প্রেমিকার বিয়ে
গ্রামে থাকত দশম শ্রেণির ছাত্রী কিশোরী অনিতা।
সেই গ্রামেই কোচিং সেন্টারে পড়াতেন বিক্রমণ। সেখানে পড়তে যেত অনিতা।
অজান্তেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্ক আরও গভীর হলে বিক্রমণের কথা বাড়িতে জানায় অনিতা। ইঞ্জিনিয়ার বাবা সেই সম্পর্ক মেনে না নিয়ে সেই গ্রামেরই অন্য এক যুবকের সঙ্গে অনিতার বিয়ে দেন। অনিতার বিয়ের খবর শুনে মন ভেঙে যায় বিক্রমণের। গ্রাম ছেড়ে চলে যান তিনি।
বাবার দেখা পাত্রের সঙ্গেই বিয়ের পর সংসার করছিলেন অনিতা। বড় মেয়ে অথিরা ও ছোট মেয়ে অ্যাশলিকে নিয়ে ছিল অনিতার জীবন।
তার স্বামী ছিল সুরাসক্ত। অথিরার বয়স যখন আট, তখন আত্মহ’ত্যা করেন অনিতার স্বামী। ছোট দুই মেয়েকে একাই মানুষ করেন অনিতা। জমি জায়গা বিক্রি করে, নিজে বিভিন্ন রকম কাজ করে রোজগার করেন। তা দিয়ে লেখাপড়া শেখান দুই মেয়েকে।
তারা এখন সাবালিকা। শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসর নিয়ে বিক্রমণও ফিরে এসেছেন নিজের গ্রামে । একদিন হঠাৎ জীবনের প্রথম প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হতেই বুকটা তার মুচড়ে ওঠে কিন্তু মুখ ফুটে সে কথা মেয়েদের বলতে পারছিলেন না। সেই জড়তা কাটিয়ে নিজের হারানো প্রেমের গল্প মেয়েদের বলেন তিনি।
অথিরা দেখেছিল ”নিজের জীবনের গল্প বলার সময় মায়ের গলা বুজে আসছিল। প্রেমভঙ্গের ব্যথা মায়ের চোখে মুখে ফুটে উঠছিল।” তারপর থেকেই মাকে তার পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে থাকেন অথিরা ও অ্যাশলি। দুই বোন মিলে ঠিক করে ফেলেন বিক্রমণের সঙ্গে বিয়ে দেবেন মায়ের। কিন্তু কীভাবে?
সাহস সঞ্চয় করে একদিন তারা দেখা করেন বিক্রমণের সঙ্গে। জানায় তাদের ইচ্ছার কথা। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বিক্রমণ তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, ”তোমরা বড় হয়েছ। মায়ের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার আগে নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবো। সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
কিন্তু অনিতার দুই মেয়ে হাল ছাড়েননি। বার বার দেখা করেন বিক্রমণের সঙ্গে। বিক্রমণকে বুঝিয়ে বিয়ের জন্য রাজি করান তাকে। পাশাপাশি মাকেও বিয়ে করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করেন দুই বোন। বিক্রমণের সঙ্গে আবার বিয়ে হয় অনিতার। ৫২ বছর বয়সে নিজের হারানো প্রেম ফিরে পান অনিতা।
নিজেদের বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের উপস্থিতিতে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম প্রেমিককে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয় দুই মেয়ে। দুই যুবতীর উদ্যোগে ফের জোড়া লাগে ভেঙে যাওয়া প্রেম। তবে এই বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক বা’ধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল অথিরা ও অ্যাশলিকে। তাদের অনেক নিকট আত্মীয়ই প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু সারা জীবন ক’ষ্ট পাওয়া মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে বদ্ধপরিকর মেয়েদের ইচ্ছার কাছে টিকতে পারেনি সেই বাধা।
এ ব্যাপারে অথিরা জানিয়ছেন, ”আমার বয়স যখন আট, তখন বাবা আ’ত্মঘা’তী হন। মায়ের স্নেহের ছায়া সেই দুঃসময়ে আমাদের আগলে রেখেছিল। আমাদের পড়াশোনা করাতে সারা জীবন প্রচুর পরিশ্রম করেছে মা। আমাদের স্বপ্নপূরণের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েছে। তাই মায়ের জীবনে একটু আনন্দ দিতে না পারলে আমাদের প্রতি তার ভালবাসা মর্যাদা পাবে না।”
বিক্রমণকে বিয়ের পর দুই মেয়ের সঙ্গে আনন্দেই কেটেছে অনিতার জীবন। চার বছর আনন্দে কাটার পর হার্ট অ্যা’টাকে মা’রা যান বিক্রমণ। সে সময় তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। বিক্রমণের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সম্প্রতি অথিরা বলেছেন, ”আমরা ওঁকে খুব মিস করি। কিন্তু ভেঙে যাওয়া প্রেমকে পরিণতি দিতে পেরে আমরা খুব খুশি। উনি ফিরে এসে হাসি ফুটিয়েছিলেন মায়ের মুখে।
একটা নয় অনেক সুবর্ণলতাই রয়েছে সমাজে। তাদের জীবন কতটা সুখের কতটা তারা আলোর পথে চলতে পেরেছে। পুরুষাশিত সমাজে আজও তারা যথাযথ মর্যাদা পায় না।