ইয়াকুব সাহেব তাঁর শোবার ঘরে
ইয়াকুব সাহেব তাঁর শোবার ঘরে, খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন। এই সময় তার অফিসে থাকার কথা। আজ অফিসে যাননি। অফিসের পুরনো কর্মচারী মনসুরকে ডেকে পাঠিয়েছেন। এক বছর হল মনসুরের কোনো চাকরি নেই। অফিসের দুই লাখ টাকার হিসেবে গণ্ডগোল হবার পর তার চাকরি চলে গেছে। তারপরেও সে নিয়মিত অফিসে যাতায়াত করে। সে পুরনো কর্মচারীদের একজন। এই হিসেবে তাকে প্রতিমাসেই আগের বেতনের কাছাকাছি পরিমাণ টাকা দেয়া হয়। অফিসে তার বসার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। সবার টেবিলে সে বসে। পুরনো দিনের গল্প করে। চা-টা খায়। চাকরি চলে গেলেও অফিসে তার অবস্থানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। কারণ ইয়াকুব সাহেব মাঝে মাঝে তাকে ডেকে নিয়ে গল্প করেন।
ইয়াকুব সাহেব বললেন, কেমন আছ মনসুর?
মনসুর বিনয়ে গলে গিয়ে বলল, ভালো আছি স্যার।
বোস।
মনসুর বসল। ইয়াকুব সাহেবের সামনে একটা নিচু চেয়ার রাখা। মনসুর এসে বসবে এইজন্যেই রাখা। ইয়াকুব সাহেবের শোবার ঘরে খাট ছাড়া কোনো আসবাবপত্র নেই।
ইয়াকুব সাহেব পা দোলাতে দোলাতে বললেন, জয়দেবপুরে আমাদের যে প্রজেক্ট চলছে–শুনলাম তুমি দেখতে গিয়েছিলে।
মনসুর বলল, এই নিয়ে তিনবার গিয়েছি স্যার। মাঝখানে একবার গিয়ে দুই দিন দুই রাত ছিলাম।
কেমন দেখলে?
বললে আপনি রাগ করবেন, টাকাপয়সার হরির লুট চলছে। হাসান নামে যাকে কাজ দিয়েছেন সে বাতাসে টাকা ওড়াচ্ছে। নিজের টাকাতো না, পরের টাকা নষ্ট করতে মায়া লাগে না। দেখে কষ্ট লাগল।
খুব টাকা ওড়াওড়ি হচ্ছে?
দুইটা জেনারেটর আছে— তারপরেও আরেকটা নতুন জেনারেটর কেনা হয়েছে। রাজশাহী থেকে মাটির ঘরের কারিগর এসেছে দশ জন। এদের কোন কাজকর্ম নাই। খাওয়া দাওয়া করছে। ঘুরাফিরা করছে। পরের টাকা হলেই এমনভাবে ওড়াতে হবে?
তাতো ঠিকই। পরের টাকায় মায়া স্বাভাবিকভাবেই কম থাকবে–তাই বলে এত কম থাকাও তো ঠিক না। কাজকর্ম হচ্ছে কেমন?
কাজকর্মেরও কোনো আগামাথা দেখলাম না। প্রথম একটা জায়গায় খাল কাটা শুরু হয়েছে–একশো কুলি সারাদিন কাজ করল। সন্ধ্যাবেলা হাসান সাহেব বললেন, না, খালটা এখানে হবে না। অন্য দিক দিয়ে হবে।
খুব খাল কাটাকাটি হচ্ছে?
কী যে হচ্ছে না বোঝা স্যার মুসকিল। লণ্ডভণ্ড কাণ্ড। প্রতিদিনই কিছু না-কিছু যন্ত্রপাতি আসছে। একটা বুলড়জার ভাড়া করেছে— বুলডজারটা খামাখা পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবহার দেখলাম না।
কথা বলেছ হাসানের সঙ্গে?
জ্বি না। ইচ্ছা করে নাই।
রাতে ঘুমিয়েছ কোথায়?
থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা। অন্যের টাকা-তা, সমানে খরচ করতেছে। বিরাট ঘর আছে, ভালো বাথরুম, খাওয়াও ভালো।
ইয়াকুব সাহেব বললেন, টাকা খরচ করতে পারা কিন্তু সহজ ব্যাপার। অনেকেই টাকা খরচ করতে পারে না। ধর কাউকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে বললে ইচ্ছামতো খরচ কর। দশ দিন পরে খোঁজ নিতে গেলে কত খরচ হয়েছে। দেখা গেল খরচ করতে পেরেছে তিন হাজার টাকা।
মনসুর বলল, এই লোক খরচ পারে। এক কোটি টাকা এই লোক দশ দিনে খরচ করবে।
ইয়াকুব বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ। এক কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেট সে শেষ করে ফেলেছে। তাকে আরো টাকা দিতে হবে।
মনসুর চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে রইল। কোনো কথা বলতে পারলনা। বয়স হলে মানুষের মাথা আউলা হয়ে যায়। আউলা মানুষ কী করবে না করবে বুঝতে পারে না। এই বুড়োর দেখি সেই ঘটনাই ঘটেছে। মাথী ফোর্টি নাইন হয়ে গেছে।
ইয়াকুক সাহেব বললেন, ঠিক আছে মনসুর তুমি যাও।
মনসুর কিছু না বলে বের হয়ে গেল। তার মন খুব খারাপ হয়েছে। সামান্য দুই লাখ টাকার কারণে তার চাকরি চলে গেছে অথচ কোটি টাকার কোনো হিসাব নাই। বেকুবি ছাড়া এর আর কী মানে হতে পারে। আল্লাহপাক এরকম কেন? বড় বড় বেকুবের কোলে টাকার বস্তা ঢেলে দিয়েছে। ঘটনা কি তাহলে এরকম যে, যত বড় বেকুব, তার তত টাকা।
মনসুর ঘর থেকে বের হবার সঙ্গে সঙ্গেই ইয়াকুব সাহেবের ব্যক্তিগত ডাক্তার ঘরে ঢুকলেন। বয়স্ক মানুষ। প্রাকটিস অনেকদিন হল ছেড়ে দিয়েছেন, তবে ইয়াকুব সাহেবের চিকিৎসা করেন। ভদ্রলোকের নাম আবদুল মোহিত। স্বল্পভাষী মানুষ। নানাবিধ ব্যাধিতে সারাবছর ভুগছেন। তিনি রোগের ব্যারোমিটার। ঢাকা শহরে যে কোন রোগ তাকে দিয়ে প্রথম শুরু হবে।
ইয়াকুব সাহেব বললেন, শরীর কেমন ডাক্তার?
ডাক্তার সাহেব বললেন, মোটামুটি।
পা ফুলে গিয়েছিল বলেছিলে। পায়ের ফোলা কমেছে?
কিছু কমেছে।
বাইরে কোথাও গিয়ে শরীর দেখিয়ে আসো।
দেখি।
মোহিত সাহেব ব্লাডপ্রেশারের যন্ত্রপাতি বের করে ইয়াকুব সাহেবের ব্লডিপ্রেশার মাপলেন। রক্ত নিলেন। ইউরিনের স্যাম্পল তৈরি ছিল সেটিও নিলেন। মোহিত সাহেব কিছুদিন হল একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাব দিয়েছেন। ইয়াকুব সাহেবের রক্ত ইউরিন কিছুদিন পরপরই সেখানে পরীক্ষা করা হয়।
ডাক্তার সাহেব বললেন, আমি যাই।
ইয়াকুব সাহেব বললেন, কিছুক্ষণ বোস গল্প করি।
ডাক্তার সাহেব বসলেন। তাঁর মুখ বিষণ্ণ। গল্প করার ব্যাপারে তাঁর কোনো আগ্রহ দেখা গেল না। ইয়াকুব সাহেব বললেন, চুপ করে আছ কেন? কথা বলো।
মোহিত সাহেব বললেন, কী কথা বল?
যা তোমার বলতে ইচ্ছা করে। কিছু বলতে ইচ্ছা না করলে চুপচাপ সামনে বসে থাকো।
মোহিত সাহেব চুপচাপ সামনে বসে রইলেন। ইয়াকুব সাহেব বললেন, সিগারেট খাবে?
না। ছেড়ে দিয়েছি।
একটা খেয়ে দেখ। মৃত্যুর সময় তো এসেই গেছে। মনের সব সাধ আহ্লাদ মিটিয়ে ফেলা ভালো।
মোহিত সাহেব কিছু বললেন না।
ইয়াকুব সাহেব খুব আগ্রহ নিয়ে বললেন, জয়দেবপুরে আমি যে বিরাট একটা কাজে হাত দিয়েছি শুনেছ নাকি?
শুনেছি।
আমার নাতনী আসবে। নাতনীকে এবং আমার মেয়েকে চমকে দেবার ব্যবস্থা।
চমকে দেবার জন্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন?
হুঁ করছি।
মোহিত সাহেব লম্বা নিশ্বাস ফেলে বললেন, টাকা আছে খরচ করতে অসুবিধা কী? পাঁচ কোটি টাকা খরচ করলে— এক মাসের ভেতর অন্য কোনো ব্যবসা থেকে পাঁচ কোটি টাকা চলে আসবে।
তা হয়তো আসবে। না আসলেও অসুবিধা নেই।
মোহিত সাহেব অনেকক্ষণ চুপ করে বসে আছেন। একেবারেই কোনো কথা না-বলা অভদ্রতা হয় ভেবেই হয়তো বললেন, আপনার নাতনী কবে আসবে?
ইয়াকুব সাহেব আগ্রহ নিয়ে বললেন, জুন মাসে আসবে। সে তার জন্মদিন এখানে করবে।
তার আগেই কি শিশুপার্ক না কী যেন বানাচ্ছেন সেটা শেষ হবে?
অবশ্যই হবে। এক্সপার্টের হাতে পড়েছে। কাজ হচ্ছে মেশিনের মতো।
দেখেছেন?
না দেখিনি। নাতনীর সঙ্গে দেখব। তবে কাজ কেমন আগাচ্ছে সে রিপোর্ট প্রতিদিন পাচ্ছি।
উঠি। শরীরটা ভালো লাগছে না। বিশ্রাম করব।
বোস ভাক্তার বোস। আরেকটু বোস। শরীর ভালো লাগছে না এইজনেই তো বেশি বসা দরকার। বোস গল্প কর।
মোহিত সাহেব অনিচ্ছার সঙ্গে বসে আছেন। ইয়াকুব সাহেব অতি বুদ্ধিমান মানুষ। কেউ একজন তার সামনে অনাগ্রহ নিয়ে বসে থাকবে এটা বুঝতে না-পারার কোনো কারণ তার নেই। কিন্তু মোহিত সাহেবের মনে হচ্ছে ইয়াকুব সাহেব এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন না।
ডাক্তার!
জ্বি।
তুমি যেটাকে শিশুপার্ক বললে, সেটা আসলে পার্ক না। তার নাম দেয়া হয়েছে, মায়ানগর। নামটা কেমন?
খারাপ না।
মায়ানগর নামটা ভালো, না-কি মায়াপুরী?
একই।
মায়ানগরে যাবার পর তোমার চোখে মায়া লেগে থাকবে। যাই দেখবে মনে হবে মায়া-বিভ্ৰম-জাদু।
ভালো তো।
একটা ডায়নোসর পার্ক হচ্ছে। দশটা নানান ধরনের ডায়ানোসর বানানো হচ্ছে। ডায়নোসরগুলি কিন্তু মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকবে না। এক হাঁটু পানিতে থাকবে।
ও।
ডায়নোসর তো স্থবির। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় না। কাজেই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে তাদের স্থবিরতা খানিকটা দূর হয়।
ও।
কী করা হয়েছে শোনো। যে পানির উপর ডায়নোসরগুলি দাঁড়িয়ে আছে–সেই পানির রঙ পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভোরবেলায় পানির রঙ থাকবে গাঢ় নীল। যতই সময় যাবে পানির রঙ বদলাতে থাকবে। ঠিক সন্ধ্যায়, সূর্য ডোবার সময় পানির রঙ হবে গাঢ় লাল। পানির নিচে থাকবে লাইটিঙের ব্যবস্থা। তোমার কাছে ব্যবস্থাটা কেমন লাগছে?
খারাপ না।
আমি শুনে মুগ্ধ হয়েছি। এই বয়সে আমি যদি মুগ্ধ হই তাহলে বাচ্চাদের অবস্থা কী হবে চিন্তা কর।
আজ উঠি। সামান্য কাজও আছে। বড়মেয়ের শাশুড়ি আজমির শরিফ যাচ্ছেন। আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন।
কাল পরশু আবার এসো, মায়ানগরের অন্য প্রজেক্টগুলির কথা বলব। কুবরিকের একটা ছবি আছে, তুমি হয়তো দেখনি 2001 Space odessg, আর্থার সি ক্লার্কের উপন্যাস নিয়ে বানানো ছবি। সেখানে একটা অদ্ভুত স্লেভ আছে। মসৃণ স্লেভ–অনেকদূর পর্যন্ত উঠেছে। সেখান থেকে বিচিত্র সুরের সংগীত শোনা যায় সেই ব্যবস্থাও হচ্ছে। আমার কাছে ডিজাইনের কপি আছে। তোমাকে দেখাব।
আচ্ছা।
ইয়াকুব সাহেব ছেলেমানুষের মতো কিছুক্ষণ পা নাচালেন। হাতের কাছে রাখা সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে ধরালেন। এতক্ষণ আনন্দে ছটফট করছিলেন হঠাৎ সব আনন্দ দূর হয়ে গেল। তার মনে হল এলেনা শেষপর্যন্ত আসবে না। যাবার তারিখ ঠিকঠাক হবে, প্লেনের টিকিট কাটা হবে। তখন বড় ধরনের কোনো ঝামেলা হবে। এলেনার মাম্পস হবে। কিংবা তার স্কুল থেকে ঠিক করা হবে ছাত্রছাত্রীদের সামার-ক্যাম্পে যেতে হবে। এলেনা নিজেই ডিজাইন করে একটা কার্ড পাঠাবে। সেই কার্ডে লেখা থাকবে : Grandpa Sorry.
এর আগেও দুবার এই ঘটনা ঘটেছে। এবারেরটা নিয়ে হবে তিনবার। কথায় বলে দানে দানে তিনবার। তবে এবার যদি এলেনা আসতে না পারে তাহলে আর তার সঙ্গে দেখা হবে না। এই সত্য ইয়াকুব সাহেব খুব ভালো করে জানেন। তিনি নিজেকে গুটিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। তাঁর কাজকর্ম বহুদূর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, কখনো মনে হয়নি একটা সময় আসবে যখন কাজ গুটানোর প্রয়োজন পড়বে। কাজ ছড়ানো যেমন কঠিন, গুটানোও কঠিন। ছড়ানোর ব্যাপারটা আনন্দময়, গুটানোর কাজটা বিষাদমাখা।
ইয়াকুব সাহেব ভুরু কুঁচকালেন। হিসেবে কিছু ভুল হচ্ছে–তিনি আসলে কাজ গুটাচ্ছেন না। আরো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এলিনের জন্মদিনে বাজারে নতুন একটা চা আসছে। তার নিজের বাগানের চা। চায়ের নাম ঠিক হয়েছে। এদেশের সবচে বড় বিজ্ঞাপনসংস্থাকে দেয়া হয়েছে নতুন চায়ের কেমপেইন ঠিকমতো করতে। পোস্টার দিয়ে সারাদেশ মুড়ে দিতে হবে। টিভির যে-কোনো চ্যানেল খুললে প্রতিদিন অন্তত দুবার যেন চায়ের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। তিনি যতদূর জানেন টিভি স্পট তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেছে। কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কিছু কাজ হচ্ছে বোম্বেতে। একটা বিজ্ঞাপনচিত্রের আইডিয়া তার খুব পছন্দ হয়েছে। গম্ভীর ধরনের বাবা খবরের কাগজ পড়তে পড়তে চা খাচ্ছেন। তার ফুটফুটে ছ-সাত বছরের বাচ্চামেয়ে পাশে এসে দাঁড়াল। হাতে একটা পিরিচ। বাবা পিরিচে খানিকটা চা ঢেলে দিলেন। মেয়ের মুখে হাসি। সে পিরিচের চায়ে চুমুক দিচ্ছে। লেখা ফুটে উঠল : ইয়া-চা।
ইয়াকুব সাহেব নিজেকে সব কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে রাখবেন, এ ধরনের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে ঘটনা সে রকম ঘটবে না। তার শরীর খুবই অসুস্থ্য। ডাক্তাররা মোটামুটি ইংগিত দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর উচিত বড় যাত্রার প্রস্তুতি নেয়া। ব্যাগ গোছানো। তা না করে তিনি শেষ মুহূর্তে আরও বড় কাজে ঝাপিয়ে পড়তে চাচ্ছেন। চা কোম্পানির চা বাজারজাত করার নানান পরিকল্পনা তার মাথায় আসছে। চায়ের নাম তার পছন্দ হচ্ছে না। নামের ব্যাপারে তিনি এখন একটা সিদ্ধান্তে এসেছেন।
অসংখ্য নামের মধ্যে ইয়াকুব সাহেবের ইয়া-চা নামটা পছন্দ হয়েছে। ইয়াকুব নামের প্রথম দুটি অক্ষর ইয়া-চার মধ্যে আছে সেজন্যে না। ইয়া শব্দটাই আনন্দময়। ইয়াকুব সাহেবের ধারণা, ঠিকমতো বিজ্ঞাপন চালিয়ে যেতে পারলে মানুষদের মধ্যে একটা ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া যাবে— চা কয় রকম? দুরকম। সাধারণ চা এবং ইয়া-চা।
অচ্ছাি বিজ্ঞাপনের ভাষা হিসেবে এটাও তো খারাপ না।
কী চা খাবেন? সাধারণ চা, নাকি ইয়া-চা?
ইয়া-চা নামটা দিয়েছে হাসানের সঙ্গে যে মেয়েটি এসেছিল সে। নামকরণের জন্যে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা চেক সে পাবে। এটা করা হবে সুন্দর একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানটা করা হবে সোনারগাঁ হোটেলে। অতিথিদের সবাইকে সুন্দর কাপড়ের ব্যাগে একব্যাগ চা দেয়া হবে। চায়ের সঙ্গে ইয়া-চা লগো বসানো একটা টিপট এবং দুটা কাপ। অনুষ্ঠান শেষ হওয়া মাত্র কেমপেইন শুরু হবে।
বিজ্ঞাপনের ক্ষমতা অসাধারণ। তিনি এই ক্ষমতা ব্যবহার করে এদেশের প্রতিটি মানুষের মাথায় ইয়া-চা ঢুকিয়ে দেবেন। তার এক জীবনে তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন। এখানেও তাই হবে।
ইয়াকুব সাহেব আবারো পা দোলাতে শুরু করেছেন। তাঁর চোখেমুখে বিষাদের ছাপ এখন আর নেই। তাঁকে শিশুর মতোই আনন্দিত মনে হচ্ছে।