Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৃষ্টি ও মেঘমালা (২০০১) || Humayun Ahmed » Page 11

বৃষ্টি ও মেঘমালা (২০০১) || Humayun Ahmed

ফিরোজের জন্যে লীনার খুব মায়া

ফিরোজের জন্যে লীনার খুব মায়া লাগছে।

বেচারা কী বিপদেই না পড়েছে। তার বাড়ির সবাই ঘোষণা করেছে ফিরোজের বিয়েতে থাকবে না। বড় ছেলের বিয়ে অথচ কেউ থাকবে না। কী অদ্ভুত কথা। ফিরোজ পরামর্শের জন্যে বার বার লীনার কাছে ছুটে আসছে। লীনা কী পরামর্শ দেবে? তার কি এত বুদ্ধি আছে। একেকবার ফিরোজ পরামর্শের জন্যে আসছে আর মায়ায় লীনার মনটা ভরে যাচ্ছে।

কম্যুনিটি সেন্টারের উৎসবটা বাতিল করে দেই। কি বল লীনা। সবাই আসবে বাবা-মা ভাই-বোন কেউ আসবে না।

দাওয়াতের চিঠি যাদের দিয়েছ তারা কি করবে?

বাড়ি বাড়ি গিয়ে না করে আসব। একটাই সমস্যা ওদের এডভ্যান্স টাকা যা দিয়েছিলাম সেই টাকাটা মার যাবে।

কত টাকা দিয়েছিলে?

সাত হাজার টাকা।

উৎসব না করলে বেশ কিছু টাকাতো তোমার বেঁচেও যাবে।

তা বাঁচবে।

তোমার যে অবস্থা এখনতো তোমার টাকা দরকার।

ফিরোজ চুপ করে আছে। তার চিন্তিত মুখ দেখে লীনার মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছা করছে গায়ে হাত দিয়ে বলে এত দুঃশ্চিন্তা করো না। একটা ভালো ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত হবেই।

লীনা?

বল।

আসল সমস্যাতো তোমাকে বলাই হয় নি।

আরও সমস্যা আছে নাকি?

আছে। বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে উঠব কোথায়? আগে ঠিক করাছিল–বাবা মার সঙ্গে থাকব। বড় একটা ঘর গুছিয়ে রেখেছি। এখনতো আর সেখানে তোমাকে নিয়ে তোলা যায় না।

তারা কি বলেছেন যে আমি সেখানে যেতে পারব না।

সরাসরি না বললেও আকারে ইংগিতে বলেছে।

হঠাৎ সমস্যাটা হল কেন?

আছে অনেক ব্যাপার। তোমাকে বলতে চাচ্ছি না।

এত দুঃশ্চিন্তা করোনা তো সব ঠিক হয়ে যাবে।

আপাতত ছোট একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করি। কি বল? বেতন যা পাই তা দিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকা সম্ভব না। কয়েকটা মাস যাক তারপর অন্য ব্যবস্থা হবে। কি বল?

বীনার সঙ্গে পরামর্শ করলে কেমন হয়?

ভালো হয় না। সমস্যাটা আমাদের। সমাধান আমাদের বের করতে হবে।

ঠিক আছে। চল ফ্ল্যাট ভাড়া করি।

ফ্ল্যাট একটা পাওয়া গেছে। সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া। দুটা ঘর-বারান্দা, রান্নাঘর। ফ্ল্যাট লীনার খুবই পছন্দ হয়েছে। এতো ভালো লাগছে ফ্ল্যাট সাজাতে। খাট কেনা, দরজা-জানালার পর্দা কেনা, চেয়ারটেবিল কেনা, রান্নার জন্যে হাড়ি-পাতিল কেনা। একেকবার লীনা দোকানে একেকটা জিনিস কিনতে যায় আর আনন্দে তার চোখে পানি চলে আসে। ছোট বাচ্চাদের একটা মশারি দেখে তার এত ভালো লাগল। ইচ্ছা করছিল এখুনি কিনে ফেলতে। সেটা কি আর সম্ভব? এখনো বিয়েই হয় নি আর সে কিনবে বাচ্চার মশারি।

ইয়াকুব সাহেবের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেকটা পাওয়া গেছে। টাকাটা লীনার খুব কাজে লেগেছে। তার শখের কিছু জিনিস সে কিনে ফেলেছে। একটা রঙিন টিভি কিনেছে, মিউজিক সেন্টার কিনেছে। ফিরোজের জন্যে সুন্দর সুন্দর কিছু সার্ট-পেন্ট কিনেছে। তারপরেও তার হাতে সতেরো হাজার টাকা আছে। কিছু টাকা হাতে থাকা দরকার। তাছাড়া ফ্রীজ এখনো কেনা হয় নি। স্টেডিয়ামে ফ্রীজের সব দোকান লীনা একা একা ঘুরে এসেছে। নানান রকমের ফ্রীজ আছে, লীনার পছন্দের রঙটা নেই। লীনার পছন্দ লাল রঙ। ঘরের কোণায় টুকটুকে লাল রঙের ফ্রীজ দেখতেই ভালো লাগবে।

বিয়ের ব্যবস্থা সব মোটামুটি ঠিক হয়ে আছে। ফিরোজ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসবে। কাজীও সঙ্গে করে আনবে। বিয়ে হয়ে যাবে। বিয়ের পর লীনা চলে যাবে তার ফ্ল্যাটে। সে কোনো কাজের লোক রাখবে না। রান্না-বান্না, ঘর গোছানো সব নিজেই করবে। ফিরোজকে বলবে সপ্তাহের বাজার এনে ফ্রীজে রেখে দিতে। নিজের সংসার শুরু করার এত আনন্দ লীনা আগে বুঝতে পারে নি।

বিয়ের উত্তেজনার কিছুই বীনাকে স্পর্শ করছে না। সে ব্যস্ত নিজের পড়াশোনা নিয়ে। লীনা যখন বোনের সঙ্গে গল্প করতে যায় বীনা -কুঁচকে বলে তোমাকে দশ মিনিট সময় দেয়া হল। এই দশ মিনিট আমাকে বিরক্ত করে শপিং-এ চলে যাও। অনেক কিছুই নিশ্চয় কেনার বাকি। চার্জার কিনেছ? কারেন্ট চলে গেলে চার্জার লাগবে।

লীনার ইচ্ছা করে বোনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় গল্প করে। বীনার সময় হয় না। বিয়ের আগের রাতে লীনা বোনের সঙ্গে ঘুমুতে গেল। বীনা বলল, গায়ে হাত না রেখে যদি ঘুমাতে পার তাহলে এসো। একটাই শর্ত গায়ে হাত দেবে না। লীনা বলল, তুই কি কোনো কারণে আমার উপর রেগে

আছিস?

বীনা বলল, না।

নতুন সংসার নিয়ে আমি বোধ হয় একটু বেশি আহ্লাদী করছি। তাই না?

বেশি আহ্লাদী করছ না। যতটুকু আহ্লাদী করবে বলে আমি ভেবেছিলাম ততটুকুই করছ।

আমার ব্যাপারে তোর হিসাব মিলে যাচ্ছে?

সামান্য গণ্ডগোল হচ্ছে। আমি বলেছিলাম বিয়ের পর তুমি এই পৃথিবীর সুখি মহিলাদের একজন হবে। এখন দেখা যাচ্ছে বিয়ের আগেই হয়ে গেছ?

লীনা তৃপ্তির হাসি হাসল। বীনা বলল, বিয়েতে তুমি তোমার স্যারকে দাওয়াত কর নি?

কোনো উৎসবতো হচ্ছে না। দাওয়াত করবো কি ভাবে।

বিয়ের খবর জানিয়ে একটা চিঠিতে লেখা যেত।

লীনা কিছু বলল না। বীনা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলল, তোমার স্যারের ছেলেটার খুব অসুখ শুনেছিলাম। অসুখ কী সেরেছে? উনার স্ত্রী কী বিদেশ থেকে ফিরেছেন?

লীনা বলল, জানি না।

বীনা বলল, তোমার স্যারের জন্যে কদিন থেকেই আমার খুব মায়া লাগছে আপা। মায়া লাগা উচিত না। কিন্তু লাগছে। যে মানুষটা একা একা মায়ানগর তৈরি করে তার জন্যতো মায়া লাগবেই। তাই না আপা?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress