Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাজল আগমনীর আলোর বেনু || Sibani Gupta

বাজল আগমনীর আলোর বেনু || Sibani Gupta

বাজল আগমনীর আলোর বেনু

আকাশে অনেকক্ষণ ধরে কালো মেঘের দাপাদাপি চলছিলো। এবারে ঝমঝমিয়ে নেমে এলো।রিমঝিম নূপূরের নিক্কণ তুলে বৃষ্টি নামলো।
হিমালয় দুহিতা মহেশ্বর পত্নীর নির্নিমেষ দৃষ্টি বৃষ্টি ধারার উপর। টপটপ্ করে বেশ দু’ ফোঁটা জল গড়ালো চোখ বেয়ে—-
ওপাশের ঘরে ভাইবোনের মিলে দশ- পঁচিশ খেলছে বাদলা দিনে।খেলা বেশ জমে ওঠেছে।
মহামায়ার মনটা কেমন হু-হু করে ওঠে।আরতো মাত্র হাতে গোনা রাতটা–অথচ,এখনো মর্ত‍্যপুর থেকে নিমন্ত্রণ পত্রই আসেনি। আর ,এলেই বা কি,প্রতিবারের মতোই মহামায়ার বাপের বাড়ি যাবার নিমন্ত্রণ এলেই রেগেমেগে একসা্ হন মহাদেব।কৈলাস ছেড়ে কোত্থাও
যাবার নাম শুনলেই মুখখানায় ঘোর অমাবস‍্যা নামে।
সারাটা বাছর কৈলাস পর্বতে বসে ধ‍্যান করা না ছাই!
আসলে, গাঁজা,আফিম ওই হতচ্ছাড়া জিনিষগুলো তো আর মর্ত‍্যপুরেতেমনটি পাওয়া যায়না ।পেলেও সব দু’ নম্বরী। মহাদেব নেশাখোর হলেও কিছুতেই দু-নম্বরী সহ‍্য করতে পারেন না। নেহাৎ ছেলেমেয়েগুলো কে ছেড়ে থাকতে পারেন না বলে যেতেই হয় শেষ পর্যন্ত।ভদ্রতা নাহোক দেবত্ব রক্ষার তাগিদেই শ্বশুরবাড়ি মর্ত‍্যপুরে যাওয়া।
তবে,মর্ত‍্যলোকে বড্ড বেশি পলিউশন।রাস্তাঘাটের তো ছিরিছাঁদের বালাই নেই।কর্কট রোগে ধুঁকছে।নালা,নর্দমার বিদঘুটে গন্ধে পেটের ভাত উল্টে আসে।
গাঁজা,আফিম ,চরসে বুঁদ হয়ে থাকার সুখ তো কেবল সোনার কৈলাসেই — মর্ত‍্যপুরে সব দু- নম্বরী মাল–
সব ব‍্যাটা খচ্চর !
গেলোবার তো মর্ত‍্যলোক থেকে এসে ছেলেমেয়েরাও সাফ জানিয়েছিলো ,আর কক্ষনো মর্ত‍্যমুখো হবে না।
ওখানকার বাতাসে কার্বন -ডাই-অক্সাইড, বিষাক্ত আর্সেনিক ,আর ভয়ানক পলিউশন, শব্দদূষণ কতো কতো খারাপ জিনিষ — আর ,কি করকরে গা’ জ্বালানো
রোদ্দুর,ধূলোর আস্তরণে তো লক্ষ্মী-সরস্বতীর দুধে- আলতা রং তামসী, ইনফ্লুয়েঞ্জায় নাক বন্ধ,তা, মর্ত‍্যবাসীদের অবশ‍্য আদর যত্ন- আপ‍্যায়ণে খামতি ছিলনা। প্রচন্ড চাপে দগ্ধ ক্লিষ্ট দেবীদের এন্তার আইসক্রিম,কোল্ড ড্রিংকস সাপ্লাই ও করেছিলো।আরে ,তাতেই যে উল্টো ফল—-ইনফ্লুয়েঞ্জার সাথে খুক খুক কাশির প্রব্লেম শুরু হলো ।তবে, গনু মানে গনেশ ছেলেটা আবার খুব বুদ্ধিশুদ্ধি রাখে ।মর্ত‍্যভক্তদের হাজার অনুরোধেও ঢেঁকি গেলেনি বটে ! ওসব ছাইপাশ স্পর্শ ও করেনি। কেবল কলা খেয়েছে,তা ও সপরিকলা ও বুন্দিয়া লাড্ডু।
আর ,কেতু অর্থাৎ কার্তিকটা আবার বড্ড ভোজন রসিক তাই লোভ সামলাতে পারেনি বেচারা ।ঠান্ডা জিনিষ না খেলেও মিষ্টি রাবড়ি,ছানার পোলাও গপাগপ্ খেতে কসুর করেনি।
মহামায়া সকলের চোখ এড়িয়ে যতোই কেতুকে চোরা চাউনিতে ভ্রুকুটি ফুটিয়ে নিষেধ করেছেন,তা ওই পাজির পা- ঝাড়া কেতুটা কিনা না দেখার ভান্ করে গাপুস গুপুস উদরস্ত করে গেছে।
খুব হয়েছে।মায়ের কথা না শোনার ফলে পেটের ব‍্যামো
বাঁধিয়ে বসলো ।লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে কতোবার যে দু’ নম্বর কম্মোটি সেরেছে তার ইয়ত্তা নেই। সেই থেকে কেতুও প্রতিজ্ঞা করেছে আর কখনো মর্ত‍্যলোকে যাবে না ।
মহাদেব কিন্তু ছেলেমেয়েদের মর্ত‍্যপুরে না যাবার সিদ্ধান্তে আহ্লাদে আটখানা– যাক্ বাঁচা গেলো মর্ত‍্যের বিড়ম্বনা থেকে।এবার থেকে মর্ত‍্যলোকের চ‍্যাপ্টার খতম্— বম্ বম্ বম্—–
মহামায়ার কিন্তু এসব ফ‍্যাকড়া নেই।
কারন,হাজার হোক,মর্ত‍্যপুর তাঁর বাপের বাড়ি।
ওখানের মাটির সোঁদেল গন্ধে কেমন আপন করা স্পর্শ,বাতাসের সোহাগী ছোঁয়া,প্রিয়জনদের চির পরিচিত হাসিমুখ—– এসব তো অমূল‍্য !
তাছাড়া,যেখানে জন্ম, বেড়ে ওঠা,সেখানকার সবকিছুতেই প্রাণের আত্মিক টান! এখন শুধু নিমন্ত্রণ টা পেলেই– বাক্স-প‍্যাটরা গোছানোও শেষ চুপিসারে ,পবু-পবনটা এলেই——
মা! ওমা, বাপি চানাচূরের প‍্যাকেটটা কোথায় গো ?
লক্ষ্মীর ডাকে মহামায়ার চিন্তাস্রোতে ঢিল পড়ে—–
আঁচলে চোখদুটো মুছে নেন তাড়াতাড়ি।
গলা উঁচু করে জবাব দেন,কেনরে? রান্নাঘরের আলমারিতেই তো ছিল—
কৈ! পাইনি তো,কোথায় রেখেছো তবে?
চকিতে মনে পড়ে যায় মহামায়ার।
ওহো,তাইতো,দ‍্যাখ। কেমন ভুলো মন আমার।সরু সেদিন অনলাইনে অর্ডার করে যে স্টিলের কৌটোগুলো আনিয়েছে — তাতেই তো রেখেছিলাম রে লখুমা–
ও,তাই বুঝি? আচ্ছা,ওমা,আমি তো চা করছি,চানাচূর দিয়ে মুড়ি মাখবো, বাবাও খাবে– তুমি চা খেলে চলে এসো–
মহামায়া মৃদু হাসেন ।
লক্ষ্মী মেয়েটি তাঁর ভারী করিৎকর্মা।সবদিকেই খেয়াল- বড্ড মমতাময়ী !
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মহামায়া হলঘরে ঢুকেন।
মেঝেতে শীতলপাটি পেতে খেলছিল সবাই।
মহামায়াকে দেখেই হৈ-হৈ করে ওঠে গনু।
এ‍্যাইতো,মা এসে গেছে,ওমা,এবারে ,তুমি ও বাবা একদিকে পার্টনার ,আরেকদিকে আমি ও কেতু ।
ছেলের আব্দার শুনে মহামায়া অপাঙ্গে তাকান মহাদেবের দিকে।
ওকি! মিনসে্টা অমন মুচকি মুচকি হাসছে কেন! কি ব‍্যাপার বাপু!
আজ সক্কাল বেলাই তো একচোট্ বাক্ বিতন্ডা হয়ে গেছে।
মহামায়া কথায় মধু ঢেলে একটু হাল্কা টোকা দিয়েছিলেন বৈকি ।
হ‍্যাঁগো, পবনটার কি হলো বলোতো? এবারে আসতে এতো দেরী করছে কেন?
পবন আসা মানেইতো মর্ত‍্যপুরে যাবার প্রসঙ্গ।
মহাদেব বিরক্তিতে ভেংচি কাটেন মনে মনে। স্বগতঃ বিড়বিড় করেন,ও ব‍্যাটা না এলেই রক্ষে– জঞ্জালের স্তূপে- বারুদের গন্ধে,হেঁদিয়ে মরে কাজ নেই বাপু– আর,ছেলেমেয়েরাও তো এবার যাবে না বলেই রেখেছে,অতএব,মর্ত‍্যপুরে যাবার চ‍্যাপ্টার তো ক্লোজড্ ।
মহামায়ার এখন খেলতে মোটেও ইচ্ছে ছিল না,নেহাৎ ছেলেরা বায়না ধরলো—
খুব হয়েছে,আমাকে প‍্যাঁচে ফেলতে চাওয়া ! হুঁ–
মহাদেব হেরে গেলেন তিন গুটি নিয়ে-।
লোকটাকে জব্দ করতে পেরে মনের মেঘ কিছুটা কাটে মহামায়ার।
লক্ষ্মী জল খাবারের ট্রে হাতে ঢুকতে না ঢুকতেই বাইরে পবনের গলা শোনা গেলো—-
কৈ গো,কোথায় বাপু তোমরা ? মর্ত‍্যপুর যাবার নিমন্ত্রণ পত্রটা নাও দেখি—–
পলকে আকাশের সমস্ত মেঘ গিয়ে ভিড় জমায় মহাদেবের মুখমন্ডলে।
আর,একরাশ খুশির ঝলকে মহামায়ার মুখে আলোর রোশনাই।
ও পবুদা ,মর্ত‍্যলোকে এবারে আমরা যাচ্ছিনে গো,
তাইনা রে?– সকলের দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু মুখে বলে ওঠে কেতু।
পবন বিস্মিত চোখে তাকায় সবার মুখের দিকে– সেকি রে? কি ব‍্যাপার বলতো? যাবিনে কেনরে? ওখানে– সক্কলে হা-পিত‍্যেশ করে বসে থাকে জানিসনে? তোরা সবাই না গেলে কি চলে?
গনু গম্ভীর হয়।
কি করবো বলো ভাই? যেতে তো আমরাও চাই, কিন্তু ওখানকার পলিউশন, শব্দদূষণ,হতচ্ছাড়া রাস্তাঘাট—
ওরে, থাম্ থাম্——
পবন ধমকে ওঠে গনেশকে।
এসব কি উল্টো পুরাণ গাইছিস শুনি? ওসব কিস‍্যুটি নেই– ওরে,তোরা মিছেই দেবতা হয়ে পড়ে আছিস কৈলাসের পাথর কামড়ে– ওখানের খবর- কবর কিছুই কি রাখিস নে?
কি খবর গো পবনদা?
কেতু-কার্তিকের কথা শুনে পবনের চোখ কপালে ওঠে।
খবর মানে? আচ্ছা ,বলতো,তোদের এখানে কি– ” যুগশঙ্খ,সাময়িক প্রসঙ্গ,টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার ,বর্তমান,আজকাল” — এসব পত্রিকা- পত্রিকা আসে না?
পবনের কথা শুনে কেতু ও গনুর সাথে লক্ষ্মী,সরস্বতীও হামলে পড়ে—
প- ত্রি—কা! কৈ,নাতো– কেন গো ,এসবে কি থাকে ?
আহারে! ওদের সকলের অজ্ঞতায় পবনের মনে করুণা হয়। সত‍্যি তো,এসব পত্রিকার খবর ওরা জানবেই বা কোত্থেকে? আর,জানেনা বলেই তো ভয় পাচ্ছে ওরা মর্ত‍্যপুরে যেতে।
মহাদেব একপাশে নিশ্চুপ ধ‍্যানস্থ।
মহামায়ার কি বলবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
সরু–সরস্বতী পবনের জন‍্যে চা ও খাবার নিয়ে ঢুকে
হাসিমুখে বলে,নাও পবনদা,গরম গরম কচুরী ভেজেছি ,সস্ এনে দেবো নাকি !
পবন মাথা নাড়ে ,নারে লাগবেনা , তুই বোস ,কথা আছে তোদের সাথে—
ওমা,তাই নাকি,বসছি তবে,তা ,কি কথা গো?
সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে পবন বলতে থাকে–
শোন ,মর্ত‍্যলোকে এখন -“জঞ্জাল হঠাও অভিযান” শুরু হয়েছে। চারদিক একেবারে সাফ-সুতরো,নালা- নর্দমা সব দূষণমুক্ত,রাস্তাঘাট মোমের মতন মসৃন,পিচঢালা, বুঝলি? কেননা,—“স্বচ্ছ ভারত অভিযান” শুরু হয়ে গেছেরে।দেখবি, অচিরেই –“স্বচ্ছ বিশ্ব অভিযান ” ও
শুরু হলো বলে —
পবনের কথা শুনে মহামায়ার আনন্দ আর ধরে না।
কেতু,গনু সরু,ও লক্ষ্মী তো মহানন্দে ধেই- ধেই- ধিতা়ং- ধিতাং নাচ শুরু করে দেয় পবনদাকে ঘিরে।
পবন চোরা চাউনিতে মহাদেবকে দেখে মুচকি হাসে একটু।
তাহলে,এবারে বল,তোরা যাবি যাবি তো?
সরস্বতী বীণা নিন্দিত কন্ঠে বলে ওঠে,ওমা! কি যে বলো,যাবোই তো–
লক্ষ্মীর মাথা নাড়ে,হ‍্যাঁ,হ‍্যাঁ,এমনটা হলে তো আর কোন সমস‍্যাই নেই,যাবো সবাই ,তাইনা মা?
মহাদেব বিলক্ষণ টের পান,গিন্নী তো একপায়ে খাড়াই ছিলো,এখন,ছেলেমেয়েরাও একই সাথে গোঁ ধরেছে– অর্থাৎ স্পষ্টতই কৈলাসে মহাদেবের পরিবারেও স্বচ্ছ অভিযান শুরু মর্ত‍্যপুরে যাবার ব‍্যাপারে—-
অগত‍্যা,মহাদেবের ও আর এনিয়ে ক‍্যাচাল করতে মন চাইলো না। বরং ছেলেমেয়েদের মুখে খুশির আভা দেখে
আশুতোষের মনেও স্নেহের ফল্গুধারা বইতে থাকে।
বরাভয়ের মধুর হাসি মহাদেবের মুখমন্ডলে।সে হাসিতে
মর্ত‍্যপুরে যাবার গ্রীন সিগন‍্যাল—-
তাই দেখে গোটাকতক ডিগবাজি খায় গনেশের বাহন ইঁদুর,কেতুর ময়ূরটাও খুশিতে পেখম্ মেলে নাচতে শুরু করে।দেখাদেখি,লক্ষ্মীর প‍্যাচা ও সরস্বতীর রাজহাঁস ও হৈ-চৈ শুরু করে দেয়।
দূরে, এতোক্ষণ চুপটি করে মহাদেবের বাহন বৃষভ কাতর মুখে দাঁড়িয়েছিলো।এবারে সে ও ছুটে এসে মহাদেবের পা সোহাগ ভরে চাটতে শুরু করে।
মহাদেব মুচকি হেসে ওর গায়ে স্বস্নেহে হাত বুলান,বাহ্ ,তুই ও আজকাল খুব সেয়ানা হয়েছিস বাপু,বেশ বুঝতে পারছি।মর্ত‍্যপুরে যাবার জন‍্য আর তর
সইছে না কারোর–
আড়চোখে একবার মহামায়াকে লক্ষ্য করে বলে ওঠেন, ওরে পবন, যা,বাপু,মর্ত‍্যবাসীদের খবর দে্ – আমরা আসছি—
মহাদেবের কথা শুনে সমস্ত কৈলাসে আনন্দের লহর ওঠে।আলোর জ‍্যোতির ঢেউ খেলে যায় ভাইবোনেদের মুখে,মহামায়ার বুকেও খুশির উল্লাস!
সে উল্লাসের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে মর্ত‍্যবাসীদের বুকে—-
আগমনীর আগমনে প্রকৃতি সেজে ওঠে লাস‍্যময়ী অপরূপ সাজে!
মহাখুশির নাকাড়া বাজতে থাকে- দ্রিমি– দ্রিমি– দ্রিমি–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress