Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

গরমের ছুটি ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত

গরমের ছুটি ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত।

ছুটির আগে কত রকম পরিকল্পনা থাকে–এই করব, এ করব। যখন সত্যি সত্যি ছুটি শুরু হয়, তখন কিছু কবাব থাকে না। সব কেমন পানসে মনে হয়।

এখন আমাদের তা-ই লাগছে। স্কুল ছুটি। কত আনন্দ হবার কথা, কিন্তু কোনো আনন্দ হচ্ছে না। এদিকে বড়চাচা কঠিন কঠিন সব নিয়ম-কানুন জাবি করছেন। যেমন আজ সকালেই বললেন, ছুটিটা কাজে লাগাবার ব্যবস্থা কব। পাটীগণিতেব সব অংক শেষ কবে ফেল।

আমি বললাম, এক্ষুণি সব অংক শেষ কবে ফেললে সারাবছর কী করব?

বড়চাচা বললেন, চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব। মুখে মুখে কথা বলে। যা পাটীগণিতের বই নিয়ে আয়। দেখব। কত ধানে কত চাল।

কী আব্ব করব, বই নিয়ে এলাম। বড়চাচা চড় দিয়ে সত্যি সত্যি দাঁত ফেলে দিতে পারেন। আমার ছোট ভাই অস্তুর একটা দাঁত তিনি এইভাবেই ফেলেছেন। অবশ্যি সেটা ছিল নাড়া দাঁত। এমনিতেই পড়ত, চড় খেয়ে দু-এক দিন আগে পড়ে গেল। বড় চাচার নাম ফাটল। তিনি সেই দাঁত ডেটল দিয়ে ধুয়ে হরলিক্সের একটা খালি বোতলে ভরে নিজের ঘরে রেখে দিলেন। বোতলের গায়ে লিখে দিলেন–চড় দিয়ে ফেলা দাঁত। দুষ্ট শিশু সাবধান।

বড়চাচা ইকো টানতে টানতে সারা দুপুর আমাকে লাসাগু এবং গসাগু করালেন। কুৎসিত সব অংক–গুণ দাও, ভাগ দাও, আবার গুণ, আবার ভাগ। কী হয়। এসব গুণ-ভাগ করে? পৃথিবী থেকে অংকটা উঠে গেলে কত ভালো হতো।

লসাগু-গসাগু করতে করতে একবার ভাবলাম বোতল ভূতকে বলব–ও ভাই বোতল ভূত, লক্ষ্মী ভাই, ময়না ভাই, তুমি পৃথিবী থেকে অংক নামের এই খারাপ জিনিসটা দূর করে দাও। একদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবাই যেন দেখে অংক বইয়ের সব লেখা মুছে গেছে। সব পাতা সাদা। নামতা-টামতাও কারো মনে নেই। তিন দুগুণে কত কেউ বলতে পারে না। এমনকি অংক স্যাররাও না। এক দুই কী করে লিখতে হয় তাও কেউ বলতে পারে না।

অবশ্যি আমি জানি বোতল ভূতকে এসব বলে লাভ নেই। সে কিছু করতে পারবে না। তার উপর বোতলটা ফেলে দেয়া হয়েছে কুয়োয়। বোতল ভেঙে ভূত কোথায় চলে গেছে কে জানে।

বেলা তিনটা বেজে গেল, তবু বড়চাচা আমাকে ছাড়লেন না। যখনই বলি, আজ উঠি চাচা? তখনই তিনি গম্ভীর হয়ে বলেন, কোনো কথা না। একটা কথা বললে চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব। সেই দাঁত চলে যাবে হরলিক্সের কোটায়।

বিকেল হয়ে গেল। আমাদের ফুটবল টিমেব ছেলেরা আমার জন্যে উঁকিঝুকি দিতে শুরু করল। তবু বড়চাচা আমাকে ছাড়বেন না। বড়বা ছোটদের এত কষ্ট কী কবে দেয় কে

জানে! তারা কি কখনো ছোট ছিল না?

আমি বললাম, বিকেল হয়ে গেছে। চাচা, এখন উঠি? বড়চাচা হুংকাব দিয়ে বললেন, শুধু খেলার দিকে মন। কোনো ওঠাউঠি নেই। তোকে দিয়ে আমি বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়াব। খেলাধুলো করে হয় কী? ফুটবল খেলতে গিয়ে হাত-পা ভেঙে ঘরে ফিরবি। তার কোনো প্রয়োজন দেখছি না।

আমি সারাদিন পড়ব?

নিশ্চয়ই সারাদিন পড়বে। জীবনে উন্নতি করতে চাইলে সাংবাদিন পড়তে হবে। ছাত্র নং অধ্যয়নং তপঃ।

আমি জীবনে উন্নতি করতে চাই না বড়চাচা।

জীবনে উন্নতি করতে চাস না?

না।

বড়চাচা ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। থমথমে গলায় বললেন, তোর বেয়াদবির বিচার সন্ধ্যাবেলা হবে।

সন্ধ্যাবেলা সত্যি সত্যি বিচার-সভা বসল। বড়চাচা, বাবা এবং আমাদের প্রাইভেট স্যার–তিন জন বসলেন তিন দিকে। আমি মাঝখানে। বড়চাচা স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন, হুমায়ূন সম্পর্কে তোমার ধারণা কী মাস্টার বলে তো।

স্যার শুকনো গলায় বললেন, ওর মাথায় কিছু নাই।

বড়চাচা ঠাণ্ডা গলায় বললেন, মাথায় কিছু নেই এই কথাটা তো মাস্টার তুমি ঠিক বললে না। মাথায় ওর আছে–গোবর। পচা গোবর।

আমাদের স্যার সঙ্গে সঙ্গে বললেন, খুবই খাঁটি কথা বলছেন। গোবর দিয়ে মাথা अऊिँ।

বড়চাচা বললেন, তবে সাধনায় অনেক কিছু হয়। কবি কালিদাসেরও মাথাভর্তি ছিল গোবর। মহামুর্থ ছিলেন। সাধনার জন্যে পরবর্তীকালে হলেন–মহাকবি কালিদাস। কী বলো মাস্টার, ঠিক না?

একেবারে খাঁটি কথা।

কাজেই আমরা এখন দেখব। সে যেন সাধনা ঠিকমতো করতে পারে। গরমের এই ছুটির মধ্যে হুমায়ূনকে আমরা ঠিকঠাক করে ফেলব। কী বলে মাস্টার?

খুবই ভালো কথা।

আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম। বড়চাচা আমার জীবন অতিষ্ঠা করে তুলবেন।

এখন আমি উঠি সূর্য ওঠার আগে। কিছুক্ষণ বড়চাচার সঙ্গে মর্নিংওয়াক করে পড়তে বসি। সেই পড়া চলে এগারটা পর্যন্ত। দুপুরেব খাওয়ার পর শুরু হয় পাটীগণিত। বিকেল পাঁচটায় ছুটি। কাঁটায় কাটায় এক ঘণ্টােব ছুটি। ছাঁটার মধ্যে বাসায় ফিরে বই নিয়ে বসতে হয়। রাত দশটায্য ছুটি। কী যে কষ্ট। রোজ একবার কুয়োর সামনে গিয়ে বলি, বোতল ভূত, ও ভাই বোতল ভূত! বড়চাচার হাত থেকে আমাকে বাঁচাও ভাই।

কোনোই লাভ হয় না। ভূত হয়তো আমার কথাই শুনতে পায় না। কত নিচে পড়ে আছে, শোনার কথাও নয়। কিংবা কে জানে হয়তো বোতল ভেঙে গেছে। ভূতের বাচ্চা আর বোতলের ভেতরে নেই। থাকলে সে নিশ্চয়ই আমার কষ্ট দেখে কিছু একটা করত।

এই রকম যখন অবস্থা, তখন এক কাণ্ড হলো। রাতে ঘুমুতে গেছি। শুতে গিয়ে দেখি পিঠের নিচে শক্ত কী যেন লাগছে। হাত দিয়ে দেখি–কী আশ্চৰ্য, ঐ বোতল। এখানে এলো কী কবে! কুয়োয় যে বোতল ফেলে দেয়া হয়েছে সেই বোতল এখানে এলো কী করে!

ব্যাপারটা কী? ব্যাপার যা-ই হোক, তা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আপাতত বড়চাচার হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে। আমি খুব করুণ গলায় কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম, ভাই তুমি কীভাবে এখানে এসেছ জানি না। যে-ভাবেই এসে থাক, তুমি আমাকে বীচাও। বড়চাচার হাত থেকে রক্ষা কর। এই বলে আমি খানিকক্ষণ কাদলাম। এতে কোনো লাভ হবে ভেবে আমি বলি নি। তবু বলা তো যায় না। হতেও তো পারে।

পরদিন ভোরবেলা বই নিয়ে বসেছি। বড়চাচা ঢুকলেন। গম্ভীর গলায় বললেন, চিন্তা করে দেখলাম ছুটির সময়টাতে ছুটি থাকা দরকার। রাতদিন বই নিয়ে পড়ে থাকলে ছেলেপুলে গাধা হয়। যখন স্কুল ছুটি থাকবে, তখন তোরও ছুটি। যা বই তুলে রাখি।

আমি অবাক হয়ে বড়চাচার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress