Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মায়ের বুকফাটা কান্না আর বাবুজীর অত্যাচার,ছোট্ট বাদামীকে বয়সের আগেই অনেক বেশী বুঝদার করে দিয়েছে। ছোট্ট বেলায় যাকে ভয় পেত এখন বড়ো হয়ে তাকে ঘেন্না করে বাদামী। বড়ো হয়ে জেহাদ ঘোষণা করতে মন চেয়েছে।সমাজটা যেন পুরুষের। পুরুষের লাগাম-ছাড়া জীবন। মেয়েদের শাসনের বেড়াজাল। স্ত্রী হলো ক্রীতদাসী। তাই জীবনে বিয়ে করবে না প্রতিজ্ঞা করেছে বাদামী।অমন পুরুষ জাতের কাছে ঠাঁই নেবেনা।নিজের পায়ে দাঁড়াবে বাদামী। রাতের রঙ পাল্টে যেত সকালে। রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় উঠতে দেরি হয়ে গেল বাদামী। বিছানা ছেড়েই নজরে পড়ল, মা ঘরের কাজে ব্যস্ত। সকালেই মায়ের স্নানের অভ্যাস। তাই ভিজে চুলের গোছা এঁকে বেঁকে কানের পাশে লেপ্টে রয়েছে। বেশ তাজাই লাগছে মায়ের মুখখানা। যে মুখখানা সকালে দেখলে মেজাজটা তেতো হয়ে যায়,আর যার জন্য বাদামী সকালের টিউশন টা ধরেছে ,সে এখন ও ঘরে রয়েছে আজ।

রান্নার কড়া, তাওয়ায়,রঙ ফেরানোর জন্য ছেনি,হাতুড়ি, ফাইল ও শিরীষ কাগজ সব নিয়ে বসেছে সেই সুবোধ সিং। একবার সে বাদামীকে দেখে নিল।পড়ুয়া মেয়ে বলে নয়,নিজের পড়ার খরচ নিজেই টিউশন করে চালিয়ে নেয়,তাই কিছু বলে না।বরং সমীহ করে মেয়েকে। সে দিকে না তাকিয়ে ও বাদামী বুঝেছে যে নিজেকে জাহির করার জন্য ই কড়ার পেছনের দিকের চল্ টা ছেনি,হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তুলছে। সঙ্গে চলছে শিস্ দেওয়া। বাবুজী র দিকে নজর পড়তেই ফিরিয়ে নিল নজরটা মায়ের দিকে। মায়ের মুখখানা একটু নরম লাগছে। বাদামীর মনে হলো, মা নিশ্চয় মায়ের বিয়ের দিনগুলোতে ফিরে গেছে। মায়ের জন্য কষ্ট হয়। বাবুজীর ওপরে রাগটা আরও আরো বাড়লো। কড়াই ঝকঝকে হচ্ছে অথচ মানুষ গুলোর মরচে পড়ে যাচ্ছে সে দিকে খেয়াল নেই।!

—–বাদামী, একটু পানি লাগল তো।ফাইল করতে জল লাগবে
—সুবোধ সিং মেয়েকে বলল। কথাটা কানে যেতেই তীর বেগে বাদামী টয়লেট এ ঢুকে গেল।শুনবে না ঐ লোকটার কথা। দেবো না বললে অবাধ্য হওয়া হত।আবার দিলে ও ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করা হত।তাই টয়লেট এ ঢোকা।
——শশী ,থোড়ি সি পানি লা।মেয়ে টা কথা শুনলো না।কোথায় গেল?
—–বাথরুমে গেছে।
—-কিঁউ, থোড়ি সি পানি দেতী তো দের হো যাতি?
—–তুমহি তো শিখায়া আগে টয়লেট যানা বাদ মেয়ে সব কুছ।এখন রাগ করছ কেন? শশীর কথায় চুপ করে গেছে সুবোধ সিং। জোরে জোরে ফাইল ঘষা শুরু করল।টয়লেট এ বাদামী খুব হেসেছে। খুব জব্দ হয়েছে বাবুজী, মনে ভাবল বাদামী।

বাদামী -4

সুবোধ সিং না বদলালে ও বাদামী বদলেছে। ফ্রক ছেড়ে শাড়ি পড়া ধরেছে। পনেরোয় পড়ে বাদামীর তেজের ঢংটা ও বদলেছে। দৃঢ়তার আস্তরণ পড়েছে মনে। বাবুজীর উপর শোধ তোলার ভঙ্গিটাও পাল্টেছে।তাই বাবুজীর পছন্দের পাত্র গুলোকে বাতিল করেছে নানান ফন্দিতে। তবে মা সহায় না থাকলে সেটা সম্ভব হতো না। তাও বুঝেছে বাদামী। নিরিবিলি তে শশী মেয়েকে বুঝিয়েছে।
——–বিটিয়া, বাবুজীকো গুস্ সা ম্যৎ দিলানা। বাবুজী রাগলে অনেক কিছু করতে পারে।
——কী করবে?মারবে তো?তবু ও আমি বিয়ে করবো না।
——–ঠিক আছে। আমি বলবো তোর বাবুজী কে।
———-মা,কাল আমার স্কুল ফাইনাল এর ফল বের হবে। আমি আরো পড়ব।বাঙলো বাড়ির টিউশন এর টাকায় আমার পড়ার খরচ হয়ে যাবে। শশী দারুণ খুশি। যেমন তেমন নয়,মেয়ে ফার্স্ট প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। সুবোধ সিং শুনেছে মেয়ের পাশের খবর।ভেতরে নাড়া পড়লেও মুখে বলেছে
—-কৌন সা তীর মারা?রূপাইয়া হমনে ডালা,তব কিঁউ ফেল হোগা?

শশী অনেক কষ্টে সুবোধ সিং কে রাজী করিয়েছে। কলেজে ভর্তি হয়েছে বাদামী।শুধু একটা বছরই পড়বে তাও করার করে নিয়েছে। সেই খরচ টিউশন করে মেয়েকে জোগাড় করতে হবে। বাদামী ভোরেই চলে যায় টিউশন করতে। এরপর কলেজ যাওয়া। ফিরে আবার একটা টিউশন। রেল লাইন পেড়িয়ে, হিমাচল কলোনির এক উঁচু দরের অফিসারের বাঙলো তে তাদের দু মেয়েকে পড়ানো। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধে হতো পড়াতে।আস্তে আস্তে গা সওয়া হয়ে গেছে। সাঁঝের বেলায় ঐ বাঙলো বাড়িতে পড়ায় বাদামী। ভালো ই লাগে পড়াতে। রোজের মতো রেল গেট এর বাজারের কাছে পৌঁছাতেই নজরে পড়ল পাড়ার মাস্তানগুলোকে। বাদামী ও পথেই যায়, তা জেনেই ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কাছাকাছি এসে ভয় হলো, কিন্তু বুঝতে দিলো না যে সে ভয় পেয়েছে। বেশ জোরেই পা চালালো বাদামী। বুঝল ছেলে গুলো ওর পিছু নিয়েছে। রোজই রেল লাইনের আঁধার পেরিয়ে ঝলমলে আলোয় পা দেবার সঙ্গে সঙ্গে ওরা হাওয়া হয়ে যায়। কীই বা করতে পারে ওরা?তবু ও পিছু নিয়ে আনন্দ। সুবোধ সিং এর চন্ডালের মতো রাগ তা পাড়ার সবাই জানে। তাই ওদের সাহসে ভাঁটা পড়ে। বেশীদিন আর রেললাইন পেরোতে হবে না। ওভারব্রিজ তৈরি হবে। বি আর আই কলোনি আর ডিজেল কলোনির বাসিন্দাদের শহরে যাতায়াতে আর কষ্ট হবে না। রোজই রেল লাইন পেরোতে কতো অঘটন যে তার লেখাজোকা নেই। হিমাচল কলোনির লোকদের অসুবিধা নেই ।কারণ হিমাচল কলোনি দার্জিলিং রোডের ওপরেই। ডানদিকে এগোলেই হিল্ কার্ট রোড।বাঁয়ে গেলে সুকনা হয়ে সোজা দার্জিলিং পৌঁছানো যায়। শীতের কামর টা একটু কমেছে। তাই আজ বাদামী হালকা কালো রংয়ের একটা কার্ডিগান গায়ে চড়িয়েছে। ভোর ছ’টায় টিউশন এ বেরনো। অন্য দিন কার্ডিগান এর ওপরে একটা শাল চাপায়।শাল ও ভোরের শীত আটকায় না। দাঁতে দাঁত চেপে পার হতে হয় মহানন্দা ব্রিজ। ব্রিজ পেরোলেই শীতটা কমে।আজকের শীতে হিমেল হাওয়া নেই। তাই শীতটা একটু কম। সকাল টা ভালো লাগে বাদামীর। শীতের সকাল অনেক গন্ধ নিয়ে আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে কতোশত সকালের স্মৃতি। মহানন্দার সকালের রুপ দারুণ লাগে। পা চালালো বাদামী। ব্রিজ পেরোতে বেশ ঠান্ডা লাগছে আজ।প্রাইভেট গাড়ি গুলোর আরোহীরা কৌতুহলে মুখ বাড়াচ্ছেন জানালা দিয়ে। ওঁরা মুখ ফেরায় না ,দেখতেই থাকে যতক্ষণ না বাদামী একটা বিন্দু হয়ে যায়। তাকাবে নাই বা কেন?এতো ভোরে এমন নজর কাড়া মেয়ে রাস্তায়!!এমন মেয়ে ও আছে যে এতো ভোরে লেপ ছেড়ে উঠতে পারে!!হয়তো বা অন্য কিছু ওদের মনে? চার্চ রোড ধরেই ঢুকলো বাদামী। অন্য দিন ও তাই করে।মা বারণ করা সত্বেও।সেবক রোড ধরে গেলে অনেক টা ঘুরপথ হয়।এয়ার ভিউ হোটেলের আগে বাঁয়ে গেলে সর্ট কাট হয়।পশুহাসপাতালের দুটো বাড়ি পরে ছাত্রের বাড়ি। ছাত্রের বাড়ির অবস্থা বেশ ভালোই।বড়ো চত্বর নিয়ে বাড়ি। বড় সরো গ্যারাজ আছে। গাড়ি সারাইয়ের কারখানা যাকে বলে।সবই আছে তবে ড্রেসিংটেবল এর ওপরে চালের বস্তা,কুলো,ডালা এসব দেখে এদের রুচিটা অনুধাবন করতে পারা যায়। এ বাড়ির বিশাল ছাঁদ ।বাইরের থেকে বাড়ির কিছুই দেখা যায় না। গেট এর হুড়কো নাড়লো বাদামী।ছাত্রের মা এসে দরজা খুলে দিল।
———আইয়ে মিস্ জী।
——–কি হলো, ঘুম থেকে উঠেনি এখনো?
—-বাদামী প্রশ্ন করে ছাত্রের মা কে।
–না।–বলেই ছাত্রের মা বসতে বলে ঘরে ঢুকে গেল। বারান্দায় বসল বাদামী। এখানেই পড়ার ব্যবস্থা। ভেতর থেকে বাবা মায়ের হাঁকা হাঁকি কানে আসছে।
——বেটা,জলদি উঠ। টিচার জী আ গয়ি। ছেলের বাবার গলাটা শুনে বাদামীর বুকটা তির তির করে কেঁপে ওঠে। এমন ভালবাসা যে সংসারে আছে, সেই সব সন্তান কতো বড়ো ভাগ্যবান!বাবার এমন গলা কোন দিন শোনেনি বাদামী। ছেলের বাবা এক ফাঁকে টিচার জী কে দেখে যান। হয়তো এমন টিচার আগে জোটেনি যে এত ভোরে তার ছেলেকে ওঠাতে পারে।চোখে মুখে ছাত্রের বাবার খুশির ঝলক।
——-নমস্তে টিচার জী। বলেই উধাও তিনি। পড়াশুনা শুরু হতে এক গ্লাস এলাচ দেওয়া চা এসে গেল। একমাস হয়ে গেল এখানে আসছে। সময়ের হের ফের হয়নি বাদামীর। ভোরে এই চা টা আরামদায়ক। এক মাসে এই চা টা নেশায় পরিণত হয়েছে। পড়াতে পড়াতে সময় পেরিয়ে গেছে ।
——-সুভাষ, তোমার বাবাকে বলো মিসজী ডাকছে। অমনি কথাটা ছুড়ে দিল সুভাষ।
——–মিস জী বুলা রহী হ্যাঁয়,পিতাজী। একটু পড়ে ই শিউনন্দন জী বারান্দায়।
——-কি ব্যাপার, ছাত্র পড়ছে তো?

——–কাল দেড়শ টাকার জায়গায় একশো ষাট টাকা ভুল করে দিয়েছিলেন।
——না ভুল করে দেই নি।ভালো পড়াচ্ছেন বলে দশ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে মনে হচ্ছিল যে শ্রমের মর্যাদা আছে। বাবুজী কে বললে দিতে মানা করতো।মহানন্দা ব্রিজ এ উঠে চোখে পড়ল বাঁ দিকে শ্মশানে মৃতদেহ দাহ হচ্ছে। মনটা হালকা হয়ে গেল। এই তো ক দিনের জীবন। তাতে এতো অশান্তি!কি দরকার এ সবের। মনটা যেন শুদ্ধ হয়ে গেল। আর রাগ করবে না বাবুজীর ওপরে। ঘরে ফিরে ই নজরে পড়ল মা শুয়ে আছে। ভয় পেয়ে গেল বাদামী।
—-কি হয়েছে মা?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress