বসন্ত প্রেম
আমি বাবা ও মায়ের একমাত্র মেয়ে,আর মিশুক ও বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। মিশুক ও আমার প্রায় পাঁচ বছর বিয়ে হয়েছে। অবশ্যই রীতিমত সম্বন্ধ দেখে বিয়ে। আমাদের চার বছরে ছেলে কিংশুককে নিয়ে দুই পরিবারে সুখের পরিবার। আমরা যেখানে বেড়াতে যেতাম, দুই পরিবার একত্রে যেতাম। আমার মা একটু লাজুক প্রকৃতির ওদিকে মিশুকের বাবা শান্ত প্রকৃতির মানুষ। এইজন্য বেড়াতে গেলে আমার বাবা ও মিশুকের মা বেশ ঘুরে আনন্দে মজা করে কাটান। মিশুকের মা এতটা হৈ হুল্লোড় করতে ভালোবাসেন, মাঝে মাঝে আমি তাজ্জব হয়ে যেতাম। আর ভাবতাম কি করে এই দুষ্টু চঞ্চল শাশুড়ি মা , শ্বশুরের মতো গোবেচারা লোকের সঙ্গে এতবছর ঘর করলেন! শাশুড়ি অবশ্য শ্বশুর মশাইয়ের খুব যত্ন করেন।কথায় কথায় শ্বশুরের গুণকীর্তন করেন। আমরা দুই পরিবার এত ঘুরতে ভালোবাসি, একটা ভ্রমণ করতে করতে গেলে আরেকটার প্ল্যান করা হয়ে যায়। বসন্তের প্রাক্কালে দুই পরিবারের মন কুহু করে ডেকে ওঠে। ওই উঠলো বাই কটক যাই–
এবার নাতি বলেছে ও দাদু চলো সমদ্র দেখে আসি। তাই চটজলদি পুরীতে দুই পরিবারের আগমন। পুরীতে এসে স্নান, ছেলের ঢেউ গোণা, পুজো দিয়ে হাতে হৈ চৈ করার অনেক সময়। আমি আর মিশুক ঠিক করি বাবা ও মা দের অতীতের গল্প শুনব।মিশুক শুরু করে শ্বশুর বাবাকে দিয়ে। আচমকা এমন প্রশ্ন করে বসে , উনি লজ্জা পেয়ে যান। একটা হালকা করে ছেলেকে বকা দেন। ছেলে বলে সামান্য একটা প্রশ্ন করলাম ,তাতেও নাতির সামনে তার বাবাকে বকলে!
তখন আমার শাশুড়ি শ্বশুর মশায়কে হেসে বলেন,বলেই দাও না তোমার বসন্ত প্রেম। কি আছে,বলে ফেলো বেয়াই বেয়ানের সামনে । এটাই তো জীবনের মজা। শাশুড়ি চিৎকার করে বলেন,আরে মিশুকের বাবা বলেই দাও, তোমার অপূর্ণ বসন্ত প্রেম। উনি উঠতে গেলে আমি চেপে ধরি, বলুন না বাবা।
বাবা আবার বৌমার কথা ফেলতে পারেন না। আমার বাবা আমার মা কে বললেন যাও সবার জন্য চা নিয়ে এসো, আমরা চা খেতে খেতে দাদার অতীত শুনি।মা লবঙ্গ লতিকার মতো আমার শ্বশুরকে একটা গোপন নাম ধরে বলে,পুঁটিদা এই সব ছাড়ুন। এদের সব মাথা খারাপ আছে। আমার শাশুড়ি পুঁটিদা নাম শুনে তাজ্জব!
মা’কে বলেন এই হেমা ব্যাপারটা কি হলো।মিশুকের বাবার নাম পুঁটি তুমি কি করে জানলে! তাছাড়া এই নামটা আমি ফুলশয্যার খাটে শুনেছি।মা আমতা আমতা করে চা আনতে চলে যান।
শাশুড়ি শ্বশুরকে চেপে ধরে বলেন, তুমি ফুলশয্যার খাটে তোমার অপূর্ণ প্রেমের গল্পের নায়িকা ,এই পুঁটিদা নামে ডাকত, সেটা বলেছিলে। থমথমে পরিবেশ। সবাই চুপ। হঠাৎ আমার বাবা পরিবেশ পাল্টানোর জন্য বলে আচ্ছা দাদা , আমি তাহলে ওই পরিস্থিতির ভিলেন ছিলাম।
অবস্থা বেগতিক দেখে আমি আর মিশুক ওখান থেকে আস্তে করে উঠে যাচ্ছিলাম।
তখন আমার শ্বশুর মশায় বললেন হেমা আমার ছাত্রী ছিল। মাধ্যমিক দেবার পর আর পড়তে আসেনি। আমার প্রেম ছিল মনে। আমি পুঁটি মাছ খেতে ভালবাসতাম।তাই মাঝে মাঝেই হেমা বাড়ি থেকে পুঁটি মাছ ভাজা এনে খাওয়াত। ভেবেছিলাম হেমা আমায় ভালবাসে।যখন হেমাকে আকার ইঙ্গিতে বিয়ের প্রস্তাব দি, হেমা বলেছিল এ তোমার বসন্ত প্রেম। বসন্তের দূতের মতো আসে আবার পরবর্তী ঋতুতেই অদৃশ্য। তাছাড়া সেদিন জেনেছিলাম ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই,হেমার সামনের মাসে বিয়ে।ব্যস এখানেই প্রেমের ইতি।
মা তখন চায়ের পেয়ালা নিয়ে ঘরে ঢুকে হা হা হা করে হাসতে থাকেন।
তোরা শুনেই ছাড়লি।
আমার বাবা ও মিশুকের মা একসাথে বলে ওঠেন বাপরে বাপ, তোমরা হলে চুপ শয়তান।সব তলে তলে চলে। আমার বাবা বলেন,আমাকে আগে তো বলে নি, এমনকি মেয়ের বিয়ের পর পুঁটিদা যে চেনা,সেটা আমাকে ও মেয়েকেও বলে নি। মা হেসে বলেন কি আর বলব। তোমরা কত গল্প ভেবে বসতে। ওগুলো সব বাছুরে ভালোবাসা। এতদিন পর আমার মা’কে অনেক স্বাভাবিক লাগলো। মিশুকের বাবা ও আমার বাবা সব চুটকলি কথা ভুলে বেশ নানান গল্পে মত্ত হয়ে গেলেন। এটাই ছিল বর্তমানে জীবন।