Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে

জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে এক দারুণ ব্যাপার হলো।

নাইন-টেনের ছেলেরা মিলে ঠিক করল, আম-কাঁঠালের ছুটি খানিকটা এগিয়ে দেবার জন্যে হেড স্যারের কাছে দরবার করবে। দরবারটা যাক্তে জোরাল হয়। সে জন্যেই সব ক্লাস থেকে দুজন করে যাবে। যে দুজন যাবে তারা যেন অবশ্যই খুব ভালো ছাত্র হয়। ফার্স্টসেকেন্ড হওয়া ছেলে হলে ভালো। স্যাররা ভালো ছাত্রদের ওপর চট করে রাগেন না।

দীপু হচ্ছে আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয়। সে সব শুনে বলল, আগে-ভাগে ছুটি নিয়ে হবেটা কী আম-কাঁঠালের দুটি না হলেই সবচে ভালো হয়। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারি।

কথা শুনে রাগে গা জ্বলে যায়। ইচ্ছা করে ঠাস করে মাথায় একটা চটি বসিয়ে দিই। তার উপায় নেই, এরা ভালো ছাত্র। স্যারের কাছে নালিশ করলে সর্বনাশ।

আমাদের ক্লাস থেকে কেউ দেখি যেতে রাজি নয়। আমি একাই গেলাম। বিরাট একটা দরখাস্তও লেখা হলো। ক্লাস টেনের বগা ভাই (আসল নাম বদরুল ইসলাম। খুব লম্বা বলে আমরা তাকে ডাকি বগা ভাই) হেড স্যারের হাতে দরখাস্ত তুলে দিল। হেড স্যার বললেন, ব্যাপার কী?

বগা ভাই তোতলাতে তোতলাতে বলল, দরখাস্তে সব লে-লে-লে-লেখা আছে স্যার।

বগা ভাইয়ের এই একটা অসুবিধা, ভয় পেলে তোতলাতে শুরু করে। এবং প্রতিটি বাক্য দুবার করে বলে। সে আবার বলল, দরখাস্তে সব লে-লে-লে-লেখা আছে স্যার।

লেখা যে আছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। ব্যাপারটা কী তোমাদের মুখ থেকে শুনতে চাই।

আম-কাঁঠালের ছুটি দুই সপ্তাহ এগিয়ে দিলে ভালো হয় স্যার।

কেন?

আমরা সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। ছুটি এগিয়ে দিলে কেন ভালো হয়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করি নি। হেড স্যার হুংকার দিয়ে বললেন, চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কথা বল।

কেউ নড়াচড়া করছে না দেখে সাহসে ভয় করে আমিই মুখ খুললাম। মিনমিন করে বললাম, এইবার তো স্যার গরম খুব বেশি পড়েছে, আম-কাঁঠাল সব আগে আগে পেকে গেছে। এই জন্যে স্যার ছুটিটা যদি এগিয়ে দেন।

আম-কাঁঠাল পাকানো কাকে বলে জানিস?

জি-না স্যার।

এক্ষুণি দেখবি কাকে বলে। কত বড় সাহস। বলে ছুটি এগিয়ে দিতে। যা ক্লাসে যা। ক্লাসে গিয়ে নীলডাউন হয়ে থাক।

ক্লাসে ফিরে এসে নীলডাউন হয়ে আছি। বশির দাঁত বের করে হাসছে। কাউকে শাস্তি দিতে দেখলে তার ভারি আনন্দ হয়। সে আজ আর আনন্দ চেপে রাখতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর পর সব কাটা দাঁত বের করে দিচ্ছে।

টিফিন টাইমে দপ্তরি কালিপদ নোটিশ নিয়ে এলো। হেড স্যার নোটিশ পাঠিয়েছেনছাত্রদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে এই বৎসরের গ্ৰীষ্মকালীন বন্ধের সময়সীমা দুই সপ্তাহ কমিয়ে দেয়া হলো। নির্ধারিত সময়ের দুই সপ্তাহ পর থেকে বন্ধ শুরু হবে। এই নিয়ে কোনো রকম দেন-দরবার না করবার জন্য ছাত্রদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ছুটির পর খুবই মন খারাপ করে বাসায় ফিরলাম। কী করা যায় কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন ছুটি এগিয়ে আনবার দরকার নেই; যথাসময় ছুটি আরম্ভ হলেই আমরা খুশি। তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আমাদের হেড স্যার খুব কঠিন চিজ।

সন্ধ্যার আগে আগে মুনির এসে উপস্থিত। সেও ছুটি কমে যাওয়ায় মন খারাপ করেছে। এই ছুটিতে তার মামাবাড়ি যাবার কথা। ছুটি কমে গেলে আর যাওয়া হবে না।

মুনির বলল, চল তাঁর কাছে যাই। তিনি যদি কোনো বুদ্ধি দেন।

কার কথা বলছিস?

আমাদের যিনি ভূতেব বাচ্চা দিলেন। ঐ যে রবীন্দ্রনাথের মতো দেখতে।

উনি বুদ্ধি দেবেন কেন?

দিতেও তো পাবেন। আমাদের কথা তো উনি শোনেন। শোনেন না?

চল চাই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে উনি হেড স্যারের মতো রেগে যাবেন। সব বড়রা এক রকম হয়।

তবু বলে দেখি।

বুড়ো ভদ্রলোক দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে আমাদের সমস্যা শুনলেন। তারপর বললেন, অন্যায়, খুবই অন্যায়। ছুটি কমাবার কোনো রাইট নেই। বাচ্চা ছেলেগুলোকে সারাদিন স্কুলে আটকে রেখেও শখ মিটছে না, এখন আবার ছুটি কমিয়ে দিচ্ছে। রবি ঠাকুর বেঁচে থাকলে খুব রাগ করতেন।

আমি বললাম, এখন আমরা কী করব বলুন।

ভূতের বাচ্চাকে বলা ছাড়া তো কোনো পথ দেখছি না।

আমি অবাক হয়ে বললাম, ভূতের বাচ্চাকে কী বলব?

তোমাদের সমস্যার কথা বলবে। কবে থেকে স্কুল বন্ধ করতে চাও এটা বলে দেবে, তাহলেই হবে।

কী যে আপনি বলেন।

কী যে আমি বলি মানে? এক চড় লাগাব, বুঝলে। যা করতে বলছি করা। বোতলটা মুখের কাছে এনে ফিসফিস করে বলবে। বলবে যেন আগামীকাল থেকেই আম-কাঁঠালের ছুটি দেবার ব্যবস্থা করে। খুব ভদ্রভাবে বলবে। আরেকটা কথা, মাসে একবারের বেশি কিছু চাইবে না, ভূত এখনো খুবই বাচ্চা। ক্ষমতা কম। আরেকটু বড় হোক, তখন ঘনঘন চাইতে পারবে।

আমি বললাম, থ্যাংক ইউ।

বুড়ো আগুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার সঙ্গে ইংরেজি? এর মানে কী?

ক্ষমা করে দিন স্যার। আর বলব না। আমরা এখন যাই স্যার?

না। আমি গতকাল একটা কবিতা লিখেছি, এটা শুনে তারপর যাও। তোমাদের নিয়েই লেখা।

কবিতার নাম বীর শিশু।

মনে কর যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে
টগ্‌বগিয়ে তোমার পাশে পাশে।

আমার কেন জানি মনে হলো এই কবিতাটা আগেও শুনেছি। তবে সেই কবিতাটার নাম ছিল বীরপুরুষ, বীবিশিশু নয়। তবে এটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি এখন না করাই আমার কাছে ভালো মনে হলো। বুড়োকে বাগানো ঠিক হবে না।

আমরা বাড়ি চলে এলাম। বুড়োর কথা ঠিক বিশ্বাস হলো না। বোতলের ভেতর ভূত যদি থেকেও থাকে সে স্কুল বন্ধ করবে। কীভাবে?

তবু রাতে শোবার আগে ট্রাংক থেকে বোতল বের করে ফিসফিস করে বললাম, ভাই বোতল ভূত, তুমি কেমন আছ? ভাই তুমি কি আমাদের স্কুলটা আগামীকাল থেকে বন্ধ করে দিতে পারবে? লক্ষ্মী ভূত, ময়না ভূত। দাও না বন্ধ করে।

অরু আপা কী কাজে যেন ঘরে ঢুকেছিল। সে অবাক হয়ে বলল, এসব কী হচ্ছে রে?

আমি বললাম, কিছু হচ্ছে না।

কার সঙ্গে কথা বলছিস?

বোতলের ভূতের সঙ্গে।

অরু আপা গম্ভীর হয়ে বলল, বোতলের ভূতের সঙ্গে কী কথা হচ্ছিল শুনি।

তোমার শোনার দরকার নেই।

আহা শুনি না।

বোতলের ভূতকে বলেছি আগামীকাল থেকে স্কুল বন্ধ করে দিতে। সে বন্ধ করে দেবে।

তোর মাথাটা খারাপ হয়েছে।

হলে হয়েছে।

বাড়িতে দারুণ হৈচৈ পড়ে গেল। বাবা ডেকে নিয়ে বললেন, এসব কী হচ্ছে রে! তুই নাকি বোতলের ভূতকে বলেছিস স্কুল বন্ধ করতে?

বড়চাচা বললেন, পাজিটার কানে ধরে চড় দেয়া দরকার। ভূত-প্রেতের কাছে দরবার করছে। ভূত আবার কী রে? দশবার কানে ধরে ওঠ-বোস কর। আর যা, তোর সেই বিখ্যাত বোতল কুয়োয় ফেলে দিয়ে আয়। এক্ষুণি যা।

বড় চাচার কথার উপর দ্বিতীয় কথা চলে না।

বোতল ভূত কুয়োয় ফেলে দিতে হলো। পরদিন খুবই মন খারাপ করে স্কুলে গেলাম। অ্যাসেম্বলিতে সবাই দাঁড়িয়ে আছি। সোনার বাংলা গান হয়ে যাবার পর হেড স্যার বললেন, তোমাদের জন্যে একটা সুসংবাদ আছে। স্কুলের জন্যে সবকার থেকে দুই লক্ষ টানা পাওয়া গেছে। এখন তোমরা পাবে পাকা দালান। দালানের কাজ শুরু করতে হবে। বুর্যর আগেই। কাজেই আজ থেকেই তোমাদের গবমের ছুটি। অন্যবারের চেয়ে এবার তোমরা দুসপ্তাহ বেশি ছুটি পাবে। তবে ছুটিটা কাজে লাগাবে। শুধু খেলাধুলা করে নষ্ট করবে না।

আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে বইলাম। ব্যাপারটা কি বোতল ভূতের কারণেই ঘটল?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress