Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৃষ্টি বিলাস (২০০০) || Humayun Ahmed » Page 3

বৃষ্টি বিলাস (২০০০) || Humayun Ahmed

আতাউর

শামা এক প্যাকেট বাবলগাম, একটা ইরেজার কিনল। পছন্দের ইরেজার বেছে বের করতে তার সময় লাগল। বাজারে নানান ধরনের ইরেজার এসেছে। পেনসিলের দাগ মুছতে পারুক আর না পারুক দেখতে সুন্দর। শামার বুক সামান্য ধকধক করছে। দোকানিকে দাম দেয়ার পর তাকে অভিনয় করতে হবে। অভিনয়টা ভাল হতে হবে।

আতাউরকে দোকানের এক মাথায় দেখা যাচ্ছে। আতাউরকে দেখে চমকে ওঠার ভনি করতে হবে। চমকে উঠে বলতে হবে, আপনি এখানে কী করছেন? কথা বলারও বিপদ আছে, গলার স্বর চিনে ফেলবে না তো? ভুরু কুঁচকে ভাববে। নাভো–টেলিফোনে যে কথা বলছিল তার সঙ্গে এই মেয়েটার গলার স্বরের এত মিল কেন? না, তা ভাববে না। টেলিফোনে মানুষের গলার স্বর অন্যরকম। শোনায়। তাছাড়া দু’বোনের গলার স্বর মিল থাকতেই পারে। শামার বান্ধবী। তৃণা এবং তার মা’র গলার স্বর অবিকল এক রকম। এই নিয়ে কত ঝামেলা। হয়েছে। সাগর ভাই তৃণাদের বাসায় টেলিফোন করেছেন। টেলিফোন ধরেছেন। তৃণার মা। তিনি হালো বলতেই সাগর ভাই বললেন, জানগো তুমি কেমন আছে? তোমার রাগ কি কমেছে? তণার মা শান্ত গলায় বললেন, তুমি কাকে চাচ্ছ? তৃণাকে? ও টয়লেটে আছে। আমি তৃণার মা।

বাবলগাম এবং ইরেজারের দাম দেয়া হয়েছে, এখন শামা চলে যেতে পারে। একটা ব্যাপারে সে মন ঠিক করতে পারছে না। আতাউরকে দেখতে পায় নি এমন ভান করে সেকি বের হয়ে যাবে? না-কি হঠাৎ দেখতে পেয়ে অবাক হবে? দেখতে না পাওয়ার অভিনয়টাই সহজ হবে। মাথা নিচু করে দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়া এর একটা সমস্যা আছে। আতাউর যেমন লাজুক সে হয়ত চোখই তুলবে না। নিজ থেকে এগিয়ে এসে কিছু বলবে না। চিন্তা করার জন্যে আরেকটু সময় দরকার। আরো কিছু কিনলে হয়। দাম কুড়ি টাকার মধ্যে হতে হবে। তার সঙ্গে ত্রিশ টাকা আছে। এই ত্রিশ টাকা থেকে রিকশা ভাড়াও দিতে হবে। শামা একটা নেইল পলিশ রিমুভার কিনল। বোতলের মুখ খুলে নিজের নখে খানিকটা লাগল। এই কাজগুলি করতে গিয়ে সময় পাওয়া যাচ্ছে। মিস্টার খাতাউরকে লক্ষ করতে পারছে। খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি। দু’জন দু’জনকে আড়চোখে লক্ষ করতে করতে এক সময় চোখাচোখি হয়ে যাবে। তখন শামাকে কিছু বলতেই হবে। শামার প্রথম কথাটা কী হবে। আরে আপনি? না-কি সে বিনীত ভঙ্গিতে সালাম দেবে? সালামটাতো মনে হয় দেয়া উচিত।

শামা তুমি এখানে?

শামা এতই চমকে গেল যে তার হাত লেগে নেইল পলিশ রিমুভারের বোতল টেবিলে কত হয়ে পড়ে গেল। শামা বোতল তুলতে তুলতে বলল, মালিকুম।

তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ?

জি। এক প্যাকেট সিগারেট কিনতে দোকানে ঢুকেছিলাম। হঠাৎ দেখি তুমি!

শামা মনে মনে বলল, খাতাউর সাহেব আপনিতো মিথ্যা খুব ভালই বলছেন। বেছে বেছে শার্টটাও সুন্দর পরেছেন। কেউ নিশ্চয়ই বলেছে এই শার্টে আপনাকে ভাল মানায়। ঐ দিন আপনার চেহারা ভালমতো দেখতে পাই নি। আজ দেখতে পাচ্ছি। চেহারা খারাপ না। থুতনিতে কাটা দাগ কেন? ছোটবেলায় পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলেন? কীভাবে ব্যথা পেলেন সেই গল্পটা এক সময় শুনব। কী জন্যে শুন জানতে চান? শুনব কারণ আপনি গল্প কেমন বলতে পারেন সেটা জানার জন্যে। বেশির ভাগ মানুষই গল্প বলতে পারে না। যেমন আমার বাবা। বাবা যেহেতু আপনাকে পছন্দ করেন কাজেই ধরে নিতে পারি আপনিও বাবার মতো গল্প বলতে পারেন না।

শামা দোকান থেকে বের হলো। তার পেছনে পেছনে বের হলো আতাউর। শামা বলল, আ আপনার অফিস নেই?

আতাউর বলল, অফিস আছে। আমি ছুটি নিয়েছি।

ছুটি নিয়েছেন কেন?

শরীরটা ভাল না। ভাবলাম ঘরে শুয়ে থেকে বিশ্রাম করব।

কই আপনিতে ঘরে শুয়ে নেই। দোকানে দোকানে ঘুরছেন।

আতাউর বিব্রত ভঙ্গিতে কাশল। শমা বলল, আপনি সিগারেট ধরাচ্ছেন নাতো। সিগারেট ধরান।

আতাউর বলল, আমি সিগারেট খাই না।

একটু আগে যে বললেন, সিগারেট কেনার জন্যে দোকানে ঢুকেছেন?

আমার জন্যে না। আমার বোনের হ্যাসবেন্ডের জন্যে। দুলাভাই খুব সিগারেট খান। কেউ তাকে সিগারেট উপহার দিলে তিনি খুব খুশি হন। আমি মাঝে মাঝে তাকে সিগারেট দেই।

ও আচ্ছা।

শামা এখন কী করবে বুঝতে পারছে না। রিকশা ঠিক করে বাসার দিকে রওনা হবে? নাকি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আরো কিছুক্ষণ গল্প করবে?

এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গল্প করা যায় না। গল্প করতে হয় হাঁটতে হাঁটতে। কিংবা কোথাও বসতে হয়। ন’আনির জমিদার মিস্টার আতাউর কি এই সহজ সত্যটা জানে? মনে হয় জানে না।

আতাউর বলল, এশা কেমন আছে?

শামা বলল, ভাল আছে। হঠাৎ এশার কথা জানতে চাইছেন কেন?

এম্নি। কোনো কারণ নেই।

ওকেতো আপনি দেখেনও নি।

দেখেছি। একবার জানালা দিয়ে তাকিয়েছিল। তুমি কি এখন বাসায় চলে যাবে?

জি।

দাঁড়াও রিকশা ঠিক করে দেই।

রিকশা ঠিক করতে হবে না। আমিই রিকশা ঠিক করতে পারব।

আতাউর খুবই অস্বস্তির সঙ্গে বলল, শামা তুমি কি আমার সঙ্গে এক কাপ চা খাবে?

কোথায় চা খাবেন?

কোনো রেস্টুরেন্টে বসে বা ধর…

শামা তাকিয়ে আছে। আতাউর তার কথা শেষ করতে পারল না। অসহায় ভঙ্গিতে তাকাল। শামা বলল, দুপুরবেলা কি চা খাবার সময়?

না তা না। মানে… আচ্ছা ঠিক আছে, রিকশা করে দেই।

শামা বলল, আপনার যদি খুব চা খেতে ইচ্ছা করে তাহলে আমার সঙ্গে বাসায় চলুন। আপনাকে চা বানিয়ে খাওয়াব।

আতাউর এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন প্রস্তাবটা তার মনে ধরেছে। শামা ভেবেই পাচ্ছে না জমিদার খাতাউর সাহেব বোকা না-কি! যদি সত্যি সত্যি মানুষটা বলে, চল যাই’ তাহলে বুঝতে হবে মানুষটা বোকা। মেয়েদের সবচে’ বড় অভিশাপ হলো— বোকা স্বামীর সঙ্গে সংসার যাপন। বোকা স্বামীরা স্ত্রীকে টেবিল ভাবে। ঘরের এক কোণায় টেবিলটা পড়ে থাকবে। চেয়ারের তাও নড়াচড়ার সুযোগ আছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়া হয়। টেবিলের সে সুযোগও নেই।

শামা বলল, আপনার চিন্তা শেষ হয়েছে? কী ঠিক করলেন?

তোমাদের বাসায় কেউ কিছু মনে করবে নাতো?

মনেতো করবেই। কী মনে করে সেটা হলো কথা।

এশা কি বাসায় আছে?

জানি না।

আতাউর অস্বস্তির সঙ্গে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে।

শামা বলল, আপনি দ্রুত মন ঠিক করুন। এতক্ষণ রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলা যায় না। দেখুন না সবাই তাকাচ্ছে আমাদের দিকে।

তুমি কি যেতে বলছ?

আমি কিছুই বলছি না। যা বলার আপনিই বলছেন।

চল যাই।

দু’টা রিকশা ঠিক করুন। একটায় আমি যাব, পেছনে পেছনে আপনি যাবেন।

তোমার মা কিছু মনে করবেন নাতো?

শামা জবাব দিল না। তার খুবই বিরক্তি লাগছে।

বাইরের বারান্দার কাঠের চেয়ারে আতাউরকে বসিয়ে শামা ঘরে ঢুকল। আশ্চর্য ব্যাপার বাসা খালি! সুলতানা তার ঘরে দরজা ভেজিয়ে শুয়ে আছেন। এশা নেই, মন্টু নেই। কাজের মেয়েটা বাথরুমে কাপড় ধুচ্ছে। সদর দরজাও খোলা। যে কেউ দরজা খুলে টিভি ভিসিআর নিয়ে চলে যেতে পারত।

সুলতানা মেয়েকে দেখে উঠে বসলেন। শামা বলল, মা শরীর খারাপ?

সুলতানা বললেন, সামান্য গা গরম।

তোমাকে বিছানা থেকে নামতে হবে না। শুয়ে থাক। এশা কোথায়? মন্টু কোথায়?

মন্টু কোচিং সেন্টারে। সন্ধ্যাবেলায় আসবে। এশা কখন আসবে কিছু বলে যায় নি।

দুপুরের খাবার কী?

ডাটা দিয়ে চিংড়ি মাছ।

আর কিছু নেই?

না। ডাটা দিয়ে চিংড়ি মাছতো তোর পছন্দ।

ভাজা ভুজি কিছু কর নি?

না। ডাল আছে। ঘরে কি বেগুন আছে মা?

বেগুন আছে। বেগুন ভাজা খাবি?

হুঁ। তোমাকে বেগুন ভাজতে হবে না। কাজের মেয়েটাকে বলে দাও। আর একটু আলু ভাজিও করতে বল। দুপুরে একজন গেস্ট খাবে।

কে?

শামা জবাব না দিয়ে হাসল। সুলতানা গেস্টের ব্যাপারটায় গুরুত্ব দিলেন না। শামার বান্ধবীদের কেউ কেউ হঠাৎ এসে পড়ে বলে ভাত খাব। তেমনই কেউ হবে। সুলতানা বললেন, আগে খবর দিয়ে রাখলেতত গোশত রান্না করতাম।

শামা বলল, আমার এক হাজার টাকা তুমি আজ আমাকে দেবে। দুপুরে খাবার পর আমি উপহার কিনতে যাব। ভয় নেই একা যাব না, দুপুরে যে গেস্ট আমার সঙ্গে খাচ্ছে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাব। আর বাসায় ফিরব না। বিয়ে বাড়িতে চলে যাব। সারা রাত থেকে পরদিন ফিরব।

আজ রাতেই বিয়ে?

হ্যাঁ। আজ ১৭ তারিখ না? কোনো সমস্যা নেই মা। বাবার কাছ থেকে পারমিশন নেয়া আছে।

উপহার কিনেই বিয়ে বাড়িতে যাবার কোন দরকার নেই। বাসায় ফিরবি, তোর বাবাকে বলে তারপর যাবি। তোর বাবা তোকে পৌছে দিয়ে আসবে।

আমাকে বাসায় ফিরতেই হবে?

অবশ্যই। তোর বাবার সঙ্গে দেখা না করে গেলে সে কী হৈচৈটা করবে বুঝতে পারছি না? বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হবে। তুই তোর বাবাকে চিনিস না?

আমার ধারণা বিকেলে না ফিরলে বাবা খুশিই হবেন। যাই হোক, মা তুমি কাজের মেয়েটাকে ইট্ৰাকসন দিয়ে দাও। দেখি তোমার জ্বরের অবস্থা। জ্বর আছে। তুমি শুয়ে থাক। বিছানা থেকে নামবে না।

আতাউর চুপচাপ বারান্দায় বসে আছে। এ বাড়িতে হঠাৎ এসে সে যতটা অস্বস্তি বোধ করবে বলে ভেবেছিল ততটা অস্বস্তি বোধ করছে না। বরং ভাল লাগছে। এ বাড়ির বারান্দাটা সুন্দর। বাড়ির সামনে অনেক গাছপালা থাকায় রাস্তা থেকে কিছু দেখা যায় না। সে বসে আছে বাইরের বারান্দায় অথচ তার কাছে মনে হচ্ছে সে বাড়ির ভেতরেই বসে আছে। তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না, সে সবাইকে দেখছে। শামা বারান্দায় এসে দাঁড়াল। আতাউর সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। শামা বলল, আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন কেন?

আতাউর বলল, বুঝতে পারছি না কেন। মনে হয় অভ্যাস বলে।

শামা বলল, এখন বাজে প্রায় দুটা। চা না খেলে হয় না?

হয়। আমার চায়ের তেমন অভ্যাসও নেই। এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দাও।

আমাদের বাসায় ফ্রিজ নেই। বাড়িওয়ালা চাচার বাসায় আছে। আমি ঠাণ্ডা পানি এনে দিচ্ছি। আপনি খেয়ে চুপচাপ আধঘণ্টার মতো বসে থাকতে পারবেন?

হ্যাঁ পারব। শোন ঠাণ্ডা পানি লাগবে না। নরম্যাল পানি দিলেই হবে।

আপনি আধঘণ্টা বসে থাকবেন। আধঘণ্টার মধ্যে আমি গোসল সারব। তারপর আপনি আমার সঙ্গে ভাত খাবেন।

না না ভাত খাবার দরকার নেই। | দুপুরবেলা আপনি এসেছেন, আর আমি আপনাকে ভাত না খাইয়ে ছেড়ে দেব? অসম্ভব। আপনি আমার সঙ্গে ভাত খাবেন তারপর আমি আপনাকে নিয়ে বের হব।

কোথায় যাবে।

আমার এক বান্ধবীর আজ বিয়ে। তার জন্যে গিফট কিনব। আপনি সঙ্গে থাকবেন। তারপর আপনি আমাকে ঐ বান্ধবীর বাসায় পৌঁছে দেবেন। বান্ধবীর বাড়ি উত্তরায়। পারবেন না?

পারব।

আমার কাণ্ডকারখানা কি আপনার কাছে খুব অস্বাভাবিক লাগছে?

না।

মা এখনো জানে না যে আপনি এসেছেন। মা’কে আমি এখনো কিছু জানাই নি। আপনাকে যখন খাবার জন্যে ভেতরে ডাকব তখনি মা প্রথম দেখবে এবং বিরাট একটা ধাক্কার মতো খাবে। তাঁর মনও খুব খারাপ হবে।

মন খারাপ হবে কেন?

মন খারাপ হবে কারণ আজ দুপুরে খাবার আয়োজন খুব খারাপ। মা আপনাকে দেখে কি চমকানিটাই না চমকাবে! এটা ভেবেই আমার ভাল লাগছে।

তুমি মানুষকে চমকে দিয়ে মজা পাও?

হ্যাঁ খুব মজা পাই। পত্রিকা দেব? বসে বসে পত্রিকা পড়বেন?

কিচ্ছু দিতে হবে না। তুমি গোসল করে আস।

এর মধ্যে যদি এশা চলে আসে তাহলে এশাকে অবশ্যি বলবেন আপনার কথা যেন মা’কে কিছু না বলে। বলতে পারবেন না।

পারব।

বাথরুমে ঢোকার মুখে সুলতানা মেয়েকে ধরলেন। বিস্মিত গলায় বললেন, তুই কার সঙ্গে কথা বলছিলি?

শামা সহজ গলায় বলল, আমিতো আগেই বলেছি। আমার গেস্ট। দুপুরে খাবে।

পুরুষ মানুষ তোর গেস্ট মানে?

পুরুষ মানুষ আমার গেস্ট হতে পারে না?

সুলতানা চাপা গলায় বললেন, হাসবি না শামা। রঙ্গ রসিকতাও করব না। এই ছেলে কে?

আমার পরিচিত।

কোন সাহসে তুই তাকে নিয়ে বাসায় উপস্থিত হলি? তোর মাথায় বুদ্ধি শুদ্ধি নেই? এক্ষুণি চলে যেতে বল।

ভদ্ৰলোক দুপুরে খাবেন বলে বসে আছেন। এখন কী করে তাকে চলে যেতে বলি? তোমার যদি এতই অসহ্য লাগে তুমি চলে যেতে বল।

আমি বলব কেন? তুই দাওয়াত করে এনেছিস তুই বলবি।

আচ্ছা যাও আমিই বলব। গোসল সেরে নেই তারপর বলি।

বলে এসে তারপর বাথরুমে ঢুকবি। তোর সাহস দেখে আমি হতভম্ব। তুই একে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার ফন্দি করেছি। এত ফন্দি ফিকির কার কাছ থেকে শিখেছিস?

