Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিহুপরী || Satyajit Chowdhury

বিহুপরী || Satyajit Chowdhury

বিহুপরী

পরী ডিব্রুগড়ের তরাইজান গ্রামের বিহুদলের নিয়মিত সদস্য l বৈশাখ মাসে ওদের বায়না অনেকগুলো থাকে l আশে পাশের গ্রামগুলোর বিহু কমিটিগুলোতে ওদের চাহিদা তুঙ্গে l এবারও ছিল l কিন্তু এই মারণ রোগ দেশে ছড়িয়ে পড়তে সরকার সবরকমের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে l গতবার বিহুপরির শিরোপা পরীর মাথায় উঠেছিল l ভালো টাকা হাতে পেয়েছিল l নিজের জন্য মেখলা চাদর কিনেও বেশকিছু টাকা তুলে দিয়েছিলো মা’র হাতে l বাবা তার ছোটবেলায় মারা গিয়েছে চারদিনের ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগে।

পরীর আবার মন দেওয়া নেওয়ার পালা চলছে পাড়ারই এক যুবক কিশোরের সাথে l কিশোরও বিহু দলের নিয়মিত সদস্য ছিল l ভালো ঢোল বাজায় l দুই বছর হলো কোম্পানির কাজে যোগ দিয়েছে হায়দরাবাদে l শপিং মলে গার্ডের চাকরি l হাইয়ার সেকেন্ডারি পযন্ত পড়াশোনা l কোম্পানির লোকেরা এসে লোভ দেখালো l গ্রামের আরো আট-দশজন ছেলে আছে একসাথে l সরকারের হাতে কোনো চাকরি নেই l বড় কোনো কোম্পানি আসছে না জঙ্গিবাদের ভয়ে l তার উপরও বিভিন্ন দল সংগঠনের অযৌক্তিক দাবি রয়েছে l তাই ইয়ং জেনারেশনের ছেলেরা পাড়ি দিচ্ছে ভিনদেশে l ফি বছর এই সময়ে আসে l এবারও রওয়ানা দিয়েছিলো আসবে বলে l তারপর সব বন্ধ হয়ে গেলো লক ডাউনে l খবর এসেছে ওদেরকে আসাম-বেঙ্গল বর্ডার শ্রীরামপুরে কোয়ারান্টিনে রেখেছে l চৌদ্দদিন থাকতে হবে l

পরী উদাসভাবে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে l এই সময় প্রকৃতি যেন সেজে উঠে l শিমুল-পলাশরা রাঙিয়ে দেয় মানুষের মন l কিশোর-কিশোরীদের মনে প্রেমের বন্যা বয় l ভূপেন হাজারিকার কথায়, ‘বৈশাখ, একটি ঋতু নয়, নয় শুধু একটি মাস, বৈশাখ অসমীয়া জাতির আয়ুষরেখা, গণ জীবনের ঈর্ষা l ‘ পাশের রুমে পরীর ছোট ভাই বিপুল গানের রেওয়াজ করছে l জুবিনকন্ঠী হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে l কমিটিগুলো ভালো টাকাই দেয় l বিহুতে গাইবে বলে বেশ কয়েকটি কমিটির সাথে বায়না হয়েছিল l এবার আর কোনো আশা নাই l তবুও রেওয়াজ চালিয়ে যাচ্ছে l

হঠাৎ পরীর মনে হলো, গ্রামের শেষ মাথায় যেখানে গাড়ির রাস্তা চলে গিয়েছে, সেই পথ ধরে কেউ যেন এদিকে আসছে l আবছা চেহারা ক্রমশঃ স্পষ্ট হচ্ছে l কিশোর না, হাঁ কিশোরই তো l আনন্দে পরীর মন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো l যেন হাজার বাতির আলোকমালা জ্বলল আকাশে l মনে হলো বিহুতলীতে পরী বিহুপরি সেজে নাচছে ঢোল পেঁপার সুরে সুরে l কিশোর মাথায় গামোচা, কোমরে ঢোল নিয়ে নেচে নেচে গাইছে, ‘আচিন আয়াং মানে কি ও মরমী’, আচিন আয়াং মানে হলো বুকে জমে থাকা ভালোবাসা’ l পরীর যেন আনন্দের সীমা নেই, খুশিতে মন ভরে যাচ্ছে l

‘ও পরী ! ও পরী ! এখনো ঘুমিয়ে আছিস যে বড়’ l মা’র কথায় পরী হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসলো l মা বলছে, ‘সন্ধ্যা হয়ে এলো, গোসাঁই ঘরে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালা গিয়ে l’ মুহূর্তে পরীর মন বিষাদে ভরে গেলো l এতক্ষন তাহলে স্বপ্ন দেখছিলো l তখনও পাশের রুমে বিপুল গান চৰ্চা করছে, ‘আচিন আয়াং মানে কি ও মরমী………: l

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress