Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বেদের বহর || Beder Bohor by Jasimuddin

বেদের বহর || Beder Bohor by Jasimuddin

মধুমতী নদী দিয়া,
বেদের বহর ভাসিয়া চলেছে কূলে ঢেউ আছাড়িয়া।
জলের উপরে ভাসাইয়া তারা ঘরবাড়ি সংসার,
নিজেরাও আজ ভাসিয়া চলেছে সঙ্গ লইয়া তার।
মাটির ছেলেরা অভিমান করে ছাড়িয়া মায়ের কোল,
নাম-হীন কত নদী-তরঙ্গে ফিরিছে খাইয়া দোল।

দুপাশে বাড়ায়ে বাঁকা তট-বাহু সাথে সাথে মাটি ধায়,
চঞ্চল ছেলে আজিও তাহারে ধরা নাহি দিল হায়।
কত বন পথ সুশীতল ছায়া ফুল-ফল-ভরা গ্রাম,
শস্যের খেত আলপনা আঁকি ডাকে তারে অবিরাম!
কত ধল-দীঘি গাজনের হাট, রাঙা মাটি পথে ওড়ে,
কারো মোহে ওরা ফিরিয়া এলো না আবার মাটির ঘরে।
জলের উপরে ভাসায়ে উহারা ডিঙ্গী নায়ের পাড়া,
নদীতে নদীতে ঘুরিছে ফিরিছে সীমাহীন গতিধারা।
তারি সাথে সাথে ভাসিয়া চলেছে প্রেম ভালবাসা মায়া,
চলেছে ভাসিয়া সোহাগ, আদর ধরিয়া ওদের ছায়া।
জলের উপরে ভাসাইয়া তারা ঘরবাড়ি সংসার,
ত্যাগের মহিমা, পুন্যের জয় সঙ্গে চলেছে তার।

সামনের নায়ে বউটি দাঁড়ায়ে হাল ঘুরাইছে জোরে,
রঙিন পালের বাদাম তাহার বাতাসে গিয়াছে ভরে।
ছই এর নীচে স্বামী বসে বসে লাঠিতে তুলিছে ফুল,
মুখেতে আসিয়া উড়িছে তাহার মাথায় বাবরী চুল।
ও নায়ের মাঝে বউটিরে ধরে মারিতেছে তার পতি,
পাশের নায়েতে তাস খেলাইতেছে সুখে দুই দম্পতি।
এ নায়ে বেঁধেছে কুরুক্ষেত্র বউ-শাশুড়ীর রণে,
ও নায়ে স্বামীটি কানে কানে কথা কহিছে জায়ার সনে!
ডাক ডাকিতেছে, ঘুঘু ডাকিতেছে, কোড়া করিতেছে রব,
হাট যেন জলে ভাসিয়া চলেছে মিলি কোলাহল সব।
জলের উপরে কেবা একখানা নতুন জগৎ গড়ে,
টানিয়া ফিরিছে যেথায় সেথায় মনের খুশীর ভরে।

কোন কোন নায়ে রোদে শুখাইছে ছেঁড়া কাঁথা কয়খানা,
আর কোন নায়ে শাড়ী উড়িতেছে বরণ দোলায়ে নানা।
ও নাও হইতে শুটকি মাছের গন্ধ আসিছে ভাসি,
এ নায়ের বধূ সুন্দা ও মেথি বাঁটিতেছে হাসি হাসি।
কোনখানে ওরা সি’র নাহি রহে জ্বালাতে সন্ধ্যাদীপ,
একঘাট হতে আর ঘাটে যেয়ে দোলায় সোনার টীপ।

এদের গাঁয়ের কোন নাম নাই, চারি সীমা নাহি তার,
উপরে আকাশ, নীচে জলধারা, শেষ নাহি কোথা কার।
পড়শী ওদের সূর্য, তারকা, গ্রহ ও চন্দ্র আদি,
তাহাদের সাথে ভাব করে ওরা চলিয়াছে দল বাঁধি,
জলের হাঙর-জলের কুমীর- জলের মাছের সনে,
রাতের বেলায় ঘুমায় উহারা ডিঙ্গী-নায়ের কোণে।

বেদের বহর ভাসিয়া চলেছে মধুমতী নদী দিয়া,
বেলোয়ারী চুড়ি, রঙিন খেলনা, চিনের সিদুর নিয়া।
ময়ূরের পাখা, ঝিনুকের মতি, নানান পুতিঁর মালা,
তরীতে তরীতে সাজান রয়েছে ভরিয়া বেদের ডালা।
নায়ে নায়ে ডাকে মোরগ-মুরগী যত পাখি পোষ-মানা,
শিকারী কুকুর রহিয়াছে বাঁধা আর ছাগলের ছানা।
এ নায়ে কাঁদিছে শিশু মার কোলে- এ নায়ে চালার তলে,
গুটি তিনচার ছেলেমেয়ে মিলি খেলা করে কৌতুহলে।

বেদের বহর ভাসিয়া চলেছে, ছেলেরা দাঁড়ায়ে তীরে,
অবাক হইয়া চাহিয়া দেখিছে জলের এ ধরণীরে!
হাত বাড়াইয়া কেহ বা ডাকিছে- কেহ বা ছড়ার সুরে,
দুইখানি তীর মুখর করিয়া নাচিতেছে ঘুরে ঘুরে।
চলিল বেদের নাও,
কাজল কুঠির বন্দর ছাড়ি ধরিল উজানী গাঁও।
গোদাগাড়ী তারা পারাইয়া গেল, পারাইল বউঘাটা,
লোহাজুড়ি গাঁও দক্ষিণে ফেলি আসিল দরমাহাটা।
তারপর আসি নাও লাগাইল উড়ানখালির চরে,
রাতের আকাশে চাঁদ উঠিয়াছে তখন মাথার পরে।

ধীরে অতি ধীরে প্রতি নাও হতে নিবিল প্রদীপগুলি,
মৃদু হতে আরো মৃদুতর হল কোলাহল ঘুমে ঢুলি!
কাঁচা বয়সের বেদে-বেদেনীর ফিস ফিস কথা কওয়া,
এ নায়ে ওনায়ে ঘুরিয়া ঘুরিয়া শুনিছে রাতের হাওয়া।
তাহাও এখন থামিয়া গিয়াছে, চাঁদের কলসী ভরে,
জোছনার জল গড়ায়ে পড়িছে সকল ধরণী পরে।
আকাশের পটে এখানে সেখানে আবছা মেঘের রাশি,
চাঁদের আলোরে মাজিয়া মাজিয়া চলেছে বাতাসে ভাসি।
দূর গাঁও হতে রহিয়া রহিয়া ডাকে পিউ, পিউ কাঁহা,
যোজন যোজন আকাশ ধরায় রচিয়া সুরের রাহা।

এমন সময় বেদে-নাও হতে বাজিয়া বাঁশের বাঁশী,
সারা বালুচরে গড়াগড়ি দিয়ে বাতাসে চলিল ভাসি,
কতক তাহার নদীতে লুটাল, কতক বাতাস বেয়ে,
জোছনার রথে সোয়ার হইয়া মেঘেতে লাগিল যেয়ে।
সেই সুর যেন সারে জাহানের দুঃসহ ব্যথা-ভার,
খোদার আরশ কুরছি ধরিয়া কেঁদে ফেরে বারবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress