ঝুঁটি - বাঁধা ডাকাত সেজে দল বেঁধে মেঘ চলেছে যে আজকে সারাবেলা । কালো ঝাঁপির মধ্যে ভরে সুর্যিকে নেয় চুরি করে , ভয় - দেখাবার খেলা । বাতাস তাদের ধরতে মিছে হাঁপিয়ে ছোটে পিছে পিছে , যায় না তাদের ধরা । আজ যেন ওই জড়োসড়ো আকাশ জুড়ে মস্ত বড়ো মন - কেমন - করা । বটের ডালে ডানা - ভিজে কাক বসে ওই ভাবছে কী যে , চড়ুইগুলো চুপ । বৃষ্টি হয়ে গেছে ভোরে শজনেপাতায় ঝরে ঝরে জল পড়ে টুপটুপ । লেজের মধ্যে মাথা থুয়ে খাঁদন কুকুর আছে শুয়ে কেমন একরকম । দালানটাতে ঘুরে ঘুরে পায়রাগুলো কাঁদন - সুরে ডাকছে বকবকম । কার্তিকে ওই ধানের খেতে ভিজে হাওয়া উঠল মেতে সবুজ ঢেউয়ের ‘পরে । পরশ লেগে দিশে দিশে হিহি করে ধানের শিষে শীতের কাঁপন ধরে । ঘোষাল - পাড়ার লক্ষ্মী বুড়ি ছেঁড়া কাঁথায় মুড়িসুড়ি গেছে পুকুরপাড়ে , দেখতে ভালো পায় না চোখে বিড়বিড়িয়ে বকে বকে শাক তোলে , ঘাড় নাড়ে । ঐ ঝমাঝম বৃষ্টি নামে মাঠের পারে দূরের গ্রামে ঝাপসা বাঁশের বন । গোরুটা কার থেকে থেকে খোঁটায় - বাঁধা উঠছে ডেকে ভিজছে সারাক্ষণ । গদাই কুমোর অনেক ভোরে সাজিয়ে নিয়ে উঁচু ক'রে হাঁড়ির উপর হাঁড়ি চলছে রবিবারের হাটে , গামছা মাথায় জলের ছাঁটে হাঁকিয়ে গোরুর গাড়ি । বন্ধ আমার রইল খেলা , ছুটির দিনে সারাবেলা কাটবে কেমন করে ? মনে হচ্ছে এমনিতরো ঝরবে বৃষ্টি ঝরোঝরো দিনরাত্তির ধরে ! এমন সময় পুবের কোণে কখন যেন অন্যমনে ফাঁক ধরে ওই মেঘে , মুখের চাদর সরিয়ে ফেলে হঠাৎ চোখের পাতা মেলে আকাশ ওঠে জেগে । ছিঁড়ে - যাওয়া মেঘের থেকে পুকুরে রোদ পড়ে বেঁকে , লাগায় ঝিলিমিলি । বাঁশবাগানের মাথায় মাথায় তেঁতুলগাছের পাতায় পাতায় হাসায় খিলিখিলি । হঠাৎ কিসের মন্ত্র এসে ভুলিয়ে দিলে একনিমেষে বাদলবেলার কথা । হারিয়ে - পাওয়া আলোটিরে নাচায় ডালে ফিরে ফিরে বেড়ার ঝুমকোলতা । উপর নিচে আকাশ ভরে এমন বদল কেমন করে হয় , সে - কথাই ভাবি । উলটপালট খেলাটি এই , সাজের তো তার সীমানা নেই , কার কাছে তার চাবি ? এমন যে ঘোর মন - খারাপি বুকের মধ্যে ছিল চাপি সমস্ত খন আজি — হঠাৎ দেখি সবই মিছে নাই কিছু তার আগে পিছে এ যেন কার বাজি ।