বাবাকে আমি দেখেছি
বয়স কত হবে আমার ছয়, সাত –
দেখেছি সাইকেলে চেপে হাটের দিকে দূরে যে’তে যে’তে,
যে’তে যে’তে একসময় মিলিয়ে যেত ;
আমি ও মা দাঁড়িয়ে বাবার চ’লে যাওয়া দেখতাম।
হাট থেকে বাবা সবজি কিনে
ফেরি করে বেড়াত, শুকিয়ে যাওয়া সবজিগুলো
পরম তৃপ্তি এনে দিত পরিবারে ।
আমাদের মা সন্ধ্যায় লাল পাড় শাড়ি প’রে
তুলসী তলায় শাঁখ বাজিয়ে, হ্যারিকেনের
আলোর গোল শিখায় পড়াতেন আমাদের ।
আমি ছোট, দাদা-দিদিরা পড়ত সবাই,
গভীর মনযোগ, আমার শুধু
স্লেটের উপর আঁকাজোঁকা
স্মৃতিরেখা, জলের ছবি আঁকা, বাবার
মুখ এঁকে মাকে দেখিয়ে বলেছিলাম ‘মা,
দ্যাখো বাবা ––’ মা ধমক দিয়েছিলেন ।
দত্তবাড়িতে দেখেছিলাম ল্যাম্পের আলো
কি ফুট ফুটে স্নিগ্ধ আলো, ঝক ঝক
স্লেটের উপর ফুটে ওঠে জলছবি ;
সাইকেলের শব্দে মা উঠে দাঁড়াতেন, বাবা ফিরতেন ঘরে ।
বাবার সাথে খে’তে খে’তে,
খে’তে খে’তে কত স্বপ্ন হত আমার
রাতে বাবার সাথে শুয়ে, বাবার বুকের কাছে
যে’তে যে’তে, গভীরে যে’তে যে’তে প্রশ্ন করতাম, বাবা
আমরা কবে বড় হব?
আমাদের ঘরের ছাত..
বাবা বলতেন, ‘দেখিস আর ক’টা দিন পর
বর্ডার খুলে যাবে, রমরমা হবে পথঘাট,
তখন তোর জন্য একটা সাইকেল —
বাবা ওপারে গেছিলেন, বাণিজ্যে
চাঁদ সদাগরের সপ্ত ডিঙার প্রতীক্ষায়
তিরিশ বছর জেগে আছি, কখন ফেরে
আর আমার সাধের সাইকেল—
আজ তিরিশ বছর পর খাতার ওপর
আঁকাজোঁকা, অনেক চেষ্টা করেও
মেলাতে পারিনি বাবার মুখ !