বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী – 19
আমাদের গাড়ি গিয়ে দাঁড়াল পভুরালা কোন্ডার কাছে।একটা ছোট্ট পাহাড়, “হিল অফ দ্যা পিজিয়ন” বলেই এখান কার লোকেরা জানে।কিছু লোক একে নরসিংহ স্বামীর পাহাড় বলে। ড্রাইভার বলল–স্যার, পাহাড়ের উত্তর দিকে গোস্তানী নদী সাগরে এসে পড়েছে। নেমে দাঁড়ালাম গাড়ি থেকে।চললাম সেদিকেই যেখানে গোস্তানী নদীকে সাগরে পড়তে দেখা যাবে। আমরা চলেছি অমৃতের সন্ধানে।নির্জনে এমন রূপ এই প্রথম দেখলাম। নদী তার নিজস্ব গতিতে সাগরে পড়ে সাগরের ঢেউকে চূর্ণ বিচূর্ণ করছে।শুধুমাত্র ফেননীভ রুপ। কারো মুখে কথা নেই। আমি ভাবের ঘরের দ্বার খুলে দিয়ে ভাবে বুঁদ হয়ে আছি।কে কি বলছে কানে আসছে না।শুধুই স্রোতস্বিনীর সাগরে পতিত হবার শব্দ শুনছি। এমন জলোচ্ছাসের কলধ্বনি শুনতে শুনতে একটা জীবন কেন অনেক জীবন পার করে দেওয়া যায়।তাই বুঝি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এমন একটা জায়গা নির্বাচন করেছিলেন। ভাবলাম এমন জায়গাকে বাছার দু’টো কারণ। এক,জল জলই জীবন। জলকে তারা কাজে লাগান আন্তর্জাতিক ব্যবসায়। আশ্চর্য হলাম তাদের প্রয়োগ বিদ্যার নমুনা দেখে।ষোল টা শিলা খুঁদে কি ভাবে জলাধার তৈরি করেছিল সে যুগে।এ সবই বৃষ্টির জল ধরে রাখতে। মেশোমশায় বললেন——কেষ্টা দেখ দেওয়ালে কি সব খোদাই করা রয়েছে।হয়তো চীন বা জাপানের ভাষা! বললাম——- বার্মিজ ভাষায় লেখা। আর্কিওলজি বিভাগ খনন করে অনেক কিছুই বার করেছে।বৌদ্ধ বিহারের ভিত্তি প্রস্তর। ছোট ছোট অনেক কক্ষ। কোন রকমে একজনের থাকার উপযুক্ত সেগুলো। মেশোমশায় বললেন—–এ তো জেলখানা! বললাম——ছাত্রদের থাকার জন্য করেছিল। লম্বা বারান্দা।গোলাকার চৈত্য গৃহ গুলো,স্ফটিক স্তম্ভ গুলো দেখলাম। মাসীমা বললেন——‘ এখানে বোধ হয় বৌদ্ধ রা মানত করতো! আমার কথায় কি ছিল জানিনা। মাসীমা ভোটিভ স্তম্ভের সামনে বসলেন। আমার একটা কথা মনে হচ্ছিল যে আমরা যতই ধর্ম ধর্ম করিনা কেন, কামনা করার সময় নিদৃষ্ট ধর্মের প্রাচীর গড়ি না।গড়তে পারি না।তাই হিন্দু হয়ে ও নির্জনে চার্চ কি দরগায় গেলে কি গুরূদ্বারে গেলে আমরা ভুলে যাই আমি কোন ধর্মের মানুষ। তখন শুধুই মানুষ। “সুপ্রীম পাওয়ার ” সেই অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন সেই শক্তির কাছে মিনতি জানাই।তখন আমাদের আত্মা চরম পবিত্র হয়। মন থেকে ধর্ম মুছে গিয়ে এক স্বর্গীয় আনন্দে মন ভরে যায়। তখন নিজেকে তাঁর ই শিশু বলে মনে করি।পিতার বসন ভুষণের ফারাকে আমরা কি পিতা কে চিনতে ভুল করি? না করি না। মাসীমা উঠে দাঁড়াতে আমার সাড় ফিরল। ড্রাইভার আমাদের নিয়ে চলল মিউজিয়ামের দিকে। প্রদর্শনের জন্য সাজিয়ে রেখেছে সাত বাহনের আমলের মূদ্রা। কয়েক টা রোমান মূদ্রা, কিছু পাত্রে খোদাই করে কিছু লেখা আছে।রকমারি পুঁতী,ছোট্ট তামার কাসকেট, এটা নাকি ভোটিভ স্তম্ভের থেকেই পাওয়া গেছে। বললাম——– খোদাই করা লিপির থেকেই ধরা যায় এটা খৃষ্ট পূর্ব তৃতীয় শতক এর, আর দ্বিতীয় শতাব্দীর ঘটনা।তখন ই এই মঠ তৈরি হয়।মাসীমা ও খুশি হয়ে শুনেছিলেন। ঠিক তখনই একদল বৌদ্ধ সন্যাসী এসে হাজির। বিশেষ সমাদরে তাদের একজন কর্তব্য রত কর্মী তাদের প্রার্থনা গৃহে বসাল। মাসীমা ফেরার জন্য উতলা হয়ে গেলেন। কানে আসছে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের গমগমে “চ্যান্টিং “। সঙ্গে পেতলের করতালের ঝং ঝং শব্দ। শান্তি ভঙ্গের জন্য ই মাসীমা ফিরতে চাইলেন। সর্ব শক্তিমান পিতা কি এতে খুশি!নাকি তাঁকে পাবার বদলে আরও দূরে চলে যাচ্ছে!! রওনা হলাম থোটলা কোন্ডার দিকে।বৌদ্ধ দের চ্যান্টিং তখন ও ভেসে আসছে ।ফুরফুরে হাওয়ার সঙ্গে মন ও উড়ে চলেছে।একপাশে পাহাড় অন্য পাশে সাগর। সাগরের ভেলায় ভেসে চলেছে মন। হঠাৎই হাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। বুঝলাম আমরা পাহাড়ের প্রাচীরের মুখোমুখি। গাড়ি পাক খেয়ে চলেছে ওপরের দিকে চলেছে।কখনও পাহাড়ের প্রাচীর, কখনও দিগন্ত জোরা নীল সাগরের বলয় রেখা। তারই মাঝে রুপোর ঝিলিক। । হিনায়ন বুদ্ধিস্ট দের” মনস্টারি কমপ্লেক্স ” এই থোটলা কোন্ডায়। কোন্ডা মানে পাহাড়।সেখানে আমরা এসে গেছি। মেশোমশায় বললেন——- কেষ্টা! চুপ চাপ কেন? বললাম—–খৃঃ পুঃ তৃতীয় শতকে হিনায়ন কমপ্লেক্স থোটলা কোন্ডায় ছিল। সমুদ্র থেকে একশো আঠাশ মিটার উচ্চতা। ভাইজ্যাগ থেকে পনের কিলোমিটার দূরে। মেশোমশায় বললেন——– জায়গাটা ভালই পছন্দ করেছিল বৌদ্ধ সন্যাসীরা।একে শান্তিময় জায়গা। তায় আবার সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দেশ বিদেশ যাওয়া যায়!তবে আর্কিওলজি বিভাগ কি করে টের পেল যে এখানে বৌদ্ধ হ্যারিটেজ আছে? বললাম——-ইন্ডিয়ান নেভি এরিয়া সারভে করতে জানতে পারে থোটলা কোন্ডার কথা। মন্দাকিনী বলল——- ভাবলে আশ্চর্য লাগে একটা সভ্যতা কী ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় মাটির নিচে।হয়তো বা আজকের সুনামির মতোই কিছু হয়েছিল। মনে ভাবলাম, হয়তো বা হয়েছিল । মেশোমশায়কে বললাম——- স্টেট আর্কিওলজি বিভাগ উনিশশো অষ্টাশি থেকে উনিশ শো তিরানব্বই অবধি খননের কাজ চালিয়েছিল। তখনই থোটলা কোন্ডার গুরুত্ব বুঝতে পারে । ড্রাইভার বলল—–স্যার , ইদি ধ্যায়ান মন্দির উন্দি। এগুলাম ধ্যান মন্দিরের দিকে। চৈত্য গৃহ বিহার সব । ধ্যান মন্দিরে গোলাকার আসর।এর পাশে গোলাকার আসন। এর পাশে সাঁতারের ঘাট আর পুকুর ।এ সবই মাটি কেটে বার করা হয়েছে। মন্দাকিনী বলল—–বৌদ্ধ বনম, সেটা কি? ——- “বৌদ্ধ বনম ” যে প্রজেক্ট করেছে ভু ডা আর এ পি টুরিজ্ম তাতে গৌতম বুদ্ধের জীবন কাল কে আট ভাগে ভাগ করে মডেল ছবি করেছে। বোধিদ্রুম এর নিচে বুদ্ধদেবের সেই ছবিতে আটকে গেলাম। সেই( বোধিদ্রুম)বোধি বৃক্ষ। যেখানে তথাগত জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিলেন। মগ্ন রইলাম তথাগত তে। ব্যাভিকোন্ডা বৌদ্ধ দের চরম পবিত্র ভূমি।এখানেই বুদ্ধ দেবের দেহাবশেষ ভস্ম, একখন্ড তে কোনা হাড় ও এখানেই পাওয়া গেছে অবিকৃত অবস্থায় । মাসীমা বললেন—– আমি ওখানে যাব না।তথাগত কে ভক্তি করি বলেকি তার হাড় গোড় দেখতে হবে? মন্দাকিনী বলল——মা আমরা একটা পবিত্র জায়গাতে যাচ্ছি।বৌদ্ধ যুগের কালচার জানতে চলেছি। ড্রাইভার মাসীমাকে অভয় দিল—–আম্মা,ভয়ম্ লেদু।আপ গাড়িমে ব্যায়ঠ কে রহনা। এবার আমি ড্রাইভার কে বললাম—-ব্যাভিকোন্ডা নহি যায়েঙ্গে। আমার কথায় কি ছিল জানিনা মাসীমা নির্দেশ দিলেন। —— চল, ব্যাভিকোন্ডা। যে কারণেই মাসীমা রাজি হন না কেন, এটা আমার উপুরি পাওনা। পৌঁছানোর পর মাসীমা বললেন—–তোমরা যাও।আমি বসছি। তোমার মেশোমশায় আর চালককে নিয়ে যাও।আমি গাড়িতে বসছি। মেশোমশায় হাসতে হাসতেই গাড়িতে বসলেন। তার মানে মাসীমার সাথে মেশোমশায় ও বসলেন গাড়িতে। ভেবেছিলাম ব্যাভিকোন্ডা দেখাই হবে না।শেষ অবধি পৌঁছলাম সেখানেই। মেশোমশায় আগেই বলেছিলেন যে বৌদ্ধ হ্যারিটেজ দেখার ইচ্ছা নেই মাসীমার। বৌদ্ধ মঠে একটা ভুত ভুত ভাব বোধ করেন। তাই হাড়ের টুকরো শুনে বেঁকে বসলেন। মেশোমশায়কে গাড়িতে বসতে দেখে মাসীমা বললেন। ——– তুমিও যাও। দেখলাম মেশোমশায় কি যেন মাসীমার কানে কানে বললেন। মাসীমার ঘুখখানা রাঙা হয়ে উঠল। ড্রাইভারের দেখানো পথেই চললাম আমরা।ঢুকলাম মিউজিয়ামের পাশেই মহা চৈত্য গৃহে।বুদ্ধের পদ চিন্হ খোদিত শিলা রয়েছে।এরপর ঢুকলাম বিশাল একটা কমপ্লেক্স এ।এখানে ইট পাথরের তৈরি ভোটিভ স্তুপ। বললাম—– শুনেছিলাম চৈত্য গৃহে কাসকেট আছে। কৈ দেখছি না তো? একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মীকে বললাম সে কথা।সে বলল সেই কাসকেট হায়দ্র্রাবাদ আরকিওলজি বিভাগের স্ট্রং রুমে আছে। ছোট বেলায় অষ্টাঙ্গিক মার্গের কথা পড়েছিলাম। তখন মনে দাগ কেটেছিল কথাগুলো।আজ কিছুই মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে সব ধর্মের এক কথা ।সম ভাবে ধর্ম কে দেখলে হয়তো বা এত বাদ বিসম্বাদ থাকতো না। বইয়ে পড়েছিলাম তথাগতের নম্বর দেহের ভস্মাবশেষ আটজন রাজাকে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কলিঙ্গ জয়ের পর সম্রাট অশোক আটটা স্তুপের মধ্যে সাতটা স্তুপের সমস্ত ভস্ম বার করে চুয়ান্ন হাজার ভাগে ভাগ করে মৌর্য সাম্রাজ্যের সমস্ত স্তুপে তা সংরক্ষণ করেছিলেন। মন্দাকিনী বলল —— তুমি যেন বাবাকে কি বলছিলে, শেষ করো নি কথাটা। সেটা কি মায়ের জন্য বলনি? মনে পড়ল চিতা ভস্মের কথাটা মাসীমার জন্যই তখন বলতে গিয়েও বলিনি। বললাম———যাক। মগজটা খুলেছে দেখছি।হ্যাঁ। পবিত্র ভস্মাবশেষ রাখার জন্য ই ব্যাভিকোন্ডার গুরুত্ব আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছেছে।তথাগতের ভস্মাবশেষ ব্যাভিকোন্ডায় আছে সারা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই বিশ্বাস। মন্দাকিনী বলল—-তার মানে সেই পাথরের আধারে মাটির আধার। তাতে খোদাই করা পদ্মচিহ্ন আবার স্বস্তিকা। তাতে একটা রুপোর কাসকেট। এর ভেতরে ছোট্ট পুঁতির মালা। বললাম—– হ্যাঁ। আবার বলল মন্দাকিনী——–তথাগতের চিতাভস্ম, পোড়া কাঠ ,একখানা তিনকোনা হাড়ের টুকরো । অনেক বার শুনলাম। আবার ও বললাম——–আরও আছে। একটা রুপোর কাসকেট এ প্রবাল, মুক্তো আর রুপোয় বাঁধানো মালা।এক পাটে সোনা অন্য পাটে রুপো। মন্দাকিনীর চোখের গভীরতা আমার মন ছুঁয়ে গেল। সে দৃষ্টি আমায় ছাড়িয়ে চলে গেছে তথাগতের স্তুপ পদমূলে। সেই বিশ্বাস আমার মনকে নাড়া দিল। চোখের সামনেই যেন চলেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কানে আসছে সেই গুরুগম্ভীর স্বর। বৌদ্ধং শরণং গচ্ছামি। ধর্মং শরণং গচ্ছামি। সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি। বহুদূর থেকে জ্ঞান পিপাসা জ্ঞান প্রাপ্ত হতে আসছে এই ব্যাভিকোন্ডায়। এ কি কখনও মিথ্যা হতে পারে? না পারে না।ভাবতে ভাবতেই চলে এলাম গাড়ির কাছে। মাসীমা আর মেশোমশায় তখন গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন। ড্রাইভার কে গাড়ি চালাতে নিষেধ করলাম। এই ভেবে যে ওদের গাঢ় ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। মন্দাকিনী বলল—–চল কেষ্টদা,একটু জল খেয়ে আসি। আমি বললাম- ——— কেন?আমাদের সঙ্গে তো জল আছে। সে বলল——–দুর, ঐ জল খাওয়া যায়?ঠান্ডা জল খাব। অমন মেয়ের অনুরোধ কি ঠেলতে পারি?রাগ হলেও সঙ্গে যেতে হল।সেখানেই মন্দাকিনী দু,প্যাকেট জল কিনে আনল। আমাকে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল ——– এই নাও মশায়।খাও। হাতে নিলাম জলের প্যাকেট। দৃষ্টি সেই মেয়ের দিকে। মুখে তার তৃপ্তির হাসি। প্যাকেট ছিঁড়ে জল খাচ্ছে সে।বেশির ভাগ জল গড়িয়ে পড়ছে। চিবুক ও গন্ডমালায় জল চলকে পড়ছে। আমি আরও দু’খানা প্যাকেট নিলাম মাসীমা আর মেশোমশায়ের জন্য। মাসীমা জেগে যেতে গাড়িতে বসলাম। ড্রাইভার কে বললাম——- আমি কলাগ্রাম চলিয়ে। কলাগ্রামের দিকে গাড়ি চলল।
বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী – 20
কলাগ্রামের পথে——- গাড়ি ছুটল ন্যাশনাল হাই ওয়ে দিয়ে। ডানে পাহাড়ের তরঙ্গ মালা। অর্থাৎ পূর্ব ঘাট পর্বত মালা। বাঁয়ে চলেছে লোকালয়। ডানে ও মাঝে মাঝেই লোক বসতি গড়ে উঠেছে। একেবারেই বিদেশী ঢঙে। বিশাল গেট এর সামনে গাড়ি দাঁড়াল। গেট এর ওপরে বড় করে লেখা “যাত্রা ” ।একটা কলা ঘর। । ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট এক কোটি টাকা খরচা করে এই কলাগ্রামের উন্নতি সাধন করেছে।যে জমির ওপরে এই কলাগ্রাম, সেটা ছিল নিস্ফল জমি।বিশাল দেওয়ালের ঘেরাটোপে ত্রিতল সুদৃশ্য দু’ হাজার স্কোয়ার ফিট এর চত্বর। তার দু’পাশে দু’টো হাতি দাঁড়িয়ে আছে। এই কলাগ্রামে গ্রামের কলা আর শহরের কলার মেল বন্ধন হয়েছে। ঈ বললাম——দেখুন শিল্প কলাকে ধরে রাখতে কত খরচ করেছে। ——— সবচেয়ে প্রশংসার গ্রাম্য শিল্পের স্থান নাও দিতে পারতো। ভেতরে ঢোকার দ্বারের দু’পাশে সারি দিয়ে পাগড়ী মাথায় অবিকল মানুষের আকৃতি।করজোড়ে দাঁড়িয়ে যেন বলছে তারা সুস্বাগতম্ । একটু এগোতেই নজরে পড়ল বড় আকারের একটা কংক্রিটের মোরগ। দেখার মতো।অন্ধ্র প্রদেশের কলাকারের গৌরব গাঁথা বহন করে চলেছে ঐ কারু কাজের মোরগ। হাটতে হাসতেই পৌঁছলাম আর এক জায়গায় । যেখানে রয়েছে একটা নৌকা।সেই নৌকো ঠেলে নিয়ে সমুদ্রে ফেলছে জেলেরা। এ সবই মডেল। বিশাখা উৎসবে এই সব শিল্প কলা দেখানো হয়।সপ্তাহ ভর উৎসব হয়। আর্ট গ্যালারিতে গ্রামীণ আর্ট আর শহরের আর্টের মেল বন্ধন হয় এই যাত্রা কলাগ্রামে। হঠাৎ কোথা থেকে মেঘ জমে গেল মাথার ওপর। মাসীমা বললেন—— বৃষ্টি শুরু হল গো!কোথাও চল ছাউনি দেখে দাঁড়াই। চারদিকে ছুটোছুটি পড়ে গেল। মন্দাকিনী মাথায় আঁচল তুলে নিল। থমকে গেলাম আমি সেই চোখের লাজুক দৃষ্টিতে। আকাশ বুঝি ভেঙে পড়বে। দূরে একটা প্যাগোডা মত দেখলাম। বললাম——— চলুন মাসীমা,ঐ ছাউনির নিচে দাঁড়াই। চেয়ার পাতা ছিল ওখানে।মাসীমা আর মেশোমশায় বসে পড়লেন। আমি মন্দাকিনীর ঘোমটা দেওয়া মুখের দিকে তাকালাম ।আমার চোখে চোখ পড়তেই ওর দৃষ্টি আনত হল। আপনা থেকেই ঘোমটা খসে পড়ল। বৃষ্টি নিমেষেই বন্ধ হয়ে রোদ্দুর উঠে গেল। মাসীমা বললেন——এ আবার কেমন বৃষ্টি! মেশোমশায় বললেন—– চল কেষ্টা,এবার ফেরার পালা। আমরা গাড়িতে বসতেই মেশোমশায় বললেন। ———- এবার ভোজনম্। ভোজনম কথাটা শুনেই ড্রাইভার বুঝেছে। কারণ আমাদের খাওয়ার তেলেগু “ভোজনম “।তাই গাড়ি দাঁড়াল হোটেল পার্ক এ। খাওয়ার পর চললাম সাগর দুর্গার পথে।যেতে যেতেই পথে দরগা,ভেঙ্কটেশ্বরের কোন্ডা পড়ল।বুড়ি ছোঁওয়ার মত সব দেখতে হবে।কারণ সময় কম। এবার সাগর দুর্গা মন্দির। ডলফিন নোজ এর উল্টো দিকে। গাড়ি থেকে নেমে বেশ কয়েক পা হেঁটেই জেটি থেকে লঞ্চে উঠলাম। জনা দশেক বসে ছিল। আমরা বসতেই লঞ্চ ছেড়ে দিল। সমুদ্রে লঞ্চে চড়ার অন্য অনুভূতি।উচ্ছ্বসিত মন্দাকিনী লঞ্চের শব্দ ছাড়িয়ে বলছে———- কৃষ্ণ দা, আমরা ঐ পাহাড়ে যাব? আমিও চেঁচিয়ে বললাম——- হ্যাঁ। ঐ পাহাড়েই যাব। ওখানেই সাগর দুর্গা মন্দির। ভোঁ ভোঁ শব্দ তুলে লঞ্চ ছুটছে।দেখতে দেখতেই অন্য পারে চলে এলাম। লঞ্চ থামতেই একে একে সবাই নেমে পড়লাম। নড়বড়ে পাটাতনে পা রেখে একে একে লাফিয়ে নামলাম উঁচু জমিনে।সঙ্গীরা বেশির ভাগ ই তেলেগু। ওদের অনুসরণ করলাম। যাতে সাগর দুর্গার পথ হারিয়ে না ফেলি।দেবী কনকা দুর্গার পুজো হয় এখানে।ফিরে দেখলাম মাসীমা আর মেশোমশায় পিছিয়ে পড়েছেন। মন্দাকিনীকে বললাম —–কেমন লাগছে? মন্দাকিনী বলল ——- দারুন!চূড়োতো এখান থেকে দেখতে পাচ্ছি।লাইট হাউজ এর দিকটা দেখ। বললাম———- ওটাই ডলফিন নোজ। সমুদ্রের সৌন্দর্যের তুলনা নেই। উনিশ শতকে এটাকেই “ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক মোর’স হিল ” বলা হতো। মেশোমশায় ও মাসীমা এসে পড়েছেন বুঝলাম মেশোমশায়ের গলা শুনে। ———– কে ঐ ব্ল্যাক মোর? বললাম———- ক্যাপ্টেন থমাস ব্ল্যাক মোর আঠেরো শো এক এ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আর্টিলারী রেজিমেন্ট এর হয়ে বিশাখাপত্তনমের এই পাহাড়ের চুয়াল্লিশ একর জমির অনুদান পান। মন্দাকিনী বলল——- শহরের এতো জায়গা থাকতে এখানে! বললাম—– নিজের জন্য বাংলো তৈরী করেন এখানে।আর দশ ক্যাননের ব্যাটারী তৈরি করেন। ডলফিন এর আকার বলেই ডলফিন নোজ বলে সবাই। কথা বলতে বলতেই সাগর দূর্গা মন্দিরে পৌঁছলাম। দেবী কনডলকা দূর্গার পুজা হয় এখানে।মাসীমা ওরা ভেতরে ঢুকলেন। আমি বাইরের সৌন্দর্যে মজে গেলাম। এখান থেকে শিপ ইয়ার্ড পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। একটু পরেই ওরা বেড়িয়ে এলেন। তিন জনের কপালেই কুমকুমের তিলক। মাসীমার মুখখানা জ্বল জ্বল করছে ঐ কুমকুমের আভায়। ঐ মেয়ের মুখ থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। পাছে মাসীমার বিরক্তির ভাজন হই। তাই লঞ্চের দিকে এগুলাম। লঞ্চ এ বসতেই লঞ্চ ছেড়ে দিল। আসার সময় পৌঁছতে যতটা সময় লেগেছিল তার ও কম সময়ে এপাড়ে পৌঁছলাম। মেশোমশায় বললেন———- ডলফিন নোজ এর উচ্চতা কত হবে? বললাম—–সী লেভেল থেকে তিন শো আটান্ন মিটার উঁচু।ডলফিন নোজ এর জন্য ই এখানে একটা প্রাকৃতিক বন্দর পেয়েছে বিশাখাপত্তনম। এই বিশাল শিলার অন্তরীপ কোষ্টলাইন কে ভেঙে দিয়েছে।তারই ওপরে তৈরী হয়েছে শক্তিশালী লাইট হাউজ। মেশোমশায় বললেন—— প্রাকৃতিক সমুদ্র বন্দর! এখান থেকেই আমদানি রপ্তানি হচ্ছে? বললাম—–হ্যাঁ। “আয়রন ওর” মানে আকরিক লোহা, ম্যাঙ্গানিজ যাচ্ছে বিদেশে। গাড়ি তে বসে মন্দাকিনী ড্রাইভারকে বলল, যেখানে হিন্দু,মুসলিম ও খৃষ্ট ধর্মের সহাবস্থান সেখানে যেতে। এখানে কোন ধর্মের বিদ্বেষ নেই। এখানে দরগায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাবিকরাও জাহাজ নিয়ে বের হবার সময় “উইশ” করত এই দরগার উদ্দেশ্যে। মাসীমা বললেন——— এমন হয়। আমাদের পীর দাদুর কাছে ও কত লোক যেত! বললাম—–এবার শিপ ইয়ার্ড চলেছি। মেশোমশায় বললেন—– তোমার জানা সেই ছেলেটি কি শিপিং ইয়ার্ড এ থাকবে? বললাম—— বলেছে তো থাকবে। গেটের কাছে ই থাকবে। তালুকদার না থাকলে কি ভেতরে ঢুকতে পারবো! সাঁ সাঁ করে গাড়ি ছুটছে। যথা সময়ে পৌঁছলাম শিপ ইয়ার্ডে। একটা জাহাজ কে জলে ভাসতে দেখে কখনও মনে হয় নি জাহাজের ভেতর টা জানার। তালুকদার সব বুঝিয়ে চলেছে।স্টিল সিট কি ভাবে কি ভাবে কাটিং করা হয়। আর কি ভাবে জাহাজের আকার দেওয়া হচ্ছে। বক্স করে জাহাজের আকার দেওয়া হয়।পথেই চোখে পড়ল বিশাল আলমারির মতোই কেবিনগুলো পলিথিন এ মোরা। কোরিয়া না জাপান থেকে এসেছে।ওগুলো সব ই নাকি রেডি টয়লেট। জাহাজের ভেতরে কানেকশন করে দিলেই হল।বন্দর থেকেই উন্মুক্ত সাগরে পড়ছে ঐ জাহাজ। তালুকদার বলল——– জানেন, ভাইজ্যাগেই আমাদের দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম শিপ বিল্ডিং ইয়ার্ড রয়েছে।এতো বিশাল শিপ বিল্ডং ইয়ার্ড আর কোথাও নেই। মেশোমশায় বললেন——- পেপারে দেখলাম ‘পোর্ট ট্রাস্ট অফ ভাইজ্যাগ ‘ দু,হাজার সাত সালের সেফ্টি অ্যাওয়ার্ড ‘ গ্রামের অ্যাওয়ার্ড ‘পেল। আমি বললাম——- ভারত স্বাধীন হবার পর প্রথম যে জাহাজ” জল উষা ” এখানেই লঞ্চ হয়েছিল। ‘সিন্ধিয়া স্টিম শিপ নেভিগেশন কোম্পানি’ এখন কার হিন্দুস্থান শিপ ইয়ার্ড লিমিটেড। তখন নেহেরু জী এসেছিলেন। এই জায়গার নাম দিয়েছিলেন গান্ধীগ্রাম। তালুকদার বলল——– বাব্বা, অনেক কিছুই জানেন দেখছি।তারপর একে একে ক্যালট্যক্স, কোরামন্ডল ফার্টটটিলাইজার, বি.এইচ. পি.ভি.ও হিন্দুস্থান জিঙ্কের কাজ শুরু হয়। নেহেরু ওখান কার হাওয়া মহলে থাকা কালিন ডলফিন নোজ থেকে কৈলাশ গিরিরেঞ্জ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন এ জায়গা অবশ্য ই আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন হবে। আমরা চললাম ডলফিন নোজ এর লাইট হাউজ দেখতে। পথে তালুকদার কে নামিয়ে দিলাম। সিন্ধিয়া জংশন থেকেই গাড়ি ছুটল ইয়ারাদা হিল রেঞ্জ এর ওপরে।হাত ঘরিতে তখন ঠিক দু,টো। আঁকে বাঁকে গাড়ি ওপরে উঠল।আগের বার সোজা আর কে বিচ থেকে এসেছিলাম তাই রাস্তাটা খুব ভয়াবহ ছিল। মনে হয়েছিল এই বুঝি খাঁদে পড়ে যাব।কিন্তু রাস্তায় উঠতে বেশি ভয় হল না।পৌঁছে গাড়ি জায়গা মতো রাখতে হল ।এটা নেভাল এরিয়া। লাইট হাউজ এর টিকিট কাউন্টার এ টিকিট কাটতে হল।খুব সুন্দর ব্যবস্থা।আগের বার কাঠের সিঁড়ি ছিল। এখন পাকা সিঁড়ি তাই উঠতে অসুবিধা নেই। ।ভীড় হতে দিচ্ছেনা। সুবন্দোবস্ত। ওপরে উঠে সবাই ক্যামেরা বের করছে সবাই। এখানে সাগরের জলের রং কালচে নীল। জাহাজের ডেক এর মতন। ঐ রেলিং এর নিচেই গভীর সমুদ্র। দাঁড়ান দুরুহ ব্যাপার। এত অক্সিজেন যে নিঃশ্বাস নিতে লাঙস মনে হল বেলুনের মত ফুলে উঠছে। ইন্ডিয়া গেজেট এ পড়েছিলাম বহু লোকের লাংস সমস্যার সমাধান এখানে এলে হয়।হবে না কেন সাগর শহরের অনেক টা জায়গাকে বেষ্টন করে গেছে। মন্দাকিনী টপাটপ ছবি তুলে নিল।মাসীমা বললেন। ———- মন্দা,ধার থেকে সরে আয় আমার ভয় করছে। লাইট হাউজ থেকেই বেরিয়ে ‘সী সোর ‘যাবার জন্য ব্যস্ত হল মন্দাকিনী। আমরা এগুলাম ইয়ারাদা হিল ভিউ পয়েন্ট এর দিকে। খুশি তে লাফালাফি শুরু করল মন্দাকিনী। ওকে রাগাতেই বললাম। ———খুব যে হিল ভিউ না দেখে বিচ দেখতে চলে যাচ্ছিলে। মন্দাকিনী ঝাঁঝেই বলল——- তাতে কি হতো? পৃথিবীর কতো কিছুই তো দেখিনি! মন্দাকিনীর কথায় আমার মুখে তালা পড়ল। ঠিকই বলেছে। এবার ইয়ারাদা বিচ্ এর দিকে গাড়ি নামতে লাগল। গাড়ি যত নামছে মনে হচ্ছিল সমুদ্রে পড়ে যাবে গাড়ি।শেষে গাড়ি থামল। এখানের বালি লালচে। সারে সারে তালগাছ দাঁড়িয়ে আছে।সমুদ্র তটে সোনালী বালি তাতে সাদা নুড়ি। একদিকে জল অন্য দিকে সবুজের উপত্যকার ঢেউ। তার ই সাথে হাওয়ার ঝাপ্টা ।শুনেছিলাম এমন কোন তেলেগু সিনেমা নেই যা এখানে স্যুটিং হয়নি।আবার আর কে বিচ এও সিনেমার স্যুটিং হয়। মন্দাকিনীর পাথরের নুড়ি কুড়ান শুরু হয়ে গেছে। এবার মেশোমশায় বললেন ——– এবার চল। সে পথেই ফেরা হল।লাইট জ্বলে গেছে। সাঁঝের বাতিতে লাইট হাউজ কে এখন চেনা দায়।মনে হল জড়োয়া সেটিং নেকলেস। সাঁ সাঁ করে গাড়ি ছুটল সিন্ধিয়া জংশন হয়ে। গেস্ট হাউজ এর কাছে এসে আমি বললাম। ———— আমি বিশাখা মিউজিয়ামে যাব। মাসীমা বেশ রাগ করেই বললেন——–আজ না গেলেও পারতে। মাসীমার আপত্তির কারণ টা আমি বুঝি।তবুও বললাম। ——–কাল আমরা আরকু যাব। পরশু দিন আমরা ফলকনামায় ফিরব কোলকাতা।আর তো দেখা হবে না।অনেক তথ্যের সন্ধান পাব ওখানে। এবার মেশোমশায় বললেন——- তুমি যাও কেষ্টা। ও লেখক মানুষ। মন্দাকিনী বলল——— আমিও যাব। এটা আমার সাবজেক্ট। বেশিদূর তো না।বড় জোর একঘন্টা! মাসীমার এই ভয়টাই ছিল। আবার মেশোমশায় বললেন—–যেতে দাও ওদের। গাড়ি ছেড়ো না। আমি বললাম—– না না ,অযথা গাড়ি আটকে রাখার দরকার নেই। তাছাড়া আর কে বিচ এর কাছাকাছিই বিশাখা মিউজিয়াম। আর কে বিচ এসে মন্দাকিনী বলল—–এবার মৎসদর্শিনী দেখে মিউজিয়ামে যাব। গাড়িটা ছেড়ে দাও। আমি বললাম—- মিথ্যাচার করতে পারব না।আমার সঙ্গে থাকলে এসব চলবে না।যখন অন্য কারো সঙ্গে যাবে তখন করো। ————- অন্যের সঙ্গে?এবার তাই করতে হবে। গাড়ি দাঁড়াল মিউজিয়ামের পাশেই। ডাচ বাঙলো সাগর কে সাক্ষী রেখে দাঁড়িয়ে আছে।সেটাকে রং এ রুপে সাজান হয়েছে নতুন করে। উনিশ শো একানব্বই এ এই ডাচ বাঙলো বিশাখাপত্তনম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন দখল করে।দখল করে কারণ কিছু পরিবারের বাস ছিল ঐ বাড়িতে। কিউরেটর এর অনুমতি নিয়েই ঢোকা হল।থরে থরে সাজান রাজ পরিবারের ব্যবহৃত জিনিস। ইংরেজদের হাত বন্দুক, রকমারী অস্ত্র। উনিশ শো সাত চল্লিশে ক্ষমতা চ্যুত হবার পর ঐ সব অস্ত্রের দখল হল।একখানা রিভালভারের ওপর ফরাসী লিপি রয়েছে।সেটাও একজিবিট করা হয়েছে। একে একে ড্যাগার, তরবারি, নানা ধরণের গ্রীক, রোমান ও ভি কিং হেলমেট আছে প্রদর্শনের জন্য। একটু এগোতেই চোখে পড়ল বাংলার বাঘ। তার ছালে অনেক কিছু ভরে সাজিয়ে রেখেছে।যেন জীবন্ত বাঘ বসে আছে। বললাম—– দেখ কৃষ্ণ দা,ওড়িশার জয় পুরের রাজা এই বাঘ শিকার করে ট্রফি পেয়েছিলেন। মন্দাকিনী বলল—–ঐ দেখ, তাল পাতায় লেখা রামায়ণ। চেকোশ্লোভকিয়ার পোরসেলিন ডিনার সেট।ওয়াইন গ্লাসের সেট বব্বিলির রাজ পরিবারের। একটু এগোতেই নজরে পড়ল তিন জন ব্রিটিশের তৈরি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল যন্ত্র পাতি। সেন্ট অ্যালয়সিস স্কুল পাঠিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানী রা যে বম বিশাখাপত্তনমে ছুঁড়ে ছিল। কিন্তু সেটা ফাটেনি। বন্ধ হয়ে যাবে তাই কিউরেটর বন্ধ হয়ে যাবে তাই তাড়া দিল। মন্দাকিনী চেঁচিয়ে বলল—– এই দ্যাখ। পঞ্চাশ টা তালপাতায় তখন কার লেখা। একটা বার্মিজ বাটির ওপরে “বৌদ্ধ জাতক কথা” লেখা। কমপ্লেইন বুকে নিজের চাহিদার কথা লিখে বেড়িয়ে এলাম। বাইরে এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া। মন্দাকিনী বলল—— কি সুন্দর ঠান্ডা,তাই না? ওর মুখের দিকে চাইলাম। পরিতৃপ্ত মুখভঙ্গী ওর। কপালের টিপ খানা আকর্ষণ করছে আমায়।লাল একটা ছোট্ট ত্রিশূল। সবই ওকে মানায়।কতক্ষণ যে চেয়েছিলাম জানিনা।মুখ ফিরিয়ে নিলাম ওর সরম রাঙা হাসি দেখে।
চোখের সামনে মনে হচ্ছে দৃশ্য গুলো ফুটে উঠছে, খুবই ভালো লাগলো দিদি।
Excellent!