Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ফেরাই || Subhash Mukhopadhyay

ফেরাই || Subhash Mukhopadhyay

সবাই সমান

যেখানে গেলে সবাই সমান হয়

‘সব লাল হো যায়েগা’ বলে
এক লাফে
সটান সেই জায়গায়

কাঁধ ধরাধরি করে
পৌঁছুনো
এবং পৌঁছে দেওয়া গেল

রাবণের চুল্লির সামনে লাইনবন্দী হয়ে
ধর্না দিচ্ছে
লালগাড়ি-পাশ-হওয়া
ছুরিবিদ্ধ গুলিবিদ্ধ
অপাপবিদ্ধের দল

নিশির ডাকে নিশান হাতে
যারা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছিল
তারা এখন
সাড়ে তিন হাত জমির দখল ছেড়ে
আগুনের মুখে ছাই হওয়ার অপেক্ষায়

চোখ বন্ধ ব’লে
ওরা দেখতে পাচ্ছে না
মেঝে থেকে দেয়াল, দেয়াল থেকে ছাদ
শোয়ানো আর দাঁড়-করানো অক্ষরে
অঙ্গার দিয়ে লেখা অঙ্গীকার

ভুলব-না ভুলব-না ভুলব-না !

একটা করে যায়
লাইন একটু করে এগোয় ||

বলির বাজনা

রাত্রে রেডিওতে যখন খবর বলে
কানে আঙুল দিয়ে থাকি
সকালে কাগজ এলে
ছুঁতেও ভয় করে

লাইনবন্দী চেনা মুখগুলো
একের পর এক
একের পর এক ভেসে ওঠে

আমার পুরনো সব বন্ধুর ছেলেরা
ছিল আমার নতুন বন্ধু
সিগারেট আমিই এগিয়ে দিতাম
যাতে তারা ছলছুতোয়
আমাকে একা ফেলে উঠে যেতে না পারে

ছেলেধরার দল
নাকের কাছে ফুল শুঁকিয়ে
ফুস্ লে নিয়ে চলে গেছে
তাদের বলি দেবে ব’লে

এখন যারা কবিতা শোনাতে আসে
তাদের কবিতা আমি শুনতে চাই না
যারটা শুনতে চাই
কলম ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
এখন সে শবসাধনায় উধাও

লালবাড়ির ভেতর থেকে আসছে
হায়নাদের হাড়ভাঙার শব্দ
ঘুমের মধ্যে আমি চমকে চমকে উঠছি
কালো গাড়িগুলি থেকে
ঘষে ঘষে তোলা হচ্ছে চাপ চাপ রক্ত
হরিণবাড়িতে পাগলাঘন্টি
বেজে চলেছে বেজে চলেছে বেজে চলেছে

একদল বাইরে থেকে ওসকাচ্ছে
একদল ভেতর থেকে ভাঙছে
বলির বাজনায় আর জয়জোকারে

রক্তমাখা খাঁড়াগুলো

উঠছে আর পড়ছে
উঠছে আর পড়ছে ||

মধ্যিখানে চর

মধ্যিখানে চর

এক থেকে দুই, দুই থেকে তিন
এক থেকে দুই, দুই থেকে তিন
ভাঙছে আর ভাঙছে

বলেছিল কবর দিতে
যারা খুঁড়ছিল
সেই কবরেই পেছন থেকে তাদের ঠেলে দেওয়া হল

বলেছিল দেশ বরবাদ
পরে দুনিয়াকেই ছেঁটে ফেলে দিল

ধরা পড়বার ভয়ে
সারা রাস্তা চোর চোর করে ছোটার পর
সিন্দুকের লাখবেলাখে
গোয়েন্দা-সিরিজে ফাঁস হয়ে যায়
হাতসাফাইয়ের কলকাঠি

গড়বার দল নয়
একটা ভাঙবার চক্র
নামাবলি গায়ে দিয়ে ভক্তদের ভোলাচ্ছে

মধ্যিখানে চর
তার আড়ালে বসে রয়েছে
কোন্ সে সওদাগর ?

বন্ধুরা কোথায়

কাঁধের গামছাগুলো হাতে নিয়ে
একটা দল
গুম হয়ে ব’সে

পথ
এখন এক অন্ধগলিতে এসে ঠেকে গেছে
শহিদের স্মৃতি রাখতে শহিদ হওয়া
খুনের বদলে খুন
এই বৃত্তটাকে কিছুতেই ছাড়ানো যাচ্ছে না

যারা মৃত্যুর সওদাগর
পাখি-পড়ার মতো করে তারা বোঝাচ্ছে
হয় মারো নয় মরো
এগোবার পথ তারাই প্রশস্ত করেছিল
এখন ফেরবার পথে
তারাই কাঁটা দিচ্ছে

আমার সেই বন্ধুরা কোথায়
আমি জানি না
পাছে কোনো অকল্যাণ হয়
তাই কাউকে জিজ্ঞেস করি না
দেখে ফেললে না-চেনার ভান করি

যারা শত্রুকে একঘরে না করে
বন্ধুকে শত্রু করছে
যারা সংগ্রামের সাথীদের
আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়ে
মৃত্যুর গুণগান গাইছে—

সেই শয়তান চক্রটাকে এবার
যেখানে পাও খুঁজে বার করো
ফাঁক ভরাট করো
ভাঙাকে জোড়া দাও
তাহলেই সোনার কৌটোয় কালো প্রাণভোমরাগুলো
বুক ফেটে দাপিয়ে দাপিয়ে মরে যাবে

কাঁধের গামছা কোমরে বেঁধে
শ্মশান থেকে উঠে এসো
ভালোবাসায় ভরে দিয়ে দাঁড়িয়ে
জীবনটাকে ধরো

যৌবনের ফেরাই দিয়ে,
হারিয়ে-যাওয়া নতুন বন্ধুরা আমার,
সামনে জিতে নাও সৃষ্টির পিঠ

যাবার আগে যেন দেখে যাই
মেঘভাঙা রামধনু

ঢেলে সাজা পৃথিবীর বুকে
যেন শুনতে পাই
ভোরবেলার আজান ||

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *