Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাউলের পরাণকথা || Manisha Palmal

বাউলের পরাণকথা || Manisha Palmal

মনভাসির টানে চলেছি বিষ্ণুপুর,,,,,,মন্দিরনগরী,,, ছোট্টবেলা থেকেই পতিঘাতিনীসতী চন্দ্রপ্রভা, লালবাঈ,দলমাদলকামান,মদনমোহনের মাহাত্ম্য বড্ড মন টানতো॥
গোদাপিয়াশাল পেরোতেই হঠাৎ কানে এলো একতারার টুংটাং ওসাথে মিশলো দেহতত্ত্বের গানের কলি,,,,”একূল আর ওকূল,হারালি দু কূল, কবে ফুটিবে মন তোর বিয়ার ফুল”॥চমকে উঠলাম!
এই গান আমি ছোটো বেলায় অনেকবার শুনেছি॥
এদিকার বাউল,,বৈষ্ণবরা এই গানটি খুবই গান॥
কৌতূহলী হয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম গায়ক কে॥
এক মধ্যবয়স্ক বাউল!পরণে গিরিমাটি ছোপানো মোটা ধুতিও ফতুয়া॥ মাথায় গেরুয়া পাগড়ী,হাতে একতারা॥ কাঁচাপাকা দাড়ির জঙ্গলের মাঝে মিষ্টি হাসির ঝিলিক॥চোখ দুটোতে কি নিবিড় প্রশান্তি
মাখানো॥
অত ভীড়ের মাঝেও কেমন আত্মস্থ হয়ে গেয়ে চলেছেন॥ কি যে আর্তি বলে বোঝাতে পারবো না॥
গানশেষে সবার কাছে যখন দক্ষিণা নিচ্ছিলো তখনও কি নম্রতা,,,,,,একতারার খোলে পয়সা শুদ্ধ
হাতটা কপালে ঠেকিয়ে ”নম নারায়নায়”বলে প্রণাম করলো॥ বিষ্ণুপুর স্টেশনে নাবলাম!দেখলাম বাউলও নেমেছে॥স্টেশন চত্ত্বরে আসর বসানোর তোড়জোড় করছে জাঁকিয়ে॥ গিয়ে আলাপ জমালাম,,,,,,নাম নন্দবাউল,,,বাড়ি,,পঞ্চাননতলায়! মজা করে বললাম”তুমি তো ঠাকুরের ওঠাকুর গো!” একমুখ হেসে মধুঝরা কণ্ঠে বললো”,,,,কি করিদিদিমণি, ঠাকুরের দেওয়া নাম, বদলাতে তো পারবনি॥”
কি মিষ্টি গলার স্বর! বললাম,,,,,গান শোনাও তো”,
ও বললো,,,,”দিদিমণি,দেহতত্ত্ব তো কেউ শুনতে চায় না গো॥ চটুল গান শুনতে চায়!” ”শোনাও না, দেখো শ্রোতারা খুশিই হবে”,,,,,,,!
তবে শোনো বলেই বাউল ধরলো ,,,,,মানুষ হইয়া জনম লইয়া মানুষের করলাম কি,,,,,,,
রইলো রে তোর সাধের ঘরবাড়ি,,,,,
এদেহ পচা দেহ গৌরব কিসের ভাই,,,,,
এবার শুরু করলো সেই চির পরিচিত গান,,,,”মিলন হবে কত দিনে,আমার মনের মানুষেরও সনে,,,,,,”
সত্যি ওর কণ্ঠের আর্তি যেন সত্যিই ওর মনের মানুষের কানে পৌঁছাবে॥নিজেকে ভুলে গানে ডুবে ছিলাম!চমক ভাঙলো যখন দেখলাম স্টেশন চত্ত্বরে ভীড় হালকা হয়ে গেছে॥এবার তো উঠতে হবে! বাউলের সঙ্গ ধরলাম॥আমার গন্তব্যের রাস্তায়ই বাউলের আস্তানা॥ তাই একসঙ্গে চললাম॥ওর সাথে আলাপচারিতায় আরও ঘনিষ্ঠ হলাম॥
ও ওর বাউল হবার কাহিনী শুরু করলো,,,,,,সাধারণ চাষী ঘরের ছেলে নন্দ অসাধারণ সুকণ্ঠের অধিকারী॥ফলে দাদু ও বাবাওকে চাষের কাজে না লাগিয়ে বৈষ্ণব পদাবলীও কীর্তন শেখার জন্য এক
গোঁসাই এর কাছে পাঠান॥ সেখানেই আনন্দীর সাথে নন্দর দেখা॥প্রথম দর্শনেই নন্দ নিজেকে হারিয়ে ফেলে,,,,আনন্দীর অপূর্ব কণ্ঠের পদাবলী কীর্তনে মোহিত হয় নন্দ॥ নিজেকে ভুলে বৈষ্ণব হয়ে আনন্দীর সাথে,,”কণ্ঠীবদল” করে বাউল হয় সে॥
বাড়ির লোকজন দের সংস্রব ছেড়ে অজানায় পাড়ি দেয় দুজনে॥ দেখতে দেখতে দণ্ডপলের হিসেবে কেটে গেছে প্রায় পনেরো বছর॥ গত বছর ঊজ্জ্বয়িণীর কুম্ভ মেলায় গিয়েছিলো দুজনে॥ ফেরার পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে আন ন্দী! ডাক্তার,নন্দ সবার সব প্রচেষ্টাকে হায়িয়ে দিয়ে আনন্দীর প্রাণপাখি অচেনায় পাড়ি জমায়॥ সেই থেকে নন্দ একা॥এই আখড়াতে সে কিছুতেই থাকতে পারেনা॥আনন্দীবিহীন আখড়া যেন তাকে
গিলতে আসে॥তাই বাউলের একতারা হাতে সে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়॥যেখান দিয়ে সে আনন্দীকে নিয়ে পরিক্রমায় গিয়েছিলো সেখান দিয়ে একা পরিক্রমা করে আনন্দীর স্মৃতিকে সাথী করে॥
এর মধ্যদিয়ে সে তার আনন্দীর সাথে মিলিত হয়!
কথা গুলো যে নিছক কথার কথা নয়,তা নন্দর মুখের দিকে তাকালে বোঝাযায়॥সৌম্যদর্শণ মানুষটির চোখে কি বিশ্বাস, কি শান্তি,কি আবেশ॥
মন ভরে গেল॥ ওরআখড়ায় পৌঁছে বাউল ডাক দিলো,,,,,”এসো সুজন, বাউলের আস্তানায় স্বাগত,,,”
উঁচুপৈঠার দোচালা মাটির ঘর! সুন্দর নিকোনো উঠোন,ঘর,বারান্দা,,,,,সব তাতেই যেন আনন্দীর স্পর্শ লেগে আছে॥ আখড়ার বাঁশের খুঁটিতে ঠেস দিয়ে বসে একমনে একতারার সুর বাঁধছে নন্দবাউল॥
আমি বেরিয়ে আসতে যাবো,,,,,,,,ওর কণ্ঠস্বর গেয়ে উঠলো,,,,,,”ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায়,
কেমনে আসে যায়?
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়?,,,,,”!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *