বাদামী – 15
তাপস সরকার হৈচৈ শুনে এগিয়ে এসেছে। স্যার বসুন। ম্যাডাম কি আজকের ডেট দিয়েছেন? -না। -এ হে!একটা ফোন করে এলে পারতেন। আচ্ছা দেখি কি করা যায়। চেম্বারের ভেতরে ঢুকে গেল তাপস সরকার। একটু পরেই ফিরে এলো সে। ——‘না স্যার। হল না। বাড়ি ফিরে অমৃতা একেবারে ফেটে পড়ল। ——-এতো বড় স্পর্ধা!!তোমাকে বেড়িয়ে যেতে বলে!আমি ওখানে পড়বো না। ——–তুই চিন্তা করিস না। আমি আবার যাব। ——তুমি গেলে ও আমি ওখানে পড়ব না। এক ঝলক যাকে দেখ হর কিষণ, কে তিনি? চোখ জুড়িয়ে যাবার মতো সৌন্দর্য সেই নারীর! কোথায় দেখেছে?গলার স্বর ও খুব চেনা। মাথায় ঘুরপাক খেতে খেতে চিন্তাটা থমকাল। হ্যাঁ, সেই মেয়ে। ভয় ধরে গেল হর কিষণের। ফাঁস হয়ে যাবে না তো খবর টা?না না তা হবে না। হবার হলে এতদিনেই হয়ে যেত। বেশ কিছু ক্ষন পর রহিত এসেছে। ———-কি ব্যাপার আজ নাকি আমার মামা কে বার করে দিয়েছ তোমার চেম্বার থেকে?আরে ইয়ার তুনে ক্যায়া কিয়া? তোর মামা রেড লাইট দেখে ও ভেতরে ঢুকলো কেন?অতো বড় পদে থেকে ও জানে না? ———–ঠিক আছে বাবা। একটা বয়স্ক লোক কে ঘর থেকে ” গেট আউট ” কথাটা বলা কি ঠিক? আমার রাগ হয়ে গিয়েছিল।বেচারা হরজিত। প্যায়ার কিয়া তো অ্যায়সি লেড়কি সে?ওর বাবাকে অপমান করেছ জানলে ওর প্রেম উবে যাবে। স্তম্ভিত বাদামী!এ কী শুনছে সে!! হরজিত এর কে হয় বললে? ———আরে , হরজিত এর বাবা আর আমার মামা হন হন এই হর কিষণ সিং। বহু দিন পর বাদামী দম ফাটা হাসি হাসল। হাসতে হাসতে চোখে জল এসে গেল। ———কি ব্যাপার, এত হাসছিস কেন?বল না হাসছিস কেন? হাসি থেমেছে বাদামীর। আজ তো বাদামীর হাসার দিন। ————-এমনি। তোর মামেরা ভাই কে আসতে বলিস। ———কি বলছিস?সত্যি বলছিস?তাজ্জব কী বাত! ———–আরে হ্যাঁ। পাক্কা। ——–আর ইউ সিওর?—–আবার ও রহিত বলে। ——-ইয়েস মাই ফ্রেন্ড। বলবি,আমি রাজি আছি। ——–বিয়েতে রাজি!বাব্বা আমার মাথায় ঢুকছে না। এতো বড় একটা ব্যাপার বাবা কি করে যে মেনে নিল তা বুঝতে পারে না অমৃতা। কূল পাচ্ছে না বাবার মতি গতির। প্রফেসর বাদামী সিং এর সঙ্গে দেখা করার কথায় বাবার মুখখানা কেমন টসটসে লেগেছে। বাবা মজা করেই বলেছে——চল না ,তোর ম্যাডাম এর বাড়িতেই যাব। রাগ করে ই অমৃতা উঠে গেছে বাবার কাছ থেকে। দরজায় বেল বাজতেই রামরতিয়া দরজা খুলে দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী রামরতিয়া প্রশ্ন করেছে। ———-সাব,ম্যাডাম তো এই সময়ে দেখা করেন না। ———বল,শিলিগুড়ির হর কিষণ এসেছে। —–ঠিক আছে। আপনি ভেতরে আসুন। বসুন।আমি মেম সাবকে বলছি। বাদামী শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল ।রাম রতিয়া ঘরে ঢুকতে বলল——কী রে,কে এসেছে? ———-বলল,শিলিগুড়ির হর কিষণ! কথা টা শুনে গা জ্বলে গেল বাদামীর। ———-চলে যেতে বলেছিস ? ——না।বসতে বলেছি। যেতে বলব? ——-না।থাক। প্রায় পনেরো মিনিট বসে আছে হর কিষণ। ঘরের সাজ সজ্জা দেখেই সময় কাটাচ্ছে। কী বলবে তা ভাবতে লাগল। মিস বাদামী যখন, তখন নিশ্চয়ই আর বিয়ে করেনি?শিলিগুড়ির সেই কচি মুখখানা দারুণ অ্যাট্রাকটিভ হয়েছে। এমনটা হবে জানলে সম্পর্কটা থিতিয়ে রাখতে পারত হর কিষণ। যাক্ গে এখন ও রাখতে পারবে। সেই চেষ্টা ই করবে হর কিষণ। রোগা পাতলা সেই মেয়েটি চা দিয়ে গেল। চা খেতে খেতে হর কিষণ নানা কথা ভাবছিল। এই মেয়ে টা ছাড়া আর কেউ হয়তো থাকে না এখানে। রাম রতিয়া বেড রুম এ ঢুকতেই বাদামী বলল— —–চা দিয়েছিস? ——-হ্যাঁ, মেম্ সাব। বাদামীর মনে হলো একটা ফোন করা দরকার। রিসিভার তুলে আকাঙ্খিত নম্বরে ডায়াল করল।রিং হয়ে যাচ্ছে। যাক্ ধরেছে। —‘আমি বাদামী বলছি।দশ মিনিট এ আসতে পারবে? চলে এস। এলে বলবো। রিসিভার নামিয়ে দিল বাদামী। বেশ দামী একটা জমকালো শাড়ি পড়ে নিল বাদামী। হালকা প্রসাধনই পছন্দ বাদামীর। তবে আজ চড়া মেক্ আপ দিল।তার সঙ্গে চড়া রংয়ের লিপস্টিক। ঠিক দশ মিনিট পর বাদামী বাইরের ঘরে পা দিল। বাদামী কে দেখে হর কিষণ সিং উঠে দাঁড়িয়েছে। হত চকিত সে,এমন মেয়ে ফেলে অরুনা কে নিয়ে সে কি করছে!! বাদামী প্রথম বলল——নমস্কার। —–হ্যাঁ, নমস্কার। —-হর কিষণ বলে। হতভম্ব ভাব তার। বাদামী বলে—–ইয়েস ।বলুন। কি দরকার?আমার চেম্বার এ তো আপনি গিয়েছিলেন?আমার একটা জরুরী অ্যাপয়েন্টমন্ট আছে। ——-‘——আমাকে চিনতে পারছ না বাদামী? ——আমার চেম্বার এ গিয়েছিলেন। ———-হ্যাঁ। তবে তার আগে আমার বিবাহিতা স্ত্রী ছিলে। ———ভুল করছেন আপনি। দরজায় বেল বাজতেই এগিয়ে গেল বাদামী। হরজিত কে দেখে ইচ্ছে করেই বলে উঠল——- —–ও ডিয়ার!!তুমি এসে গেছ! মুখোমুখি বাপ ও ছেলে। দুজনেই দুজনকে দেখে তাজ্জব বনে গেছে। হরজিত বলে উঠল। ——‘ড্যাড্,আপ ইঁহা? ——–আমিও তোমাকে সেই কথা সেই কথা বলতে পারি। ———বাদামী, মিট মাই ড্যাড্ ।ড্যাড্ শি ইজ প্রফেসর বাদামী সিং। সেটা তো তুমি জেনেছ,নইলে এখানে কি করতে আসবে। একটা কথা শোন বাদামী কে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। একটা হুঙ্কার ছাড়ল হর কিষণ। —–অ্যাবসার্ড। এ হতে পারে না। এ বিয়ে বন্ধ করো। —–আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি। ——‘আমি বলছি, এ বিয়ে বন্ধ করো। ——-সাদি হোকে রহেগা। ——-আমি বেঁচে থাকতে এই বিয়ে হতে দেবো না। ——-এতো চিৎকার করছ কেন? ——‘ঠিক আছে আমি দেখছি কি করে এই বিয়ে হয়। বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে হরকিষণ সিং । —–তুমি এবার যাও হরজিত। তোমার বাবা রাজি হলে তাড়াতাড়ি একটা ডেট ঠিক করো। হরজিত বলেছে——–তুমি চিন্তা করো না। মম ড্যাড্ কে রাজি করাবে। হরজিত চলে গেছে ।মনে পড়ে মায়ের কথা। মায়ের ছবির সামনে দাঁড়ালো।চোখে জল এসে গেল তার।