বাকল্যান্ড এর বাঁধ
বেশ ক’দিন ধরেই এক নাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে । ছোটো ছেলে বিল্টু তার বৌ বাচ্চা্ নিয়ে পুরী বেড়াতে গেছে ।কিছু দিন পর আমার ও ভাইজাগ যাবার কথা ।কলকাতা র শীতে হাঁপানীর কষ্ট টা বাড়ে তাই ভাইজাগ এ শীতের কষ্ট থেকে বাঁচতে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে রাখা হয়েছে । এখন এখানে লোক বলতে মোহিনী আর আমি। মোহিনী ঘরের দেখভাল করে ।একটু একটু করে হেঁটে গুটি শুটি বসলাম ব্যালকনির স্ল্যাবের ওপরে । মার্বেলের ওপরে কাত হ্য়ে আরামে শুয়ে খালের সৌন্দর্য দেখতে লাগলাম ।খালের জলে পাক খেতে খেতে চলেছে রকমারি ময়লা ।বর্ষায় বিদ্যাধরি খালের মোহময় রূপ ।আমি একে কখনও ভাবি সমুদ্র, কখনও গংগা আবার কখনও পদ্মা ।পদ্মার জলে ভাসতে ভাসতে অনেক দুর এগিয়ে যাই।কতো দেশ,কতো নদী যে পেড়িয়ে যাই তা বলে বোঝাতে পারব না ।চলেছি অনন্তের দিকে ।বহু প্রাচীন কীর্তিনাশ করেছে যে সেই কীর্তিনাশায় গা ভাসিয়ে চলেছি । ভোঁ ভোঁ করে চলেছে স্টীমার ,হেঁচকি তুলে ।বেশ কিছু টা যাওয়ার পর সাঁ সাঁ করে ছুটতেে লাগল । হঠাৎ দেখলাম, আরে আমি তো পানসী বেয়ে চলেছি!স্টীমার তো নয়। মুন্সীগঞ্জ থেকে চলেছি ঢাকার দিকে ।হীরের কুঁচির মতো বৃষ্টি পড়ছে পানসীর ছ’ইয়ে।এবার শুরু হলো বড়ো বড়ো বৃষ্টির ফোঁটা ।নাকে, মুখে বিঁধে চলেছে । আমি চোখ বুজে হাসছি ।আর সেই বৃষ্টির ফোঁটা মায়ের দুধের মতো আমার মুখ থেকে সারা শরীরে রসের সৃষ্টি করছে ।আত্মহারা আমি ।চোখ খুলে দেখলাম মাছের মতো আমি জল কেটে সাঁতরে চলেছি ।না।আর না।এবার পারের দিকে ছুটতে হবে । বুড়িগঙ্গার উত্তর দিকে ঢাকা শহর ।কেউ বলেন, সতীর দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে সতীর টায়রার, “ডাক ” পড়েছিল, সেই ডাক থেকে ই নাকি ঢাকা ।সেই থেকে ই ঢাকা কে ঊপপীঠ বলে মানা হতো ।আবার অন্য মতে, ঢাকা বা গুপ্ত ছিলেন ঢাকেশ্বরী ।মহারাজা বল্লাল সেন আবিষ্কার করেন দেবী ঢাকেশ্বরী কে। কারো মতে ডাক গাছ থেকে ই ঢাকা ।এখন অবশ্য ঢাকায় ডাক গাছ নেই ।দূর ছাই,কি থেকে কি!আমার এখন পার পাওয়া দরকার ।ঢাকার নাম কোত্থেকে হলো তায় আমার কি দরকার?জয় মা ঢাকেশ্বরী পার লাগাও!!! ঐ তো ঢাকেশ্বরী মন্দির এর চুড়ো দেখা যাচ্ছে । বুড়িগঙ্গার উত্তর দিকে ।একেবারে টপাৎ করে লাফ দিলাম ।একেবারে বাকল্যান্ড বাঁধের ধার ঘেঁষে । চার দিকে নজর চালালাম ।সুন্দর!অতি সুন্দর!বর্ষায় নদী কানায় কানায়ভরে উঠেছে ।চমকে উঠলাম ।আমি কি ঢাকা য় নাকি ভেনিসে?নিশাচর বলেই বোধ হচ্ছে নিজেকে ।বাকল্যান্ড এর বাঁধ এ “আহসান মঞ্জিল”কে দারুণ লাগছে ।বাঁধের ওপরে ঢাকার সুপ্রসিদ্ধ ” নর্থব্রূক হল”আর তার সামনে একটা কামান ।বাকল্যান্ড বাঁধ ছেড়ে চলতে লাগলাম ঢাকা ছেড়ে ইউনিভার্সিটি মুখি।ঝাঁ চকচকে রাস্তা।আমার মন তাঁকে দেখতে চাইছে ।খুঁজে বার করতে চললাম তাকে ।সেই ছোট খাটো গরনের ফর্সা ছেলে টিকে । শরীর বিদ্যায় ডক্টরেট করতে গিয়েছিল ঢাকা থেকে বিশাখাপত্তনমের অন্ধ্র ইউনিভার্সিটিতে ।আমার আত্মার টান পড়েছিল তার ওপর ।তাই কি খোঁজা? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে দাঁড়ালাম ।চার দিক শুনশান ।এমন কি একটা পাতা নড়ার শব্দ নেই । হঠাৎ কানে এলো সেই গলা–দাদা না?কখন আসলেন?আপনাগো কথা অখনও ভুলি নাই ।
–মনে আছে তাহলে?
—যা উপকার করছিলেন তাকি ভোলন যায়?
গোপাল ডক্টরেট করতে গিয়েছিল সংগে স্ত্রী কে নিয়ে ।বিয়ের দশ বছর বাদে বিশাখাপত্তনমে চিকিৎসার ফলে ওর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলো । ওদিকে গোপাল এর দশ দিন এর সেমিনার তিরুপতি তে। বৌকে দেখাশোনা করতে গেলে ডক্টরেট পাওয়া যাবে না । অগত্যা অভয় দিলাম । ভয়ে ই হোক বা আমার স্ত্রী র দেওয়া “সাধ”খেয়ে ই হোক ,কণিকা, অর্থাৎ গোপাল এর স্ত্রী র “লেবার পেন “উঠে গেল সাত মাসে ই। ফোন এর পর ফোন করে ও কানেক্ট করা গেল না গোপাল এর সাথে । “প্রিম্যাচিওরড বেবি” আর প্রসূতির দেখভালের দায়িত্ব আপনা থেকেই কাঁধে তুলে নিলাম পুরানো স্মৃতি সাদা কালোয় ভরা ছিল । তাজা হয়ে উঠলো নানান রং এ । ভাবলাম বিদেশে উপকারী্ বন্ধু পেয়ে ও কেউ কেউ ভুলে যায় । এক ধাক্কায় সাড় ফিরলো। দেখলাম বারান্দায় স্ল্যাবের ওপরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কানে এলো
–ও দাদু,তুমি তো ভিজে গেছো ।
–তুই কখন এলি?কি ব্যাপার?
সূচির মুখখানা ভার । কাঁদো কাঁদোমুখ দেখে ই সন্দেহ হলো আমার । আজতো সূচির বিয়ের পাকা কথা হবার দিন । তায় আবার এমন বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বারুইপুর থেকে এখানে আসা । তা চাট্টিখানি কথা নয় । —কিরে,একেবারে কাক ভেজা হয়ে এসেছিস? হলো কি?বলবি তো? আমার কথায় কি ছিল জানিনা, সুচি হাঁউমাঁউ করে কেঁদে উঠলো ।
–ও দাদুগো,আমার বিয়ে হবে না । ছেলে রেগে মেগে চলে গেছে । ভীষণ রাগী ছেলে গো। –চলে গেছে?কেন?
–ও এখনই পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা চাইছে । বাবা বলেছে বিয়ের সময় দেবে । ও বলছে একটা জমির বায়না করেছে পঁয়ষট্টি হাজার টাকায়। বাকি পঁয়তিরিশ হাজার টাকা এখনই দিতে হবে ।
—সে আবার কি কথা?বিয়ে না হতে ই টাকা? ঠিক আছে আমি কথা বলবো । চিন্তা করিস না । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
অনেকক্ষন হয়েছে সূচি চলে গেছে । চিন্তা টা একটু হালকা হয়েছে । কারণ আমার ওপর অগাধ বিশ্বাস । হবে নাই বা কেন?ওর নয় বছর বয়স থেকে আমার বাড়িতে থেকেছে । প্রথমে ওর মা,তারপর ওর দিদি কাজ করতো আমার বাড়িতে । বারুইপুর থেকে ট্রেন এ করে সল্টলেকে আমার বাড়িতে কাজ করতে আসতো। প্রথমে মায়ের সাথে, তারপর দিদির সাথে সূচি আসত । একটু একটু করে সূচি বড়ো হতে লাগল ।এইভাবে একটু একটু করে আমাদের সংসারের এক জন হয়ে উঠেছিল। ছোট বৌমার হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিত । নানান জলখাবার ও বানানো শিখে গেল । আমাদের কাজের মেয়ে আর ঘরের মেয়ে হয়ে উঠলো সূচি । এমন লোক কে হাতছাড়া করতে কে বা চায়?ছোট বৌমা ওর তোয়াজে লেগে পড়লো ।সতেরোর সূচির অংগে চড়লো রকমারি চুড়িদার । এখন তাকে দেখে কে বলবে সে সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে নয়।আমি জানি সূচিকে আমি একটু বেশি ভালো বাসি ।হয়তো আমার হাঁপের টানের সময় সূচির সেবা যত্নের জন্য । আরো একটা কারণ হলো আমার বিশাখাপত্তনমের একমাত্র সংগী সে। প্রতি শীতের সময় শ্বাসের কষ্টের রিলিফ পাই ওখানে । তাই ওখানে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে রেখেছি। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সূচির কথা মনে হলো। ওকে বলেই দিয়েছিলাম যে, আমি যাবো তোর হবু বরের সাথে কথা বলতে । ণতবে এক পা ও হাঁটতে পারবো না। ।রিকসা হোক, ঠেলা গাড়ি হোক তোরা আমায় নিয়ে যাবি। কি জানি, কখন আসে! তৈরী হয়ে থাকা ভালো । আমি তো সূচিকে জানি। এসে পড়ল বলে । স্নান সেরে টিফিন খেতে খেতে দশটা বেজে গেল । এখন সব সময়ের একটা কাজের লোক বহাল আছে।তার ভরসাতেই আমায় রেখে গেছে । চিন্তার কিছু নেই, তবু ও ওরা চিন্তা করে । সত্যি তো বিশাখাপত্তনমে যখন ওদের ছেড়ে থাকতে পারি,তখন এতো চিন্তার কি আছে! ভাবতে ভাবতে ই কানে এলো বেল্ বাজার শব্দ। সঙ্গে সূচির গলা । –ও দাদু, তোমার হয়েছে?চলো। দেখলাম সূচি একা না,সঙ্গে ওর দিদি ও আছে । মেসোমশাই, ট্যাক্সি ডাকুম ?—–ওর দিদি বলল। ওর কথা শুনে বুঝলাম কাল যে আমি, “এক পা ও হাঁটতে পারবো না “বলেছিলাম তাই ট্যাক্সি ডাকার কথা বলছে । আমি বললাম—-বারুইপুর যেতে ট্যাক্সি তে কতো টাকা লাগবে তা জানিস?কম করে চার শো টাকা তো লাগবে ই। ট্যাক্সি লাগবে না । আমি ট্রেন এ করে যাবো। সূচি বললো—-স্টেশন থেকে বাড়ি তো অনেক দূর । আমি বললাম—-চল তো। তখন রিক্সা নিয়ে চলে যাবো। সূচি র দিদি বললো—ঠিক আছে । তোমার কষ্ট না হলে ই হলো । এই পঁচাত্তরের আমি ও ট্রেন এ,বাস এ চলাফেরা করি। সূচি আমায় দাদু শুধু বলেই না ভালো ও বাসে আমাকে । ট্রেন যতো এগিয়ে চলেছে, সূচির মুখের রং ফিরছে। ভাবলাম ছেলে টাকে রাজী করাতেই হবে । যেমন টা ওর অপারেশন এর সময় ওর মাকে দিয়ে বন্ড এ সই করিয়ে ছিলাম । তখন দশ বছর বয়স হবে সূচি র। সূচির সে সময়ে এখন তখন অবস্থা । ডাক্তার বললেন এখুনি অপারেশন করতে হবে । কিন্তু সূচির বাবা কিছু তেই সই করবে না । ওর মা ই বুড়ো আঙুলের ছাপ দিয়ে দিল । বেঁচে গেল মেয়েটা। ওর বাবার গোঁয়ার্তুমি দেখে সূচির মা আমার কাছে এসে কান্নাকাটি শুরু না করলে আজ আর সূচি বেঁচে থাকতো না । সাতদিন আগেই ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে । হঠাৎ ওর মা ছুটে এসে বলল—দাদা মাইয়াটারে বাঁচান ।
–কি হয়েছে?
–ডাক্তার কইছে অপারেশন করতে হইব। শুনেই দশ হাজার টাকা দিয়ে দিলাম । তার পর হসপিটাল গিয়ে দেখলাম ওর বাবা ঘাড় গুঁজে বসে আছে । সুচির মাকে নিয়ে ডাক্তার এর কাছে ছুটলাম । আমাকে দেখে তিনি বললেন-।
—এঁরা তো পেশেন্ট কে মেরে ফেলবে । সই দিতে বলছি কিছু তেই সই করবে না । নিয়ম মতো কাজ করতে হবে তো । আমি বললাম—ডাক্তার বাবু, ওর মায়ের টিপ্ সই নিয়ে নিন ।
–যান, তাড়াতাড়ি সই দিয়ে দিন। ভাগ্য ভালো সূচির মা আপত্তি করেনি । বেলা বারোটা বেজে গেল ঘরে পৌঁছাতে । টিনের ছাউনি দেয়া বেড়ার ঘর । দুখানা ঘর,তাতে লোকের কমতি নেই । ওরা আমায় ভগবান দেখার মতো দেখছে । সুচির বাবা মায়ের চিন্তিত মুখ দেখে বললাম। —চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে । তবে আমি যখন কথা বলবো তোমরা কথা বলবে না । তাহলে কিন্তু আমি এর মধ্যে থাকবো না । সূচি র বাবা সংগে সঙ্গে সঙ্গেই বললো ।
—,,না না দাদা । আপনে কথা কইবেন। আমরা কমু না। বললাম—–তাহলে ছেলে কে ডেকে পাঠাও। আমার দুপুরে ভাত ঘুমের অভ্যাস । সেকথা ওরা জানতো। সূচি র মা একখানা ভালো চাদর পেতে দিয়েছিল । সাদামাটা ঘরের হাল হলেও সেরা বালিশ, সেরা তোষক যুগিয়েছে তা বিছানার নরম ভাব দেখে ই বুঝেছি । কাচা চাদরে,নরম বিছানায় বেশ আরাম করে ই ঘুমিয়েছি। ঘুম ভাঙল সূচির ডাকে । –ও দাদু,দাদু। –কি রে এসে গেছে? –হ্যাঁ ।পাশের ঘরে বসে আছে । সূচি র গালে লালের ছোঁওয়া । পাশের ঘরে গিয়ে দেখলাম, মাটিতে একখানা মাদুর বিছানো। তাতে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে ছেলেটি। গরণ টা নজরে পড়ার মতো । যেমন টা শুনেছিলাম তেমন মনে হলো না ওর হাবেভাবে । বেশ একটু গদগদ ভাবে হলেও তীরের ফলার মতো অহমিকার ঝলক দেখলাম ওর চোখে মুখে । বহু দিন নিচে বসার অভ্যাস নেই, তবু ও পা মুড়ে বসে পড়লাম । ওরই মুখোমুখি । কিছু না থেকে ও ওর ঐ অহং ভাবটা আমার ভালো লাগল । সূচির বাবার দিকে চেয়ে বললাম ।
—তোমার কি ইচ্ছে আমি ওর সাথে কথা বলি?
–হ্যাঁ দাদা, বলেন।
–শর্ত মনে আছে তো?
–হ্ হ্ । কেউ কথা কমু না। এই তরা কেউ কথা কবি না। যা কওনের দাদা কইব। ছেলে কে বললাম–শোন,তোমাদের ধারণা শুধু মেয়ে কে যাচাই করে দেখতে হয়। আমি কিন্তু তোমাকে যাচাই করে দেখবো। তুমি সুচির যোগ্য কিনা । যা বলবো তার ঠিক ঠিক উত্তর দেবে । দেবে তো?
—হ,দিমু।
মাথা উঁচু করে বললো সে ।
—কতদূর পড়াশুনা করেছ?
–ক্লাস এইট। কোথায় থেকে পড়াশুনা করতে?
–বাংলাদেশের ঢাকা জিলায় ।
—-বাংলাদেশ? তাহলে তো আমাদের ক্লাস ওয়ান ।আমার এক শ্যালক বাংলাদেশ থেকে এম,এ পাশ করে এসেছিল প্রায় কুড়ি বছর আগে । এদেশে চাকরি পায় নি । বলে আমি নিজের রসিকতায় নিজেই দমফাটা হাসি হাসতে লাগলাম । মনে ভাবলাম যাক্ আমাদের সুচির থেকে শিক্ষিত বর জুটছে । স্কুলে ও যায় নি সূচি ।
—দাদু, আমি কিন্তু চাকরি পাইছিলাম । চমকে তাকালাম ওর দিকে । আমার শালার কথা বলেছি তাই শোনাচ্ছে। বললাম—,চাকরি করতে? কিসের চাকরি? – –ইলেট্রিক্যল। সাড়াই এর কাজ। —মোটর সারাতে জানো? —হ,সারাই করি। অখন আর চাকরি করি না। নিজের দুকান দিছি । ভাবলাম, কপালটা মন্দ নয় সূচি র । সূচি ও সেলাই করে আয় করে । দুজনে র আয়েতে ভালো ই চলে যাবে । বিশাখাপত্তনম থেকে ফিরে এসে সূচি টেইলারিং শিখে নিয়েছে । সূচির মা তখন থেকে ই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মেয়ের বিয়ে দিতে । হঠাৎ মনে হলো হবু বর আমায় কিছু বলতে চাইছে। —একটা কথা কমু দাদু? —–বলো। —একটা জমি কেননের লোইগ্যা আমি পঁয়ষট্টি হাজার টাকা আগাম দিছি। অখন জমির মালিক তাগাদা দিতাছে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা দিয়া জমিটা রেজিস্ট্রি কইরা লইতে । —পঁয়ষট্টি হাজার টাকা কে দিয়ে ছিল? —আমার মায় দিছিল। —তাহলে বাকি টা মায়ের থেকে নিয়ে নাও। —মা বাড়ি বানানের লোইগ্যা এক লাখ টাকা দাদারে দিছিল । দাদা আমাগো ঠকাইয়া ঐবাড়ি নিজের নামে কইরা লইছে। –কিন্তু বিয়ের আগে তোমাকে কি করে বিশ্বাস করে টাকা দেবে?তুমি যদি তোমার দাদার মতো করো। —আমারে পুরাপুরি বিশ্বাস করতে পারেন । সূচি র বাবায় যদি পঁয়তিরিশ হাজার টাকা দিয়া দেয় । তাইলে জমি টা রেজিস্ট্রি হইয়া যায় । —বিয়ে নাহলে কি করে সূচির নামে বাড়ি হবে! ———আমার নামে ই হইব।জামাইয়েরে কি আপনারা টাকা দিবেন না? —তার মানে তুমি পণ চাইছো?এর শাস্তি কি তুমি জানো? —পণ না দাদু, সূচির বাবায় আমারে বাড়ির টাকা দিবে কইরা কইছিল ।আমার খুব দরকার টাকা টার।জমির মালিক কইতাছে যদি সূচি র বাবায় পড়ে টাকা না দেয়? —বুঝেছি, কথা টা তোমার । —না না আমার না। – –শোন,বিয়ে পাকা হলো । টাকা ও পাবে। তবে সূচি কে বিয়ে করার পর । রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হবে । —–তবে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে । তাছাড়া মায়ের আর আমার নামে লেখা আছে । – ——–গরু, ভেড়া যার নাম থাকে থাক। দলিলে সূচির নাম থাকবে । —আমার নাম থাকলেও যা সূচির নামে থাকলেও তা । —না ।এক না।প্রতিটা মেয়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার । সেই জন্য তোমার মায়ের নাম টা ও থাকা দরকার । তোমার নাম রাখতে হবে না। —কি করে এক সাথে হবে? —তুমি চিন্তা করো না । আমি ই ব্যবস্থা করবো । তোমার মাকে রেজিস্ট্রি র দিন নিয়ে আসবে ।
স্থির হল রেজিস্ট্রেশন বিয়ে হবে। যথা সময়ে হাজির হলাম ওদের বাড়িতে । ওখানে গিয়ে দেখলাম কেউই তৈরি হয়নি । এরই মধ্যে সূচি র মা মিষ্টি নিয়ে এলো । –দাদা খান। রাগ হয়ে গেল আমার ওদের ঐ দীর্ঘসূত্রতাূ দেখে । রাগেবললাম—কি,করছো বলোতো দশটা বাজে, আধঘণ্টা র মধ্যে পৌঁছতে হবে । সে তুমি সায়া পড়ো না পড়ো, ব্লাউজ পড়ো না পড়ো, রেজিস্ট্রার এর কাছে আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছতে হবে । এ কথায় কাজ হলো । ঠিক সময়ে পৌঁছালাম আমরা ।যথা সময়ে সই সাবুদ করে টাকা দেওয়া হলো । সূচির আর ওর শাশুড়ির নামে জমি রেজিস্ট্রি করা হলো ।ম্যারেজ রেজিস্টার বর আর কনের সই নিলেন । সাক্ষী সমেত মালা বদল,সিঁদূর দান হলো । ম্যারেজ রেজিস্টার সূচি দের পাড়ার । বললেন, —-আপনি তো অলৌকিক কাজ করলেন ।আমাদের ঐ কলোনিতে এতো দিন বিয়ে মানে কালিঘাটে সিঁদূর পড়ে আসা। এই প্রথম রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হলো । রেজিস্টার বললেন—-এই যে বর বাবা জী,সাবধান বৌয়ের সাথে এদিক ওদিক হলে-এক্কে বারে “হাত কড়া” পড়বে ।