রাতভর হোক তুমুল আলোড়ন করা বৃষ্টি,
শুনতে পাচ্ছি দেওয়াল জুড়ে ঝুলন্ত ক্যালেন্ডার,
দুলন্ত পিকচার ফ্রেম,আমার নিরীহ হৃদয় পেন্ডুলাম,সব নিজস্ব শব্দে ধ্বংসের প্রাক মুহূর্তে
ভেঙে যাবার আর্তনাদে দোদুল্যমান…!
কারা যেন আলো-আঁধারি পিচ্ছিল,
অনিশ্চিত পথ ধরে বাড়ি ফেরার চেষ্টায় উন্মুখ!
উল্টে যাওয়া ছাতা,ঝড়ে উড়ে আসা ধূলোবালি,
হোঁচট খেয়ে উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনায় আতঙ্কিত,
ব্যতিব্যস্ত ত্রস্ত্য নাগরিকগণ ঘুরে দাঁড়িয়ে
নিজস্ব জীবন সামলানোর প্রয়াসে রত…।
এত অসুবিধা,হাজারো সমস্যায় পড়া পথচারী,
তবু চাই বৃষ্টি হোক রাতভর,ডুবুক চেনা পথঘাট, নগর জীবনের পঙ্কিল যা কিছু কাঠামো প্রলেপ,
সাফ হোক,ধুয়ে মুছে যাক স্বার্থপরতার পাঠ…।
বৃষ্টি ফোঁটা ভিজিয়ে দিক এ মন, বিস্তৃত শরীর, প্রতিটি শিরা-উপশিরা, রক্ত জালিকা, রন্ধ্র..!
সবার সামনে প্রশ্ন চিন্হ ঝুলিয়ে দিক প্রকৃতি,
“এভাবে সমাজ,মন,পরিবেশ দূষণের অধিকার
কে দিলো সর্বশক্তিমান ভেবে নেওয়া মানুষকে”?
বৃষ্টিধারা প্লাবনে সব ধুয়ে মুছে ফিরে পেতে চাই নির্মল শৈশবের অফুরান নির্ভেজাল আমিকে…,
সব হারিয়ে তবু মনের গোপন অলিন্দে জেগে থাকা সুখ স্মৃতি উটকে খুঁজি উঠোনের জমা জলে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দেওয়ার নিটোল শৈশব,
প্রবল শিলাবৃষ্টিতে কুড়িয়ে খাওয়া বরফ টুকরো!
এই আধুনিক সব পেয়েছির দুনিয়ায় সব আছে তবু কি যেন না থাকা পরস্পরের হার্দিক টান!
কৃত্রিম মুখমিস্টিতে বিচলিত গিনিপিগ সভ্যতার
শেকল ছিঁড়ে পৌঁছাতে চাই উঠানের তুলসী মঞ্চে।
শঙ্খধ্বনি বাজিয়ে সন্ধ্যা দিতে আসা মায়ের শাড়ির আঁচলের গন্ধে হারিয়ে যাওয়ার সুখ
জাগিয়ে তোলে শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ।
টোকা মেরে বলে শৈশব এখনো আমি জেগে,হারিয়ে যাওয়ার সময় হয় নি এখনো..!
ধুয়ে মুছে বরং সাফ হোক আধুনিকতার গ্লানি,
খসুক মুখ মুখোশের রঙিন প্রলেপ পলেস্তারা..!
অতীতের কম পাওয়ার আনন্দ,সকলের সঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার মধ্যে যে উদার ভাবনার বীজ নিমজ্জিত তাতে জেগে উঠুক ভালো ভাবনারা,
রাতভর ঝমঝম বৃষ্টি ফোঁটার জিয়নকাঠিতে।