বন্ধু
সৌমেন আমি যাচ্ছি,তুমি তৃষার দিকে লক্ষ্য রেখো।
সোনালী তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে-?
–তুমি আমার পঞ্চাশ বছরের জন্মদিন বলেছিলে বড় করে করবে??
না গো আর পারছি না —গলায় এত যন্ত্রণা—তুমি তিন বছর ধরে চেন্নাই,কোলকাতা করলে—-কত বড় বড় ডাক্তার দেখালে—-কতবার অপারেশন হল,কেমোথেরাপি —-সবতো হলো এবার যেতে দাও।
মেয়েটা ভাগ্যিস তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেছে।ব্যাঙ্কে চাকরি ও পেয়ে গেছে।ওকে দেখো।একবার আয়নাটা দাও—সব চুল উঠে গিয়ে কেমন লাগছে দেখি—তুমি আমার রূপে পাগল হয়ে প্রায় জোর করে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলে—আজ এমন হয়েছে যমরাজের ও অপছন্দ হবে!!!
সৌমেন চুপ করে থাকে। ডাক এলে সবাইকেই যেতে হবে সোনালী।
বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ—ওই তৃষা এল বুঝি??
তৃষা ঘরে ঢোকে—মা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি—তৃষা ও সৌমেন খাবার নিয়ে দোলার ঘরে যায়—মা ঘুমিয়ে পড়লে??
মা একেবারে ঘুমের মধ্যে ,টাটা করে বহুদূরে!!
সৌমেনকে অফিস,সংসার, রান্না,তেইশ বছরের মেয়ের জেদ,বাজার,সব একার হাতে সামলাতে হচ্ছে।
মেয়ে অবশ্য বাবাকে বলে বাবা সাহায্য করি।বাবা না করে। সোনালীর বাৎসরিক করে অর্থাৎ
এক বছর হলে সৌমেন তৃষার বিয়ে দিয়ে দেবে।আত্মীয় পরিজনদের বলে রেখেছে সৌমেন,কোনো ভালো সম্বন্ধ পেলে তৃষার জন্য বলতে।দেখতে শুনতে মন্দ নয়।পড়াশোনায় ও খুব ভালো।এখন তো ব্যাঙ্কে চাকরি করে।বাঘাযতীন থেকে শ্যামনগর যেতে হয়।দূরত্বটা অনেকটা বেশী।ঐ ট্রেনে করে অফিস যেতে হয়।দুটি ট্রেন পাল্টাতে হয়।এই টুকু মেয়ে আর কত কাজ করবে।প্রায় দু বছর ধরে মাকে ভুগতে দেখেছে। মাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ওর দিকে নজর দেওয়া হয় নি।মেয়েটা একটু খিটখিটে হয়ে গেছে।অল্পতেই রেগে যাচ্ছে।
তবে এই মাস থেকে বালিগঞ্জে পোস্টিং হয়েছে।মেয়ে খুব খুশী।আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেলে।ঐ দেখে আমি ও কিছুক্ষণ কাঁদি।দুজনে হালকা হয়।
সৌমেনের ইচ্ছে যারা বেশ দূর থেকে কোলকাতায় দৈনন্দিন যাতায়াত করেএমন ভাল কোনো ছেলে পেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবে,তাহলে মেয়ে চোখের সামনে থাকবে।আমি তো আর একা থাকতে পারব না।
ঠিক দেড় বছর পরে তৃষা নিজের পছন্দমতো বাবার যেমন পাত্রের সন্ধান করছিল তেমন পাত্রকে বিবাহ করে।
সৌমেনের বাড়িতে বিয়ের পর তৃষা আর জামাই পঞ্চম থাকে।
অশোকনগরের ছেলে —ও তৃষার সঙ্গে কানাড়া ব্যাঙ্কেই কাজ করে।ছুটির দিনে দুজনেই অশোকনগরে যায়।ওই দেড়দিন সৌমেনের কষ্ট হয় একা কাটাতে।
সৌমেন এখন অফিস থেকে এসে বাড়িতে একা থাকতে পারে।সোনালী যখন থেকে অসুস্থ তখন থেকে বাইরের ,ভিতরের সব কাজ সামলাতে সামলাতে এখন সৌমেনের একা থাকতেই ইচ্ছা করে।
মেয়ের ও জামায়ের ও একা থাকা দরকার।সৌমেন সব কিছুতেই মেয়ে জামায়ের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে।সৌমেন ভাবে চাকরির বদলি নেবে।সৌমেন আগে ভাবত মেয়ে ছাড়া একা থাকব কি করে!!!
কিন্তু ভগবান সব শক্তি দিয়ে দেন।
এত দায়িত্ব সৌমেনের আর ভাল লাগছে না।সোনালী তুমি তো চলে গেলে—একটা পুরুষ মানুষের পক্ষে এত সাংসারিক কাজ করতে ভালো লাগে না।
হঠাৎ মেয়ে ,জামাই দুর্গাপুরে বদলি হয়।তৃষা জানাল বাবা তুমি চাকরি ছেড়ে আমাদের সঙ্গে যাবে?
সৌমেন বলে তোরা যা,আমি পারব থাকতে।
সৌমেন মনে মনে ভাবে এখন দেখছি *বেঁচে থাকার জন্য কিছুদিন একা থাকা দরকার।কাজ আর দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে করতে জীবনের সবে পঞ্চাশ বছর কাটলো।একা থাকলে সব এক সাথে সিদ্ধ করে খেলেই হলো।বৌটা অকালে চলে গেল।বিয়ের আগে যখন দুজনে শিবপুরে পড়তাম তখন সোনালী দু ক্লাস জুনিয়র ছিল।তখন এক মুহূর্ত ছেড়ে থাকতে পারতাম না।আজ ভগবান আমাকে অনেক সহ্যশক্তি দিয়েছেন।এখন সৌমেনকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি না ফিরলেও চলে।আগে তটস্থ থাকতে হতো তৃষা বাড়িতে এসেই বলবে বাবা পেট গুলাচ্ছে,কিছু আছে?অফিস থেকে ম্যাগি,চাউমিন,পাস্তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রান্না করে রাখতে হতো।তারপর রাতের রান্না।পরদিনের রান্না।রান্নার লোকের রান্না খেতে পারি না।নাহলে অনায়াসে ৪-৫টা কাজের লোক রাখতেই পারি।
আজকে সৌমেন অফিস থেকে এসে রান্না কি করবে ভাবছে!!
রাহাদার ফোন আসে,,আরে তাসের আসর বসে গেছে,চলে এস।সৌমেন বলে রাতের রান্না নেই,তাই করব।না না এখানেই খাবে।সৌমেন শুনতে পেল রাহাদা বৌদিকে বলছে রাধা আরো পাঁচটা রুটি বেশি করে করো।
বেশ বন্ধুদের নিয়ে সৌমেনের জীবন চলছে। কিছুটা শান্তি পেয়েছে।বন্ধু মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।এটা চিরসত্য কথা।একাকিত্ব কাটে।হৈ হৈ আনন্দ খুঁজে নেয় সৌমেন।
রাতে মেয়ে ফোন করে,কি গো বাবা ফোন করলে না আজ??
না রে মা দাবা ,তাস সব খেলায় হেরেছি তাই মন ভালো নেই।
হা হা হা বাবা তাই কাঁদছ??তুমি তো কান্না প্রতিযোগিতা হলে প্রথম হবে।বাবা বলে মশকরা করা হচ্ছে।
মেয়ে বলে তাই ফোন করো নি। দিব্যি আছো তো ।বাবা এমনি করে ভালো থেকো।তুমি ভাল থাকলেই আমরা ভাল থাকব।পারলে কদিনের জন্য দুর্গাপুরে ঘুরে যাও।সৌমেন বলে হ্যাঁ রে মা বেঁচে থাকার জন্য কিছু দরকার।।
ঠিক বলেছ বাবা,একজন মহিলা একা থাকতে পারে।কিন্তু একজন পুরুষ মানুষের থাকাটা খুব মুশকিল।কাজের লোক ,রান্নার লোক রাখার অসুবিধা।
ও বাবা শোনো না তোমার জামাই বলছে বাবার তো সবে পঞ্চাশ বিয়ে করবে কিনা জিজ্ঞেস করছে?
হুম পাকা হয়ে গেছো।সোনা জামাইকে বলিস ন্যাড়া বেলতলায় একবার ই যায়।
রাখ মা।ঘুম পাচ্ছে খুব।
হ্যাঁ বাবা শুভ রাত্রি।
সোনালী শুনতে পাচ্ছ,তোমার মেয়ের কথাবার্তা, বড্ড বড় হয়ে গেছে।বুঝদার হয়েছে।