Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিশ্ব মানবতা || Suchandra Basu

বিশ্ব মানবতা || Suchandra Basu

আব্রহ্ম স্তম্বপর্যন্তং’ অর্থাৎ তৃণে পর্যন্ত ব্রহ্মের বাস।শাস্ত্রবিদরা বলেছেন,চেতন-অচেতন নির্বিশেষে সর্বত্র তিনি বিরাজিত।তবে মানুষের মধ্যে তাঁর প্রকাশ সবচেয়ে বেশি। বাহুবলে জ্ঞান-বুদ্ধিতে কর্মকুশলতায় মানুষ ঈশ্বরের মহত্তম সৃষ্টি। অতএব, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’
বিশ্ববিধানের এক শাশ্বত সত্য।

বিশ্বজননীরসন্তান সবাই। প্রত্যেকের ধমনীতে একই রক্তপ্রবাহ। তাঁর সৃষ্টিতে নেই কোন ভেদাভেদ। মনুষ্যত্বের আদর্শে সবাই এক। সারা বিশ্বজুড়ে এই পরিচয়,সে মানুষ জাতি।সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের কথায় –‘জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি,সে জাতির নাম মানুষ জাতি’।

সেই আদিম দিনে পৃথিবীতে যখন প্রথম মানুষ এসেছিল তখন তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ ধর্মান্ধতা আর অন্ধবিশ্বাস ছিল না।প্রকৃতির শান্ত নিবিড় কোলে বেড়ে উঠছিল মানবসভ্যতা। গড়ে উঠেছিল সংহতির বুনিয়াদ।

প্রাচীন ভারত এই মহান সত্য আবিষ্কার করেছিল যে সকল মানুষের অন্তরেই শ্রীভগবানের বাস। কিন্তু বৈদিক যুগের অবসানে মনুষ্বত্বের সেই মহিমা ধূলায় মিশে যায়।বৈদিক সমাজে বর্ণাশ্রম প্রথা চালু হয়।বৈদিক যুগেই জাতিভেদ স্বমহিমায় জেগে ওঠে আর শুরু হয় মানবতার অপমান।
বর্তমান মানব সমাজে বিভেদ সৃষ্টির প্রধান কারণ,উগ্র জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদ এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের উপর অত্যাচার। ভোগসর্বস্ব ও বিষয়মুখী জীবনযাত্রা মনুষ্যত্ব বিকাশের পরিপন্থী।মানুষ ভুলে গেল ধর্মের আসল সার্থকতা।টুকরো হয়ে গেল মানবসভ্যতার সংহতির বুনিয়াদ।ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাসবাদ,বর্ণবিদ্বেষের আগুনে পোড়া মানব সভ্যতার এক বিকৃত প্রতিকৃতি দেখতে পাই।

মনুষ্যত্ববোধের পুনর্জাগরণের একমাত্র উপায় মানুষকে প্রকৃত জ্ঞানের আলো দেখানো। লক্ষ রাখতে হবে নতুন করে গুজরাট বা অযোধ্যা যাতে আর না জন্মায়।তাই মহাপ্রাণরা যুগে যুগে মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও চৈতন্যকে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন। যীশুখ্রীষ্টা বলতেন,সবাই আমরা পরম-পিতার সন্তান।সবাই আমরা এক ও অভিন্ন।হজরত মহম্মদ এবং গৌতম বুদ্ধের কাছেও আপন পর ভেদ ছিল না। শ্রীচৈতন্য চণ্ডালকে জড়িয়ে ধরতেন,কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা হয়ে উদ্ভিদকেও জড়িয়ে ধরতেন।রামকৃষ্ণ বলতেন,’মানুষের মধ্যেই তার শক্তির প্রকাশ সবচেয়ে বেশি’। স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন,’পরোপকারে নিজেরই উপকার’।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,’যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন’। বিদ্রোহী কবি গাইলেন ‘গাহি সাম্যের গান/মানুষের চেয়ে বড়ো কিছু নাই,নহে কিছু মহীয়ান’।

মানুষের প্রাণের দেবতা পরমেশ্বর। সকলে একই পরমপিতার সন্তান।স্রষ্টার সঞ্জীবনী সুধায় সকলে লালিত পালিত। তাই ‘যত্র জীব তত্র শিব’।জীব সেবাই শিব সেবা।’জীবে প্রেম করে যেইজন,সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। মানুষের প্রেম প্রীতি ভালবাসাই পূজার অর্ঘ।তাই তো চন্ডীদাস গেয়েছিলেন,শুনহ মানুষ ভাই/সবার উপরে মানুষ সত্য/তাহার উপরে নাই। আশা নিয়ে বলতে পারি,আবার একদিন মানবতার ফুল ফুটবে। মন থেকে মুছে যাবে কলুষ। উড়বে মনুষ্যত্বের ফিনিক্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress