তৃণা
শামা,
তুই কি আমার ওপর খুব বেশি রেগে আছিস, তিন দিন হয়ে গেল এখনো টেলিফোন করলি না। আমি তোর নিষেধ সত্ত্বেও তাদের বাড়িওয়ালার টেলিফোনে টেলিফোন করেছিলাম। দু’বার করেছি। প্রথমবার তিনি বলেন, রং নাম্বার। দ্বিতীয়বারে বললেন, শামারা এই বাড়ি ছেড়ে চলে। গেছে। মালিবাগের দিকে বাসা নিয়েছে। রেল ক্রসিং-এর। কাছে। বয়স্ক একজন মানুষ মিথ্যা কথা বললে কেমন লাগে বলতো। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। এই দ্ৰলোককে। আমি একটা শিক্ষা দেব। শামা আমাদের পিকনিকে তুই এই ভদ্ৰলোককে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আয় না। তারপর দেখ আমি কী করি।
শামা শোন, ঐ দিনের ঘটনায় আমি খুব দুঃখিত। সামান্য ফান করলাম। এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সঙ্গে ফান করতে পারবে না? দ্রলোকের চশমা তোর ব্যাগে পাওয়া গেল। তাতে ক্ষতি কিছু হয় নি। বরং লাভ হয়েছে। কী লাভ হয়েছে সেটা বলি। মন দিয়ে শোন। ভদ্রলোকতো মোটামুটি অন্ধের মতাই হাঁটাহাঁটি করছিলেন, চশমা ফেরত পেয়ে প্রথম তোক দেখলেন। তুই সবুজ শাড়ি পরে দাঁড়িয়েছিলি, তোকে দেখাচ্ছিল ইন্দ্রাণীর মতো (ইন্দ্রাণী জিনিসটা কী আমি জানি না। প্রায়ই গল্পের বইয়ে পড়ি ইন্দ্রাণীর মতো সুন্দর। কাজেই ধরে নিচ্ছি ইন্দ্রাণী খুবই রূপবতী কেউ)। দ্রলোক তোকে দেখে ধাক্কার মতো খেলেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়–
বাজিল বুকে সুখের মতো ব্যথা
তুই রাগে দুঃখে কেঁদে ফেলি, তারপর চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলি। তখন আমি হুক্কা বাবাজিকে আসল ঘটনা বললাম। বললাম যে তুই চশমার ব্যাপারটা কিছুই জানিস না। আমি তোর ব্যাগে চশমা লুকিয়ে রেখেছিলাম। ঘটনা শুনে হুক্কা বাবাজি (বাবাজির আসল নাম আশফাকুর রহমান) খুবই মন খারাপ করলেন। তিনি ঠিক করেছেন তোদর বাসায় গিয়ে তোর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।
আমার ধারণা ইতিমধ্যে তিনি এই কাজটা সেরে ফেলেছেন এবং তার সঙ্গে হুক্কা বাবাজির কথাবার্তা হয়েছে। আমার এই ধারণার পেছনে কারণ আছে। হুক্কা বাবাজির মা আজ সকালেই আমাকে টেলিফোন করে তোর সম্পর্কে খোজ খবর করছিলেন। জানতে চাচ্ছিলেন তুই মেয়ে কেমন, তোর কারো সঙ্গে এফেয়ার আছে কি-না।
কাজেই বুঝতেই পারছিস ঘটনা অনেক দূর গড়িয়েছে। এখন শুধু গড়াতেই থাকবে। হুক্কা বাজিকে যদি বড়শিতে গেঁথে তুলতে পারিস তাহলে বিরাট কাজ হবে। ওদের গুলশানের তিনতলা বাড়ির ছাদে সুইমিং পুল আছে। আমি দেখি নি। মীরার কাছে শুনেছি। পয়সাওয়ালা স্বামী হলোসোেনার চামচ। কথায় আছে না সোনার চামচ বাকাও ভাল। হুক্কা বাবাজি বাঁকা না, সোজা। ভদ্রলোকের ফাইবার অপটিক্সের ওপর পিএইচ.ডি. ডিগ্রি আছে। মেরীল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। তার বাবা খুবই অসুস্থ, নিজে ব্যবসাপাতি দেখতে পারছেন না বলে ছেলে এসেছে বাবাকে সাহায্য করতে।
শামা শোন, ঐ ভদ্রলোকের সঙ্গে যদি তোর কিছু হয়ে যায় (সম্ভাবনা ৯০ পারসেন্ট), তাহলে তুই কিন্তু প্রতি মাসে একবার তোদের গুলশানের বাড়ির ছাদে পুল সাইড পার্টি দিবি। আমরা সবাই সুইমিং পুলে লাফালাফি ঝাপঝাঁপি করব আর পার্টি করব।
মীরার বিয়ের ঘটনা বলে চিঠি শেষ করি। এত ঝামেলা করে ভিডিওর ব্যবস্থা করা হলো, সেই ভিডিও শেষ পর্যন্ত হয়। নি। বর এসেছে রাত তিনটায়। বিয়ে শেষ হতে হতে বেজেছে পাচটা। দিনের বেলাতে কি বাসর হয়? ভদ্রলোেক তিনতলা পর্যন্ত উঠলেনই না। আমরা খুবই মন খারাপ করেছি। সবচে’ বেশি মন খারাপ করেছেন শাহানা ম্যাডাম। শেষে ম্যাডামকে বললাম, ম্যাডাম মন খারাপ করবেন না। আমরাতো অনেকেই আছি বিয়ের বাকি। আমাদের যে কোনো একজনের বাসর রাত ভিডিওর ব্যবস্থা হবে।
কে জানে হয়ত তোরটাই হবে। কাজেই সাবধান!
ভাল থাকিস এবং আমার ওপর থেকে রাগটা দূর করার চেষ্টা করি। তোর নাম রাগ-কুমারী বলেই সারাক্ষণ রেগে থাকতে হবে না-কি? রাগ মিঃ হুক্কার জন্যে জমা করে রাখ।
ইতি—
তোর দুষ্টু বন্ধু তৃণা