বটবৃক্ষে তেলাপিয়া
কাল ছিল অমাবশ্যা । সন্ধ্যাভর গেল কাল বোশেখীর তান্ডব আর সারা রাত ধরে অঝোর বর্ষণ। প্রতিদিনের মত কাক ভোরে বটমূলে পূজা দিতে এসে একেবারে দোলন বৌয়ের বিস্ফারিত চোখের সামনেই ঘটে গেল এই অদ্ভুত ঘটনা। বিশাল বটের গুঁড়ি বেয়ে নেমে আসা জলের স্রোতের সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে নামছে একজোড়া ছটফটে তেলাপিয়া। চকচকে রূপালী আঁশে মোড়া ডিম ভরা হলুদ পেট, কখনো কাত, কখনো চিত, থেকে থেকে লেজ নেড়ে খেলছে তারা একেবারে দোলন বৌয়ের পায়ের কাছটিতে । কম্পিত হৃদয়ে এক স্বর্গীয় অনুভবে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে দোলন বউ। তার মনে একটা তাৎক্ষণিক বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে ওঠে, নিশ্চয়ই এই জোড়া তেলাপিয়া ঈশ্বর প্রেরিত, এবং অলৌকিক কোনো নিগূঢ় ইঙ্গিতের বাহন। সবার অলক্ষ্যে কোচরে জড়িয়ে পরম স্নেহে তাদের ঘরে নিয়ে যায় দোলন বউ।
প্রতিদিনের বাঁধা ধরা শাকান্নের পাতে আজ সযত্নে সাজানো তেলাপিয়ার ব্যাঞ্জন দেখে অবাক হয় রমেন হালদার।
-কিরে দোলন মাছ কোথা পেলি আজ?
-মাছ নয় গো, মাছ নয়! বল ঠাকুরের প্রসাদ। স্বয়ং ভগবান পাঠিয়েছেন গো!
দোলনের কাছে সব শুনে রমেন তো হেসে কুটি কুটি।
– তুই যে কী বলিস দোলন, বটগতগাছ আবার তেলাপিয়া আসে কোথা থেকে?
– বিশ্বাস হয় না বুঝি? দেখবে তো কাল এসো ভোরে আমার সাথে বটমূলে।
সপ্তাহ না ঘুরতেই একদিন দোলনবউ রমেনকে আড়ালে ডেকে বলে-
-বলেছিলামনা এই তেলাপিয়া আমার ঠাকুরের আশীর্বাদ? এই দেখ এখানে, ওরা এসে গেছে।
বলে রমেনের হাত টেনে নিয়ে নিজের তলপেটে ছোঁয়ার।
-এখানে আছে, আমি জানি।
-বলিস কী দোলন! তবে যে ডাক্তার বদ্যিরা বলে তোর ছেলেপুলে হবে না কোনদিন!
অপলক চোখে রমেন চেয়ে থকে দোলন বৌয়ের দিকে। রমেনের সহসা মনে হয় এ যেন অন্য কোন দোলন। রাতারাতি যেন বদলে গেছে দোলনের শরীরী ভূগোল। দোলনের শুভ্র স্নিগ্ধ শীর্ণ দেহটি ঘিরে রেখেছে অপূর্ব মাতৃত্বের ছায়া। এক অদ্ভূত শিহরণ নাড়া দিয়ে যায় রমেনের সমস্ত অস্তিত্ব। দোলন কি তাহলে সত্যিই মা হতে চলছে ?
সখী শোভনা সুন্দরী সেই কখন থেকে পিছু নিয়েছে। সকাল থেকে ঘুর ঘুর করছে পায়ে পায়ে । কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করে চলছে সমানে।
-লোকের মুখে কত কী শুনি। বটবৃক্ষ নাকি তোদের বর দিয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার উজার করে? আমায় বুঝি বলবিনে দোলন? প্রিয় সখীর কন্ঠে অভিমান। তারপর দোলনের শরীরের দিকে চোখ পড়তেই চোখ দুটো ছানা বড়া হয়ে যায় শোভনার। হৈ হৈ করে ওঠে সে।
-কি লো মাগী, পেট বানালি কবে? তুই না বাঁজা?
-চুপ চুপ, পোড়ারমুখী, চেঁচামেচি করিসনে, আয় বলি তোকে!
সইকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায় দোলন। বটমূলে তেলাপিয়ার আবির্ভাব থেকে পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া যাবতীয় ঘটনা আদ্যপান্ত খুলে বলে সখী শোভনাকে।
-তুই আমার প্রাণের সই। কথাটা রাষ্ট্র করিসনে ভাই! দিব্যি রইল আমার।
– যাহ্! এসব কি রাষ্ট্র করার কথা?
-ঘরে আছিস দোলন মা ?
একদিন সকালে দাওয়ায় এসে হাঁক ছাড়ে অশীতিপর বৃদ্ধা রমলা দাসী। বুড়ির নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে। নইলে এই সাত সকালে এমন সোহাগী ডাক কেন? দাওয়ায় বেরিয়ে আসে দোলন বৌ।
-রমু মাসি যে! কী মনে ক’রে? এদিকে যে বড় একটা আসোনা আজকাল?
-কোতাও কি যাতি পারি রে? বাতের ব্যথায় শরীল জরজর। হাঁটতি চলতি পারিনে। তোর কাচে কি মলম আচে দোলন? একটু মালিশ করে দিবি মা?
তো এই হলো আসল কথা। রমু মাসির জন্য দোলন বৌয়ের মনটা অসীম মমতায় ভরে ওঠে। রমলা দাসীকে একটি জল চৌকিতে বসিয়ে তার হাড্ডিসার বুকে পিঠে আর্শ্চয্য মলমের মালিশ করে দেয় বড় যতনের সাথে। আরামে চোখে বুঁজে আসে বুড়ির । দোলনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে,
-সেদিন শোভনা যে কইল তোর কাচে দেবতার বর টর কী নাকি এয়েচে। আমার বাতের ব্যাথাটা সেরে দে না মা!
-সামনের মঙ্গলবার বৈশাখী অমাবশ্যা। ভোরের বেলা বটমূলে এসো একা। দাওয়াই দেবোনে। দোলনের মুখ দিয় ফস্ করে বেরিয়ে যায় কথাগুলো কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই। রমলা দাসীর ফোকলা দাঁতের ফাঁকে চিক চিক করে প্রত্যাশার হাসি।
রমেনদের পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। শুধু আড়াই বিঘে জমি জুড়ে রয়েছে এই বিশাল বটের সুশোভন বিস্তার। আশেপাশে দু’এক চিলতে চাষের জমি, তার সাথে লাগোয়া এই এতটুকু বসত বাটি। রমেন দোলনের ছোট সংসারে অভাবের টানাপোড়েন লেগেই আছে বছর ভর। গ্রামের বিত্তবানদের নজর পড়ে আছে এই জমিটুকুর উপর। প্ররোচণা, লোভ, লালসার হাতছানি, ভয় ভীতির আষ্ফালন সবই আছে। তবুও শত অভাব অনটনেও এই আড়াই বিঘের উপর কখনো হাত দেয়নি রমেন হালদার। স্বর্গীয় পিতৃদেব বলে গেছেন, এ আমাদের সাত পুরুষের আদরে সোহাগে পালিত বট। এই প্রাচীন বটের বিশাল দেহের চড়াই উৎরাইয়ে বৃক্ষকান্ডের খানা খন্দরে ঘন ডালপালার আলো আঁধারিতে কত শত পাখ পাখালি, সাপ খোপ, কীট পতঙ্গ গড়ে রেখেছে শত বছরের নিবাস। এই বট ওদের মাতৃভূমি। বিচরণের অভয়ারণ্য। নিঃঝুম রাতের নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে এই বট রচনা করে তার নিজস্ব জীব জগতের নৈশ মেলার আসর। নিশাচর পাখিদের কলকাকলি, আর তাবৎ কীটপতঙ্গের নৈশ সঙ্গীতে মাতোয়ারা হয় এই বটের অরণ্য আর তার আশপাশ। দেশান্তরী পাখিরা কত দূরের মুলুক থেকে উড়ে আসে। বটের মগডালের চাতালে ঘন ডালপালা আর পত্রভূমির উপত্যকায় গড়ে তোলে শীতের নিবাস। এখানে জন্মায় বংশধর। ডালে ডালে লাফায় পক্ষী শিশু । ক্রমে তারা বড় হয়। শিক্ষিত হয়ে ওঠে জীবন ধারনের নানাবিধ কলাকৌশলে। তারপর গ্রীষ্মের প্রাক্কালে দল বেঁধে উড়ে যায় অন্য গন্তব্যে। শত অনটনেও যেন এই বটের গায়ে হাত দিসনি বাপ! কেড়ে নিসনি কখনো ওদের প্রাচীন নিবাস।
কেমন করে যেন আবার ঘুরতে শুরু করে রমেনদের মরচে ধরা ভাগ্যের চাকা। দোলন বৌয়ের কোল জুড়ে বসে জমজ শিশুর মেলা। হাটে বাজারে রমেনের লুঙ্গী গামছার কারবারের পালে লাগে মা লক্ষ্মীর আঁচলের হাওয়া । দু’দুটো দুধেল গাভীর সকাল বিকেল দুধের ভারে বান যেন ছিড়ে পড়ে! বাড়ির পাশের দু’ফালি জমিতে এবার দিয়েছিল মাঘী সরিষা । সেখানেও মৌসুমে বয়ে যায় সবুজ হলুদের বান। হালদার বাড়ির ভাগ্যর পালা বদলের শুভাকাঙ্খী যেমন অনেক, তেমন নিন্দুকেরও অভাব নেই কোনো। এবাড়ি ওবাড়ি কানাঘুষা। হালদার বংশের নিভে আসা প্রদীপ রমেন হালদারের কপাল ফিরেছে এও কি প্রাণে সয়! হিংসায় জ্বলে মরছে জ্ঞাতি শত্রু ভোলা বারুজ্যে। দেবতার বর টরের গল্প নাকি হালদারদের মিথ্যাচার, ভাওতাবাজী। চ্যালেঞ্জই দিয়ে বসল সে একদিন। রাজ্যোর মানুষ জড়ো করে বুক চিতিয়ে বলল,
– দেখাচ্ছি আজ হালদারের জারি জুরি।
টারজান স্টাইলে লাফিয়ে লাফিয়ে এ ঝুরি ও ঝুরি হয়ে তর তর করে উঠে গেল সে বটের উঁচু ডালে। তেলাপিয়া রহস্য অভিযানে দ্রুত অদৃশ্য হলো ঘন বটপত্রের নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে। অনেকখানি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভোলার নেমে আসর নাম নেই। সুন সান নৈঃশব্দে স্থির হয়ে আছে বটের মূলে অপেক্ষমান জনতার ভিড় । কী করছে ভোলা এতক্ষণ দুর্গম বটের গহীন গভীরে! এক ঝাঁক হারগিলে ব্যস্ত হয়ে ডানা মেলে উঠে পড়ল বটের শীর্ষ ছেড়ে । ত্রস্তে পাখা ঝাপটে উড়ে গেল তারা খাল পেরিয়ে তমালঁ বনের পাশ কাটিয়ে। উদ্বেগ উৎকন্ঠায় শিউরে উঠে মানুষ । কী হবে এখন! ঠিক তখনই, ধপাস করে বটের মূলে আছড়ে পড়ে ভোলার ভারী শরীর। মুখে ফেনা তুলে হাতে পায়ে খিচুনি দিয়ে ছটফট করতে করতে সবার চোখের সামনে ভোলার বিশাল দেহটি নিথর হয়ে যায়। এক প্রবীণ এগিয়ে এসে পরখ করে বললেন- কাল নাগিনীর কোপ । এত ঔদ্ধত্য কী দেবতার সয়? তেনাদের সাথে দাদাগিরি ? বলে তিনি চোখ মুদে জোড় হাত উপরে তোলে অদৃশ্য দেবতার উদ্দেশ্য প্রণাম জানালেন। ভোলার মরদেহের সৎকার শেষে দল বেধে শ্মশান যাত্রীরা ফিরে এলো হালদারদের বটমূলে। জল দিয়ে ফুল দিয়ে পুজো দিল প্রস্থে প্রস্থে। পূজারীরা বাড়ি বয়ে ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে গেল দোলন বৌকে। ভক্তিতে বুঁদ হয়ে বসে রইল তারা দোলন বৌয়ের পায়ের কছাটিতে। রোগ শোক বিপদ থেকো সুরক্ষা দাও মা জননী। প্রতিষ্ঠিত হলো হালদারদের বটবৃক্ষের তেলাপিয়ার মিথ।
কালে কালে পুরানো বটের প্রশস্ত কান্ডের ভিতরে ক্ষয়ে যাওয়া বিশাল গর্তে বৃষ্টির জলে সৃষ্টি হয়েছে গভীর জলাধার। সেখানে সে দেখে এসেছে তাদের। ঐ বিশাল বটের গোপন গুহায় সত্যিই গড়ে উঠেছে এক তেলাপিয়া উপনিবেশ । ঝাঁকে ঝাঁকে, ক্ষুদ্র পোনা থেকে মাঝারী, বৃহৎ এবং প্রবীণ, গুচ্ছের তেলাপিয়া সেখানে । রহস্য শুধু এটুকুই, ওখানে ঐ অত উঁচুতে গহীন বটের গহ্বরে তেলাপিয়ার আবির্ভাব হলো কেমন করে? রমেন হালদার ভেবে বের করেছে ভূমিতল থেকে বটবৃক্ষর ঐ উচ্চতায় তেলাপিয়া মাইগ্রেশনের এক সম্ভাব্য পটভূমি । হয়তো একদা কোনো তৃষ্ণার্ত কাক কিংবা বক পাখি আশেপাশের ডোবা নালায় জল পান করে উড়ে গিয়ে বসেছিল ঐ বটের ডালে। উদরে করে বয়ে এনেছিল কিছু পরিপক্ক তেলাপিয়ার ডিম। হয়তো বমনে কি মল ত্যাগে সেই ডিম ছিটকে পড়েছে বটের জলাশয়ে । তো তা থেকেই উৎপত্তি আর কালে কালে বংশ বিস্তার । বর্ষার মৌসুমে ঝড় বৃষ্টির তোড়ে বটবৃক্ষস্থ জলাশয়ে যখন বহে জলোচ্ছ্বাস, তখনই বুঝি বেপথু হয় কিছু বানভাসি তেলাপিয়া। তাদেরই দু’একটা নেমে আসে গুঁড়ি বেয়ে একেবারে বটের গোড়া পর্যন্ত । বাস্তবতার নিরিখে এটাই হতে পারে বটবৃক্ষে তেলাপিয়া অভিবাসনের সম্ভাব্য পটভূমি। কিন্তু দোলন বৌকে সে কথা বুঝায় কার সাধ্যি ? তার কাছে তো এই তেলাপিয়া প্রগাঢ় রহস্যে ঘেরা। স্বর্গবাসী দেবতার বর বিশেষ। এই তেলাপিয়াকে ঘিরে তার মনে বাসা বেধেছে এক গভীর প্রত্যাশা আর নিবিড় বিশ্বাসবোধ। তার বিশ্বাস, ভগবান না জানি তাকে কোন পুণ্যের বর দিয়েছে। এই নতুন ভাবনা দোলন বৌকে উদ্বেলিত করে রাখে অহর্নিশি। স্বর্গ প্রেরিত তেলাপিয়ায় কি আছে ধরাতলের তাবৎ দূরারোগ্য ব্যাধির উপশম? সন্তান সম্ভবা নারীর দুর্বহ প্রসব বেদনার অলৌকিক নিরাময় ? মানব জাতির কোন দুর্বিনীত সমস্যার স্বর্গীয় সমাধান?
সেই থেকে বড় রহস্য-ঘেরা হয়ে রইল এই বটবৃক্ষ আর তার গর্ভোৎসারিত ঐশ্বরিক তেলাপিয়া! সেই থেকে ফি বছর বৈশাখী অমাবশ্যার ভোরে হলদারদের বটমূলে নামে হাজার মানুষের ঢল। উৎসব মুখর হয়ে উঠে শ্রীধরপুর গ্রাম। বট অরণ্যের চারপাশ ঘিরে রাতারাতি গড়ে ওঠে শতেক দোকান পাট। বায়োস্কোপ, সার্কাস, পুতুল নাচ, মন্ডা মিঠাইয়েল মেলা জমাট বেঁধে থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। দূর দূরান্ত থেকে ছুঠে আসে মানুষ। অসুস্থরা আসে দুরারোগ্য ব্যাধির উপশম কামনায়। নিঃসন্তান রমণীরা গোপনে ব্যাক্ত করে সন্তানবতী হাওয়ার আকুল বাসনা। এমনি আরও কত মানুষ মনের গভীরে লুক্কায়িত কামনায় বটমূলে উপবিষ্ট ধ্যানগম্ভীর দোলন বৌয়ের হাতের এক লহমা তেলাপিয়া অন্ন মুখে পুরে ফিরে যায় পর্বত প্রত্যাশা বুকে নিয়ে। কেউ কিছু ফল পায় কেউ পায় না । যাদের হয় তারা সেই অলৌকিক নিরাময়ের কথা ছড়িয়ে দেয় দূর থেকে দূরান্তরে । যাদের হয় না তাদের খবর কেই বা রাখে।
দিন মাস বছর ঘুরে ফিরে আসে। দোলন বৌয়ের বিশ্বাস আরও ঘনীভূত হয়, তার হাতে দেবতারা গচ্ছিত রেখেছেন মানুষের মঙ্গল । অঝোর বর্ষণের রাতে স্বর্গরাজ্যোর কোন অজানা বহতা নদীর তীর্থ ছেড়ে ঘন বটের বন পেড়িয়ে ভূতলে নেমে আসে যে আত্মত্যাগী তেলাপিয়া, তারাই সেই মঙ্গলের বাহন। দোলন বৌয়ের গভীর প্রত্যয় দিনমান তার শুভ্র অবয়বে মেখে রাখে স্বর্গীয় আবীরের ছটা। রমেন সারাদিন ভাবে। ভেবে ভেবে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কীভাবে কী হয় রমেন সেসব বুঝে না। হয়তো মানুষের মনস্তত্ব, বিশ্বাস, আর আস্থার সাথে নিবিড় কোন যোগাযোগ আছে তার শারীরিক রসায়নের। রোগ ব্যাধি সুখ দুঃখ হতাশা বিষাদ তৃপ্তি অবসাদ সবই বুঝি সেই শারীরিক রসায়ন নিয়ন্ত্রিত অবস্থা বিশেষ। বটবৃক্ষের তেলাপিয়ার উৎস রহস্য তো রমেন হালদারের অজানা নয়। তবু যেন দোলন বৌয়ের প্রগাঢ় বিশ্বাসকে গুঁড়িয়ে দিতে মন চায় না তার । নিশিদিন ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে সে। দোলনের অলৌকিক তেলাপিয়াদের অমঙ্গল চিন্তায় তার মনপ্রাণ অস্থির হয়ে ওঠে। তার ভয় যদি কোনদিন শুকিয়ে যায় এই বটের গুপ্ত জলাধার! যদি কোন নির্দয় খরা এসে শুষে নেয় বট গর্ভের সঞ্চিত সবটুকু জল। যদি এই তেলাপিয়ারা এককালীণ নির্ব্বংশ হয়ে যায় কোনো বিষধর সর্পের নিষ্ঠুর দংশনে! কোনোদিন বৃষ্টিস্নাত ভিজে বটের গুঁড়ি বেয়ে ছটপটে রূপালী তেলাপিয়ারা যদি আর ফিরে না আসে !