Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাংলা কবিতার ছন্দ || Moksuda Halim

বাংলা কবিতার ছন্দ || Moksuda Halim

বাংলা কবিতার ছন্দ

কাব্যসাহিত্যে ছন্দ সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আগে ‘মাত্রার’ ধারণা থাকা প্রয়োজন ।
মাত্রা : কাব্যে গতির সমতা রক্ষাকে “মাত্রা” বলে। মাত্রা সময় নিরূপক নির্দেশনা । কোন অক্ষরে কত সময় স্বর অবস্থান করবে , মাত্রায় তা উল্লেখ থাকে। আবৃত্তির ক্ষেত্রে মাত্রা অপরিহার্য। সময়ের পরিমাণ মাত্রা দিয়েই বোঝান হয়। সঙ্গীতে
যেমন : ধা। ধিন। ধিন। ধা। =৪ মাত্রা। তেমনি কাব্যে , ছিপ।খান। তিন।দাঁড় । তিন।জন ।মাল। লা । = ৮ মাত্রা ।
অক্ষর বলতে , আমরা একসঙ্গে কোন বর্ণে কতটা সময় অবস্থান করি—-তার উপর নির্ভর করে ধরা হয় । অক্ষর অনেকটা ইংরেজী ‘সিলেবল’য়ের মত । অক্ষর আর বর্ণ সম্পূর্ণ আলাদা । যেমন ,ক+ল+ম—–এখানে বর্ণ আছে তিনটি কিন্তু যখন শব্দটা উচ্চারণ করি তখন বলি—ক+ লম ,অর্থাৎ অক্ষর এখানে দুইটি । একটি মুক্তাক্ষর এবং অন্যটি যুক্তাক্ষর বা বদ্ধাক্ষর ।
সাধারণত কবিতা লেখা হয় পয়ারের ছন্দে । পয়ার ৮+৬ =১৪ মাত্রার দুইটি পর্ব বিশিষ্ট পদ বা চরণ । প্রতি দুই চরণে অন্ত্যমিল থাকে ।
কবিতায় ছন্দ তিন প্রকার । তাদের নাম,( ১) স্বরবৃত্ত , মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ।
স্বরবৃত্ত ছন্দে , যুক্তাক্ষর ১ মাত্রা , এবং মুক্তাক্ষরও ১ মাত্রা। যেমন , মা। কেঁ ।দে। কয়। মন। জু। লি। মোর। + ওই। তো। ক।চি।মে।য়ে। = ১৪ মাত্রা।
(২) মাত্রাবৃত্ত ছন্দে —মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা আর যুক্তাক্ষর ২মাত্রা। যেমন, “একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে , ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী !” এটা এইভাবে দেখানো হলোঃ এ।ক।টি। ক।থা।র/ দ্বি। ধা । থ।র।থ।র।চূ।ড়ে/ ভ।র। ক।রে।ছি।ল / সা।ত।টি / অ।ম।রা।ব।তি/
(৩) অক্ষরবৃত্ত ছন্দে —-মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা , যুক্তাক্ষর—শব্দের প্রথমে ও মাঝে ১ মাত্রা কিন্তু শব্দের শেষে যুক্তাক্ষর ২ মাত্রা । যেমন , হে। বং।গ/ ভান।ডা।রে।ত।ব/ বি।বি।ধ/ র।ত।ন/ ==ভান– যুক্তাক্ষর ,শব্দের প্রথমে বলে ১ মাত্রা। কিন্তু রতনের ‘তন’ শব্দের শেষে বলে –২মাত্রা ।
প্রায় সব কবিরাই স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কবিতা লেখেন। আমাদের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন ।
মাইকেল মধুসূদন “ অমিত্রাক্ষর ছন্দ” নামে একটি ছন্দ প্রবর্তন করেন । এটিও পয়ারের ছন্দ। তবে তিনি চরণের অন্ত্যমিল তুলে দিলেন । পয়ারে যেমন প্রথম চরণে এক দাঁড়ি । অর্থাৎ থামতে হবে , দ্বিতীয় চরণের শেষে ডবল দাঁড়ি । অর্থাৎ বাক্য সম্পূর্ণ হলো । দুই চরণের অন্তে মিল থাকতেই হবে । অন্ত্যমিল আর বিরামের এই বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে পূর্বে কবিরা প্রায়ই অর্থহীন গোঁজামিলের আশ্রয় নিতেন । যেমন ,
“ লাখে লাখে মরে সৈন্য কাতারে কাতার ।
শুমার করিয়া দেখে চল্লিশ হাজার ।।“
মধুসূদন “মেঘনাদ বধ” মহাকাব্য রচনা করতে গিয়ে প্রতি চরণের অন্ত্যমিলের এই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে অমিত্রছন্দ প্রয়োগ করেন । যেমন ,
“ সম্মুখ সমরে পড়ি/ বীর চূড়ামণি /
বীরবাহু , চলি যবে গেলা যমপুরে
অকালে । কহ হে দেবী অমৃত ভাষিণী ,
কোন বীরবরে বরি সেনাপতি পদে
পাঠাইলা রণে পুনঃ , রক্ষকূলনিধি
রাঘবারি ?”
কবির মতে– প্রতি লাইন বা চরণের শেষে আমি থামবো না , থামবো আমার কথা বা ভাব শেষ হবে , তারপরে । মহাকাব্যের বিস্তৃত পটভূমি আর যুদ্ধের বিশালতা কোন বাঁধনে বাঁধা যায় না । এর ভাবকে উত্তাল নদীর স্রোতের মতোই প্রবাহিত হতে দিতে হয় । তিনি চরণের শেষ থেকে মিত্রতা তুলেদিলেন , যতিপাত ঘটালেন ভাব শেষ হওয়ার পর চরণের শুরুতেই বা মাঝে । ফলে বাংলা কাব্যসাহিত্যে শুরু হলো বাঁধভাঙ্গা স্রোতের অবাধ প্রবাহমানতা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress