সিঁদুরচরণ আজ দশ-বারো বছর মালিপোতায় বাস করছে বটে কিন্তু ওর

ভয়ানক বর্ষা। ক-দিন সমানভাবে চলিয়াছে, বিরাম বিশ্রাম নাই। প্রতুল মেসের

সামান্য জিনিস। আনা তিনেক দামের কলাই-করা চায়ের ডিশ-পেয়ালা। যেদিন প্রথম

নবীনবাবু ঘুম হইতে উঠিয়া কয়লা চাকরকে ডাকাডাকি করিতেছেন শুনিতে পাইয়াও

দেশ থেকে রবিবারে ফিরছিলাম কলকাতায়। সন্ধ্যার আর বেশি দেরি নেই,

আমার ভাইঝি রাণুর প্রথমভাগের গণ্ডি পার হওয়া আর হইয়া উঠিল

পথে যেতে যেতেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। সে বোধ হয়

গ্রামের মধ্যে বাবা ছিলেন মাতব্বর। আমাদের মস্ত বড়ো চণ্ডীমণ্ডপে সকালবেলা

আমি এ গল্প আমার বন্ধু সুকুমারবাবুর মুখে শুনেছি। ইতিহাস ও

পাড়ায় ছ’সাত ঘর ব্রাহ্মণের বাস মোটে। সকলের অবস্থাই খারাপ। পরস্পরকে

ঘুরতে ঘুরতে কীভাবে আমি যে রামলাল ব্রাহ্মণের কাছে গিয়ে পড়েছিলাম,

কর্ণপুর সংসার ছাড়িয়া বৃন্দাবনে যাইতেছিলেন। সংসারে তাঁহার কেহই ছিল না।

আষাঢ় মাসের প্রথমে জ্যৈষ্ঠের গরমটা কাটিয়া গিয়াছে তাই রক্ষা, যে

আমার জীবনে সেই এক অদ্ভুত ব্যাপার সেবার ঘটেছিল। বছর তিনেক

আপনারা একালে যদু হাজরার নাম বোধ হয় অনেকেই শোনেননি। আমাদের

সহায়হরি চাটুজ্যে উঠানে পা দিয়াই স্ত্রীকে বলিলেন—একটা বড় বাটি কি

ঝমঝম বর্ষা। ভাদ্র মাসের দিন। আজ দিন পনেরো ধরে বর্ষা

খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের কথা। আজ থেকে প্রায় বাইশশো বছর আগের

বিধু মাস্টারের কথা আমি কখনো ভুলতে পারব না। তাঁর স্মৃতি

সকালবেলা পাঁচুদাসী বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। সারাদিন নৌকো বেয়েছে মাঝি, সন্ধ্যায়

সন্ধ্যার সময় কেশব গাঙ্গুলীর ভীষণ ঝগড়া হয়ে গেল দুই কন্যা

গৃহপ্রাঙ্গণে ভবনশিখী পাখা মেলে নেচে বেড়াচ্ছে অতিমুক্তলতার পাশে পাশে। কাল

বাড়ি বসিয়া লিখিতেছিলাম। সকালবেলাটায় কে আসিয়া ডাকিল— জ্যাঠামশাই?.একমনে লিখিতেছিলাম, একটু

সকালবেলা। একজন কাঁচা-পাকা দাড়িওয়ালা মুসলমান আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললে

নিশ্চিন্তপুর গ্রামের প্রান্তে হরিচরণ রায়ের ছোটো একখানা কোঠাবাড়ি ছিল। সংসারে

ছেলেমানুষ তখন আমি। আট বছর বয়স। দিদিমা বলতেন, তোর বিয়ে

ঘোর দুঃস্বপ্ন হইতে বুধী জাগিয়া উঠিল। সে একটু ঘুমাইয়াছিল কি?

হরি মুখুয্যের মেয়ে উমা কিছু খায় না। না-খাইয়া রোগা হইয়া

তারানাথ তান্ত্রিকের প্রথম গল্প আপনারা শুনিয়াছেন কিছুদিন আগে, হয়তো অনেকেই

অন্ধকার তখনও ঠিক হয় নাই। মুখুয্যে-বাড়ির পিছনে বাঁশবাগানের জোনাকির দল

সকালবেলা বৈঠকখানার গাছপালার হাটে ঘুরছিলাম। গত মাসে হাটে কতকগুলি গোলাপের

সন্ধ্যার কিছু আগে নীরেন ট্রেন হইতে নামিল। তাহার জানা ছিল

চাকুরি গেল। এত করিয়াও কৃষ্ণলাল চাকুরি রাখিতে পারিল না। সকাল

দু-দিন থেকে জিনিসপত্র গুছোনো চলল। পাড়ার মধ্যে আছে মাত্র তিনঘর

ওর ভালো নাম বোধ হয় ছিল নিস্তারিণী। ওর যৌবন বয়সে

—আ মর! এগিয়ে আসছে দেখো না। দূর হ, দূর হ।

উপেন ভটচাজের পুত্রবধূ বেশ সুন্দরী। একটিমাত্র ছোটো ছেলে নিয়ে অত

ভাটপাড়াতে পিসিমার বাড়ি গিয়েছিলুম বড়োদিনের ছুটিতে। সারাদিন বাড়িতে বসে থেকে

পাড়াগাঁয়ের মাইনার স্কুল। মাঝে মাঝে ভিজিট করতে আসি, আর কোথাও

বুধো মণ্ডলের মায়ের হাতে টাকা আছে সবাই বলে। বুধো মণ্ডলের

গ্রামের বাঁওড়ের মধ্যে নৌকো ঢুকেই জল-ঝাঁঝির দামে আটকে গেল। কানুনগো

এক-একজন লোকের স্বভাব বড়ো খারাপ, বকুনি ভিন্ন তারা একদণ্ডও থাকতে

মধুমতী নদীর ওপরেই সেকালের প্রকাণ্ড কোঠাবাড়িটা। রাধামোহন নদীর দিকের বারান্দাতে

খোকার অবস্থা শেষ রাত হইতে ভালো নয়। কী যে অসুখ

আইনস্টাইন কেন যে দার্জিলিং যাইতে যাইতে রানাঘাটে নামিয়াছিলেন বা সেখানে

সুহাসিনী মাসিমাকে আমি দেখিনি। কিন্তু খুব ছোটো বয়সে যখনই মামারবাড়ি

আমি সকালে উঠেই চণ্ডীমণ্ডপে যেতাম হীরু মাস্টারের কাছে পড়তে। আজ

সন্ধ্যা হইবার দেরী নাই। রাস্তায় পুরনো বইয়ের দোকানে বই দেখিয়া

আমাদের বাসা ছিল হরিবাবুর খোলার বাড়ির একটা ঘরে। অনেকগুলো পরিবার

গোরুরগাড়ি ঢুকল চাঁদপুর গ্রামের মধ্যে। ননীবালা ছেলেকে বললে—বাবা, চেয়ে দ্যাখো

এবার দেশে গিয়ে দেখি, গৌর পিয়োন পেনশন নিয়েছে। কতকাল পরে?

মতিলাল ছেলেকে বললে–বোসো বাবা, গোলমাল করো না। হিসেব দেখছি— ছেলে

সেবার আষাঢ় মাসে আমাদের বাড়ি একজন লোক এসে জুটল। গরিব

সাহেবের নাম এন. এ. ফারমুর। নীলগঞ্জের নীল কুঠিয়াল সাহেবদের বর্তমান

বৃদ্ধ মাধব শিরোমণিমশায় শিষ্যবাড়ি যাচ্ছিলেন। বেলা তখন একটার কম নয়।

ঘোষপাড়ায় দোলের মেলায় যাইবার পথে গঙ্গার ধারে মঠটা পড়ে। মঠ

আমার তখন বয়স নয় বছর। গ্রামের উচ্চ-প্রাইমারি স্কুলে পড়ি এবং

দশপারমিতার মন্দিরে সেদিন যখন সাপুড়ের খেলা দেখবার জন্য অনেক মেয়েপুরুষ

পনেরো-ষোলো বছর আগেকার কথা। পটলডাঙা স্ট্রিটে এক বেঞ্চিপাতা চায়ের দোকানে

ঠাকুরদাদা আমার শৈশবের অনেকখানি জুড়ে আছেন। সমস্ত শৈশব-দিগন্তটা জুড়ে আছেন।