Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বাড়িটা এত ফাঁকা

বাড়িটা এত ফাঁকা, এত ধু ধু ফাঁকা যে লীনার কাপ ডিশ ছুড়ে ভাঙতে ইচ্ছে করে।

বেসিনে গিয়ে সে দু’হাত ভরে জল নিয়ে চোখে মুখে প্রবল ঝটকা দিচ্ছিল। মাথাটা ভোম হয়ে আছে, কান জ্বালা করছে, মনটা কাঁদো কাঁদো করছে। কোনও মানে হয় এর?

লোকটা যে বিটকেল রকমের পাগল তাতে সন্দেহ আছে কোনও? লীনাকে ভয়-টয় খাইয়ে একটা ম্যাসকুলিন আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করছে না তো? না কি প্র্যাকটিক্যাল জোক? রঙ্গ-রসিকতার ধারে কাছে বাস করে বলে তো মনে হয় না। কিন্তু ববি রায় যে একটু চন্দ্রাহত তাতে সন্দেহ নেই।

লীনাদের বাড়িটা দোতলা। গোটা আষ্টেক ঘর। একটু বাগান আছে। এ বাড়িতে প্রাণী বলতে তারা এখন তিনজন। মা, বাবা আর লীনা। দুপুরে কেউ বাড়ি থাকে না। শুধু রাখাল আর বৈষ্ণবী। তারাই কেয়ারটেকার, তারাই ঝি চাকর, রাঁধুনি। বয়স্কা স্বামী-স্ত্রী, নিঃসন্তান। একতলার পিছন দিকের একখানা ঘরে তারা নিঃশব্দে থাকে। ডাকলে আসে, নইলে আসে না। নিয়ম করে দেওয়া আছে।

শরৎ শেষ হয়ে এল। দুপুরেও আজকাল গরম নেই। রাত্রে একটু শীত পড়ে আর উত্তর দিক থেকে হাওয়া দেয়। লীনা মস্ত তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছল, ঘাড় মুছল। ঠান্ডা জলের প্রতিক্রিয়ায় গা একটু শিরশির করছে।

ঘড়িতে পৌনে চারটে। পাঁচটার সময় ববি রায়ের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট। থিয়েটার শুরু হবে সাড়ে ছ’টায়। দেড় ঘণ্টা সময় হাতে থাকছে। তা হলে পাগলা ববি কেন তাকে থিয়েটার বাদ দিতে বলছে?

কে জানে বাবা, লীনা কিছু বুঝতে পারছে না।

দোলন এসে অ্যাকাডেমিতে হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকবে তার জন্য। দোলনের ফোন নেই। দোলনকে খবর দেওয়ার কোনও উপায় নেই। সিমলের মোড়ে গদাইয়ের চায়ের দোকানে খবর দিয়ে রাখলে সেই খবর দোলন পায়। কিন্তু এখন সেই সিমলে অবধি ঠ্যাঙাবে কে? একটা গাড়ি থাকলেও না হয় হত।

গাড়ি যে নেই এমনও নয়। দু’-দুখানা গাড়ি তাদের। পুরনো অ্যাম্বাসাডারটা তো ছিলই। সম্প্রতি মারুতিটা এসেছে। কিন্তু সে দু’খানা তার মা আর বাবার। দুজনেই জবরদস্ত কাজের লোক। লীনার একদা বিপ্লবী দাদা বিপ্লব করতে না-পেরে টাকা রোজগারে মন দিয়েছিল। ভাল ইঞ্জিনিয়ার সে ছিলই। ব্যাবসা করতে নেমেই টুকটাক নানা যোগাযোগে এত দ্রুত বড়লোক হতে লাগল যে, এ বাড়িতে বাপ আর ছেলের মধ্যে শুরু হয়ে গেল চাপা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সোরাব-রুস্তম। তারপর দাদা বিয়ে করল, বিশাল বাড়ি হাঁকড়াল এবং বাপ-মা-বোনকে টা-টা গুডবাই করে চলে গেল। দাদার বোধহয় তিন-চারখানা গাড়ি। একদা-বিপ্লবীকে এখন পেয়েছে এক সাংঘাতিক টাকার নেশা। হিংস্র, একবোখা, কাণ্ডজ্ঞানহীন অর্থোপার্জন। সেই ভয়ংকরী আকর্ষণের কাছে দুনিয়ার আর সব কিছুই তুচ্ছ হয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজন তো দুরের কথা, নিজের বউ-বাচ্চার প্রতিও তার কোনও খেয়াল নেই। বিশাল বিশাল কনস্ট্রাকশনের কাজ নিয়ে কলকাতা থেকে সৌদি আরব পর্যন্ত পাড়ি দিচ্ছে। দেশ-বিদেশ ঘুরছে পাগলের মতো। বিপ্লবী দাদাকে পাগলের মতো ভালবাসত লীনা, কিন্তু এই দাদাকে সে চেনেই না।

দাদার কাছে গাড়ি চাইলেই পাওয়া যাবে। লীনা জানে। কিন্তু চাওয়ার উপায় নেই। বাবা জানতে পারলে কুরুক্ষেত্র করবে। কী করে যে দোলনকে একটা খবর দেওয়া যায়! ট্যাক্সির কোনও ভরসা নেই। আর উত্তর কলকাতায় যা জ্যাম! এখন বেরোলে পাঁচটার মধ্যে ফেরা যাবে কি না সন্দেহ।

লীনা এক কাপ চা খেল। তারপর হলঘরের ডিভানে শুয়ে একখানা ইংরিজি থ্রিলার পড়ার চেষ্টা করল। হল না।

বাড়িটা বড্ড খাঁ খাঁ করছে। যতদিন দাদা ছিল এত ফাঁকা লাগত না। এ বাড়ির লোকেরা শুধু টাকা চেনে। শুধু টাকা। তার বাবারও ওই এক নেশা। দিন রাত টাকা রোজগার করে যাচ্ছে। তারও মস্ত ব্যাবসা কেমিক্যালসের। মা পর্যন্ত বসে নেই। মেয়েদের জন্য একটা এক্সকুসিভ ইংরিজি ম্যাগাজিন বের করেছে। তাই নিয়ে ঘোরর ব্যস্ত।

এদের কারও সঙ্গেই সম্পর্ক রচনা করে তুলতে পারেনি লীনা। ছেলেবেলা থেকেই সে এই ব্যস্ত মা বাবার কাছে অবহেলিত। নিজের মনে সে বড় হয়েছে। ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকেও যে কতখানি শুন্যতা একজনকে ঘিরে থাকতে পারে তা লীনার চেয়ে বেশি আর কে জানে? এমনকী ওই যে ভ্যাগাবন্ড দোলন, সেও এই শূন্যতাকে ভরে দিতে পারে না। গরিবের ছেলে বলে নানা কমপ্লেকস আছে। হয়তো মনে মনে লীনাকে একটু ভয়ও পায়। বেচারা!

লীনা চাকরি নিয়েছে টাকার প্রয়োজনে তো নয়। এই আট ঘরের ফাঁকা বাড়ি তাকে হানাবাড়ির মতো তাড়া করে দিন রাত। সকাল-সন্ধে মা-বাবার সঙ্গে দেখা হয় দেখা না-হওয়ার মতোই। দু’জনেই নিজের চিন্তায় আত্মমগ্ন, বিরক্ত, অ্যালুফ। সামান্য কিছু কথাবার্তা হয় ভদ্রতাবশে। যে যার নিজস্ব বলয়ের মধ্যে বাস করে। লীনা ইচ্ছে করলে বাবার কোম্পানিতে, দাদার কনসার্নে বা মায়ের ম্যাগাজিনে চাকরি করতে পারত। ইচ্ছে করেই করেনি। গোমড়ামুখো মা-বাবার সংশ্রবের চেয়ে অচেনা বস বরং ভাল।

কপাল খারাপ। লীনা এমন একজনকে বস হিসেবে পেল, যে শুধু গোমড়ামুখোই নয়, পাগলও।

ওয়ার্ডরোব খুলে লীনা ড্রেস পছন্দ করছিল। দেশি, বিদেশি অজস্র পোশাক তার। সে অবশ্য আজকাল তাঁতের শাড়িই বেশি পছন্দ করে।

বেছে-গুছে আজ সে জিনস আর কামিজই বেশি পছন্দ করল।

সাজতে লীনার বিশেষ সময় লাগে না। মোটামুটি সুন্দরী সে। রূপটান সে মোটেই ব্যবহার করে। মুখে একটু ঘাম-তেল ভাব থাকলে তার মুখশ্রী ভাল ফোটে, এটা সে জানে। পায়ে একজোড়া রবার সোলের সোয়েডের জুতো পরে নিল। গয়না সে কখনওই পরে না, ঘড়ি পরে শুধু।

হাতে পনেরো মিনিট সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়বে লীনা। ওল্ড বালিগঞ্জ থেকে হেঁটে যেতে দশ মিনিটের মতো লাগবে। সে একটু আস্তে হাঁটবে বরং।

ব্যাগ থেকে একটা চুয়িংগাম বের করে মুখে পুরে নিল লীনা। কাঁধে ব্যাগ। বেরোবার জন্য ঘড়িটা দেখে নিল। আরও দু’মিনিট। বুকটা কি একটু কাঁপছে?

দুর্বলতা বা নার্ভাসনেস দূর করতে সবচেয়ে ভাল উপায় হল একটু ব্রিদিং করা। তারপর শবাসন। শরীর ফিট রাখতে লীনাকে অনেক যোগব্যায়াম আর ফ্রি হ্যান্ড করতে হয়েছে। এখনও করে।

লীনা বাইরের ঘরে সোফায় পা তুলে পদ্মাসনে বসে গেল। কিছুক্ষণ নিবিষ্টভাবে ব্রিদিং করে নিল। ঠিক দুমিনিট।

বাইরে রোদের তেজ মরে এসেছে। বেলা গুটিয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। লীনা কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে হাতে দোলাতে দোলাতে হাঁটতে লাগল।

নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে লীনা গঁড়াল। এ তার চেনা জায়গা। গোটা অঞ্চলটাই তার চেনা। ছোট থেকে এইখানেই সে বড় হয়েছে।

লীনা দাঁড়িয়ে রইল। সময় বয়ে যেতে লাগল। টিকটিক টিকটিক।

পাঁচটা।… পাঁচটা দুই।… পাঁচটা পাঁচ।… পাঁচটা দশ। পাঁচটা পনেরো।

লীনা ঘড়ি দেখল। না, তার কোনও দায় নেই অপেক্ষা করার। সময় ববি দিয়েছিলেন। ববি কথা রাখেননি।

সুতরাং লীনা এখন যেখানে খুশি যেতে পারে।

থিয়েটার সাড়ে ছ’টায়। হাতে এখনও অনেক সময় আছে। লীনা ফিরে গিয়ে বাড়ি থেকে কিছু একটা খেয়ে আসতে পারে। খিদে পাচ্ছে।

লীনা ফিরল। নির্জন রাস্তাটা ধরে সামান্য ক্লান্ত পায়ে হাঁটতে লাগল। পিছনে বড় রাস্তা থেকে যে কালো গাড়িটা মোড় নিল সেটাকে লক্ষ করার কোনও কারণ ছিল না লীনার।

মসৃণ গতিতে সমান্তরাল ছুটে এল গাড়িটা। নিঃশব্দে।

লীনা কিছু বুঝবার আগেই প্রকাণ্ড বিদেশি গাড়িটার সামনের দরজা খুলে গেল। একটা হাত বিদ্যুৎগতিতে বেরিয়ে এসে লীনার ডান কবজিটা চেপে ধরল। সে কিছু বুঝে উঠবার আগেই চকিত আকর্ষণে তাকে টেনে নিল ভিতরে।

আঁ-আঁ-আঁ—

চেঁচাবেন না। প্লিজ।

আ-আপনি?

লীনা তালগোল পাকানো অবস্থা থেকে শরীরটাকে যখন সোজা ও সহজ করল গাড়িটা আবার বাঁয়ে ফিরে অন্য রাস্তা ধরেছে। স্টিয়ারিং হুইলে এক এবং অদ্বিতীয় সেই পাগল। ববি রায়।

এর মানে কি মিস্টার রায়?

প্রিকশন।

তার মানে?

আমি কি মানে-বই?

তার মানে?

আপনার মাথায় গ্রে-ম্যাটার এত কম কেন?

লীনা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আপনার আই-কিউ কেন জিরো?

ববি রায় গাড়িটায় বিপজ্জনক গতি সঞ্চার করে বললেন, আইনস্টাইনের আই-কিউ কত ছিল জানেন?

না।

আমিও জানি না। তবে মনে হয় জিরোই। জিনিয়াসদের আই-কিউ দরকার হয় না। আই-কিউ দরকার হয় তাদের, যারা কুইজ কনটেস্টে নামে।

আপনি কি জিনিয়াস?

অকপটে বলতে গেলে বলতেই হয় আমার মাথার দাম আছে। এ কস্টলি ‘হেড মিসেস ভট্টাচারিয়া, আপনার মাথায়–

মিসেস নয়, মিস।

ওই একই হল। আপনার মাথায় গ্রে-ম্যাটার খুব কম।

আপনি গাড়ি থামান। আমি নেমে যাব।

ববি রায় জবাব দিলেন না! পাত্তাও দিলেন না। পার্ক সার্কাসের পার্ক ঘুরে গিয়ে ডানধারে একটা রাস্তা ধরলেন। নির্জন রাস্তা।

কোথায় যাচ্ছেন?— লীনা রায় চেঁচিয়ে উঠল।

বয়ফ্রেন্ড।

তার মানে?

বয়ফ্রেন্ড মানে দরকার নেই। কিন্তু বানানটা দরকার। বি ও ওয়াই এফ আর আই ই এন ডি। কটা অক্ষর হল?

মাই গড! আপনি কি সত্যিই পাগল?

ঠিক নটা অক্ষর আছে। কিন্তু আমাদের কম্পিউটারের ঘর আটটা। সুতরাং আপনাকে একটা অক্ষর ড্রপ করতে হবে। ফ্রেন্ড-এর আই অক্ষরটা বাদ দিন। শুধু এফ আর ই এন ডি হলেই চলবে।

তার মানে?

আপনি কি ফাটা রেকর্ড? তার মানে তার মানে করে যাচ্ছেন কেন? একটু চুপ করে সিচুয়েশনটা মাথায় নেওয়ার চেষ্টা করুন।

লীনা চোখ বুজে কম্পিত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর চাপা স্বরে বলল, আই হেট ইউ।

ধন্যবাদ। কিন্তু বানানটা শিখে নিন। বয়ফ্রেন্ড ঠিক যেমনটি বললাম।

লীনা সোজা হয়ে বসে বলল, আমি জানতে চাই, আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?

ববি রায় তার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বললেন, আপনি কম্পিউটার অপারেট করতে পারেন?

জানি না।

নো প্রবলেম। বলে ববি রায় তার হাওয়াই শার্টের বুক-পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে লীনার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।

ওটা কী?

এটাতে হিন্ট দেওয়া আছে। কম্পিউটার চালু করে প্রথমে কোডটা ফিড করবেন। তারপর ইনফরমেশন ডিমান্ড করবেন।

আমি পারব না।

পারতেই হবে। পারতেই হবে। পারতেই—

মিস্টার রায়, আমি আপনার স্লেভ নই। আপনার আচরণ বর্বরদের মতো। আপনি–

ভেরি ইজি। কম্পিউটার ইন ফ্যাক্ট একটা ট্রেইন্ড বাঁদরেও অপারেট করতে পারে। যদিও আপনার গ্রে-ম্যাটার কম, তবু এ কাজটায় তেমন ব্রেন-ওয়ার্কের দরকারও নেই।

মিস্টার রায়—

ঠিক সাত দিন বাদে কোডটা বদলাতে হবে। খুব ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার। সাত দিনের মাথায়—

মিস্টার রায়, গাড়ি থামান! আমি নেমে যাব।

এবার ববি রায় লীনার দিকে তাকালেন। ভ্রু একটু ওপরে তুলে বললেন, সামনেই ইস্টার্ন বাইপাস। এ জায়গা থেকে ফিরে যাওয়ার কোনও কনভেয়ান্স নেই।

তা হোক। কলকাতায় আমার একা চলাফেরা করে অভ্যাস আছে।

ববি রায় নীরবে গাড়িটা চালাতে লাগলেন। বিশ্রী এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা। অত্যন্ত ঘিঞ্জি বস্তি এবং ননাংরা পরিবেশের ভিতর দিয়ে প্রকাণ্ড গাড়িটা ধুলো উড়িয়ে চলেছে। কিন্তু ভিতরটা শীততাপনিয়ন্ত্রিত আর গদি নরম বলে তেমন কষ্ট হচ্ছে না লীনার।

ববি রায় বেশ কিছুক্ষণ বাদে বললেন, আমি একটু বাদেই নামব। আপনি এই গাড়িটা নিয়ে ফিরে যাবেন।

লীনা চমকে উঠে বলল, গাড়ি নিয়ে?

কেন, আপনি তো গাড়ি চালাতে জানেন!

জানি, কিন্তু আমি কেন গাড়ি নিয়ে ফিরব?

এ গাড়িটা আপনার নামে অফিসের লগবুকে আজ থেকে অ্যালট করা হয়েছে।

কিন্তু কেন?

ববি রায় নির্বিকার মুখে জিজ্ঞেস করলেন, কেন, গাড়িটা পছন্দ নয়?

উঃ, আমি কি পাগল হয়ে যাব?

এটা বেশ ভাল গাড়ি মিসেস ভট্টাচারিয়া, খুব ভাল গাড়ি। তেলের খরচ কোম্পানি দেবে। চিন্তা করবেন না।

লীনার মাথা এতই তালগোল পাকিয়ে গেছে যে, সে এবার ‘মিসেস ভট্টাচারিয়া’ শুনেও আপত্তি করতে পারল না। আসলে সে কথাই বলতে পারল না।

ববি রায় ইস্টার্ন বাইপাসে গাড়ি বাঁ দিকে ঘোরালেন। চওড়া ফাঁকা মসৃণ রাস্তা। দিনান্তের ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিকের চরাচর। কুয়াশা জমে উঠেছে চারদিকে।

লীনা দরজার হাতলের দিকে হাত বাড়াল।

ববি রায় মাথা নাড়লেন, ওভাবে খোলে না। সুইচ আছে মিম ভট্টাচারিয়া। কিন্তু ওসব শিখে নিতে খুব বেশি গ্রে-ম্যাটারের দরকার হবে না। এই যে, এইখানে সুইচ, চারটে দরজার জন্য চারটে সুইচ।

ওঃ, মাই গড।

এত ভগবানকে ডাকছেন কেন বলুন তো! এখনও কিন্তু আপনি তেমন বিপদে পড়েননি।

তার মানে?

ববি রায় এবার হাসলেন। লীনা এই স্বল্প আলোতেও দেখল, এই রোগা খ্যাপাটে কালো লোকটার হাসিটা ভীষণ রকমের ভাল।

ববি রায় হাসিটা মুছে নিয়ে বললেন, তবে বিপদে পড়বেন। হয়তো বেশ মারাত্মক বিপদেই, নিজের কোনও দোষ না-থাকা সত্ত্বেও।

তার মানে?

ওঃ, আপনার আজ একটা কথাতেই পিন আটকে গেছে। তার মানে’ ছাড়া অন্য কোনও ডায়ালগ কি মাথায় আসছে না?

না। আমি এসবের মানে জানতে চাই।

অত কথা বলার যে সময় নেই আমার। আমার সময় বড্ড কম। খুন হয়ে যাওয়ার আগে আমাকে তাড়াতাড়ি আমার সব কিছু গুটিয়ে নিতে হবে।

আপনি কেবল খুন-খুন করছেন কেন?

ববি রায় একটা প্রকাণ্ড শ্বাস ছেড়ে বললেন, আমি রোমান্টিক বাঙালির মতো মৃত্যুচিন্তা করি না মিসেস ভট্টাচারিয়া—

মিসেস নয়, মিস–

ইররেলেভেন্ট। বয়ফ্রেন্ড মনে থাকবে?

না থাকার কী আছে! আর ফর ইয়োর ইনফরমেশন আমি কম্পিউটারের একটা কোর্স করেছিলাম। আমার বায়োডাটায় সে কথ, লেখা ছিল।

তা হলে তো আপনার আই-কিউ বেশ হাই! অ্যাঁ!

লীনা রাগে চিড়বিড় করল। কিন্তু কিছু বলতে পারল না।

ববি রায় বললেন, এ গাড়িটা নিয়ে এখন থেকে অফিসে যাবেন। সেফ গাড়ি। কাচগুলো বুলেট-প্রুফ।

বাড়িতে কী বলব?

বলবেন, অফিস থেকে গাড়িটা আপনাকে দেওয়া হয়েছে। সেটা মিথ্যেও নয়।

আর কী করতে হবে?

ববি রায় হাসলেন, আপনি তো কবিতা লেখেন! আমার ওপর একটা এপিটাফ লিখবেন। কেমন?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *