Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বায়ু পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 2

বায়ু পুরাণ || Prithviraj Sen

একাদশ অধ্যায়

বায়ু বললেন–মহাত্মা ঋষিরা একটি মহাদিবস, অহোরাত্র অর্ধেক মাস, মাস, অয়ন, বৎসর, যুগ বা মহাযুগ ধরে তপস্যা করে প্রাণের উপাসনা করেন। প্রাণায়ামের প্রয়োজন এবং ফল সম্পর্কে ভগবান যা বলেছেন তা বলছি। শান্তি, প্রশান্তি, দীপ্তি ও প্রমোদ–এই চারটে প্রাণায়মের প্রয়োজন। এরপর নিজের কর্মসংক্রান্ত বা পিতামাতা সংক্রান্ত অথবা জ্ঞান সংসর্গজনিত পাপগুলো যা দিয়ে বিনাশকর তাই শান্তি। তারপর লোভ অভিমান প্রভৃতি পাপগুলোকে সংযম তপ্যসাকে প্রশান্তি বলে। তপস্যারত যোগী যে অবস্থায় চাঁদ, সূর্য বিষয়ে বা অন্যান্য জ্ঞানবিজ্ঞান সম্পর্কে অথবা অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত এই তিনটি ফলের প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ ফলে অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশ পায় তাকে বলে দীপ্তি। ইন্দ্রিয়রা মন এবং পাঁচরকম বায়ু যে অবস্থায় প্রসন্ন হয় তাকেই প্রসাদ বলে। এই চার প্রাণায়াম-এর ফলে কালভয় নিবারণ হয়। প্রাণায়ামের যোগানুষ্ঠানযোগ্য আসনগুলোর কথা বলছি। ওঁকার উচ্চারণ করে চন্দ্ৰসূর্যের প্রণাম করবে। পরে স্বস্তিক, পদ্ম, অর্থ, সমজানু, একজানু, উত্তান, সুস্থি যে-কোন আসন করতে হবে। তমোগুণকে রজোগুণ দিয়ে আর রজোগুণকে সত্ত্বগুণ দিয়ে আচ্ছাদন করবে। পরে সত্ত্বগুণ থেকে সমাহিত মনে যোগানুষ্ঠান করবে।

ইন্দ্রিয়গণ ইন্দ্রিয়ার্থ সমূহ পঞ্চবায়ু এদের বশে এনে প্রত্যাহার অভ্যেস করবে। কচ্ছপ যেমন তার অঙ্গগুলো গুটিয়ে দেহের মধ্যে লুকিয়ে রাখে যোগী মানুষ তেমনি বিষয় থেকে মনকে সরিয়ে নিয়ে আত্মাতেই অবরুদ্ধ করবে। শুদ্ধ যোগীপুরুষ প্রাণায়ম করার সময় বায়ু আকণ্ঠ পান করে ছেড়ে দেবে। বারোমাত্রা কাল প্রাণায়মের জন্য নির্দিষ্ট। দ্বাদশ প্রাণায়ামে একটি ধারণা বা দুটি ধারণার একটি যোগ হয়। এই যোগানুষ্ঠান করলে তার ঐশ্বর্য লাভ হয়। তখন সে দীপ্যমান পরমাত্মার দর্শন পায়। প্রাণায়ামনিষ্ঠ ব্রাহ্মণের সমস্ত দোষ দূর হয় এবং সে সত্ত্বগুণে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। মুনি ও মানুষ আহার সংযম করে, প্রাণায়ম-পরায়ণ হয়ে এক একটি ভূমি জয় করবে। প্রাণায়াম জনিত এক একটি অবস্থাকে সম্পূর্ণ রূপে আয়ত্ত করবে। আগের ভূমি জয় না করে যদি পরের ভূমিজয়ের চেষ্টা করে, তবে তাতে দোষ জন্মে। প্রাণায়াম অক্লান্ত ভাবে, যত্ন সহকারে করতে হয়। নাভি, হৃদয়, কণ্ঠ, বক্ষঃ, মুখ, নাসা, নেত্র, ভ্রমধ্য, মাথা ও ব্রহ্মরন্ধ্র–এসব জায়গায় মনের ধারণা অভ্যেস করবে। বিষয় থেকে নিরত হওয়াকে প্রত্যাহার বলে। যোগসিদ্ধি লক্ষণ ধ্যান। ধ্যানী যোগী নিজেকে সূর্যচন্দ্রাদি রূপে চিন্তা করবেন। ধ্যানপরায়ণ যোগীরা আগুনের কাছে বনের মধ্যে শুকনো পাতার মধ্যে কৃমিকীটে ভরা অপরিচ্ছন্ন জায়গায়, শ্মশানে, তরুতলে নদী বা কুয়োর কাছে ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়ে ব্যাকুল চিত্তে ধ্যানরত হবেন না। এই সব দোষ বিচার না করে যোগাসক্ত হলে তার দোষগুলো শরীরে পীড়া দেয়। জড়ত্ব, বধিরত্ব, অন্ধত্ব মূক ইত্যাদি জন্মে এবং স্মৃতিলোপ ঘটে।

এজন্য শান্ত সমাহিত মনে, শুদ্ধ জ্ঞানে বিশেষ বিবেচনা করে যোগানুষ্ঠান করতে হয়। স্নেহপদার্থ মিশ্রিত যবের মণ্ড ভোজনের পর সেখানেই থাকবে। এতে বাতগুল্ম নষ্ট হয়। উদাবর্ত প্রতিকারের জন্য দই কিংবা যবাগু ভোজনের পর বায়ুগ্রন্থি ভেদ করে উপরের দিকে পরিচালন করবে। এতে প্রতিকার না হলে মাথায় ধারণা করে সেবারত সত্ত্বস্থ যোগী এভাবে উদাবর্ত রোগের প্রতিকার করতে পারে। যোগীর সমস্ত গা কাঁপতে থাকলে এমন চিকিৎসা করলে শান্তি লাভ হয়। বক্ষোভ্রংশ ঘটলে বক্ষঃস্থলে ও কণ্ঠদেশে আগের মতো ধারণা করবে। বারোধ না হলে বাক্যে ও বধিরতায় কানে ধারণা করতে হয়। ক্ষয়, কুষ্ঠ ইত্যাদি বিকারে সম্পূর্ণ সাত্ত্বিকী ধারণা করবে। যোগজ বিঘ্নের এভাবে চিকিৎসা করতে হয়। সংজ্ঞাহীন লোকের মাথায় হাত রেখে ধারণা করবে। তাতে জ্ঞান ফিরে আসে। যদি যোগীর শরীরে কোনো দোষ দেখা যায় তবে দোষকে মাথায় রেখে তিনি প্রাণায়াম অগ্নি দ্বারা পুড়িয়ে ফেলবেন। কৃষ্ণসর্পের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে পেটে ও হৃদয়ে ধারণা করবে। বিষফল খেয়ে ফেলল বিশল্যা ধারণা করবে। মনের মধ্যে সমুদ্র, পর্বত ও গাছের সাথে পৃথিবী ও সমস্ত দেবতার ধারণা করবে। হাজার ঘট জল দিয়ে স্নান করবে। শরীর ক্ষীণ হলে অরপত্র পুটে বল্মকী মাটি খাবে। এতক্ষণ আমি যোগ রোগগুলোর হেতু বিচার ও সংক্ষেপে চিকিৎসাবিধির কথা বললাম। কোনো ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কাউকে যোগ সাধনের লক্ষণগুলো বলতে নেই। এসব তত্ত্ব সবাইকে বললে বিজ্ঞান বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্ণপ্রভা, সৌম্যতা শুভগন্ধ, মূত্র ও পুরীষের অল্পতা, শরীরে যোগ প্রবৃত্তির প্রথম লক্ষণ। যখন নিজেকে এবং পৃথিবীকে জাজ্বল্যমান দেখবে এবং সৃষ্ট পদার্থগুলো অনিষ্ট হতে পারে যোগী মানবের তখনই সিদ্ধি এসেছে জানতে হবে।

.

দ্বাদশ অধ্যায়

সূত বললেন–তত্ত্বদৃষ্টি সম্পন্ন দেহীর যেসব উপসর্গ দেখা যায়, সেগুলো সব বলছি। যেমন–নানান কামনা, স্ত্রীসঙ্গের ইচ্ছা, পুত্রোৎপাদনের ইচ্ছা, বিদ্যাদান, হরিযজ্ঞ, কপটতা, ধনার্জন, স্বর্গস্পৃহা–এসব কাজে আসক্ত হলে যোগীপুরুষ অবিদ্যায় বশীভূত হয়। সবসময় ব্রহ্মপরায়ণ হয়ে যোগানুষ্ঠান করতে হয়। তাতে উপসর্গ জয় করা যায়। মানুষ শ্বাসজয় ও উপসর্গ জয় করলে সাত্ত্বিক, রাজস ও তামস উপসর্গ দেখা যায়। দূরতি শক্তি, দেবতা দর্শন, অল্পাল্প প্রেম–এসব সিদ্ধির লক্ষণ বলে জানতে হবে। যজ্ঞ, রাক্ষস, গন্ধর্ব দর্শন ও যোগীর উপসর্গ। যোগী চারিদিকে দেব, দানব, ঋষি ও পিতৃগণ দর্শন করে লাভ হয়ে উন্মত্ত হয়ে যায়।

ভ্রান্তযোগী যেমন ভ্রমবশতঃ নানা বিষয়ে অন্তরাত্মা দিয়ে ব্যাখ্যা পায় না তখন তার মনে আক্রান্ত হয়। তার বুদ্ধি বিনষ্ট হয়, সে তখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরকম হলে তখন মনে মনে শুভ্র আবরণ দিয়ে শরীর ঢেকে পরব্রহ্মের ধ্যান করবে। বুদ্ধিমান মানুষ সিদ্ধি লাভ করার জন্য আত্মদোষ ও উপসর্গগুলো ত্যাগ করবে। যোগী ব্যক্তি নিন্দা জয় করে মাথায় সূক্ষ্ম বিষয়ের ধারণা করবেন। প্রথম পৃথিবী ধারণা, তারপর যথাক্রমে জলের ধারণা, অগ্নির ধারণা, বায়ুর ধারণা, আকাশের ধারণা, মনের ধারণা ও বুদ্ধির ধারণা করতে হয়। পৃথিবী ধারণা করলে তার শরীর সূক্ষ্ম রূপে পৃথিবীময় মনে করেন, শরীরে সুগন্ধ উপলব্ধি করা যায়। জলের ধারণায় দেহে অমৃতের মতো সূক্ষ্ম রস প্রবাহিত হয়। তেজের ধারণা যোগীর শরীরকে তেজোময় বলে বোধ হয়। বায়ুর ধারণায় যোগী নিজেকে বায়ুময় বোধ হয় এবং বায়ুমণ্ডলে বিচরণ করতে পারেন। আকাশ ধারণায় যোগী শব্দসম্পন্ন হন তার সূক্ষ্মমণ্ডল দর্শন হয়ে থাকে।

মনের ধারণায় সূক্ষ্ম মনঃসঞ্চার হয়, এজন্য যোগী সর্বভূতের মনের মধ্যে আত্মা মনোনিবেশ করতে পারেন। বুদ্ধির ধারণা দিয়ে সমস্ত তত্ত্ব জানতে সক্ষম হন। যে যোগী এই সাতটি সূক্ষ্মতত্ত্ব জেনেও তুচ্ছবোধে ত্যাগ করেন তিনি পরমতত্ত্ব লাভ করেন। যোগী মানুষের ঐশ্বর্য-এর প্রতি আকর্ষণ জন্মালেই বিনাশ নিশ্চিত। দেখা গেছে দিব্যচক্ষু মহাত্মারাও দোষ পেয়েছেন। ঐশ্বর্য থেকে অনুরাগ জন্মে কিন্তু ব্রহ্মরাগহীন। তাকে পরমধন জ্ঞানে যোগ সাধনা করলে উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সকল যোগের দ্বারস্বরূপ হল মন। আদিত্যকেও যোগের দ্বাররূপে নির্দেশ করা যায়।

যোগী বিষয়াসক্তি ছেড়ে বিধিময় যোগানুষ্ঠান করলে রুদ্রলোকে সসম্মানে বাস করতে পারে। যোগী ব্রহ্মগুণে ব্রহ্মাকে সাধন করবেন। তবে যোগী সর্বগামী হতে পারেন।

.

ত্রয়োদশ অধ্যায়

এরপর বায়ু বললেন–যেসব কৌশল দিয়ে সর্বলোক অতিক্রম করা যায় সেগুলি হল যোগীদের আটটি ঐশ্বর্য। এবারে সেগুলির কথা বলছি শুনুন। অনিমা, লখিমা, মহিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, ঈশিত্ব, বশিত্ব ও কামাবসারিতা–এগুলি অষ্ট ঐশ্বর্য। এরা আবার সাবদ্য, নিরদ্য ও সূক্ষ্মভাবে প্ররর্তিত হয়। সাবদ্য নামে যে তত্ত্ব তা পঞ্চভূতোত্মক, নিরবদ্য নামে যে তত্ত্ব তা পঞ্চভূতাত্মক, স্থল ইন্দ্রিয়, মন ও অহঙ্কার, সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয়, মনবুদ্ধি ও অহংকার–এই হল আটটি ঐশ্বর্যের তিনটি গতিধারা। প্রভু ব্রহ্মা যেমন বলেছেন, এই আট ঐশ্বর্য সম্পর্কে, আমি তাই বলছি। ত্রিলোকের যত জীবজন্তু আছে তাদের সকলেরই অনিমা যোগীর আয়ত্ত হয়।

দ্বিতীয় ঐশ্বৰ্য্য লখিমার সাহায্যে যোগী আকাশে দ্রুত চলতে পারেন। তৃতীয় ঐশ্বর্য মহিমা দিয়ে ত্রিলোকের সমস্ত পদার্থ লাভ করেন। প্রকাশ্য ঐশ্বর্য দিয়ে ইচ্ছা মতন ভোগ করেন। মহিমার দ্বারা

একস্থানে থেকেও ত্রিলোকের সঙ্গে সংযোগ রাখতে পারেন। ঈশিত্ব ঐশ্বর্যের প্রভাবে সর্বভূতের । সুখ-দুঃখের বিধানে সমর্থ হন। বশিত্ব দ্বারা সকল যোগী বশে থাকে। বশিত্ব ও কামাবসারিতা প্রভাবে যোগীর ইচ্ছানুসারে সর্বকাম লাভ ও প্রাণীদের বশ্যতা ঘটে। শব্দ, স্পর্শ, রস, গন্ধ, রূপ ও মন–এ সমস্তই যোগীর ইচ্ছানুসারে কখনো প্রবর্তিত হয় কখনো হয় না। সেই সব যোগীর জন্ম, মৃত্যু, ছেদ, ভেদ, দাহ, ক্ষয়, মেদ বিকার ইত্যাদি কিছুই নেই। বিষয় ভোগ করলেও বিষয়ে লিপ্ত হন না। পরম সূরে দান অপবর্গ লাভ হয়। সেই অপবর্গ খুব সূক্ষ্ম। পরম পুরুষ সূক্ষ্মভাবে ঐশ্বর্যে রয়েছেন।

.

চতুর্দশ অধ্যায়

বায়ু বললেন–পূর্বে আলোচনা ব্ৰহ্মতত্ত্ব জ্ঞান ছাড়া প্রাণীরা অজ্ঞান বশে রাজস ও তামস কাজগুলো করে ততগুণে সংযুক্ত হয়। সুকর্মের জন্য ব্যক্তি স্বর্গলাভ করে, আবার সেখানে ভ্রষ্ট হয়ে মানুষ জন্ম পায়। ব্রহ্মই চিরস্থায়ী পরম সুখ স্বরূপ এই ব্রহ্মেরই সেবা করবে। অনেক সময় বিপুল অর্থ ও পরিশ্রম ব্যয় করে বৃহৎ যজ্ঞানুষ্ঠান করা হয় বটে, তবে আমরা মৃত্যু বশীভূত হতে হয়। তাই মোক্ষই পরম সুখ, বিশ্বরূপী প্রভু, সবসময় গতিমান, বরেণ্য, মহাত্মা, সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম, স্কুল থেকে স্কুল, নিরিন্দ্রিয় দিব্য পুরুষকে যোগী ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ দেখতে পান।

যোগীরা সেই নিত্য নির্গুণ, চিহ্নহীন পরম পুরুষকে স্বর্ণবর্ণ, সর্বব্যাপী, সর্বত্র প্রকাশমান রূপে দর্শন করেন। এই সর্বজ্ঞানী সচেতন মহান পুরুষকেই সব থেকে আগের পরম পুরুষ বলে। যোগীরা তাকে ধ্যান যোগে চিত্তমধ্যে প্রত্যক্ষ করেন। তার হাত, পা, চোখ, কান, মাথা, মুখ–সব জায়গাতেই রয়েছে। ধ্যানের সাহায্যে মনের মধ্যে পরমপুরুষকে প্রত্যক্ষ করলে আর মোহবশবর্তী হতে হয় না। বায়ুর মতো তিনি সর্বভূতে বিচরণকারী, সমস্ত ভূতের হৃদয়াকাশ পুরে শুয়ে রয়েছেন বলে, তিনি পুরুষ। ধর্মহীন জীবেরা বারবার স্ত্রী-পুরুষরূপে জন্ম নিয়ে থাকে। চাকার মধ্যে কিছুটা মাটির মণ্ড ঘুরতে ঘুরতে ক্রমে ঘট, সরা ইত্যাদি আকৃতি নেয়, আত্মা তেমন বায়ু পরিচালিত হয়ে অস্থিযুক্ত মনঃসম্পন্ন মানুষ রূপে উৎপন্ন হয়। বায়ু থেকে জলের উৎপত্তি, জল থেকে প্রাণ আর প্রাণ থেকে শুক্ত জন্মে। রক্ত শুক্ত একসাথে মিলে গর্ভাশয়ে সন্তানের শরীর তৈরী করে গর্ভের সেই জীবন-মাস ধরে অধোমুখে থাকে। তারপর প্রসব হয়। মরণের পর জীব পাপকাজের জন্য নরকবাসী হয়। নরকে ভয়ঙ্কর দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। জল যেমন ভিন্ন ভিন্ন ভাগ করলেও এক হয়ে যায়, তেমনি জীবও ছিন্ন ভিন্ন হয়েও এক শরীরেই যন্ত্রণা অনুভব করে।

এইভাবে নিজের কর্মফল হিসাবে জীব সুখ-দুঃখ ইত্যাদি ভোগ করে। একলাই মৃত্যুপারে যেতে হয়। একাই কর্মফল ভোগ করতে হয়। তাই সবার কর্তব্য সকর্ম করা। যখন ইহলোক ছেড়ে জীব চলে যায়, তখন অন্য কেউই সঙ্গে যেতে পারে না, শুধুমাত্র তার কর্মফল যায়। নরকে যমরাজ্যে গিয়ে পাপীরা ঘোর যন্ত্রণায় বেদনায় আর্তনাদ করে। কর্ম, মন, বাক্য দিয়ে সবসময় যেসব পাপ করা হয়, শেষকালে জোর করে পাপীকে তারাই শাস্তি দেয়। তাই সৎকাজ করাই কর্তব্য।

যে যেমন পাপাঁচরণ করে, পরে সেইরূপ ছরকম তামস-সংসার পেয়ে থাকে। মানুষ, পশু, মৃগ, পাখি, সরীসৃপ ও স্থাবর এভাবে পরপর নিকৃষ্ট জন্ম পেয়ে পাপী জীব আবার মনুষ্যত্ব পায়। ব্রহ্মাতে শুধু স্বত্ত্ব আর স্থাবরে শুধু তমঃ এই চোদ্দপ্রকার সৃষ্টির মধ্যবর্তী সৃষ্টিগুলো রজোগুণে ভরা। হে বিপ্রগণ! যেন দেহীদের বিষয়জনিত ক্লেশে ছিন্ন ভিন্ন হয়, তারা সবসময়ই দুঃখে মগ্ন থাকে। সুতরাং তারা নিজের থেকে সেই পরম ব্রহ্মকে স্মরণ করবে। কি করে? ধর্ম ভাবনার ফলে জীব মনুষ্যত্ব লাভ করে থাকে। তাই সমাধিলাভের জন্য যত্নপরায়ণ হতে হবে।

.

পঞ্চদশ অধ্যায়

তার কর্মফল যায়, নরকে যমরাজ্যে গিয়ে পাপীরা ঘোর যন্ত্রণায় বেদনায় আর্তনাদ করে। কর্ম, মন, বাক্য দিয়ে সবসময় যেসব পাপ করা হয়, শেষকালে জোর করে পাপীকে তারাই শাস্তি দেয়। তাই সকাজ করাই কর্তব্য। যে যেমন পাপাঁচরণ করে, পরে সেইরূপ ছরকম তামস সংসার পেয়ে থাকে। মানুষ, পশু, মৃগ, পাখি, সরীসৃপ ও স্থবির এভাবে পরপর নিকৃষ্ট জন্ম পেয়ে পাপী জীব আবার মনুষ্যত্ব পায়। ব্রহ্মাতে শুধু সত্ত্ব আর স্থাবরে শুধু তমঃ এই চোদ্দপ্রকার সৃষ্টির মধ্যবর্তী সৃষ্টিগুলো রজোগুণে। ভরা। হে বিপ্রগণ, যেন দেহীদরে বিষয়জনিত ক্লেশে ছিন্ন ভিন্ন হয়, তারা সবসময়ই দুঃখে মগ্ন থাকে। সুতরাং তারা নিজের থেকে সেই পরমব্রহ্মকে স্মরণ করবে কি করে? ধর্ম ভাবনার ফলে জীব মনুষত্ব। লাভ করে থাকে। তাই সমাধিলাভের জন্য যত্নপরায়ণ হতে হবে।

.

ষোড়শ অধ্যায়

বায়ু বললেন–সংসার ভয়ে ভীত মানুষ এই চোদ্দ প্রকার সংসারমণ্ডল জেনে সৎকাজে ইচ্ছুক হবে। ধ্যান সাধনে ব্রতী হবে। যত্নের সাথে ধ্যানাসত্ত হলে তাতে আত্মদর্শন হয়। এই আত্মাই আদ্য পরম জ্যোতিঃ এটিই সংসার পারে যাওয়ার সেতু। এই বিশ্বতোমুখ, অগ্নিস্বরূপ সেতুরূপী সর্বভূতের হৃদয়ে। আত্মাকে যোগী সম্যক উপাসনা করবেন। শুদ্ধ ও একাগ্রচিত্তে সাধক হৃদয়ের আগুনে যথাবিধি আট আহুতি হোম করে মৌন থেকে উপাসনা করবেন। প্রথমাহুতি ‘প্রাণায়’, দ্বিতীয়—‘আপনার’, তৃতীয়–’সমানায়’, চতুর্থ—’উদানায়’, পঞ্চম—‘জানায়’। এরপর স্বাহা’ উচ্চারণ করে আহুতি দিতে হবে। তারপর যথাসময়ে শেষান্ন খাবে। তার একবার জল পান করে, তিনবার আচমন করে হৃদয় স্পর্শ করবে আত্মাই প্রাণের গ্রন্থি, সর্বসংহারী রুদ্রদেরই আত্মস্বরূপ। তুমি দেবতাদের মধ্যে সবার বড়, তুমি উগ্র, তুমি চতুর এবং ধর্মরূপে বৃষবাহন, তুমি আমাদের মৃতুনাশক হও, এই তোমার উদ্দেশ্যে হোম করলাম। এভাবে হৃদয়স্পর্শ করে, ডান পায়ের আঙ্গুল দিয়ে ডান হাত ছুঁয়ে, নাভি-স্পর্শ করবে, পরে আবার আচমন করে আত্মা স্পর্শ করবে। প্রাণ ও অপ্রাণ এই দুরকম আত্মা। তার মধ্যে প্রাণ অন্তরাত্মা আর অপ্রাণ বহিরাত্মা। অনুই প্রাণ, অন্নই জীবই, অন্নের অভাবই মৃত্যু। অন্নই ব্রহ্ম এবং প্রজা সৃষ্টির মূল। অন্নেই স্থিতি হয়, জীবেরা অন্ন দিয়েই বৃদ্ধি লাভ করে। অগ্নিতে সেই অন্ন আহুতি দিলে দেব, দানব গন্ধর্ব, যক্ষ, পিশাচ সকলেই তা আহার করে।

.

সপ্তদশ অধ্যায়

বায়ু বললেন–এরপর আমি শৌচাচার এর লক্ষণ বলছি। শৌচগুলোর মধ্যে জল দিয়ে শুচি বা শুদ্ধ হওয়াই ভালো। যে মুনি শৌচারের নিয়ম মানেন তিনি কখনো অবসাদগ্রস্থ হন না। মন হল অমৃত আর অপমান বিষ। মুনিকে এইসব বিষয়ে আশ্রমও থাকতে হবে। গুরুর কাছে উত্তম জ্ঞান ও গমনে অনুজ্ঞা পেয়ে এই পৃথিবীতে বাস করবেন। পবিত্র পথে গমন করবেন। পবিত্র জল পান করবেন আর সত্য কথা বলবেন। এটাই ধর্মের অনুশাসন যোগী কখনো শ্রাদ্ধে উপস্থিত হবেন না। গৃহস্থের বাড়িতে যখন রান্নার উনোন একেবারে নিভে যাবে, এতটুকু ছাই ও জ্বলবে না, বাড়িতে সকলের আহার সমাপ্ত হবে। তখনই সেই বাড়িতে ভিক্ষার জন্য যাবেন। কিন্তু রোজ ভিক্ষা করা অবৈধ। যোগীকে যেন কেউ অবহেলা বা তিরস্কার না করে। সাধুসম্মত ধর্ম মেনেই তিনি ভিক্ষা করবেন। প্রথমতঃ ভিক্ষার্থী যোগী সদাচারী গৃহস্থের বাড়িই ভিক্ষা করবেন। শালীন, শ্রদ্ধাশীল মহাত্মা গৃহস্থের কাছেই তিনি ভিক্ষা চাইতে পারেন। হীনবর্ণের গৃহস্থের বাড়িতে ভিক্ষাবৃত্তি করা অনুচিত। ভিক্ষা পাওয়া বস্তুগুলি যেমন–যবাণু, দুধ, যব, ফলমূল বা অন্য যে-কোন কিছু যোগীর (ভোজ্য)–বস্তু বলে নির্দিষ্ট। ভিক্ষালব্ধ বস্তুই যোগীর পক্ষে শ্রেষ্ঠ। যে যোগী মাসে কুশাগ্র জল পান করেন, অথবা যিনি ন্যায়তঃ ভিক্ষা করে থাকেন, তিনি আগের যোগী থেকে বিশিষ্ট। সব যোগীর পক্ষে চান্দ্রায়ন শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠান। অতএব শক্তি অনুসারে এক, দুই, তিন বা চারটি চান্দ্রায়ন করা যোগীর কর্তব্য। অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য, অলোভ, ত্যাগ, ব্রতচারণ, অহিংসা, তত্ত্ব জিজ্ঞাসা, অক্রোধ, গুরু শুশ্রূষা, শৌচ, অল্প আহার, নিত্য স্বাধ্যায়-এই নিয়ম ভিক্ষুর পক্ষে ভাল। অরণ্যের হাতির যেমন অঙ্কুশের আঘাতে শান্ত হয়ে মানুষের বশ্যতা মানে তেমনই কর্ম বীজ থেকে জাত গুণময় দেহ কর্মবদ্ধ জীব বিশুদ্ধ জ্ঞান যোগে দগ্ধ বীজ হয়ে নিষ্পাপ ও শান্ত হয়ে থাকে। যজ্ঞ মধ্যে জপযজ্ঞই জ্ঞানীদের শ্রেষ্ঠ বলা হয়। জ্ঞান থেকে সঙ্গ, রাগ ছাড়া ধ্যানই যথেষ্ট। জ্ঞানীরা বলেন–শম, দম, সত্য, অকল্পষত্ব, সমস্ত জনে দয়া ও সারল্য–এগুলি অতীন্দ্রিয় জ্ঞানের উপাসক। যারা ব্রহ্মনিষ্ঠ, শুচি, সমাধিস্থ, জিতেন্দ্রিয়, আত্মরতি সাধুপুরুষ–তারাই এই বিমল যোগ পেয়ে থাকেন।

.

অষ্টাদশ অধ্যায়

বায়ু বললেন–সংবৎসরের শেষে গুরুর আদেশ নিয়ে তৃতীয় আশ্রম ত্যাগ করে চতুর্থ আশ্রম প্রবেশ করবেন। জ্ঞেয় সাধক সারভূত জ্ঞানের উপাসনা করবেন আচ্ছাদনহীন শূন্য জায়গায়। গুহায় বনে কিংবা নদীতে যোগানুষ্ঠান করবে। শাস্ত্রানুসারে শুভ কাজগুলো করলে, আবার তার জন্ম বা মৃত্যু হয়।

.

ঊনবিংশ অধ্যায়

বায়ু বললেন–এবার প্রায়শ্চিত্তের কথা বলছি। কামকৃত ও অকামকৃত দুরকম পাপেরই প্রায়শ্চিত্ত আছে। তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন পাপ তিন প্রকার–বাক্যজ, মনোজ, কায়জ। এই তিন পাপেই জগৎ আবদ্ধ। কর্মবদ্ধ সংসার সত্য নয়–এমন শ্রুতি আছে এটা সবসময়ে প্রযোজ্য নয়, কারণ জীবনকাল জীবদের কর্ম করার জন্যই। তাই সবসময় ধীর ও সাবধান হতে হবে। যোগই পরমবল। বীরজনেরা বিদ্যার সাহায্যে অবিদ্যাকে অতিক্রম করে অনুত্তম যোগঐশ্বর্য লাভ করেন। সন্ন্যাসীদের প্রতিপালনযোগ্য ব্রত ও উপব্রতগুলি কোন একটি যথাযথ প্রতিপালিত না হলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। স্ত্রীসঙ্গ করলেও প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। প্রাণায়ামের সাথে সান্তপণ আচরণ করলে ঐ পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়।

সেই প্রায়শ্চিত্ত করবার পর আবার নিজের আশ্রমে এসে ভিক্ষাচারণ করতে পারবে। পরিহাস করে মিথ্যা বললে দোষ হয় না–পণ্ডিতরা একথাই বলেন। কিন্তু মিথ্যা প্রসঙ্গ ভয়ঙ্কর। তাই তা ত্যাগ করা উচিত। দেবতা ও মুনিরা সাধনরূপে হিংসাকে সৃষ্টি করেছেন বটে। হিংসার থেকে বড় অধর্ম আর নেই। ধন, অর্থ–এগুলি লোকের প্রাণস্বরূপ তাই। তাই ধনচুরি করলে লোকের প্রাণই চুরি করা হয়। এইসব অপকর্ম করলে সেই দুষ্টচেতা ভিক্ষুক, ব্রতচ্যুত হয়। তখন তাকে শাস্ত্রবিধান মেনে চান্দ্রায়ন করা উচিত। এক বছর শেষে নিষ্পাপ হয়ে নিবেদযুক্ত চিত্তে আবার যথাবিধি আচার প্রতিপালন করবে। ভিক্ষু যদি অনিচ্ছায় পশুদের হিংসা করেন তবে চান্দ্রায়ন অনুষ্ঠান করবেন। কোন স্ত্রীলোক দর্শন করে যদি ঘন ঘন বিচলিত হয় তবে ষোলোবার প্রাণায়াম করা কর্তব্য। ব্রাহ্মণ যদি দিনেরবেলায় ইন্দ্রিয় দুর্বলতার শিকার হন তবে তিন রাত্রি উপোস ও প্রাণায়াম করতে হবে। আর রাত্রিকালে হলে স্নান করে দ্বাদশ প্রাণায়ামের সাহায্যে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। যোগীদের অভোজ্য খাবার খেলেই প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। বাক্য, মন শরীরজনিত কোন পাপ করলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। তাহলে আর জন্ম হবে না।

.

বিংশ অধ্যায়

বায়ু বললেন–এবার শাস্ত্রে উক্ত মরণচিহ্ন সম্পর্কে বলছি–এটা জানা থাকলে মানুষ ভারী মৃত্যু কাল জানতে পারে। যে মানুষ অরুন্ধতী, ধ্রুব, সোমছায়া, মহাপথ–এ সমস্ত দেখতে পায় না সে একমাসের বেশি বাঁচে না। যদি কেউ জ্ঞানে বা স্বপ্নে, মুত্র, পুরীষ, সুবর্ণ বা রজতবমি করে সে দশমাস মাত্র বেঁচে থাকে। সামনে বা পেছনের দিকে ধুলোকাদাতে তার পায়ের ছাপ দ্বিখণ্ডিত দেখে সে সাতমাস পরে মারা যায়। যার মাথায় কাক, পায়রা, শকুন প্রভৃতি মাংসাশী পাখি বসে, সে দুমাসের বেশি বাঁচে না। যদি মেঘছাড়া দক্ষিণ দিকে বিদ্যুৎ বা জলের মধ্যে ইন্দ্রধনু দেখা যায় তবে দুতিন মাসেই কাল কবলিত হয়। যার গায়ে শবগন্ধ, সে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। স্নানের পর যার হৃদয় ও পা শুকিয়ে যায়, কিংবা যার মাথা থেকে ধোঁয়া ওঠে সে দশদিনের মধ্যে মৃত্যুমুখে পড়ে। বাতাসের আঘাতে যার ব্যথার স্থানগুলোতে যন্ত্রণা হয় আর জল স্পর্শ তৃপ্তি হয় না, তার মৃত্যু কাছেই জানবে। স্বপ্নে কৃষ্ণবর্ণা কামিনী যদি গান গাইতে গাইতে কারোকে দক্ষিণ দিকে নিয়ে যায়। তারও মৃত্যু কাছে। স্বপ্নে ভস্ম অঙ্গার কেশ, শুষ্ক নদী ও সাপ দেখলে জীবন দশরাত্র মাত্র। ভোরবেলায় সূর্য ওঠার পর যদি কারো সামনে দিয়ে শিয়াল চিৎকার করে চলে যায়। তবে তার আয়ু কমে এসেছে জানবে। দিনে বা রাত্রে, যে ব্যক্তি ঘন ঘন দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে কিংবা যে ব্যক্তি দীপ নিভে যাওয়ার গন্ধ পায় না, তারও মৃত্যু কাছে। যার এক চোখে সমানে জল পড়ে, নাক বেঁকে যায়, জিভ কর্কশ ও কালো, গাল দুটো চ্যাপ্টা রক্তাভ, তার মরণ খুব কাছে বুঝতে হবে। স্বপ্নে উট বা গাধা চালিত কোন রথে করে কারোকে দক্ষিণ দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তার আয়ু ও শেষ হয়েছে বুঝতে হবে।

কানে শব্দ শুনতে পাওয়া আর চোখে জ্যোতিঃ পদার্থ দেখতে না পাওয়া–এই দুটিই খুব খারাপ। স্বপ্নে কোন মানুষ গর্তে পড়ে গিয়ে বারবার উঠতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না–তার জীবনকাল শেষ হয়েছে বুঝতে হবে। যার দৃষ্টি উপর দিকে, রক্তবর্ণ, চঞ্চল, নিঃশ্বাস, উষ্ণ, নাভিছিদ্র গভীর, সেও মরণাপন্ন। স্বপ্নে আগুনে প্রবেশ করলে, স্মৃতিলোপ হয়েও মৃত্যু কাছে বুঝতে হবে। যদি নিজের জামাকাপড় সাদা হলেও সেটি স্বপ্নে লাল বা কালো দেখা যায় তবে তার মৃত্যু খুব কাছে। বুদ্ধিমান মানুষ ভয় দুঃখ ছেড়ে যোগানুষ্ঠান করবে। পূর্ব বা উত্তর দিকে যম, স্থিরতর নির্জন, পবিত্র দেশে সুস্থ চিত্তে আচমন করে স্বস্তিকা মতো বসে মহেশ্বরকে প্রণাম করবে। প্রদীপের শিখার মত স্থির ও অচঞ্চল হয়ে থাকতে হয়। কাম, বিতর্ক, প্রীতি, সুখ, দুঃখ সর্ব সংযত করে শুক্লগুণ-ধ্যান করবে। প্রাণ, চোখ, ত্বক, কাল, মন, বুদ্ধি, মাথা, বুক–এসব জায়গায় ধারণ অবলম্বন করবে। এভাবে ধারণা দিয়ে বায়ুপ্রবৃত্তি রুদ্ধ করে সমাহিত মনে ওঁকার দিয়ে সমস্ত দেহ আহরণ করবে। এভাবে করলে সেই যোগী ওঁকারময় অক্ষয়ত্ব লাভ করেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *