ভাদ্রের দুপুর চিল্লাচ্ছে পুরানো ঢাকার
কলতলার
ঝগড়াটে যুবতীর মতো। একটার পর একটা বাস
ক্রমাগত ছুটে যাচ্ছে, বাস-এ চড়তে গিয়ে যাত্রীদের নাভিশ্বাস
উঠছে ভীষণ। দূর থেকে দেখলাম
লোকের ভিড়ে তাঁকে। তিনি রীতিমতো
গলদঘর্ম, ভ্যাবাচ্যাকা, যেন আহত
চিল। প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও সময়কে চড় কষিয়ে-যাওয়া বাসে ঠাঁই
পাচ্ছেন না। ‘ও ভাই
কন্ডাক্টারের নেই। মনে হয়,
হয়তো এবার ভিড় ঠেলে
কনুই চালিয়ে উঠে পড়বেন, অথচ এই বাসটাও
উধাও তাঁকে ফেলে।
বাসের পর বাস আসে, যায়,
হাত নেড়ে নেড়ে ক্লান্ত তিনি দাঁড়িয়ে আছেন এক ঠায়।
তিনি, আবদুস শহীদ, খাপরা ওয়ার্ডের বিপ্লবী,
আজ এ কেমন ছবি
তাঁর! শোণিতে শর্করার কোলাহল, দ্রুত তন্তুক্ষয়,
একদা স্বপ্নের বীজময়
উর্বর চোখের নিচে দুঃসময়ের কালি নিয়ে রাস্তার ধারে
ভাদ্রের দুপুরে বন্দি, পরিত্যক্ত। বারের বারে
তাকাচ্ছেন পথের দিকে,
হয়তো অনেক দূরের কিছু ফিকে
স্মৃতি রক্তচক্ষু কোকিলের মতো গান গেয়ে
উঠছে নাছোড়ে, তিনি চলেছেন খেয়া বেয়ে
ভাটির টানে। বৈঠায় শ্যাওলা জমে,
আজও কালবেলায় অমোঘ জাল ফেলে কেন তাঁকে টেনে
নেয় না যমে?
বাসের পর বাস আসে যায়,
ধূসর বিপ্লবী এখনো আছেন দাঁড়িয়ে পথে অসহায়।
তাঁর প্রতি বস্তুত ভ্রূক্ষেপ নেই কারো। ধারালো অস্ত্রে
জং ধরলে, রঙচঙে মখমলের বস্ত্রে
তাকে রাখলেও বাড়ে না গৌরব তার,
একথা ভালোই জানেন তিনি, আবদুস শহীদ। যতক্ষণ থাকে ধার
ততক্ষণই অস্ত্রের প্রতি অটুট সতর্ক মনোযোগ,
হোক সে শেয়াল, নেকড়ে বাঘ কিংবা ঘোগ।
ভাবি নিশ্চয় এবার তিনি, খাপরা ওয়ার্ডের বিপ্লবী, রাস্তার
মাঝখানে সটান দাঁড়িয়ে ছুটন্ত বাসটার
ঘাড় ধরে গলায় ঠাটা বাজিয়ে বলে উঠবেন, ‘হেই,
আমাকে এভাবে ফেলে যাবার অধিকার কারো নেই।