বৃষ্টির মুখোমুখি
ছিলাম যখন খাস কলকাতায়। উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট, সুকিয়া স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া এলাকা মেঘ ডাকলেই জল জমে কৃত্রিম সমুদ্র। কিশোরী এবং যৌবনবেলা আমার কেটেছে ওই এলাকাতেই। ইস্কুল বিডনস্ট্রিট থেকে ফেরার সময় আষাঢ় শ্রাবণ মাসে রোজই বৃষ্টির মুখোমুখি। জমা জলে যানবাহন ভারসাম্যহীন। হাতে টানা রিকশাই ছিল একমাত্র পরিত্রাতা। রিকশা চালক চলেছে বুক পর্যন্ত জলে আমি সিটে বসে। মাথায় ছাউনি তুলে। সামনে পরদা ঝোলানো তবুও বৃষ্টির জলে যাতে না ভিজে যাই ছাতাটাও পরদা আর ছাউনির ফাঁক দিয়ে মেলে ধরি।ওতে তেমন কোন লাভ হয় না।রিকশা চালক ভিজে ভিজেই চলত হেলতে দুলতে, ভাসতে ভাসতে। আশপাশের সব বাড়িতে একতলার খাটের নীচে জল। রাস্তা থেকে ঢেউ ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ তুলছে। খাটের ওপর গৃহস্থালী , যদি সারমেয় থাকে তো সেও বাঁচতে উঠে পড়ত বিছানায় । তখন বর্ষা মানে জল জমা শর্ট সার্কিটে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার পুড়ে যাওয়া। সব কাজ পন্ড। বাজার যাওয়ার পথ নেই। খাবার নেই, জল নেই, বেরোবারও পথ নেই। বাড়িটা রাস্তা থেকে উঁচু হওয়ায় আমাদের বাড়িতে জল ঢুকতে পারত না। পাড়ার বাকি বাড়ি জলবন্দি।তারা কাটাতো গোটা রাত অভুক্ত, নিদ্রাহীন। এই ছিল সেই সময়। ছেলেবেলার আনন্দ কাগজের নৌকা। পুরোনো খাতার পাতা নৌকাবেশে ভাসত সেই জমা জলে।