Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বয়সের আয়না || Pallav Sanyal

বয়সের আয়না || Pallav Sanyal

ঘরের কোণে রাখা পুরোনো আয়নাটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কেমন যেন অপরিচিত লাগছে নিজেকেই। এই আয়নাই তো একসময় আমার জীবনের সাথী ছিল। দিনের পর দিন, এই আয়নার সামনেই দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখেছি। কতবার মনে হয়েছে, “এমন চেহারা, এমন সৌন্দর্য, আমাকে কে না ভালোবাসবে?” কিন্তু আজ সেই চেহারা কোথায়? সেই আত্মবিশ্বাস কোথায়?

আয়নার মধ্যের প্রতিবিম্বটা যেন আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। একসময় যে মুখটা ছিল সবার মনের আরাধ্য, আজ সেখানে বসে গেছে অসংখ্য বলিরেখার চিহ্ন। যে চোখ দুটোতে একসময় আশার আলো ঝলমল করত, আজ সেখানে জমেছে ক্লান্তির ঘন মেঘ। বয়স সত্যিই কী নির্মম!

তবুও তো জানতাম, এই দিন একদিন আসবেই। সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না। সবাই বলে, যৌবন চিরস্থায়ী নয়। তবু কেন যেন মনের ভেতর একটা মিথ্যে আশা পুষে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, “এই পরিবর্তন আমার ক্ষেত্রে হয়তো একটু ধীরে হবে।” মিথ্যার মায়ায় নিজেকে আবদ্ধ করেছিলাম।

আজ যখন আয়নায় নিজের ছায়া দেখলাম, মনে হল আমি যেন নিজেকে চিনতেই পারছি না। এই চেহারা কি সেই চেহারা, যা একসময় ছিল দীপ্তিময়? আমার সমস্ত স্বপ্ন, যা একসময় যৌবনের আলোয় আলোকিত ছিল, আজ যেন সব ভেঙে গেছে। আমার ভেতর এক ধরনের শূন্যতা বোধ করতে লাগলাম। মনে হল, আমার নিজের প্রতিচ্ছবিটাও যেন আজ আমার ওপর রাগ করেছে।

তবুও, বলিরেখাগুলো যে শুধু বয়সের চিহ্ন নয়, তা আমি অনুভব করতে পারি। প্রতিটি রেখা যেন আমার জীবনের একটি গল্প বলছে। এই রেখাগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে কত হাসি-কান্নার স্মৃতি, সুখ-দুঃখের অধ্যায়। প্রতিটি দাগ যেন আমার জীবনের সংগ্রামের সাক্ষী।

মনে পড়ছে সেই সময়ের কথা, যখন আমি জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। প্রতিটি বলিরেখা সেই দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। আমার পরিশ্রম, আমার ব্যর্থতা, আমার সফলতা—সবকিছুর ছাপ এই মুখে রয়ে গেছে।

আজ যখন আয়না আমার পরিবর্তন দেখে অভিমান করে মুখ ফিরিয়েছে, আমি তাকে নতুন চোখে দেখতে শিখিয়েছি। বলেছি, “এই বলিরেখা শুধুই বয়সের চিহ্ন নয়, এগুলো আমার জীবনের পদক। এই দাগগুলো শুধু ক্ষত নয়, এগুলো আমার অভিজ্ঞতার মানচিত্র।”

বয়স বাড়তে থাকবে। মুখের রঙ বদলাতে থাকবে। কিন্তু এই পরিবর্তনকে আমি এখন ভয় পাই না। কারণ এই পরিবর্তনের প্রতিটি চিহ্ন আমার জীবনের গল্প বলে। প্রতিটি দাগ, প্রতিটি রেখা এক জীবনের সাক্ষী।

আর তাই, আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের প্রতিচ্ছবিকে বলি, “তুমি এখনো সুন্দর। কারণ তুমি এখনো আমার অস্তিত্বের প্রতিমূর্তি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *