নিজের ঢেকুরের শব্দে
নিজের ঢেকুরের শব্দে চমকে জেগে উঠে বিপিনবাবু বলে উঠলেন, “কে রে?” পরমুহূর্তেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে একা-একাই লজ্জা পেলেন। ঢেকুরের আর দোষ কী? কাল রাতে রামভজনবাবুর পাল্লায় পড়ে কয়েকখানা লুচি খেয়েছেন। কৃপণের পেটে গিয়ে লুচি যেন আজব দেশে এসেছে, এমন হাবভাব শুরু করে দিয়েছিল তখনই। প্রকাণ্ড ঢেকুরটা যেন লুচির বিদ্রূপ।
বিপিনবাবু উঠে বসে বিছানা হাতড়ে রামভজনের পা দু’খানা অন্ধকারে খুঁজতে লাগলেন। পা টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, সেজন্য লজ্জা হচ্ছিল। উনি কিছু মনে করলেন না তো?
কিন্তু পা দু’খানা বিছানার কোথাও খুঁজে পেলেন না বিপিনবাবু। আশ্চর্য! রামভজনবাবুর দু-দুখানা পা যাবে কোথায়? তেলের অপচয় হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে বলে বিপিনবাবু ঘরে আলো জ্বেলে রাখেন না, তাঁর টর্চবাতিও নেই। ফলে অন্ধকারে হাতড়াতে-হাতড়াতে তিনি রামভজনবাবুর হাত, কোমর, পেট, বুক, এমনকী মাথা অবধি খুঁজে দেখলেন। এবং অতি আশ্চর্যের বিষয় যে, রামভজনবাবুর পা দু’খানার মতোই হাত দুখানাও গায়েব হয়েছে। এমনকী, পেট, বুক এবং মাথা অবধি লোপাট। এত জিনিস একসঙ্গে কী করে উধাও হতে পারে, তা তিনি ভেবে পেলেন না। তিনি খুব করুণ মিনতির সুরে বললেন, “রামভজনবাবু! রামভজনবাবু! আপনি কোথায়?”
কেউ জবাব দিল না। বিপিনবাবু বিছানা ছেড়ে নেমে এসে অন্ধকারেই চারদিক খুঁজতে লাগলেন। চেয়ার, টেবিল এবং খাটের বাজুতে বারকয়েক ধাক্কা খাওয়ার পর হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ল, সদর দরজাটা যেন সামান্য ফাঁক হয়ে আছে!
কাছে গিয়ে দেখলেন, সত্যিই খিল খোলা। তবে কি রামভজনবাবু রাগ করে চলে গেলেন? কেন গেলেন? লুচিতে ঠিকমতো গাওয়া ঘিয়ের ময়ান দেওয়া হয়নি? আলুর দমে কি গরমমশলা ছিল না? বেগুন কি ডুবো তেলে ভাজা হয়নি? না কি ঘন দুধের ওপর পুরু সর ছিল না? কোন ত্রুটিটা ধরে তিনি এমনভাবে বিপিনবাবুকে ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন?
বিপিনবাবু খানিকক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলেন, “রামভজনবাবু! এ আপনি কী করলেন রামভজনবাবু। আমাকে যে পথে বসিয়ে দিয়ে গেলেন! সামান্য ত্রুটির জন্য সাত ঘড়া মোহর আর সাত কলসি হিরে-জহরত থেকে অধমকে বঞ্চিত করলেন!”
কান্নার শব্দে লোকজন সব জেগে উঠে শোরগোল তুলল।
“পালিয়েছে! পালিয়েছে! ছেলেধরা পালিয়েছে!” কেউ বলল, “ওরে দ্যাখ, জিনিসপত্তর কী কী নিয়ে গেল?”
গোপাল আর গোবিন্দ তেড়েফুঁড়ে উঠে বলল, “আমরা যে পদসেবা করব বলে লাইন দিয়ে বসে আছি..”
তুমুল হইহট্টগোল বেধে গেল। তারপর লোকজন টর্চ আর লণ্ঠন নিয়ে চারদিকে খুঁজতে ছুটল। তিন মাসি পরিত্রাহি চেঁচাতে লাগল। সেই চেঁচানোর কোনও মাথামুণ্ডু নেই। যেমন কাশীবাসী মাসি বললেন, “কেমন, আগেই বলেছিলাম কি না।”
হাসিরাশি মাসি বললেন, “আমিও ঠিক টের পেয়েছিলুম গো দিদি!”
হাসিখুশি মাসি বললেন, “আমি তো তখন থেকে পইপই করে বলছি?”
ঠিক এই সময়ে খাটের তলা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে রামভজনবাবু বেরিয়ে এসে বিপিনবাবুকে বললেন, “ওহে, আর দেরি করা ঠিক হবে না। এই সুযোগ!”
বিপিন কান্না ভুলে হাঁ করে চেয়ে থেকে অন্ধকারেই বললেন, “রামভজনবাবু নাকি! স্বপ্ন দেখছি না তো?”
“না হে আহাম্মক। এই চালাকিটা না করলে বিপদ ছিল। আর দেরি নয়, তাড়াতাড়ি চলো।”
বিপিন লাফিয়ে উঠে পড়ে বললেন, “যে আজ্ঞে।”
সদর খুলে দুজনে বেরিয়ে এলেন। ভজনবাবু বললেন, “পথঘাট ধরে যাওয়া ঠিক হবে না। আঘাটা আর খানাখন্দ ধরে চলো হে।”
বিপিনবাবুর কোনও আপত্তি হল না। খানিক হেঁটে, খানিক দৌড়ে রামভজনবাবুর গতিবেগের সঙ্গে তাল রাখতে রাখতে বিপিনবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “তা জায়গাটা কত দূর হবে মশাই!”
“দূর কীসের? দুটো গাঁ পেরোলেই মধুবনির জঙ্গল। তারপর আর পায় কে? চলো, চলো, রাত পোয়াবার আগেই জঙ্গলে ঢুকে পড়তে হবে।”
“সে আর বলতে! তা রামভজনবাবু, অভয় দিলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি।”
“কী কথা?”
“মোহর নিয্যস সাত ঘড়াই তো!”
“একেবারে নিয্যস।”
“আর সাত কলসি হিরে-জহরত, তাই না?”
“ঠিকই শুনেছ।”
“মাঝে-মাঝে মনে হচ্ছে ভুল শুনিনি তো?”
“কিছুমাত্র ভুল শোনননি। কিন্তু অমন থপথপ করে হাঁটলে তো হবে না। দৌড়ও, জোরে দৌড়ও!”
“যে আজ্ঞে।“ বলে যথাসাধ্য দৌড়তে-দৌড়তে বিপিন হাপসে যেতে লাগলেন। হাঁফাতে-হাঁফাতে একসময়ে আতঙ্কে আর্তনাদ করে উঠলেন, “ভজনবাবু! আপনি রক্তমাংসের মানুষ তো!”
“তা নয় তো কী?”
“ঠিক তো ভজনবাবু? আমার যে মনে হচ্ছে আপনি মাটির ওপর দিয়ে হাঁটছেন না, কেমন যেন উড়ে উড়ে যাচ্ছেন!”
“তুমিও উড়বার চেষ্টা করো হে বিপিন। আমার সঙ্গে তাল দিয়ে হাঁটতে না পারলে যে সেখানে পৌঁছতেই পারবে না।”
“বলেন কী মশাই, সেখানে না পৌঁছে ছাড়ার পাত্রই আমি নই। এই যে দেখুন, দৌড়ের জোর বাড়িয়ে দিলুম।”
“বাঃ বাঃ, বেশ!”
“আপনার বয়স যেন কত হল ভজনবাবু?”
“একশো ত্রিশ। তোমার চারগুণেরও বেশি।”
“কেমন যেন পেত্যয় হয় না। আচ্ছা ভজনবাবু!”
“বলে ফ্যালো?”
“আপনি কি একটু একটু করে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছেন? আপনার আর আমার মধ্যে তফাতটা যেন বেড়ে যাচ্ছে!”
“বাপু হে, তফাত তো বাড়বেই। তোমার যে মোটে গা নেই নেই দেখছি, সাত ঘড়া মোহর আর সাত কলসি হিরে-জহরতের কথা একটু ভেবে নাও, গা গরম হয়ে যাবে। তখন দেখবে হরিণের মতো ছুটছ।”
“যে আজ্ঞে।”
ছুটতে ছুটতে বিপিনবাবু চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন। তেষ্টায় বুক যেটে যেতে লাগল। পা আর চলে না। ভজনবাবু যেন ক্রমে ক্রমে দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছেন। তবু বিপিনবাবু হাল ছাড়লেন না। সাত ঘড়া মোহর আর সাত কলসি মণিমাণিক্যের কথা ভেবেই এখনও শরীরটাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলেছেন।
তবে কষ্টের শেষও হল একসময়ে। একটা মস্ত জঙ্গলের ভেতর ভজনবাবুর পিছু পিছু ঢুকে পড়লেন বিপিনবাবু। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ায় মুখে কথা ফুটল না।
ভজনবাবুই দয়া করে বললেন, “এসে গেছি হে। আর কিছু দূর এগোলেই আমার আস্তানা। এখন আর ছুটতে হবে না।”
বিপিনবাবুর চোখ কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল।
পুবদিকে ভোরের আলো ফুটি-ফুটি করছে। অন্ধকার পাতলা হয়ে এসেছে। কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে এখনও অমাবস্যার অন্ধকার। তার ওপর জঙ্গল এত ঘন যে, এগনো ভারী কষ্টকর। বিপিনবাবু এই অন্ধকারে ভজনবাবুকে একেবারেই দেখতে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ডাকাডাকি করা সম্ভব হচ্ছে না। গলা শুকিয়ে স্বরভঙ্গ হয়ে আছে।
হঠাৎ সামনে থেকে ভজনবাবু লাঠিটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, “এটা শক্ত করে ধরে থাকো হে বিপিন, নইলে এ-জঙ্গলে একবার হারিয়ে গেলে ঘুরে-ঘুরে মরতে হবে।”
বিপিনবাবু লাঠিটা ধরলেন। কিন্তু ভজনবাবু যত স্বচ্ছন্দে এগোচ্ছেন, বিপিনবাবু লাঠি ধরে থেকেও তা পারছেন না। দু’বার লতাপাতায় পা জড়িয়ে পড়ে গেলেন। বড় বড় গাছের সঙ্গে দুমদাম ধাক্কা খেতে লাগলেন বারবার। কপাল কেটে রক্ত পড়তে লাগল, হাঁটুর ছাল উঠে জ্বালা করছে। বিপিনবাবু তবু অন্ধের মতো লাঠিটা ধরে এগিয়ে যেতে লাগলেন। তাঁর কেবলই মনে হচ্ছিল, ভজনবাবু বুড়ো মানুষ তো ননই, আদতে মনিষ্যিই নন। এই বয়সে কারও এত শক্তি আর গতি থাকতে পারে?
কতবার পড়লেন, আরও কতবার গাছে ধাক্কা খেলেন তার আর হিসেব রইল না বিপিনবাবুর। কতক্ষণ এবং কতদূর হাঁটলেন সেটাও গুলিয়ে গেল। শেষ অবধি যখন এই শীতেও শরীরে ঘাম দিল আর হাত-পা একেবারে অসাড় হয়ে এল তখন হঠাৎ ভজনবাবু থামলেন। বললেন, “এই দ্যাখো, এই আমার ডেরা।”
বিপিনবাবু চোখ মেলে প্রথমটায় শুধু অন্ধকার দেখলেন। খানিকক্ষণ চেয়ে থাকার পর ধীরে-ধীরে আবছাভাবে দেখতে পেলেন, সামনে অনেক গাছ, ঝোঁপ আর লতাপাতার জড়াজড়ির মধ্যে যেন ভাঙাচোরা একটা বাড়ির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তোর হয়েছে অনেকক্ষণ, এখন আকাশে বেশ আলো ফুটেছে, কিন্তু এ-জায়গাটা এখনও সন্ধেবেলার মতো অন্ধকার।
ভজনবাবু খুব দয়ালু গলায় বললেন, “ওই তোমার বাঁ দিকে ঘাটের সিঁড়ি। পুকুরের জলে হাত-মুখ ধুয়ে নাওগে।”
বিপিনবাবু প্রায় ছুটে গিয়ে ঘাটে নেমে প্রথমটায় আঁজলা করে জল তুলে আকণ্ঠ পিপাসা মেটালেন। তারপর চোখেমুখে ঘাড়ে
জল দিয়ে নিজেকে একটু মনিষ্যি বলে মনে হল। যখন উঠে আসছেন তখন বাঁ দিকে একটা অদ্ভুত গাছ নজরে পড়ল তাঁর। বিশাল উঁচু সরল একটা গাছ, ডালপালা নেই। কিন্তু মগডাল থেকে গোড়া অবধি বড়-বড় পাতায় ঢাকা। এরকম গাছ তিনি জন্মে দ্যাখেননি।
জায়গাটা কেমন যেন ছমছমে, দিনের বেলাতেও কেমন যেন ভুতুড়ে ভাব।
রামভজনবাবু তাঁর বাঁদুরে টুপিটা গতকাল থেকে একবারও খোলননি। টুপির গোল ফোকর দিয়ে জুলজুলে চোখে বিপিনবাবুকে একটু দেখে নিয়ে বললেন, “কেমন বুঝছ হে?”
“আজ্ঞে, হাত-পায়ে একটু অসাড় ভাব আছে, বুকটা ধড়ফড় করছে, মাথাটা ঝিমঝিম, মাজায় টনটন, কানে একটু ঝিঝি। হাঁটু দুটো ভেঙে আসতে চাইছে। সর্বাঙ্গে এক লক্ষ ফোড়ার ব্যথা। তা হোক, তবু ভালই লাগছে।”
“বাঃ বাঃ; এই তো চাই। কষ্ট না করলে কি কেষ্ট পাওয়া যায় হে! এসো, এবার ডেরায় ঢোকা যাক।”
চারদিকে এত আগাছা আর জঙ্গল হয়ে আছে যে, এর ভেতরে কী করে ঢাকা যাবে তা বুঝতে পারলেন না বিপিনবাবু। কিন্তু রামভজনবাবু ওই বুকসমান জঙ্গলের ফাঁক দিয়েই একটা সরু পথ ধরে ঢুকতে লাগলেন। বিপিনবাবু সভয়ে বললেন, “সাপখোপ নেই তো ভজনবাবু?”
“তা মেলাই আছে। তবে শীতকালে তারা ঘুমোয়।”
বিপিনবাবু দেখতে পেলেন, সামনে বাড়ি নয়, বাড়ির একটা ধ্বংসস্তৃপই পড়ে আছে। শ্যাওলায় কালো হয়ে আছে খাড়া দেওয়ালগুলো। ভজনবাবু ধ্বংসস্তৃপটা পাশ কাটিয়ে বাঁ দিক দিয়ে বাড়ির পেছন দিকটায় উঠলেন।
বাড়িটা একসময়ে বেশ বড়সড়ই ছিল, বোঝা যায়। বিপিনবাবু দেখলেন, পেছন দিকে গোটাদুই ঘর এখনও কোনওমতে খাড়া আছে। জরাজীর্ণ দরজা-জানলাগুলি এখনও খসে পড়েনি।
বিপিনবাবু একটু অবাক হয়ে বললেন, “এ কী! দরজায় তালা দিয়ে রাখেননি?”
ভজনবাবু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে একটু হাসলেন, “তালা দেব কার ভয়ে? এখানে কে আসবে?”
“সাবধানের মার নেই কি না?”
ঘরে ঢুকে বিপিনবাবু দেখলেন, একধারে একখানা নড়বড়ে চৌকিতে একখানা শতরঞ্চি পাতা। একটা বালিশ, আর কম্বল।
ভজনবাবু বললেন, “এই তোমার বিছানা।”
“আমার বিছানা? আর আপনি!”
“আমার অন্য ব্যবস্থা আছে। এবার এসো, আসল জিনিস। দেখবে।”
“যে আজ্ঞে।”
ভজনবাবু পাশের ঘরটাতে ঢুকে মেঝেতে একখানা লোহার গোল ঢাকনা টেনে তুললেন। তলায় গর্ত।
গর্তের ভেতরে লোহার সিঁড়ি নেমে গেছে। ভজনবাবু নামতে-নামতে বললেন, “এসো হে।”
বিগলিত হয়ে বিপিনবাবু বললেন, “আসব? সত্যিই আসব? আমার একটু লজ্জা-লজ্জা করছে।”
“আহা, লজ্জার কী? নিজের জিনিস মনে করে সব বুঝে নাও। তারপর আমার ছুটি।”
“সত্যি বলছেন তো ভজনবাবু? ছলনা নয় তো!”
“ওরে বাবা, না। বুক চিতিয়ে চলে এসো।” বিপিনবাবু ভজনবাবুর পিছু পিছু সরু লোহার সিঁড়ি বেয়ে সাবধানে নামলেন। নীচের ঘরটা খুব একটা নীচে নয়। বড় জোর পাঁচ-সাত হাত হবে। বিপিনবাবু অবাক হয়ে দেখলেন, একটা মৃদু আলোর আভায় ঘরটা বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। আলোটা কোথা থেকে আসছে তা দেখতে গিয়ে হঠাৎ তাঁর ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। ঘরের মাঝখানে একটা প্রকাণ্ড কালো সাপ ফণা তুলে আছে, তারই মাথা থেকে একটা আলো বেরোচ্ছে।
ভজনবাবু বললেন, “ভয়ের কিছু নেই। সাপটা পাথরের। আর আলোটা দেখতে পাচ্ছ ওটা সাপের মাথার মণি। আসল সাপের মাথা থেকে এনে পাথরের সাপের মাথায় বসানো হয়েছে।”
বিপিনবাবু উত্তেজিত হয়ে বললেন, “সে মণির তো লাখো-লাখো টাকা দাম!”
“কোটি-কোটি টাকা।”
ঘরের একধারে পর পর সাতটা ঘড়া, অন্য ধারে পর পর সাতটা কলসি সাজানো।
ভজনবাবু বললেন, “হাঁ করে দেখছ কী! যাও, গিয়ে ভাল করে মোহরগুলো পরখ করো! এই নাও কষ্টিপাথর। ঘষেও দেখতে পারো।”
বিপিনবাবুর হাত-পা কাঁপছিল। স্বপ্ন দেখছেন না তো! নিজের হাতে একটা রামচিমটি কেটে নিজেই ‘উঃ করে উঠলেন। না, স্বপ্ন নয় তো? ঘটনাটা যে ঘটছে!
প্রথম ঘড়া থেকে খুব সঙ্কোচের সঙ্গে একখানা মোহর তুলে দেখলেন তিনি। খাঁটি জিনিস।
“দ্যাখো, ভাল করে ফেলে ছড়িয়ে ঘেঁটে দ্যাখো। নইলে মজাটা কীসের? এসব তো ঘেঁটেই আনন্দ!”
তা ঘাঁটলেন বিপিন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারা সকাল সোনাদানা হিরে-জহরত নাড়াচাড়া করে মনটা যেন স্বর্গীয় আনন্দে ভরে উঠল। ভজনবাবু তাই দেখে খুব হাসতে লাগলেন।