শামা মা’কে সরিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। সুলতানা বাথরুমের দরজার সামনে থেকে নড়লেন না। ক্রমাগত গজরাতে থাকলেন। শামার খুব মজা লাগছে। হঠাৎ তার মনে হলো সে তার দীর্ঘ জীবনে এত আনন্দ পায় নি। এ রকম মনে হবার কারণ কী। এই ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় নেই। প্রেম নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা গুজণ্ডজ করে গল্প করে নি। লম্বা লম্বা চিঠি চালাচালি করে নি। অথচ এখন এই মুহুর্তে তার কথা ভাবতে ভাল লাগছে। শুধু যে ভাল লাগছে। তা না বুকের মধ্যে ব্যথা ব্যথা লাগছে। এটাই কি প্ৰেম? হঠাৎ শামার চোখে পানি এসে গেল। চোখে পানি আসার অর্থইবা কী?

বাথরুমের দরজায় ধাক্কা পড়ছে। সুলতানা দরজা ধাক্কাচ্ছেন। শামা বলল, কী হলো মা? তুমি দেখি দরজা ভেঙে ফেলার জোগাড় করছ।

সুলতানা ফিসফিস করে বললেন, বারান্দায় আতাউর বসে আছে না?

হ্যাঁ। ফিসফিস করছ কেন? ফিসফিসানির কোনো কারণ ঘটে নি।

তুই এই নাটকটা কেন কলি? কেন আমাকে বললি না আতাউর এসেছে।

মা প্লিজ ফিসফিস করবে না তো। মনে হচ্ছে তুমি কথা বলছ না। হাঁস কথা বলছে।

ঘরে খাবারের আয়োজন এত খারাপ। তুই এটা কী করলি বলতে মা?

আমি কিছুই করি নি। তোমার কি ধারণা আমি দাওয়াত করে নিয়ে এসেছি? ভদ্রলোক নিজেই এসেছেন। মা শোনো, তুমি কি দয়া করে জমিদার সাহেবকে এক গ্ৰাস পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করবে? আমার কাছে ঠাণ্ডা পানি চেয়েছেন, আমি ভুলে গেছি।

কী সর্বনাশের কথা, তুই ভুললি কী করে! না জানি কী মনে করছে।

কিছুই মনে করছে না মা। তুমি মুত্তালিব চাচার ফ্রিজ থেকে এক বোতল পানি আনাও তারপর ন’আনির জমিদারকে এক গ্লাস পানি পাঠাও। আর শোন মা, বাথরুমের সামনে থেকে সর। আমি লক্ষ করেছি আমি বাথরুমে ঢুকলেই তোমার একশ একটা গল্প করার নেশা চাপে।

চট করে একটু পোলাও করে ফেলব?

পোলাও কী দিয়ে খাবে। বেগুন ভাজা দিয়ে? ঘরে ডিম আছে। ডিমের কোরমা করি?

তোমার যা ইচ্ছা কর। এখন দয়া করে বাথরুমের সামনে থেকে সর। আমার খুবই বিরক্তি লাগছে।

শামা গায়ে পানি ঢালছে। গরমের সময় শরীরে পানি ঢাললেই ভাল লাগে। আজ অন্যদিনের চেয়েও অনেক বেশি ভাল লাগছে কেন? শামার হঠাৎ মনে। হলো বাথরুমের বন্ধ দরজার ওপাশে যদি মা দাঁড়িয়ে না থেকে খাতাউর সাহেব দাঁড়িয়ে থাকত তাহলে চমৎকার হত। গায়ে পানি ঢালতে ঢালতে আতাউর সাহেবের সঙ্গে গল্প করা যেত। কী গল্প করা যায়? কোনো মানে হয় না এমন সব গল্প। ধাধা জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়? মাকড়সার একটা ধাধা আছে। কেউ এই ধাধার উত্তর পারে না। এটা জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। শামা মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে বলবে, আচ্ছা, আপনি নিশ্চয়ই জানেন মাকড়সা জাল বানায়। বানায় না?

আতাউর বলবে, হ্যাঁ, জানি।

সেই জালে অন্যান্য পোকা আটকায়, মাকড়সা সেগুলো খায়। এটা জানেন তো?

হা জানি।

আচ্ছা তাহলে বলুন মাকড়সা তো পোকাই। সে কেন নিজের জালে আটকায় না?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress