বিবাহ বিচ্ছেদ -1
সুজনের বাড়ি সেদিন আনন্দে আত্মহারা।আর হবেই’বা না কেন।বংশের একমাত্র ছেলে দস্তুরমত সরকারী চাকরি পেয়েছে।চিঠিটা সুজনের বাবা নিয়েছিলেন। ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রকের চিঠি দেখে ভ্রু কুঁচকে ভেবেছিলেন ফ্যাসাদ কি এলো আবার।চারদিকে যা শুনছেন ইনকাম ট্যাক্সের রেড হচ্ছে।ছেলের নামে চিঠি, তাই ভদ্রতা করে খুলে দেখেন’নি।ভেবেছিলেন বেকার ছেলে সুজনের বাড়ি আত্মীয়মহল,পাড়াতে সুনাম থাকলেও প্রায় সারাদিন বাড়ির বাইরেই থাকে।দু চারটে টিউশনি করে নিজের খরচ চালায়,তাই তো বলে, কুসঙ্গে মিশে যায় নি তো ?রাতে সুজন ফিরতে ওকে চিঠিটা দিলেন।পরে দখবো বলে সুজন হাতমুখ ধুয়ে নিজের ঘরে চলে গেল খেয়েদেয়ে।রিটায়ার্ড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার কুমার বাবুর রাতের ঘুম উবেই গেল।চিত্রা দেবী,সুজনের মা,স্বামীর এ হেন চিন্তা দেখে বহু জিজ্ঞাসা করেও সদুত্তর না পেয়ে- চিন্তা কেন তা বলবেন না,আমার হাড়মাস জ্বালিয়ে খেল,বলে নিদ্রাদেবীর আরাধনাতে গেলেন।সুজন চিঠি নিয়ে ঘরে এলো ঠিকই কিন্তু খুলে দেখলো না,তখন তার মাথায় খালি রোশনীর চিন্তা।সুজন বছর আঠাশের হ্যান্ডসাম ছেলে,কলেজের বন্ধুরা এক নামকরা চিত্রতারকার সঙ্গে ওর তুলনা করতো বলে মাঝে বেশ কয়েক বছর স্টুডিওপাড়ায় চক্কর কেটেছিল।কল্কে পায়নি তেমন।
এদিকে বাপ মায়ের ধ্যাতানি খেয়ে গেয়ে উঠেছিল “মন চল নিজ নিকেতনে”।হিরো হওয়ার বাসনায় কলেজ জীবনের প্রেমগুলোর ইতি ঘটিয়েছিল অঙ্কুরে।লেখাপড়ায় বেশ ভালোই তাই টিউশন জুটে গিয়েছিল।এখন ঐ রোজগার সম্বল।একমাত্র দিদি বনির বিয়ে হয়ে গেছে।এখনও ফাঁক পেলে স্টুডিও পাড়ায় ঢুঁ দেয়, তবে প্যাশনটা এখন জোলো।চাকরির পরীক্ষা দিয়ে চলেছে।এখন ওটাই মোক্ষ আর লক্ষ্য।ফেসবুক করতে করতেই আলাপ রোশনীর সঙ্গে।প্রোফাইল অনুযায়ী বছর পঁচিশ বয়স।গ্র্যাজুয়েট,টিউশনি করে,আধুনিকা। কিন্তু মুশকিল হলো দু বছর ধরে প্রেম পর্ব চললেও আর হাজার বার বললেও রোশনী তার ছবি সুজনকে আজ পর্যন্ত দেয়নি।খালি বলেছে সময় এলেই পাবে তবে সুজন যেন মন দিয়ে এখন চাকরির চেষ্টাই করে না হলে দুজনে ভবিষ্যতে ঘর বাঁধবে কি করে। প্রথম প্রথম সুজনের মনে হয়েছিল এটা ফেক প্রোফাইল কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্টাডি করে সুজন নিশ্চিত হয়েছিল সে ভুল ভেবেছে।আজ নেটে অন হয়ে দেখে রোশনী ইনবক্সে লিখেছে ছাত্রের পরীক্ষার নোটস্ লিখবে তাই একটু বেশি রাত করে আসবে, সুজন যেন অনলাইন থাকে।এর আগে বার চারেক ম্যাসেঞ্জারে ফোন করলেও রোশনী ধরে তো নি বরং কষে ধমক দিয়েছিল সুজনকে। সুজন উত্তরে লিখে জানালো যে সে ফ্রি এখন।হটাৎ খেয়াল পড়লো বাবার দেওয়া চিঠিটার কথা। খুললো, দেখেই অবাক, ইনকাম ট্যাক্সে ইন্সপেক্টর পদের পরীক্ষা দিয়েছিল, লিখিত পরীক্ষায় আগেই পাশ করে ভাইভাতে বসেছিল,সেখানেও পাশ,ফল তার নিয়োগপত্র এসেছে, সঙ্গে এক আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করার সময় ও দিন আর অন্যান্য ফর্মালিটির নির্দেশ,সব ঠিক চললে এখন যোগদান,একমাস ট্রেনিং,পরবর্তী ছ’মাসের পরে পাকা চাকরি।এছাড়া মাইনেপত্র অন্যান্য সুযোগ সুবিধে নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সুজন।হতভম্ভ ভাব কাটিয়ে রাতেই বাবা মা’কে ঘুম থেকে টেনে তুলে ঢিপ করে এক প্রণাম।কুমার বাবু খুব খুশি,অনেক আর্শিবাদ করলেন ছেলেকে,চিঠি পাওয়ার পর থেকে যে অজানা ভয়টা চেপে ধরেছিল তা মূহুর্তে উধাও।চিত্রা দেবীও অত রাতে মেয়ে বনিকে ফোন করে সুসংবাদ দিল।কিছুক্ষণ কাটিয়ে যে যার ঘরে চলে গেলো।রোশনী তখনও অনলাইন।সুজন যত্ন করে চিঠিটার ছবি তুলে রোশনীর ইনবক্সে পাঠিয়ে দিল।অনেক রাতে রোশনী অনলাইন হতে শুরু হলো দুজনের কথাবার্তা।বর্তমান প্রেম, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, মুআআ কিছুই বাদ গেল না,শুধু বাদ গেল রোশনীর জেদে ছবি না পেয়ে সুজনের রোশনী দর্শন।রোশনীর সাফ কথা হ্যাংলাপনা যেন না করে সুজন।সবুরে মেওয়া ফলে।সে আগে জয়েন করুক,পাকা হোক তখন দেবে,তাছাড়া সে তো সুজনের কাছে আসবেই চিরদিনের জন্য।বিমর্ষ সুজন হালে পানি না পেয়ে ছেড়ে দি’ল।পরেরদিন দিদি জামাইবাবু ভাগ্নে ভাগ্নি কাকু কাকিমা সবাই এসে হাজির,তমুল হৈ চৈ,আনন্দ।তারমধ্যেই রোশনীর কথা স্মরণ করে সুজন বললো এখনই আনন্দের বন্যায় ভাসতে হবে না,চাকরি পাকা হলে সে নিজেই পার্টি দেবে।সবাই সুজনের প্রস্তাব মেনে নিল।বেলা বাড়ার সাথে সাথে খবরটা ভাইরাল হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে গেল।অভিনন্দন আর প্রশংসার বন্যায় সুজন ভেসে গেল।ফের রাত এলো রোশনীকে সঙ্গে নিয়ে। সুজন তার এই প্রেম পর্বটা কেবল প্রাণের বন্ধু সমুকে বলেছেল।সমু ভাল ছেলে,সে’ও প্রথমে সন্দেহ করলে এখন আর করেনা। রোশনীও সমুর ফেসবুক ফ্রেন্ড।দাদা বলে যথেষ্ট সম্মান দেয়। দিন এগিয়ে গেল,সবকিছু নিয়ম কানুন টপকে সুজন চাকরিতে জয়েন করলো,শুরু হলো ট্রেনিং পর্ব,মিটেও গেল।সিনিয়র কলিগদের সঙ্গে কাজ শুরুও করলো আর প্রেমপর্ব তো আরও জোরদার হলো।এখন সকাল সন্ধ্যে মুআআ না পেলে কারুরই দিন ভালো যায় না।বিয়ের পরে মানালিতে হনিমুন করার সিদ্ধান্ত পাকা।নেট ঘেঁটে মানালি নিয়ে অনেক লেখাপড়া করে নি’ল সুজন।