Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বেকারত্বের ধূসর লিপি || Roma Gupta

বেকারত্বের ধূসর লিপি || Roma Gupta

উচ্চশিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সকলেরই স্বপ্ন থাকে একটা ভালো চাকরির। অথচ কতজনেরই স্বপ্নপূরণ হয়না।এক জায়গায় জীবনটা ঠেকে থাকে কতকাল।ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে হতাশায়। সমাজের দিকে দিকে উথাল নিরাশার ঢেউ। প্রবল নৈরাজ্যের আস্ফালন। এমনি এক পরিস্থিতিতে অরিত্র বসু উচ্চ শিক্ষিত হয়েও বেকার। দিন চলে যায়,কালের আবর্তে নৈরাশ্যতা ঘিরে ধরে।

নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে অরিত্র। অনেক কষ্ট করে তার পড়াশোনা করা। ছোটোবেলায় বাবাকে হারায়। মা আর বোনকে নিয়ে সংসারের সব দায়ভার তার কাঁধে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন তাই সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাপড়ের দোকানে কাজ করে রোজগার করতে হতো তাকে। তারপর রাত জেগে পড়াশোনা। তার আয় থেকেই বোনের ও নিজের পড়াশোনা, সংসারের যাবতীয়।

মেধাবী অরিত্র অঙ্কে অনার্স নিয়ে এমএসসি পাশ করে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে থাকে। সরকারি টেট (TET) পরীক্ষায় ভালো ফল করলে ভাইভা তথা মৌখিক ইন্টারভিউর লিস্টে তার নাম ওঠে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তারপরে আর ইন্টারভিউ-এর ডাক আসে না। দিনের পর দিন চলে যায় এভাবে।

ইতিমধ্যে মা বৃদ্ধা হয়েছেন,মাঝে মধ্যেই অসুস্থ থাকেন। তাঁর ওষুধ কেনা ,বোনের পড়াশোনার খরচ সব মিলিয়ে তার একটাই চিন্তা চাকরি।

এরই মাঝে খবর পায় অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত কিছু ছেলেমেয়ে টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি করছে তাদেরই নির্ধারিত চাকরি পদে। বুকটা তার ছ্যাৎ করে ওঠে। কি করবে সে! টাকা কোথায় পাবে? তাহলে কি মেধা বা দক্ষতার কোনো মূল্য নেই!

প্রচুর শিক্ষিত বেকার এই নিয়ে প্রকাশ্যে আন্দোলন করে ধর্ণায় বসেছে। অরিত্রর পক্ষে দিনে ধর্ণায় বসা সম্ভব হয়নি,কারণ সংসারের দায়ভার।তাই প্রতিদিন কাপড়ের দোকানের কাজ সেরে রাতে গিয়ে মাঝে মাঝে ধর্ণায় বসে সে। তার বেকারত্বের ধূসর লিপিতে কেবল জীবন সংগ্রামের কথা আর বেকারত্বের জ্বালা।

কালের আবর্তে একটা সময় বোনকে কোনোরকমে বিয়ে দেয়। মা’কে একা রেখে রাতে আন্দোলন মঞ্চে যোগ দিতে যায়। ভোরে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার কাপড়ের দোকানে চলে যায় কাজে।

দিনের পর দিন এভাবে চলতে চলতে একটা সময় অরিত্র হাঁপিয়ে ওঠে। নিরাশ হয়ে ভাবে আর ধর্ণায় যাবেনা। বাড়ির সামনেই চা-এর দোকান খুলবে।

একদিন বোনের জামাই নিলয় এলে তার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করলে নিলয় বলে, কেন দাদা তুমি তো শিক্ষিত। ইউটিউব-এর মাধ্যমে টিউশন পড়ানোর কাজ করো না। প্রথম প্রথম হয়তো তেমন সাড়া পাবেনা,তারপর দেখবে স্টুডেন্টদের চোখে পড়লে তারা আগ্ৰহী হয়ে দেখবে।

কত গরিব ছাত্রছাত্রী আছে যারা টাকার জন্য টিউশন নিতে পারেনা ; তাদের অনেক সুবিধা হবে।এইভাবে একদিন দেখবে তুমি সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠবে। সবাই তোমার কাছে পড়তে আসবে। তোমার আয় হবে। ইউটিউব থেকেও আয় হবে, আবার ঘরে কোচিং সেন্টার খুললে সেখান থেকেও রোজগার হবে।

অরিত্র বলে, এসব ইউটিউব – টিউটিউব বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। খরচ হবে অনেক ,কোথা থেকে সামলাবো? নিলয় বলে আমি সব জানি, তোমায় শিখিয়ে দেবো, – আমি নিজে সব ব্যবস্থা করে দেবো।

নিলয়ের সাহায্যে অরিত্র ইউটিউবে টিউশন পড়াতে শুরু করে। প্রথমদিকে সেরকম সাড়া না পেলেও পরে তার পসার হয়। ঘরেও অনেকে পড়তে আসে। রোজগার অনেকটাই হয়। তার বেকারত্বের ধূসর লিপিতে আলোর রশ্মি জাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *