Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিদেশ যাত্রা || Maya Chowdhury

বিদেশ যাত্রা || Maya Chowdhury

বিদেশ যাত্রা

সমীরণ বাবু ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মচারী। একটি ছেলে, পড়াশোনায় খুব ভালো। ওনার স্ত্রী বৈশাখী অন্য একটি ব্যাংকে চাকরি করে। এক প্রকার সুখের সংসার। ছেলের পড়াশোনা নিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময়টা কেটে গেছে। বছরখানেক হলো ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। ওরা দুইজনই বিদেশে থাকে। এখন আসতে সময় লাগবে। নতুন জায়গা, নিজেদের কেরিয়ার তৈরি করাতে ব্যস্ত ওরা। এর মধ্যে একটা অঘটন ঘটে গেছে। মা বৈশাখী এই বছর অতিমারীতে প্রাণ হারিয়েছে। ছেলে বউ বাবাকে ফোন করেছিল, এমন অবস্থায় আসতে না পারার জন্য দুঃখিত। সমীরণ বাবু এই সমস্যাগুলো বোঝেন। তাই কষ্ট পাননি, ওদেরকে বুঝিয়ে বলেছেন সময়মতো আসতে। নিজের অত বড় বাড়িতে একা থাকতে আর ভালো লাগছে না। তাই তিনি বাড়িটা বিক্রি করে ভাড়া বাড়িতে রইলেন। সুবিধা হচ্ছে লোকজন সঙ্গে পাবেন। একাকিত্ব মেনে নিতে পারছেন না। বয়স হয়েছে, রোগ ব্যাধির উপদ্রব হয়েছে। চলে যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন। ওরা মাঝেমধ্যে খবর নেয়। তবে আগের থেকে খবর নেওয়া কমে গেছে। হঠাৎ সমীরণ বাবুর স্ট্রোক হলে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়। বাড়ির মালিক ভর্তি করে দিয়ে দেখাশোনা করতেন। ছেলেকে ফোন করলে, সে জানায় আপনি যা করার করুন আমি টাকা পাঠিয়ে দেব। অগত্যা তাকেই করতে হয়। মাঝে একবার সুস্থ হলেও, দ্বিতীয়বার বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মৃতদেহ নিয়ে ভদ্রলোক খুবই অসুবিধায় পড়লেন। আধার কার্ড বা কাগজপত্র ঠিক মত খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ওদিক থেকে ছেলে পারমিশন দিয়েছে মৃতদেহ সৎকার করে দিতে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর, পাড়ার দু-চারজনকে নিয়ে মৃতদেহ সৎকার করলেন। ঘরের শান্তির জন্য সামান্য শ্রাদ্ধের আয়োজন করলেন। সমীরণ বাবুর বিভিন্ন একাউন্টে প্রায় ৭০ লাখ টাকার মত ছিল। হঠাৎ করে ছেলে দু দিনের নোটিশে চলে এলো। বিভিন্ন ব্যাংকের ঘোরাঘুরি করার পর কিছু টাকা ট্রান্সফার করেছে, যেটা বাকি আছে আবার হয়ত ফেব্রুয়ারি তে আসতে হবে। বাবা যখন বেঁচে রইলেন, ছেলের সময় হয়নি। অদ্ভুত লাগলো, টাকা-পয়সার হিসাবে সন্তানেরা কি নিষ্ঠুর হতে পারে। সমাজের সবাই স্বপ্ন দেখে সন্তানদের সুশিক্ষিত করবে বিদেশে পাঠাবে। কিন্তু পরিণতি তো সেই সমীরণ বাবুর মতই হয়তো হবে। উল্টোদিকে যারা নিজের জন্ম ভিটা তে বাস করছে, হোক না কম আয়, তবু এটাই গর্ব নিজের জন্মভূমি এবং বাবা-মায়ের কাছে আছে। বাবা-মার এতটা অ শ্রদ্ধার পাত্র হয় না তাদের কাছে। যদিও সবাই সমীরণ বাবুর ছেলের মত নয়। নিজের বাড়িতে থাকা, উপার্জন করা, এটাই শ্রেয়। সন্তানের সঙ্গে বাবা -মা বিদেশে চলে গেলে তবু তাদের কাছে থাকতে পারবে, এত দূরত্বে থাকা বড্ড কষ্টের। আজকাল স্বদেশ অপেক্ষা বিদেশকে সবাই প্রাধান্য দেয়। কিন্তু এর পরিণতিতে বাবা-মা বড্ড একাকীত্বে ভোগেন। স্বপ্নের বাড়িগুলো নিঝুম ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress