Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আজ বাদামীর বিয়ে। শিলিগুড়ির বিয়ের কথা মনে হল। লোক নেই, জন নেই। একটা পুরোহিত কী মন্ত্র বলল, মালাবদল হবার পর বিয়ে শেষ। স্রোতের সঙ্গে ভেসে চলেছে বাদামী। কেমন করে বিয়ের তারিখ ঠিক হল। গা নেই বাদামীর। আজকের বিয়ে প্রফেসর বাদামী সিং এর। সে কি যেমন তেমন বিয়ে?সকাল থেকে বার বার হরজিতের ফোন আসছে। বাদামীর মনমতো সব কিছু করতে চায় হরজিত। তাই কার্পেটের রং লাল না সবুজ চাই?আবার কী ফুল বাদামীর পছন্দের তা জানতে ফোন। ঐ ফুলে –ই রিসেপশন এর” হল” ঘর সাজাবে। বাদামীর উত্তরে হরজিত আরও উৎফুল্লিত কারণ বাদামী বলেছে—- -তোমার যেটা পছন্দ সেটা ই আমার পছন্দের। স্নান করতে ঢুকেছে বাদামী। আবার ফোন এল। ছুটে গিয়ে রিসিভার তুলল। -হ্যালো!হ্যাঁ গো,ঠিক একটার মধ্যে পৌঁছাব। আর ফোন করবে না বুঝলে? ছেড়ে দিল রিসিভার। স্নান সারা হতে আবার রিং হয়ে যাচ্ছে। এবার আর ওপাশের কথা না শুনেই রিসিভার তুলে এক নাগাড়ে বলে গেল। -হ্যালো! হরজিত, হ্যা গো,এইটুকু দেরি সইছে না! আমি এলাম বলে। কিন্তু ওপাশের আরও গলা শুনে চুপ করে গেছে বাদামী। -হ্যালো, আমি অরুনা। হরজিতের মা বলছি। তোমার কাছে আসছি। একটু অপেক্ষা করো প্লিজ। কথাটা বলেই অরুনা রিসিভার নামিয়ে দিল। বাদামীর হাতে তখনও রিসিভার। মনে হলো, কী করছে সে! ঠিক করছে কি?আবার মনে হলো, ঠিকই করছে। প্রতিশোধ নেবেই নেবে ।কিছুক্ষনপরে দরজায় বেল বাজতেই বাদামী দরজা খুলে দিল। অরুনার মুখখানা ভার হয়ে আছে। সব রক্ত যেন কে শুষে নিয়েছে। বিষন্ন মুখখানা দেখেই মায়ের মুখখানা মনে পড়ে গেল বাদামীর। মায়ের কাছাকাছি হবে ওঁর বয়স। মায়ের মতো অরুনা সিং এর ও স্বামী নিয়ে সুখ নেই। -তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি। আমার কষ্টের কথা নিশ্চয়ই তুমি বুঝবে। -ছেলেকে বললেই তো পারতেন। -ছেলেকে কি করে বলি,”তোর বাবা যে মেয়েকে ব্যবহার করেছে, তাকে তুই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে যাচ্ছিস। তাই তোমাকে বলতে এসেছি যে মানুষটা তোমাকে ব্যবহার করেছে তার ছেলেকে তুমি তোমার শরীর ছুঁতে দিতে পারবে? -আপনার ঘেন্না করেনি, অমন স্বামীর ঘর করতে? -মেয়েদের অনেক জ্বালা। তোমার মতো যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতাম, তাহলে ঐ ঘর করতাম না। অরুনার চোখ জলে ভরে ওঠে। – বাদামী ক্রন্দন রত কন্ঠে বলে ওঠে। -ওর জন্য আমার মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়। মারা গেছে মা । একটা নিরুপায়, অসহায় মেয়ে কে কি করে ফেলে চোরের মতো পালিয়ে এল?ওকে শায়েস্তা করতেই হরজিত কে বিয়ে করব। চোখে জল এসে গেছে মায়ের কথা মনে করে। উঠে গেছে সোফা থেকে। তা দেখে অরুনা বলেছে– –বাদামী তুমি আমার মেয়ের মতো। আমি ও মা। চেয়ে দেখো আমার দিকে। যে মেয়ের দেহ আমার স্বামী উপভোগ করেছে,সেই মেয়ের দেহ আমার ছেলে উপভোগ্ করলে এই মা ও বেঁচে থাকবে না। এবার অরুনা ভেঙে পড়েছে একেবারে। টেবিল মাথা রেখে মুখ ঢেকেছে। অরুনা চলে গেছে অনেকক্ষণ। বাদামীর বুকটা ভার হয়ে আছে। আজ বিয়ে। কাল ফুল শয্যা। অসম্ভব!! এ কী করছে বাদামী?লোকটার কি শায়েস্তা হয়নি? যথেষ্ট হয়েছে। এবার ঘোরো, ঘোরো বাদামী। তোমার ভালবাসার মানুষটা কি দোষ করেছিল?তাকে কেন বিয়ে করলে না?কেন তাঁকে আঘাত দিলে? দেরাজে খুঁজে চলেছে সেই মূল্যবান খাম খানা। হাতে খাম খানা আসতেই ছিঁড়ে ফেলল বাদামী। ভাঁজ খুলে ফেলল চিঠিটার।মুক্তাক্ষরে লেখা সেই চিঠি। প্রিয় বাদামী, স্ত্রীর মৃত্যুর পর ঠিক করেছিলাম আর বিয়ে করব না। তিন বছর ধরে তোমাকে দেখে কবে যে মত পাল্টে গেছে তা বুঝতে ও পারিনি। তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। জানি তোমার কাছে থাকলে কষ্ট টা আমার বাড়বে বৈ কমবে না। তাই চলে যাচ্ছি। যদি কোন অন্যায় করে থাকি তবে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিও। তোমার বাবার লেখা চিঠিতে সব জানতে পারলাম। যদি কখনো হর কিষণকে ভুলতে পার, আমার কথা মনে করো। সারাজীবন অপেক্ষায় থাকব। শুভেচ্ছা নিও। ইতি—-দেবব্রত সোম। পুনঃ–তোমার বাবার লেখা চিঠি যাতে কারো হাতে পড়ে তাই এই খামে দিলাম। বাবার চিঠিটা অনুতাপের চিঠি। কী করবে বাদামী? দেবব্রত সোম ভেবেছেন বাদামী, হর কিষণ এর প্রেমে পাগল হয়েই দেবব্রত সোম এর প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বাদামী। দেবব্রত সোমের চিঠি খুলে চিঠি খুলে ফোন নম্বরটা নিল। সবকিছু জেনে ও দেবব্রত সোম বাদামীকে ভালো –বাসেন। সেই মানুষ টা কে আর কষ্ট দেবে না বাদামী। এয়ারপোর্ট এ ফোন করল বাদামী। -হ্যালো–বেলা দুটোর শিকাগোর ফ্লাইট এ একটা টিকিট কনফার্ম করুন। হবে?–ভেরি গুড। এখুনি আসছি। আবার ও ডায়াল করল ডি.এস.এর নম্বরে। রিং হয়ে যাচ্ছে। শরীর ও মনে কাঁপন লেগেছে বাদামীর। রক্তের প্লাবনে কান ঝাঁ ঝাঁ করছে। বাদামী কি ষোড়শী!!! সরম রাঙা গলায় কম্পন। -হ্যালো–আমি বাদামী। –আসছি শিকাগো। এই প্রথম প্লেন এ চড়া। তাও ভয় নেই বাদামীর। বিশাল একটা মনের অধিকারী যে মানুষটা, তাঁর কাছেই তো যাচ্ছে বাদামী। আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে মিসেস ভাটিয়ার মুন্নি,মা বাবা-শিলিগুড়ির বাঙলো বাড়ির ‘বল’ আন্টি। তবু ও মা রয়ে গেল বাদামীর সঙ্গে। পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে মাকে। মায়ের গলার স্বর শুনতে পাচ্ছে বাদামী। মেরি রানী বিটিয়া আগে চল ।ঔর চল।ঔর আগে চল!!!!!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
Pages ( 14 of 14 ): « পূর্ববর্তী1 ... 1213 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress