Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বহ্নি পতঙ্গ – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 10

বহ্নি পতঙ্গ – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

রতিকান্ত ঘরে প্রবেশ করিয়া বলিল‌, ‘এই মাত্র কেমিক্যাল অ্যানালিসিসের রিপোর্ট দিয়ে গেল। ওষুধে বিষ পাওয়া যায়নি।’

আমরা হয় করিয়া চাহিয়া রহিলাম। লিভারের ভায়ালে কিউরারি পাওয়া যাইবে এ বিষয়ে আমরা এতাই নিশ্চিন্তু ছিলাম যে কথাটা হঠাৎ বোধগম্য হইল না।

‘বিষ পাওয়া যায়নি?’

‘না। এই দেখুন রিপোর্ট।’ রতিকান্ত ব্যোমকেশের হাতে এক টুকরা কাগজ দিল।

রিপোর্টে কোন বিষের নামগন্ধ নাই‌, নিতান্ত সহজ স্বাভাবিক লিভারের আরক। ব্যোমকেশ কুঞ্চিতচক্ষে পাণ্ডেজি ও রতিকান্তের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিল।

‘ভারি আশ্চর্য।’

রতিকান্ত একবার গলা ঝাড়া দিয়া বলিল‌, ‘ব্যোমকেশবাবু্‌, এ থেকে আপনার কি মনে হয়?’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘আগে আপনি বলুন আপনার কি মনে হয়?’

বোধ হইল রতিকান্ত মনে মনে খুশি হইয়াছে। সে একটি চেয়ারের কিনারায় বসিল‌, কিছুক্ষণ একাগ্রভাবে একদিকে চাহিয়া রহিল, তারপর ধীরে ধীরে বলিল, ‘দীপনারায়ণজি কিউরারি বিষে মারা গেছেন তাতে সন্দেহ নেই। পোস্ট-মর্টেমে বিষ পাওয়া গেছে। তাঁর শরীরে বিষ প্রবেশ করল। কি করে? ইনজেকশন ছাড়া অন্য উপায়ে প্রবেশ করতে পারে না। অথচ যে ভায়াল থেকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল তাতে বিষ পাওয়া গেল না–’ রীতিকান্ত একটু ইতস্তত করিল–’এ থেকে একমাত্র অনুমান করা যায়‌, ডাক্তার পালিত যে ভায়াল থেকে ইনজেকশন দিয়েছিলেন সে ভায়াল আমাদের দেননি‌, অন্য ভায়াল দিয়েছিলেন।’

পাণ্ডেজি বলিলেন‌, ‘কিন্তু কেন? তাতে ওঁর লাভ কি?’

রতিকান্ত একটু উদ্বিগ্নভাবে বলিল‌, ‘লাভ এই হতে পারে যে‌, আমরা মনে করব ইনজেকশনের জন্য মৃত্যু হয়নি।’

‘ডাক্তার ছাড়া আর কেউ হতে পারে না কি? দীপনারায়ণের মৃত্যুর পর ঘরে অনেক লোক এসেছিল‌, গোলমালের মধ্যে হয়তো কেউ ভায়ালটা সরিয়েছে।’

‘অসম্ভব নয়‌, কিন্তু–’

ব্যোমকেশ আস্তে আস্তে বলিল‌, ‘আপনি মনে করেন ডাক্তার পালিতাই প্রকৃত অপরাধী?

রতিকান্ত একটু চুপ করিয়া রহিল‌, তারপর বলিল‌, ‘আজ থানায় আপনি ডাক্তার পালিত সম্বন্ধে যে ইঙ্গিত করলেন সেটা আমার মাথায় ঘুরছিল‌, তারপর অ্যানালিসিসের রিপোর্ট পেয়ে মনে হল ডাক্তার পালিত যদি নির্দোষ হন তবে সিধা পথে চলছেন না কেন? এ অবস্থায় তাঁর ওপর সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। অবশ্য দীপনারায়ণজির মৃত্যুতে ওঁর ব্যক্তিগত কোনও লাভ নেই। কিন্তু যাদের লাভ আছে তারা ওঁকে টাকা খাইয়ে নিজেদের কাজ উদ্ধার করিয়ে নিতে পারে। হয়তো ওঁকে পঞ্চাশ হাজার কি এক লাখ টাকা খাইয়েছে। টাকার জন্যে মানুষ কি না করে।’

ব্যোমকেশ ধীরে ধীরে ঘাড় নাড়িল‌, ‘ঠিক কথা‌, টাকার জন্যে মানুষ কি না করে। ডাক্তার পালিত যদি টাকা খেয়ে একাজ করে থাকেন তাহলে শুধু ডাক্তার পালিতকে ধরলেই চলবে না‌, যে টাকা খাইয়েছে তাকেও ধরতে হবে। কে তাঁকে টাকা খাইয়েছে আপনি কিছু আন্দাজ করেছেন?’

আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় দেবানারায়ণ ছাড়া আর কে হতে পারে।’

‘আপাতত তাই মনে হয় বটে‌, কিন্তু প্রমাণ কৈ? প্রমাণ কিছু পাওয়া গেছে কি?’

‘প্রমাণ এখনও কিছু পাওয়া যায়নি।’

রতিকান্ত পাণ্ডেজির দিকে তাকাইয়া বলিল‌, ‘আজ রাত্রি একটার ট্রেনে আমি বক্সার যাচ্ছি। কয়েদীটোকে জেরা করে যদি জানতে পারা যায় যে ডাক্তার পালিত কিউরারি কিনেছেন—’

পাণ্ডেজি বলিলেন‌, ‘তাহলে অনেকটা সুরাহা হতে পারে। তুমি ফিরবে। কবে?’

‘কাল সন্ধ্যে নাগাদ ফিরতে পারব বোধহয়।–সাব-ইন্সপেক্টর তিওয়ারীকে থানার চার্জে রেখে যাচ্ছি।’

‘বেশ।–এদিকের কি ব্যবস্থা করলে?’

‘দীপনারায়ণজির বাড়িতে একজন হেড কনস্টেবলের অধীনে চারজন কনস্টেবল বসিয়ে যাচ্ছি‌, তারা চব্বিশ ঘণ্টা পাহারায় থাকবে। আপনি তো মিস মান্নাকে শকুন্তলা দেবীর কাছে রাত্রে থাকতে বলে এসেছেন।’

পাণ্ডেজি বলিলেন‌, ‘হ্যাঁ‌, মিস মান্না এখন কিছুদিন শকুন্তলার কাছেই থাকবেন। তুমি তো শুনেছি শকুন্তলা অন্তঃস্বত্ত্বা।’

কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া রতিকান্ত ঈষৎ গাঢ়স্বরে বলিল‌, ‘শুনেছি। দীপনারায়ণজি সন্তানের জন্যে বড় ব্যাকুল হয়েছিলেন। তিনি দেখে যেতে পেলেন না।’

ঘড়িতে ঠং ঠেং করিয়া আটটা বাজিল। রতিকান্ত উঠিয়া পড়িল‌, ‘যাই‌, আমাকে আবার তৈরি হতে হবে। আপনারা এদিকে একটু নজর রাখবেন।’ হাসিমুখে স্যালুট করিয়া রতিকান্ত চলিয়া গেল।

দেখিলাম রতিকান্তের ব্যবহার এবেলা অনেকটা সহজ ও স্বাভাবিক হইয়াছে। সে প্রথমটা একটু আড়ষ্ট হইয়াছিল। তাহার এলাকার মধ্যে ব্যোমকেশের আবির্ভাব মনে মনে পছন্দ করে নাই; এখন বোধহয় সে বুঝিয়াছে ব্যোমকেশ তাহার কৃতিত্বে ভাগ বসাইতে চায় না‌, তাই নিশ্চিন্ত হইয়াছে।

ব্যোমকেশ কিছুক্ষণ চক্ষু মুদিয়া বসিয়া রহিল‌, তারপর বলিল‌, ‘সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার পালিতের ব্যবহারে সঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনিই প্রথম বলেছিলেন‌, মৃত্যুর কারণ কিউরারি এবং তাঁর ইনজেকশনের ফলেই মৃত্যু হয়েছে। তবে আবার তিনি ওষুধের ভয়াল বদলে দিলেন কেন? ব্যোমকেশ আবার চক্ষু মুদিত করিল।

বাহিরে মোটরের শব্দ‌, হইল। ভূত্য আসিয়া বলিল‌, ডাক্তার পালিত আসিয়াছেন। ব্যোমকেশের চট্‌ করিয়া সমাধিভঙ্গ হইল‌, সে মৃদুকণ্ঠে পাণ্ডেজিকে বলিল‌, ‘ডাক্তারকে এসব বলে কোজ নেই।’

ডাক্তার পালিত আসিলে পাণ্ডেজি তাঁহাকে সমুচিত শিষ্টতা সহকারে বসাইলেন।

ডাক্তার ক্লান্তভাবে বলিলেন, ‘প্রাণে শান্তি নেই, পাণ্ডেজি। ডিসপেনসারি বন্ধ করবার পর ভাবলাম খোঁজ নিয়ে যাই যদি কিছু খবর থাকে।’

পাণ্ডেজি ব্যোমকেশের পানে কটাক্ষপাত করিলেন। ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘খবর তো আমরাও খুঁজে বেড়াচ্ছি‌, ডাক্তারবাবু্‌, কিন্তু পাচ্ছি কৈ? আপনি শকুন্তলা দেবী সম্বন্ধে যে-সব কথা বলেছিলেন তা যদি সত্য হয়—‘

ডাক্তারের মুখ একটু অপ্রসন্ন হইল‌, ‘সত্যি কিনা অন্য যে-কোেনও ডাক্তার শকুন্তলাকে পরীক্ষা করলেই জানতে পারবেন।’

ব্যোমকেশ তাড়াতাড়ি বলিল‌, ‘না না‌, সেকথা আমি বলছি না‌, সেকথা শকুন্তলা নিজেই স্বীকার করেছেন। আমরা ভাবছি দীপনারায়ণ সিং সে সময়ে মরণাপন্ন ছিলেন–’

ডাক্তার বলিলেন‌, ‘তারও যথেষ্ট প্রমাণ আছে। তিন মাস আগে দীপনারায়ণ সিং-এর অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছিল‌, শহরের অনেক ডাক্তার তাঁকে দেখেছিলেন‌, তাঁরা বলতে পারবেন। তাছাড়া একজন নার্স তখন অষ্টপ্রহর তাঁর কাছে থাকত। সে বলতে পারবে।’

‘তাই নাকি! কি নাম নার্সের?’

‘মিস ল্যাম্বার্ট। মেডিকেল কলেজের কাছে থাকে।’

ব্যোমকেশ পাণ্ডেজিকে জিজ্ঞাসা করিল‌, ‘আপনি চেনেন?’

পাণ্ডেজি বলিলেন‌, ‘চিনি না‌, কিন্তু বাসাটা দেখেছি।’

ব্যোমকেশ কিছুক্ষণ বসিয়া বসিয়া কি ভাবিল‌, তারপর ডাক্তার পালিতের দিকে ফিরিয়া বলিল‌, ‘ডাক্তারবাবু্‌, এবার আপনাকে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি‌, কিছু মনে করবেন না। আপনি দীপনারায়ণ সিং-এর স্টেট থেকে বারো হাজার টাকা ধার নিয়েছেন কেন?

ডাক্তার পালিত আকাশ হইতে পড়িলেন‌, চক্ষু কপালে তুলিয়া কহিলেন‌, ‘টাকা ধার নিয়েছি।! সে কি‌, কে বললে আপনাকে?’

‘ম্যানেজার গঙ্গাধর বংশীর মুখে শুনলাম। তবে কি একথা সত্যি নয়?’

‘সর্বৈব মিথ্যে। বারো হাজার টাকা! গঙ্গাধর বংশী তো দেখছি সাংঘাতিক লোক। দীপনারায়ণবাবু মারা গেছেন এই ফাঁকে বারো হাজার টাকা হজম করতে চায়। দাঁড়ান ব্যাটাকে আমি দেখাচ্ছি‌, এখনি গিয়ে টুটি টিপে ধরব। আমার নামে মিথ্যে অপবাদ দেবে‌, এত বড় আস্পর্ধা।’

ডাক্তার পালিত উঠিবার উপক্রম করিতেই ব্যোমকেশ বলিল, ‘বসুন, বসুন, ম্যানেজারের সঙ্গে বোঝাপড়া পরে করবেন।–কিন্তু কিছু সত্যি যদি না থাকে একথা উঠলো কি করে?’

ডাক্তার একটু চিস্তা করিয়া বলিলেন‌, ‘কি করে উঠলো তা বুঝতে পেরেছি। হাপ্ত দুই আগে একদিন সকালে দীপনারায়ণবাবুকে ইনজেকশন দিতে গেছি‌, তিনি আমার মোটর দেখে বললেন-ডাক্তার‌, তোমার গাড়িটা ঝড়ঝড়ে হয়ে গেছে‌, ওটা বদলে ফ্যালো। আমি বললাম‌, আজকাল নতুন গাড়ি কিনতে গেলে দশ-বারো হাজার টাকা খরচ‌, অত টাকা আমি কোথায় পাব! আমি এক পয়সা বাঁচাতে পারিনি‌, যা রোজগার করি সব খেয়ে ফেলি। শূনে তিনি আর কিছু বললেন না‌, একটু হাসলেন। আমার বিশ্বাস তিনি ওই টাকাটা আমায় দেবেন ঠিক করেছিলেন‌, হয়তো ম্যানেজারকে বলেও ছিলেন। তারপর তিনি যখন হঠাৎ মারা গেলেন তখন ম্যানেজারের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল‌, বারো হাজার টাকা পকেটস্থ করার এই সুযোগ। দাঁড়ান না। আমি ওর ভুতুড়ি বার করে ছেড়ে দেব‌, আমার সঙ্গে চালাকি।’

ডাক্তার পালিত শাস্তশিষ্ট গভীর প্রকৃতির মানুষ‌, কিন্তু দেখিলাম। তিনি চটিয়া আগুন হইয়া গিয়াছেন। তাঁহাকে আর বেশিক্ষণ ধরিয়া রাখা গেল না; তিনি উঠিয়া পড়িলেন এবং আজ রাত্রেই একটা হেস্তনেস্ত করিবেন বলিয়া প্রস্থান করিলেন। ব্যোমকেশ কান পাতিয়া শুনিল‌, ডাক্তার পালিতের মোটর চলিয়া গেল। তখন সে লাফাইয়া উঠিয়া পাণ্ডেজিকে বলিল‌, চলুন‌, এখনি মিস ল্যাম্বার্টের সঙ্গে দেখা করতে হবে।’

বিস্মিত পাণ্ডেজি বলিলেন‌, ‘এখন-এই রাত্ৰে!’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘যেতে হলে আজ রাত্রেই যেতে হয়। ডাক্তার পালিত যে-রকম তাড়াতাড়ি চলে গেলেন‌, মিস ল্যাম্বার্টকে তালিম দিতে গেলেন। কিনা বুঝতে পারছি না। চলুন।’

পাণ্ডেজি বলিলেন‌, ‘চলুন।’

মিস ল্যাম্বার্ট ইঙ্গ-ভারতীয় মহিলা। বয়স হইয়াছে। তাঁহার চেহারায় ইঙ্গ ভাবই প্রবল‌, চোখ কটা‌, রঙ ফসর্ণ। কিন্তু মনটি বোধহয় ভারতীয়। ডিনারের পর পান খাইয়া ঠোঁট দু’টি লাল করিয়া বসিয়া রেডিও শুনিতেছিলেন‌, আমাদের পরিচয় পাইয়া সমাদর সহকারে ড্রয়িং রুমে বসাইলেন। ছোট্ট বাড়ির ছোট্ট ড্রয়িংরুম‌, বেশ ছিমছাম। মানুষটিও ছিমছাম। ডাক্তার পালিত এদিকে আসিয়াছিলেন বলিয়া মনে হইল না।

মিস ল্যাম্বার্ট হাসিয়া বলিলেন‌, ‘এত রাত্রে আপনাদের কি দিয়ে অতিথি সৎকার করব? পান খান।’ বলিয়া পানের বাটা আমাদের সামনে খুলিয়া ধরিলেন। আমরা পান লইলাম। পাণ্ডেজি বলিলেন‌, ‘আপনার রাত্রে কোথাও যাবার নেই তো?’

মিস ল্যাম্বার্ট বলিলেন‌, ‘না‌, আজ আমি ফ্ৰী আছি।’

পাণ্ডেজি বলিলেন‌, ‘আমরা আপনার কাছ থেকে একটা কথা জানতে এসেছি। দীপনারায়ণ সিং মারা গেছেন শুনেছেন কি?’

মিস ল্যাম্বাটের মুখ গভীর হইল‌, ‘শুনেছি। ডক্টর পালিতের হাতে এরকম ব্যাপার ঘটবে কল্পনা করাও যায় না।’

‘আপনি কার কাছে শুনলেন?’

‘ডক্টর জগন্নাথ প্রসাদের কাছে। তারপর অন্য ডক্টরদের মুখেও শুনলাম। সে স্যাড। বলুন আমি কি করতে পারি।’

পাণ্ডেজি তখন আমাদের জ্ঞাতব্য বিয়ষটি প্রাঞ্জল করিয়া বলিলেন। মিস ল্যাম্বার্ট গভীর মনোযোগের সহিত শুনিয়া দৃঢ়ভাবে মাথা নাড়িলেন‌, ‘ইমপসিবল। আমি দেড় মাস মিস্টার দীপনারায়ণের শুশ্রূষা করেছিলাম‌, তার মধ্যে কখনও দশ মিনিটের জন্যেও রুগীকে চোখের আড়াল করিনি।’

‘আপনি একাই তাঁর শুশ্রূষা করতেন?’

‘না‌, আমার একজন সহকারিণী ছিলেন-মিস দস্তুর। তিনি দিনের বেলা থাকতেন‌, আর রাত্ৰিতে আমি। আমাদের অনুপস্থিতি কালে কাউকে রুগীর কাছে যেতে দেওয়া হত না‌, এমন কি ঝি চাকরকে পর্যন্ত না।’

‘হুঁ। কবে থেকে কবে পর্যন্ত আপনারা শুশ্রূষা করেছিলেন?’

‘এক মিনিট‌, আমার ডায়েরি আপনাকে দেখাচ্ছি।’

মিস ল্যাম্বার্ট পাশের ঘর হইতে ডায়েরি আনিয়া পাণ্ডেজির হাতে দিলেন। ডায়েরিতে দিনের পর দিন মিস ল্যাম্বার্টের কর্মসূচী লিপিবদ্ধ হইয়াছে। যে দেড় মাস দীপনারায়ণ সিং-এর জীবন লইয়া যমে মানুষে টানাটানি চলিয়াছিল তাহার ব্বিরণ রহিয়াছে।

রোগীর অবস্থার বর্ণনা পড়িয়া সন্দেহ থাকে না যে ওই দেড় মাস অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন ছিল। তাঁহার জীবন-শক্তি এতাই হ্রাস হইয়াছিল যে বিছানায় উঠিয়া বসিবার শক্তি তাঁহার ছিল না। তারিখ মিলাইয়া দেখা গেল‌, মিস ল্যাম্বার্টের শুশ্রূষার কোল চার মাস আগে আরম্ভ হইয়া আজ হইতে আড়াই মাস আগে শেষ হইয়াছে। তার পরেও দীপনারায়ণ সিং অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু জীবনের আশঙ্কা তখন আর ছিল না।

ডায়েরি মিস ল্যাম্বার্টকে ফেরত দিয়া এবং তাঁহাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইয়া আমরা বিদায় লইলাম।

রাত্রি সাড়ে ন’টা বাজিয়া গিয়াছে। বাজারের দোকানপাট বন্ধ। আজ বাড়ি ফিরিয়া সত্যবতীর কাছে বকুনি খাইতে হইবে ভাবিতে ভাবিতে বাড়ি ফিরিলাম। পাণ্ডেজি আমাদের নামাইয়া দিয়া গেলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *