বাড়ির পাশেই ভোগেশ্বরী নদী
তার বাঁকে একটি কাঁঠাল গাছ ,
কাঁঠাল গাছ পেরিয়ে নদীর পাড় ধরে
একটু এগোলেই টুকটুকিদের বাড়ি।
টুকটুকি আমার সহপাঠী, গোল্লাছুট খেলার
সাথী, গল্প বলার এবং কথায় কথায়
আড়ি দিয়ে কথা বন্ধ করারও
এক এবং অদ্বিতীয়তম সাথী।
ভোগেশ্বরীর বুকে ইলিশের ঝাঁক দেখে
এক সময় কাঁঠাল গাছের নীচে বসে
রসিক মাঝি গান ধরত,
আজো কি নদীর পাড়ে কাঁঠাল গাছের নীচে
ছায়া ঘনালে রসিক মাঝির আত্মজ কেউ
ভাঙা গলায় গান ধরে?
না কি কালের স্রোতে সব হারিয়েছে গেছে।
মনে পড়ে , মাধ্যমিকে পড়ার সময় টুকটুকির বিয়ের সম্বন্ধ আসে ,
অভাবী সংসারে মেয়েদের ভাল সম্বন্ধ এলে
যা হয়, পড়া বন্ধ হয়ে টুকটুকির বিয়ে হয়ে যায়।
কোন প্রতিবাদ নয়
নিয়ম মাফিক বাধ্য বাধকতার গন্ডীর মধ্যে
আর পাঁচটা কাজের মতই আমরা বুঝতে
শিখেছিলাম এটাই স্বাভাবিক !
তারপর আর টুকটুকির সাথে আমার দেখা নেই, কয়েক বছর পর ওর বিধবা হওয়ার খবরটা পেয়েছিলাম ।
তখন প্রতিনিয়ত সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার
লক্ষ্যে বিভোর হয়ে আমরা সবাই ব্যতিব্যস্ত !
আজ দীর্ঘ বছর পর টুকটুকির মেয়ের মৃত্যুর
খবরে বিচলিত হলাম, বিয়ের সাতদিনের মাথায়
এক পথ দুর্ঘটনায় একমাত্র মেয়ে মারা যায়।
আজ অনেকদিন পর টুকটুকির
স্কুলের নিষ্পাপ মুখখানা খুব মনে পড়ে,
মনে পড়ে কথা বলার সাথী , আড়ি দেওয়া সাথী,
গোল্লাছুটের সাথী টুকটুকির কথা,
আর ভীষণ ভাবে তাড়া করে আমাদের স্বার্থপরতা
এক অপরাধ বোধ,
আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আমাদের বেহিসেবি বাল্যবেলা,কোথায় হারিয়েছে নদীর কূলগুলো
কোথাও কি আজ শপথের প্রতিশ্রুতি
মিলিয়ে যায় নীল দিগন্তের অসীম সীমারেখায়,
আজও কি চৈত্রের ভর দুপুরে
বাবলার বনে ঘুরে বেড়ায় দুরন্ত কৈশোর ,
আজও কি কেউ খোঁজে
শীতল পল্লবিত শাখার তলে
ভেষজ লতার মত জড়ানো বন্ধুত্ব্বের
স্পর্শকাতর হাতগুলো।
আজ আমার ইচ্ছে
এক ফেরিওয়ালা হব
এক পৃথিবী স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ,
কল্পতরুর মত ফেরি করে বেড়াব
পুরনো স্কুল বাড়ির অমল আলো,
খেলার মাঠের কাদা মাখা সোঁদা গন্ধ,
আম বাগানের আম কুড়নো মুহূর্তকাল
দুর্গাবাড়ির চণ্ডীমন্ডপের দুর্গার মুখের
চক চক গর্জন তেল,তেলের গন্ধ ,
ভোগেশ্বরীর শীতল জল রাশি
শহীদ মিনারের স্নিগ্ধ ছায়া আর
তার মাঝে শুধু খুঁজে বেড়াব
টুকটুকির হারিয়ে যাওয়া
বাল্যবেলার সেই উচ্ছ্বাস দিনগুলো
সোনালি স্বপ্নবোনার দিনগুলো !