Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে || Roma Gupta

প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে || Roma Gupta

জমিদার বাড়ির ছেলে অতিক্রম এসেছে বিলেত থেকে। সারাদিন সে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে। তার ঘরের পিছনের উঠানে, পাশের গ্ৰামের মেয়ে সুধা ধান ঝাড়াইয়ের কাজ করে। অতিক্রম সিগারেট ধরিয়ে ঘরের পিছনের জানলাটায় গিয়ে দাঁড়াতেই সুধাকে দেখতে পায়। শান্ত, সুন্দর সুধাকে দেখে অতিক্রমের ভালো লাগে। সে সুধাকে ডেকে আলাপ করে জানতে পারে সুধা পড়াশোনা শিখতে চায়। অতিক্রম বলে, আমি তোমাকে পড়াশোনা শিখিয়ে দেবো। অতিক্রম সেকথা মা’কে জানালে মা খুশি হয়। ভাবেন,ছেলে বিলেতে থাকলেও গরিবদের প্রতি কত টান। সুধা প্রতিদিন কাজের শেষে অতিক্রমের কাছে পড়তে আসে। সুধাকে দেখে প্রথমদিনই অতিক্রম ভালোবেসে ফেলেছে।

সুধাকে তা জানালে সুধা বলে, দাদাবাবু আমি আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়ে ; আপনি জমিদার বাড়ির ছেলে, এ কখনো সম্ভব নয়। দয়া করে আমায় এসব বলবেন না , জমিদারবাবু জানলে আমার কাজটা থাকবে না। অতিক্রম সুধাকে আশ্বস্ত করে। বিশ্বাস ,ভরসা রাখতে বলে। অনেক বুঝালে সুধা রাজি হয়। পড়ার ফাঁকে গোপনে চলে তাদের প্রেম। সুধার শান্ত, ভদ্র চালচলন ; কুণ্ঠাভাব অতিক্রমকে আরও আকৃষ্ট করে। সুধার হৃদয়েও অতিক্রমের স্থান হয়।

এখন থেকে সুধা কাজ করলেও চোখ থাকে অতিক্রমের ঘরের জানলার দিকে। অতিক্রমও জানলায় দাঁড়িয়ে সুধাকে দেখে।ইশারায় কথাও হয়। একদিন নায়েব মশাইয়ের চোখে পড়ে তাদের ইশারায় কথা। উনি বিষয়টা জমিদারবাবুকে জানান। জমিদার অতীনমোহন রাশভারী লোক। তাঁর সন্দেহ, ছেলে নিশ্চয় সুধার প্রেমে পড়েছে! চটজলদি গিন্নিকে সব জানায়। মীরাদেবী বলেন, তাতে কি হয়েছে! ও সুধাকে লেখাপড়া শেখায়, আমাকে জানিয়েছে। অতীনমোহন বলেন, নিকুচি করেছে পড়ানোর, এবার না মেয়েটাকে বিয়ে করে বসে! আমি আজকেই বন্ধু হরিসাধনের মেয়ে অপর্ণার সঙ্গে ওর বিয়ের পাকা কথা বলছি। বিয়ে দিয়ে একমাসের মধ্যে বিলেতে পাঠিয়ে দেবো আর মেয়েটাকে আজই বিদায় করবো। মীরাদেবী বলেন, এতে ছেলে বিগড়ে যাবে। চুপচাপ কাজ করো।

বন্ধুর সাথে কথা বলে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ের দিন পাকা করে ফেলে অতীনমোহন। অতিক্রমের মতের তোয়াক্কাই করে না। অতিক্রম এখন বিয়ে করবেনা বলায় অতীনমোহন বলেন, কোনো কথা শুনবো না। অনেক আগেই অপর্ণাকে তোমার বৌ করে ঘরে আনবো হরিশকে কথা দিয়েছি। অপর্ণাকে বিয়ে করে ওকে নিয়ে তুমি বিলেতে ফিরবে। অতিক্রম বাবার মুখের উপর কিছু বলতে পারেনা।মা’ও কৌশলে এড়িয়ে যায়। এদিকে সুধার প্রেমনদী হৃদয়ে বইছে। প্রেমে আপ্লুত অন্তর। হঠাৎ শোনে, অতিক্রমের বিয়ে। সুধাকে মীরাদেবী বলেন, অতিক্রমের বিয়ে, ওর কাছে আর পড়তে আসতে হবেনা। কিছুদিন পর ধুমধাম করে অতিক্রমের বিয়ে হয়ে গেল।

সুধা মনে বেদনা নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে দেখলো। তার জীবনে নীরবে আসা প্রেম অন্তরে আহত পাখির মত ছটফট করতে লাগলো। যেদিন বিলেতে যাচ্ছে, অতিক্রম সুধার কাছে এসে বলে,চলেছি তোমার থেকে দূর বহুদূর। বিদায় বন্ধু। তারপর বললো,পড়াশোনাতো শিখেছো! নাও বইটা। রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ পড়বে। জানবে তুমি আমার লাবণ্য। আমার দিঘি। থাকবে তোমার অতিক্রম দিঘিতে ডুবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *