তখন নাকি সব অন্ধকার হয়ে যায়। চোখে কিছু দেখে না। আসলেই তাই। বল একদিকে আসে, সে অন্যদিকে ডাইভ দেয়।
আমাদের ব্যাকে খেলে পরিমল। বল তার পায়ে আসতেই সে হোঁচটি খেয়ে পড়ে যায়। কেন এরকম হয় কে জানে! শুকনো খটখটে মাঠ। পা পিছলানোর কোনো কথা নয়, অথচ পরিমলের কাছে বল যেতেই হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে যাবে।
আমরাও একই রকম, শুধু টগর খুব ভালো খেলে। ও হচ্ছে আমাদের স্ট্রাইকার। কোনোমতে ওর কাছে বল পৌঁছে দিলে গোলে বল ঢোকাবেই। একজনের ওপর ভরসা করে কি চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়? যায় না। ফুটবল হলো এগার জনের খেলা। তবু আমরা মন্দ করলাম না। গ্ৰীন বয়েজ ক্লাবের সঙ্গে এক গোলে জিতলাম। টগর একবার মাত্র বল পেয়েছিল। সেটা দিয়ে গোল করেছে। অরুণিমা ক্লাবের সঙ্গে ড্র হলো চার-চার গোলে। আমাদের দিকের চারটা গোলই করেছে টগর। এবং আশ্চর্যের ব্যাপার, আমরা শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠে গেলাম। অরু আপার মুখ শুকিয়ে গেল। যদি সত্যি সত্যি জিতে যাই, তাহলে মাথাভর্তি চুল কাটতে হবে।
ফাইনাল খেলার দিন শহরে সাজ-সজ রব পড়ে গেল। আমাদের পাড়ায় একজন নেতা আছেন। তিনি শুধু ইলেকশন করেন। আর ফেল কবেন। তাঁর নাম মতিন সাহেব। তিনি ফাইনাল খেলার দিন ভোরবেলা একটা শিন্ড ঘোষণা করে দিলেন–সেই সঙ্গে ফাইনাল খেলা যাতে ঠিকমতো হয় সে জন্য তিন শটাকা চাঁদা দিলেন। নিজেই মাইকের ব্যবস্থা করে দিলেন। সকাল থেকে রিকশা করে মাইক বাজতে থাকল
ভাইসব, আদ্য বৈকাল চার ঘটিকায় আব্দুল মতিন ফুটবল শিন্ডের ফাইনাল খেলা। রয়েল বেঙ্গল বয়েজ ক্লাব একাদশ বনাম বুলেট একাদশ। উদ্বোধন করবেন অত্র অঞ্চলেব বিশিষ্ট সমাজসেবী, জনগণের নয়নের মণি, দেশদরদী সংগ্ৰামী জননেতা জনাব আব্দুল মতিন ময়না মিয়া। ভাইসব…
আমাদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা। শুধু আমাদের না, উত্তেজনা বড়দের মধ্যেও। বড়চাচা আমাকে ডেকে বললেন, কী, তোরা পারবি তো?
আমি হচ্ছি দলের ক্যাপ্টেন। কাজেই আমাকে বলতে হলো, ইনশাআল্লাহ পারব।
তোরা তো খেলতে জানিস না, তোরা পারবি কী করে? একমাত্র খেলোয়াড় হচ্ছে টগর। সেই বেচারা একা কী করবে?
সে একাই একশ।
মুখে বললাম ঠিকই, কিন্তু ভবাসা পেলাম না। কারণ বুলেট ক্লাব বাইরে থেকে হায়ার করে তিনজন প্লেয়ার এনেছে। এক-একজন ইয়া জোয়ান। এদের একজনের নাম ল্যাংচু, কারণ তার কাজই হচ্ছে ল্যাং মেবে ফেলে দেয়া। সেই ল্যাংও এমন ল্যাং যে প্লেয়ারের পা ভেঙে যায়। ল্যাংচু নাকি এইভাবে এর আগে তিন জনের পা ভেঙেছে। টগরের পা ভেঙে সে এক হালি পুরো করবে। কী সর্বনাশের কথা।
চারটার সময় খেলা শুরু হবে। দুটো বাজতেই টগর শুকনো মুখে এসে উপস্থিত। সে নাকি খেলবে না। আমি বললাম, কেন খেলবি না? ল্যাংচুর ভয়ে?
বুলেট ক্লাবের বগা ভাই বলেছে আমি যদি খেলি, তাহলে আমাকে ফর্দাফাই করে দেবে!
বগা ভাই নিজে বলেছে?
হুঁ।
বগা ভাই বলে থাকলে সত্যি ভয়ের কথা। কারণ বগা ভাই বিরাট গুণ্ডা। তার এতদিনে ম্যাট্রিক পাস করে কলেজে পড়া উচিত। কিন্তু সে ফেল করে করে ক্লাস এইটে আটকে আছে। কাজের মধ্যে কাজ সে যা করে তা হচ্ছে বিড়ি টানে। খারাপ খারাপ কথা বলে আর আমাদের মতো অল্পবয়সী ছেলেপুলে দেখলে বিনা কারণে মারধোর করে। আমাদের ক্লাসের পুতুল একদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ি আসছে, হঠাৎ বগা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। বগা ভাই বললেন, শুনে যা। পুতুল দেখল পালানো অসম্ভব। সে এগিয়ে এলো। বগা ভাই বলল, পিঁপড়ার কামড় কেমন জানিস?
জানি।
উঁহু, ভালোমতো জানিস না। তবে এখন জানবি।
এই বলেই লাল পিঁপড়ার একটা বাসা ভেঙে পুতুলের মাথায় টুপির মতো পরিয়ে দিল। ভয়াবহ অবস্থা। এই বগা ভাইয়ের কারণে টগর যে খেলবে না, তা তো জানা কথাই।
শুধু টগর না, কিছুক্ষণ পর করিম এসে বলল, সেও খেলবে না। কবিম সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলে। খুব খারাপ না। টগরের মতো অবশ্যি না, তবুও ভালো।
আমি বললাম, তুই খেলবি না কেন? বগা ভাই কিছু বলেছে?
না।
তাহলে খেলবি না কেন?
ইচ্ছা হচ্ছে না, তাই খেলব না।
এই বলেই করিম লম্বা একটা ঘাসের ডাটা নিয়ে চিবুতে লাগল। তার ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে বগা ভাই তাকেও ভয় দেখিয়েছে।
আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। নজন প্লেয়ার নিয়ে কী খেলব? অরু আপা বলল, তোরা খেলা বন্ধ করে পালিয়ে যা। আজ মাঠে তোদের তুলোধুনো করবে। কমসে কম দুজনের পা ভাঙবে। একজনের হবে কম্পাউন্ড ফ্রাকচাব।
ম্যাচে নাম দিয়ে পিছিয়ে পড়া যায় না। সাড়ে তিনটায় মাঠে গিয়ে উপস্থিত হলাম। লোকে লোকারণ্য। বুলেট ক্লাবেব প্লেয়াবাবা বল নিয়ে মাঠে ছোটাছুটি করছে। তাদের সবার মুখভর্তি হাসি।
মাঠের দক্ষিণ দিকে টেবিলের উপর শিন্ড। বিশিষ্ট অতিথিদের জন্যে চেয়ার সাজানো। দেশদরদী জননেতা আব্দুল মতিন সাহেব এসে পড়েছেন। তাঁর গলায় ফুলের মালা। বগা ভাইকেও দেখলাম। খুব ফুর্তি। একটু পবিপর হাসতে হাসতে ভেঙে পড়ছে।
আমরা মুখ শুকনো করে মাঠে নোমলাম। পকেটে বোতল ভূতের শিশি। আমি মনে মনে বললাম, ভাই বোতল ভূত। আমাদের বক্ষা কর ভাই।
রয়েল বেঙ্গল ফুটবল ক্লাব বনাম বুলেট ক্লাবের ফাইনাল খেলায় এমন হুলস্থুল হবে কে ভেবেছিল? মাঠ লোকে লোকারণ্য। একটা ব্যান্ড পার্টি পর্যন্ত আছে। কিছুক্ষণ পরপর ব্যান্ড পার্টি বাজাচ্ছে–হলুদ বাট, মেন্দি বাট, বাট ফুলের মেী। এই একটি মাত্র গানই এরা জানে। সব অনুষ্ঠানে এই গান।
ব্যান্ড পার্টি এনেছেন আব্দুল মতিন সাহেব। তাঁর কাণ্ডকারখানা এরকমই। সব সময় চান লোকজনকে চমকে দিতে। যারা ইলেকশন করে তাদের নাকি এরকম করতে হয়। কোথাও লোকজন জড়ো হলে একটা ভাষণ দিতে হয়। আজও নিশ্চয়ই দেবেন।
মাইক এসেছে। রোগা একটা ছেলে কিছুক্ষণ পরপর বলছে–হ্যালো মাইক্রোফোন টেস্টিং। ওয়ান টু থ্রি ফোর। মাইক্রোফোন টেস্টিং। রোগা ছেলেটি চলে যাবার পর তার চেয়েও রোগা আরেকটি ছেলে এসে মাইকের সামনে দাঁড়াল। খুব কায়দা করে বলল, জরুরি ঘোষণা, জরুরি ঘোষণা। ভাইসব, একটি বিশেষ ঘোষণা। অত্র অঞ্চলের বিশিষ্ট সমাজসেবী, জনগণের নয়নের মণি, এ যুগের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, জনাব আব্দুল মতিন মিয়া এই মাত্র একটি স্বর্ণপদক ঘোষণা করেছেন। আজকের এই ফাইনাল ম্যাচের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়ের জন্যে এই স্বর্ণপদক। খেলার শেষে এই স্বর্ণপদক দেয়া হবে। ভাইসব, জরুরি ঘোষণা.
এই ঘোষণায় বুলেট ক্লাবের সবার মুখে হাসি দেখা গেল। কেনই বা হাসি দেখা যাবে না? শিন্ড, স্বর্ণপদক সব তো ওরাই পাবে। আমরা হাত-পা ভেঙে বাড়ি ফিরব।
আমরা মুখ শুকনো করে মাঠে নোমলাম। ব্যান্ড পার্টি বিপুল উৎসাহে বাজাতে লাগলউলুদ বাট, মেন্দি বাট, বাট ফুলের মউ।
রেফারি হচ্ছেন আমাদের স্কুলের ড্রিল স্যার–অজিত বাবু। খুব রোগী বলে আমরা তাঁর নাম দিয়েছি জীবাণু স্যার।
জীবাণু স্যার আমাদের দেখে অবাক হয়ে বললেন, তোরা মাত্ৰ নজন কেন? বাকি দুজন কই?
আমি বললাম, ওরা খেলবে না স্যার।
কেন?
বুলেট ক্লাবের বগা ভাই ভয় দেখিয়েছে, খেলতে নামলে পা ভেঙে দেবে।
বলিস কী!
সত্যি কথা স্যার। ওদের দলে একজন আছে–নাম ল্যাংচু। ওর কাজই হচ্ছে ল্যাং মারা। ল্যাং মেরে পা ভেঙে ফেলা।
বিচিত্র না, ভাঙতেও পাবে। সাবধানে খেলবি। খবরদার, চার্জ-ফার্জ করতে যাবি না।
জীবাণু স্যার বাঁশিতে ফুঁ দিলেন। খেলা শুরু হলো। আমি পকেটে হাত দিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম, ও ভাই বোতল ভূত, আমাদের বাঁচাও ভাই।
কথা শেষ হবার আগেই দেখা গেল বগা ভাই বিদ্যুৎগতিতে বল নিয়ে আমাদের গোলপোস্টের দিকে যাচ্ছে। বদরুল তাকে আটকাতে গিয়ে উল্টে পড়ে গেল। কারণ ল্যাংচু তাকে পেছন থেকে ল্যাং মেরেছে। গোলপোস্টে আমাদের গোলকিপার নাটু চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। এটাই হচ্ছে তার নিয়ম। বল নিয়ে কেউ গোলপোক্টের দিকে আসতে থাকলে আপনাতেই তার চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
বগা ভাই গোলপোস্টের প্রায় ছগজের ভেতর চলে এসেছে। নান্টু চোখ বন্ধ করে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক তখন একটা অঘটন ঘটল। মনে হলো কেউ একজন যেন প্ৰচণ্ড একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে বগা ভাইয়ের গালে। বগা ভাই। থমকে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে চারদিকে তাকাতে লাগল। তার পায়ে বল, অথচ সে শর্ট দিচ্ছে না। মাঠে তুমুল হৈচৈ–কিক দাও। কিক দাও। হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন, কিক দাও।
বগা ডাই নিজেকে সামলে নিয়ে প্ৰচণ্ড কিক দিল। আশ্চর্যের উপর আশ্চৰ্য। প্ৰচণ্ড কিকের পরও বলের অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হলো না। বলটা যেন নিতান্ত অনিচ্ছায় গড়িয়ে যাচ্ছে। এক সময় নাটুর পায়ের কাছে বলটা ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ল। সেই দাঁড়িয়ে থাকা বলের উপর ন্যান্টু বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে এমন ভঙ্গি করতে থাকল, যেন সে বুলেটের মতো গতির বলকে অপূর্ব কায়দায় আটকেছে।
মজা আরো জমল। বুলেট ক্লাবের যে-কোনো প্লেয়ার বল নিয়ে এগিয়ে এলেই অদৃশ্য কে যেন চড় বসিয়ে দেয়।
ল্যাংচু হতভম্ব। কারণ কিছুক্ষণ পরপর সে চড় খাচ্ছে। একবার দেখা গেল সে কোমবে হাত দিয়ে খিলখিল করে হাসছে। হাসি আর থামেই না। মাঠের সবাই হতভম্ব।
ড্রিল স্যার অবাক হয়ে বললেন, এই ছেলে, তুমি এরকম করছ কেন? হাসছ কেন?
ল্যাংচু করুণ মুখে বলল, কী করব স্যার বলুন–কে যেন কাতুকুতু দিচ্ছে।
কাতুকুতু দিচ্ছে মানে! কী বলছ তুমি?
সত্যি দিচ্ছে স্যার। হিহিহি। হো হো হো। হি হি হি। হিক হিক হিক।
হাসতে হাসতে ল্যাংচু গড়িয়ে পড়ল। অদ্ভুত কাণ্ড! ওরা বলে কিক করলে বল নড়ে না। যেন পাথরের বল। বুলেট দলেব ক্যাপ্টেন হচ্ছে মুশতাক। সে একবার বলে কিক কবে উফ করে চেঁচিয়ে উঠল। ড্রিল স্যার বললেন, কী হয়েছে?
স্যার, বল আগুনের মতো গরম। পা পুড়ে গেছে স্যার। পায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে।
পাগলের মতো কথা বলিস না তো। বল গরম মানে!
আপনি হাতে নিয়ে দেখুন স্যার। ড্রিল স্যার বল হাতে নিয়ে বললেন, বল যে রকম, সে রকমই তো আছে। কী বলছিস তোরা!
হাফ টাইমের দশ মিনিট আগে আমরা একটা গোল করে ফেললাম। আমরা গোল করলাম বলাটা ঠিক হলো না। বলটা আপনা-আপনি গোলে পড়ল।
ড্রিল স্যার পর্যন্ত হতভম্ব হয়ে পড়লেন। বাঁশি বাজাবেন। কিনা বুঝতে পাবলেন না।
হাফ টাইমের পর বুলেট ক্লাব আর খেলতে রাজি হলো না। আব্দুল মতিন সাহেব মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন। সেবা খেলোয়াড়ের স্বর্ণপদক কাকে দেবেন। বুঝতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত সেই স্বর্ণপদক নান্টুর কপালে জুটল। সে থেমে থাকা বল আটকানোর জন্যে পেয়ে গেল স্বর্ণপদক।
আব্দুল মতিন সাহেব কাঁপা গলায় একটা ভাষণ দিলেন–রয়েল বেঙ্গল ফুটবল ক্লাবেব উজ্জ্বল প্রতিভা, অত্র অঞ্চলের বিশিষ্ট গোলকিপার, নাটুর অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীতে মুগ্ধ হয়ে তাকে দেয় হচ্ছে আব্দুল মতিন স্বর্ণপদক। ভাইসব, হাততালি দিন। হাততালি।
প্ৰচণ্ড হাততালি পড়ল। সেই সঙ্গে ব্যান্ড বেজে উঠল–হলুদ বাট, মেন্দি বাট, বাট ফুলের মউ …।