প্রাক্তন
আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি–
লোকটি বলে কেন বলুন তো!!
আপনাকে তো ঠিক….!
লোকটির বৌ হঠাৎ বলে বসে খুব চেনা চেনা মুখ আপনার!
আমি বলি কিন্তু বোন আপনাকে আমার চেনা লাগে নি তবে আপনার কর্তার নাম শৈবাল কি???
অবশ্য নাও হতে পারে , অতীত এক ক্ষীণ স্মৃতি আমাকে মনে করালো এই তোর প্রাক্তন প্রিয় বন্ধু শৈবাল।
বৌটি তখন হা হা করে হাসতে থাকে। আমি অপ্রস্তুত হয়ে বলি ও উনি শৈবাল নয়। আচ্ছা আমি খুব দুঃখিত।আসলে বয়স হয়েছে তো চোখের আন্দাজ ভুল হয়েছে।বৌটি হাসি থামিয়ে বলে দেখুন দেখি আমি আপনাকে চাক্ষুষ কোনদিন দেখি নি। তবুও কেমন চিনতে পারলাম । আপনি তো সুচরিতা দি । আমি কাঁচুমাচু হয়ে বলি তুমি চিনলে কি করে!!
বৌটি বলে এই শৈবাল শোনো, এদিকে একটু এসো। দেখলেন দিদি আপনাকে অন্য কেউ ভেবে আমার স্বামী এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শৈবাল নামটা শুনে আমার বুকে কাঁসর ঘন্টা বাজতে থাকে। বুকের ভিতর অদ্ভুত যন্ত্রণা শুরু হয়েছে।কত কথা সব বুকের ভিতর জমা।ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বেশ ঘামছিলাম। আমার সেই অতীত পুরীর সমুদ্রের ধারে খুঁজে পেলাম।
শৈবাল শোনো এই দিদিকে চেনো!
শৈবাল বলে বেশ চেনা চেনা মুখ। তোমাদের বাড়ির কোনো অনুষ্ঠানে দেখেছি মনে হয়।মনে হচ্ছে টেনে মুখে চড় মারি।যাকে একদিন না দেখলে পাগল হয়ে যেতিস,তাকে চিনতে পারছে না।না মনে হচ্ছে বৌয়ের সামনে ন্যাকামো করছে। হঠাৎ আমার কর্তা এসে বলে কথা শেষ হলে হোটেলে চলো। আমি আমার বরের সাথে আলাপ করালাম আমার পুরানো বন্ধু ওরা।বর বলল আমি হোটেলে ফিরছি, তুমি ওনাদের সাথে এসো, ওনাদের ও আমাদের এক হোটেল।
শৈবাল বলে আপনাকে তো চিনতে পারলাম না। আমি বলি এই অ্যালগি আমায় ভুলে গেলি। শৈবাল বলে সুচরিতা তুই …।
গল্প করতে করতে জানলাম ওর মানিব্যাগে এখনো আমার বেশ কয়েকটি ছবি আছে।তাই ওর বৌ আমাকে চিনতে পেরেছে। যেহেতু এক হোটেল তাই ফিরে আসি।ফোন নম্বর বৌটি চায়। রাতে বারান্দায় সমুদ্রের ঢেউ গুনছি,বর নাক ডাকছে খাটে, হঠাৎ ফোন বাজে। শৈবাল বলে সত্যি তোকে চিনতে পারি নি। অনেক অনেক কথা হলো। ঠিক করলাম কোলকাতায় ফিরে সামনাসামনি অতীত স্মৃতি রোমন্থন হবে। শৈবাল বলে তোর বাবা আমার সাথে বিয়ে দিতে চান নি তাই তো দূরে সরে গেছিলাম। আমি শৈবাল কে বলি বাবা মৃত্যুর আগে আমাকে সব বলে গেছেন।তার আগে তোর জন্য খুব কষ্ট পেয়েছি।বাবার পছন্দ মতো বিয়ে করেছি। তবে তোর মতো ছবি ব্যাগে রাখি নি ,তবে এক দেখায় তোকে চিনতে পেরেছি। শৈবাল তখন বলে আমি ও চিনেছি তোকে সুচরিতা। কিন্তু আমার বৌ এত ফক্কড়,হৈ হৈ করতে ভালোবাসে,ওটা নিয়ে ইয়ার্কি শুরু করত। আমি বলি ছবিগুলো আমায় ফেরৎ দিয়ে দে।অত সুন্দর বৌ তোর, নিশ্চয় কষ্ট পায়।ও হয়ত প্রকাশ করে না। শৈবাল অতীত ছবি ফেরৎ দিয়ে দেয়, বর্তমান ছবি মোবাইলে ধরে নিয়ে যায়।
শৈবালের সঙ্গে আবার হয়ত হবে দেখা।এরপর মাঝে মধ্যে কথা হতো,তবে বর্তমান নিয়ে।ওর মেয়ে ও আমার ছেলের সামনের মাসে বিয়ে। দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তা হচ্ছে এটাতে আমরা খুব খুশি।