Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কুয়াশার ভিতর দিয়ে

কুয়াশার ভিতর দিয়ে ভোর রাতে একটা স্পীডবোট চলেছে। বাসন্তী পেরিয়ে বাঁ ধারের নদীর ভিতরে ঢুকে গেল স্পীডবোট। মারাত্মক তার গতি। পিছনে সমুদ্রের মতো ঢেউ তুলে জলকে উথালপাথাল করে প্রায় চল্লিশ মাইল বেগে ধেয়ে যাচ্ছে ফাঁইবার গ্লাসের তৈরি অদ্ভূত জলযানটি। হুইল ধরে বসে আছে দানবাকৃতি একটি লোক। শক্তিশালী সার্চলাইটের আলোয় সামনেটা উদ্ভাসিত।

ড্রাইভারের কেবিনের পিছনে ছোট্ট একটা কুঠুরি। এক ধারে স্পঞ্জ রবারের বিছানায় বাঞ্ছারাম অঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন। পাশে একটি হেলানো চেয়ারে বসে বেঁটে লোকটা কিছু কাগজপত্র দেখছে। এইসব কাগজ বাঞ্ছারামের ল্যাবরেটরি থেকে চুরি করে আনা। কিন্তু কাগজপত্রে কিছু নেই। লোকটা ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিতে মাথা নাড়ল। তারপর ঘৃণাভরে একবার তাকাল বাঞ্ছারামের দিকে।

আচমকাই লঞ্চের গতি কমে গেল। গর্জনশীল ইঞ্জিন মৃদু পুটপুট শব্দ করছে। হুইল থেকে মুখ ফিরিয়ে দানব বলল, “জলপুলিশ। আমাদের থামতে বলছে। কী করব?”

বেঁটে লোকটা ভ্রূ কুঁচকেই ছিল। বিরক্তির গলায় বলল, “স্পীড কমিয়ে দাও। দ্যাখো ওরা কী চাইছে।”

“যদি সার্চ করতে চায়?”

“সার্চ করতে দেবে। আগে লাইসেন্স দেখাও। বলো যে, একজন বিদেশী সাংবাদিককে সুন্দরবন দেখাতে এনেছ। আর তোমার একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট অসুস্থ হয়ে কেবিনে শুয়ে আছে।”

“ঠিক আছে।”

বেঁটে লোকটা আবার কাগজপত্র দেখতে লাগল। কেবিনে মৃদু আলো জ্বলছে। বোটটার গতি আরো মন্থর হয়ে গেল। দানবটা তার ডানপাশের জানালা খুলে জলপুলিশের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। হিন্দি ভাষা সাহেব বোঝে না, তাই গা করল না। জীবনে এর চেয়ে অনেক বড় বড় বিপদের কাজ সে করেছে। বিপদের মধ্যেই তার বাস।

পুলিশ অবশ্য বোটে উঠল না। ফাঁইবার গ্লাসের জলযন্ত্রটি আবার রুদ্ধশ্বাসে ছুটতে লাগল। চারধারে নিবিড় জঙ্গল। ঘন কুয়াশার ভিতর দিয়ে ভোর-ভোর ভুতুরে আলোয় এক অপার্থিব দৃশ্য বলে মনে হয়। ক্রমে নদী চওড়া হতে লাগল। হতে হতে তার কূলকিনারা দেখা গেল না আর। সেই সঙ্গে মস্ত মস্ত ঢেউ এসে দোল দিতে লাগল স্পীডবোটটিকে।

অর্থাৎ নদী ছেড়ে তারা বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বেঁটে সাহেবের কোনো ভাবান্তর নেই। দানবটিও একমনে লঞ্চ চালিয়ে যাচ্ছে।

ঘণ্টা-দেড়েক পর দানবটি কম্পাস দেখে বোটের মুখ বাঁ দিকে ঘোরাল। আরো আধঘণ্টা পর কমিয়ে দিল গতি। দশ মিনিটের মাথায় কুয়াশা ভেদ করে মস্ত কালো দেয়ালের মতো দেখা দিল একটা জাহাজের শরীর। দানবটা সার্চলাইট নিভিয়ে দিল। তারপর খুব দক্ষতার সঙ্গে জাহাজের গা ঘেঁষে দাঁড় করাল লঞ্চটাকে। কাউকে কিছু বলতে হল না। লঞ্চ দাঁড় করানোর এক মিনিটের মধ্যেই জাহাজের ওপর থেকে একটা মস্ত দড়ি নেমে এল। তার মাথায় আড়াআড়ি একটা লোহার ডাণ্ডা। ডাণ্ডার দুধারে দুটো হুক। দানবটা লঞ্চের মাথায় দাঁড়িয়ে হুক দুটো লঞ্চের ছাদে দুটো আংটায় পরিয়ে দিল। তারপর মসৃণ গতিতে দড়িটা লঞ্চটাকে আরোহী সমেত টেনে তুলে নিল ওপরে।

ডেকের ওপর বেশ কয়েকজন লোক। তাদের চেহারা খুবই স্বাস্থ্যবান। কালো ওভারঅল পরা। কারো মুখে কথা নেই। দুজন তোক একটা স্ট্রেচারে বাঞ্ছারামের অচেতন দেহ বহন করে। নিয়ে জাহাজের সিঁড়ি বেয়ে খোলের মধ্যে নেমে গেল।

আপাতদৃষ্টিতে জাহাজটা মালবাহী। তবে খোলের মধ্যে একটু জটিল গলিঘুজি পেরিয়ে গেলে চমৎকার কয়েকটি কেবিন আছে। আছে একটি মাঝারি ল্যাবরেটরিও।

বাঞ্ছারামের দেহটি একটি বিশেষ কেবিনে রাখা হল। গম্ভীর মুখে ডাক্তার গোছের একজন লোক এসে বাঞ্ছারামের নাড়ি আর বুক পরীক্ষা করে রক্তচাপ মাপে। সহকারীদের কয়েকটা নির্দেশ দেয়। বাঞ্ছারামের নাকে অক্সিজেনের নল ঢোকানো হয়। গোটা দুই ইনজেকশন দেওয়া হয় পর-পর।

ডাক্তার তার কাজ শেষ করে বেঁটে লোকটার দিকে চেয়ে ইংরিজিতে বলে, “কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।”

বেঁটে লোকটা ঠাণ্ডা গম্ভীর গলায় বলে, “কী ঠিক হবে? জ্ঞান ফিরে আসবে? সে তো বাচ্চা ছেলেও বলতে পারে। ওর

স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কী করতে পারো?”

ডাক্তার মাথা নেড়ে বলে, “এখন কিছুই করা যাবে না। ওর বিশ্রাম দরকার।”

“কতক্ষণ?”

“অন্তত দশবারো ঘন্টা।”

“তারপর কী করবে?”

“তারপর একটা টুথ ইনজেকশন দেব। সেই ইনজেকশনের পর আধ ঘন্টার মধ্যেই তুমি ওর কাছ থেকে সত্যি কথাটা জেনে নিতে পারবে।”

“ওর একটু মাথা খারাপ আছে। স্মৃতিশক্তিও বোধহয় ঠিক নেই। এই অবস্থায় টুথ ইনজেকশনে কি কোনো কাজ হবে?”

“দেখা যাক।”

“ইলেকট্রিক শক দিলে কেমন হয়?” ডাক্তার একটু হাসে। মাথা নেড়ে বলে, “তুমি বড় বেশি তাড়াহুড়ো করছ। যদি ভাল ফল চাও তবে তাড়াহুড়ো করে লাভ নেই। লোকটার বয়স হয়েছে। বেশি ধকল সহ্য করতে পারবে না। মরে যেতে পারে।”

বেঁটে লোকটা ঠাণ্ডা গলায় বলে, “মরলে আমাদের ক্ষতি নেই। শুধু মরার আগে আমরা কিছু তথ্য বের করে নিতে চাই।”

ডাক্তার ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর বলল, “ঠিক আছে। আমি যথাসাধ্য করব। তবে মনে রেখো তুমি একটু বেশি ঝুঁকি নিচ্ছ।”

বেঁটে লোকটা নিরুত্তাপ গলায় বলে, “শেষ অবধি তো ওকে মেরে ফেলতেই হবে।”

ডাক্তার আর কিছু বলল না।

বেলা দশটা নাগাদ বাঞ্ছারাম চোখ মেললেন। তাঁর সর্বাঙ্গে ব্যথা। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। চারদিকে চেয়ে কিছু চিনতে পারলেন না। শুধু অস্ফুট গলায় বললেন, “দিদি, রসগোল্লা খাব।”

সাদা পোশাক পরা একজন লোক এগিয়ে এল সিরিঞ্জ হাতে। বাঞ্ছারাম ভয় পেয়ে হাত গুটিয়ে নিতে গেলেন। পারলেন না। হাত-পা সব স্ট্র্যাপ দিয়ে খাটের সঙ্গে বাঁধা। ইনজেকশনটায় বেশ ব্যথা পেলেন বাঞ্ছারাম। “উঃ” বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। চোখে জল এসে গেল। নাকের মধ্যে একটা নল পরানো। ঝাঁঝালো অক্সিজেন বুকের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। নাক জ্বালা করছে। বাঞ্ছারাম ছটফট করতে লাগলেন। হাত-পায়ের বাঁধন খোলার জন্য টানাহ্যাঁচড়া করতে লাগলেন।

হঠাৎ সামনে দেখেন, সেই দানবটা দাঁড়িয়ে আছে। কোমরে হাত, দু চোখে নিষ্ঠুর হিংস্র চাউনি। বাঞ্ছারাম ভয়ে আর নড়লেন না। লোকটা হিন্দিতে বলল, “বেশি নড়াচড়া কোরো না। তোমার হাত-পা শক্ত করে বাঁধা আছে। নড়লে জখম হবে। তাছাড়া পরশুর মারের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি।”

“আমি কোথায়?”

“ভাল জায়গায় আছ। একটা জাহাজে। মাঝ-দরিয়ায়। চেঁচিয়ে মরে গেলেও কেউ শুনতে পাবে না। অতএব চুপ করে লক্ষ্মীছেলের মতো শুয়ে থাকো।”

বাঞ্ছারাম শুয়ে রইলেন। বোজা চোখের কোল ভরে উঠল চোখের জলে। একটু ফুঁপিয়ে উঠলেন।

বিকেল না সকাল, আলো না অন্ধকার তা বোঝবার উপায় নেই। কেবিনের জানালা বন্ধ, দরজা বন্ধ। ঘরে সারাক্ষণ একটা মৃদু বাতি জ্বলছে। বাঞ্ছারাম কয়েকবার ঘুমিয়ে পড়লেন। আবার জাগলেন। আবার ঘুমোলেন।

বহুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর বেঁটে লোকটাকে হঠাৎ দেখতে পেলেন বিছানার পাশে। সঙ্গে ডাক্তার।

বেঁটে লোকটা তেমনি শীতল গলায় জিজ্ঞেস করল, “কেমন বোধ করছ?”

বাঞ্ছারাম হাঁ করে চেয়ে রইলেন। মুখে কথা এল না।

বেঁটে লোকটার কথায় ধমক-চমক নেই, কিন্তু এমন একটা ৫৮

ঠাণ্ডা নিষ্ঠুরতা আছে যা হৃৎপিণ্ডকে থামিয়ে দিতে চায়। অথচ লোকটা পুতুলের মতো ছোটখাটো। যে-কেউ ওকে এক হাতে মাটি থেকে তুলে নিতে পারে। কিন্তু ওর চোখের দিকে চাইলে বা ওর ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বরটি শুনলে কারোরই আর ওকে ঘাঁটাতে সাহস হবে

। লোকটা বাঞ্ছারামের দিকে অনেকক্ষণ পলকহীন চোখে চেয়ে থেকে বলল, “কিছু মনে কোরো না, পৃথিবীর স্বার্থে তোমাকে কিছু কষ্ট স্বীকার করতে হচ্ছে। আমরা তোমার ওপর কয়েকটা এক্সপেরিমেন্ট করব। তাতে তোমার মৃত্যু অবধি ঘটতে পারে। কিন্তু আমাদের অন্য উপায়ও নেই।”

বাঞ্ছারাম ডুকরে উঠে বললেন, “আমি দিদির কাছে যাব।”

বেঁটে লোকটা হাসল। বলল, “পুরুষ মানুষের মতো আচরণ করো। তোমরা ভারতীয়রা এত কাপুরুষ কেন?”

“আমাকে মেরো না।”

“মারতে চাইছি না। তোমার চিকিৎসাই করতে চাইছি। কিন্তু কাজটা একটু বিপজ্জনক। তাতে তোমার মৃত্যু ঘটতে পারে। আর যদি ঘটেই তবে তা বীরের মতো মেনে নিও।”

“আমি রসগোল্লা খাব। মরতে আমার একটুও ইচ্ছে করে না।”

বেঁটে লোকটা ডাক্তারের দিকে চাইল। বলল, “এবার টুর্থ ইনজেকশনটা দাও। আমার মনে হচ্ছে ওর পাগলাটে মনের কোনো লুকনো ঘরে সেই স্মৃতি আজও আছে। একটু দাঁড়াও। দেখি ও রাব্বিকে চিনতে পারে কি না।”

লোকটা একটা বোম টিপল। একটা লোক হাজির হতে তাকে মৃদুস্বরে কী নির্দেশ দিল।

একটু বাদেই চারজন তোক একজন বুড়োমানুষকে টেনে নিয়ে এল ঘরে। তার চুল সাদা এবং কাঁধ পর্যন্ত লম্বা। শরীর রোগা।

চোখে জুলজুলে চাউনি। তাকে বাঞ্ছারামের সামনে দাঁড় করানো হলে বেঁটে লোকটা জিজ্ঞেস করল, “একে চিনতে পারো?”

“না।”

“এ হল রবিন ফরডাইক। হিট অ্যামপ্লিফিকেশনের কাজে এ তোমাকে সাহায্য করত। তারপর তোমার কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে পালায়। যাওয়ার আগে ওষুধ দিয়ে তোমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দিয়ে যায়। এর ইচ্ছে ছিল, হিট অ্যামপ্লিফায়ার তৈরি করে দুনিয়া জুড়ে ব্যবসা করবে। আমরা ওকে লক্ষ লক্ষ ডলার দিয়েছিলাম এই আশায় যে, ও তাপ-পরিবর্ধক তৈরি করে আমাদের এজেন্সি দেবে। আমাদের মতো আরো কয়েক হাজার লোককে ঠকিয়ে ও এখন বহু টাকার মালিক। কিন্তু ও জানত না, পৃথিবীর সব জায়গায় আমাদের হাত গিয়ে পৌঁছোয়। কী, চিনতে পারছ?”

বাঞ্ছারাম চেয়ে থাকেন। স্মৃতি টলমল করে। কুয়াশা যেন একটু কেটে যায়। রবিন ফরডাইক! এ যেন পূর্বজন্মে শোনা একটা নাম।

ফিসফিস করে বাঞ্ছারাম বললেন, “রবিন! রবিন! এত বুড়ো হয়ে গেছ?”

রবিন কিছু বলল না। বলার মতো অবস্থাও নয়। বেঁটে লোকটা তার হয়ে জবাব দিল, “না, বুড়ো হয়নি। তবে ওকে আমরা পাকিয়ে বুড়ো করেছি। শোনো বাঙালি বৈজ্ঞানিক, তোমার অবস্থা রবিনের চেয়েও খারাপ হতে পারে। এখনো মনে করার চেষ্টা করো, সেই ফরমুলাটা কোথায় আছে। রবিন জানে, তুমি শেষ পর্যন্ত হিট অ্যামপ্লিফায়ার তৈরি করার পদ্ধতি বের করেছিলে। কিন্তু ফরমুলাটা কোথাও লুকিয়ে রেখেছ। আমরা জানতে চাই, কোথায়।”

বাঞ্ছারাম নিজেও তা ভুলে গেছেন। প্রাণপণে চোখ বুঝে মনে করার চেষ্টা করলেন। পারলেন না।

বেঁটে লোকটা ডাক্তারের দিকে চেয়ে মৃদু স্বরে বলল, “এবার টুথ ইনজেকশন দাও।”

বিনা বাক্যে ডাক্তার একটা সিরিঞ্জ ভরে নিয়ে এগিয়ে আসে।

ইনজেকশন দেওয়ার পর কিছুক্ষণ অদ্ভুত এক যন্ত্রণায় ছটফট করলেন বাঞ্ছারাম। তারপর আস্তে-আস্তে স্থির হয়ে গেলেন। চোখদুটি বিস্ফারিত। মুখ ফ্যাকাসে। ঠোঁটের কোণে ফেনা। অল্প-অল্প হাঁফাচ্ছেন।

মিনিট দশেক পরে বেঁটে লোকটা জিজ্ঞেস করল, “বলো ভারতীয় বৈজ্ঞানিক, তুমি কি সত্যিই পাগল?”

বাঞ্ছারাম শান্ত স্বরে চোস্ত ইংরিজিতে বললেন, “না। আমার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। মাঝে-মাঝে আমি বয়স হারিয়ে ফেলি। বার্ধক্যের সঙ্গে শৈশব গুলিয়ে যায়। কিন্তু সেটা মস্তিষ্কের কোনো

জটিল অসুখ নয়।”

“এখন তোমার স্মৃতিশক্তি কেমন কাজ করছে? দশ বারো বছর আগেকার কথা মনে পড়ছে?”

“পড়ছে। আমি তখন হিট অ্যামপ্লিফিকেশন নিয়ে গবেষণা করতাম। রবিন ফরডাইক আমাকে সাহায্য করত। অবশেষে একদিন আমি সাফল্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। আমি

জানতাম আমার আবিষ্কার অত্যন্ত মূল্যবান। এও জানতাম, আমার আবিষ্কার আমার সহকারি রাব্বি না রবিন যথেষ্ট বুদ্ধিমান বটে, কিন্তু তেমন বিশ্বাসযোগ্য নয়। শেষ দিকে আমি তাই দুরকম লগবুক লিখতে লাগলাম। আমার আসল গবেষণার রিপোর্ট আমি মাইক্রোফিল্মে তুলে কাগজপত্র নষ্ট করে ফেলতাম। ল্যাবরেটরিতে রাখতাম একটা ভুয়ো রিপোর্ট। কিন্তু বুদ্ধিমান রবিন তবু টের পেয়েছিল যে, আমি সাফল্যের দরজায় পৌঁছেছি। তাই সে একদিন আমার গবেষণাগারের কুঁজোর জলে ওষুধ মেশায়। সেটা খেয়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার স্মৃতিশক্তি ও স্বাভাবিক চিন্তার ক্ষমতা লোপ পেয়ে যায়।”

বেঁটে লোকটা অধৈর্য হয়ে বলে, “সেকথা থাক। এখন বলল, সেই মাইক্রোফিল্মটি কোথায় আছে।”

“ফিল্ম আছে একটা প্ল্যাস্টিকের মোড়কে। আমি সেটা একটা রসগোল্লার হাঁড়িতে রেখেছিলাম।”

বেঁটে লোকটা দানবটাকে জিজ্ঞেস করল, “রসগোল্লার মানে কী?”

দানবটা বুঝিয়ে বলল। বেঁটে লোকটা ভ্রু কুঁচকে বলল, “ওরকম মূল্যবান জিনিস একটা মাটির পাত্রে রাখা কি নিরাপদ ছিল?”

“না। অন্তত দশ বারো বছরের মতো লম্বা সময়ের পক্ষে তো নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু তখন তো আমি জানতাম না যে, আমি

একরকম অকেজো হয়ে যাব।”

“সেই হাঁড়িটা এখন কোথায় আছে?”

“ঠিক জানি না। তবে সেই হাঁড়িতে মাটি ভরে আমি তাতে একটা ক্যাকটাস লাগিয়েছিলাম। আমাদের ভিতরের বারান্দায় সেটা রাখা ছিল।”

“এখনো সেখানেই আছে?”

“কী করে বলব? আমি তো হাঁড়িটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এই এখন মনে পড়ল।”

“তুমি সেই হাঁড়িটা কি সম্প্রতি লক্ষ করেছ?”

“না। তবে সেই হাঁড়ির ভিতর থেকে মাইক্রোফিল্ম বের করেও কারো কোনো লাভ হবে না। আমি আমার রিপোর্ট নিজস্ব সাংকেতিক ভাষায় লিখেছি। সেই রহস্য আমি ছাড়া আর কারো পক্ষেই ভেদ করা সম্ভব নয়।”

বেঁটে লোকটা হাসল। বলল, “তাই হবে, বৈজ্ঞানিক। আমরা তোমার মাইক্রোফিল্ম এনে দেব। তারপর তুমিই সেই সংকেত উদ্ধার করবে।”

“তারপর কী হবে? তোমরা ভাল লোক নও। আমি সংকেত ভেঙে দেওয়ার পর তোমরা নিশ্চয়ই আমাকে জীবিত রাখবে না।”

বেঁটে লোকটা চোখের ইশারা করে। ডাক্তার বাঞ্ছারামকে আর-একটা ইনজেকশন দেয়। বাঞ্ছারাম ঘুমিয়ে পড়েন।

Pages: 1 2 3 4 5 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress