Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রাইসলেস বুদ্ধ || Sujan Dasgupta » Page 6

প্রাইসলেস বুদ্ধ || Sujan Dasgupta

কলেজ থেকে ফিরে দেখি প্রমথর সঙ্গে একেনবাবু আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমাকে দেখে বললেন, “ভাগ্যিস এসে গেলেন স্যার, নইলে আপনাকে ছাড়াই যেতে হত।”

“কোথায় যাবার কথা বলছেন?” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

“মিস্টার মেহেতার কাছে স্যার। ওঁর সঙ্গে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছেন প্রমথবাবু। প্রাইসলেন বুদ্ধের ব্যাপারটাতে যদি একটু এগোনো যায়— আর সেইসঙ্গে আমার স্ট্যাম্পটা…”

প্রমথ তৎক্ষণাৎ সাবধান করল। “শুনুন মশাই, আপনি যদি ফের ওই স্ট্যাম্পের কথা তোলেন, তাহলে আমি যাচ্ছি না।”

একেনবাবু বোধহয় একটু ঘ্যানঘ্যানানির প্ল্যান করছিলেন, প্রমথ সেটা অঙ্কুরে বিনাশ করার জন্যে বলল, “না, আমি সিরিয়াসলি বলছি। নো মোর হাই স্কুল স্ট্যাম্প বিজনেস।”

“ঠিক আছে স্যার, ঠিক আছে।” একেনবাবুর গলার একটু অভিমানের সুর।

মোহন মেহেতার ট্র্যাভেল এজেন্সিতে আমি বার কয়েক গেছি কিন্তু ওঁর এই দোকানটাতে আগে কখনো ঢুকিনি। দোকানটা একই বিল্ডিং-এ। তিন তলায় একটা বড়ো ঘর জুড়ে। বাইরে পেতলের ফলকে লেখা ‘মেহেতা স্ট্যাম্প অ্যান্ড কয়েন কোম্পানি।” কাচের শোকেসে নানা দেশের টাকাপয়সা আর স্ট্যাম্প সাজানো। একদিকে দেয়াল ঘেঁষে একটা বড়ো সাইজের ডেস্ক। তার সামনে কিছু চেয়ার। একটু দূরে দেয়ালের সঙ্গে লাগানো মস্ত বড়ো একটা ভল্ট। শোকেসের জিনিসগুলো যে খেলো তা নয়, কিন্তু অনুমান করলাম সত্যিকারের মূল্যবান যা কিছু তা নিশ্চয়ই ওই ভল্টের মধ্যেই রাখা।

মোহন মেহেতা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। “আসুন, আসুন,” বলে অভ্যর্থনা জানালেন। তারপর একেনবাবুকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি তো সেদিন জানতে পারলাম সিরিয়াস স্ট্যাম্প কালেক্টর, আপনাদেরও স্ট্যাম্পের ব্যাপারে উৎসাহ আছে নাকি?”

“না,” প্রমথ জবাব দিল। “আমরা এসেছি শুধু ওঁকে সঙ্গ দিতে।

“ভালো করেছেন, এই যে এখানে সবাই বসুন,” বলে ডেস্কের সামনে আমাদের নিয়ে গেলেন। বসার পর মিস্টার মেহেতা আগ্রহ নিয়ে একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, “এবার বলুন, কীসে আপনার ইন্টারেস্ট?”

“আমি ঠিক শিওর নই, স্যার,” একেনবাবু বললেন। আসলে তোশির মৃত্যুটা নিয়ে আমি একটু কনফিউজড।”

উত্তরটা মিস্টার মেহেতা মনে হয় একেবারেই কল্পনা করেননি। বিস্ময়টা চেপে বললেন, “শুধু আপনি কেন মিস্টার সেন, আমরা সবাই কনফিউজড। হি ওয়াজ এ জেম অফ এ চ্যাপ!”

“রাইট স্যার। ভালো ভালো লোকেরাই কেমন জানি চট করে চলে যান…” বলে একেনবাবু আচমকা থেমে গেলেন।”

মিস্টার মেহেতা কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর বললেন, “আপনি নিশ্চয় ঠিক এ-কথাটা বলার জন্য এত দূর আসেননি?”

“না স্যার,” স্বীকার করলেন একেনবাবু। “আমি যে কেন এসেছি, আমার নিজেরই গুলিয়ে যাচ্ছে স্যার। এই প্রাইসলেস বুদ্ধের ব্যাপারটাই ধরুন— এটাও কি কম কনফিউজিং?”

“প্রাইসলেস বুদ্ধ মানে মিউজিয়াম থেকে চুরির ঘটনাটা বলছেন?”

“এক্সাক্টলি স্যার!”

“এর মধ্যে কনফিউশনের কী আছে?” মিস্টার মেহেতা বেশ বিস্মিত

“না, মানে মিস্টার তোশির এই আকস্মিক মৃত্যু, আর প্রায় একইসঙ্গে চুরি…। যাক গে স্যার। ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আমি এসেছিলাম খোঁজ নিতে আপনার কাছে প্রাইসলেস বুদ্ধের কি কোনো কপি আছে?”

প্রশ্নটা শুনে মিস্টার মেহেতা একটু গম্ভীর হলেন। “তা আছে,” বলে যোগ করলেন, “ওটা কিন্তু মিউজিয়াম থেকে চুরি করা নয়।”

“কী যে বলেন স্যার, ছি ছি! আমি সেটা ভেবে বলিনি। আসলে আমার প্রশ্ন করা উচিত ছিল মিস্টার তোশি ওঁর মৃত্যুর আগে আপনার কাছে স্ট্যাম্পটার খোঁজে এসেছিলেন কিনা।”

“আপনি কোত্থেকে খবর পেয়েছেন জানি না, কিন্তু খবরটা ঠিক।” মিস্টার মেহেতা বললেন, “তোশি স্ট্যাম্পটা খোঁজ করেছিলেন।”

“ব্যাপারটা কি একটু খুলে বলবেন স্যার?”

“বিশদ করে বলার মতো কিছুই নেই। তোশি আমাকে কয়েক দিন আগে ফোন করে জানান ওঁর পরিচিত একজন ভদ্রলোক প্রাইসলেস বুদ্ধের খোঁজ করছেন, আমি স্ট্যাম্পটা বিক্রি করতে রাজি আছি কিনা। আমি বললাম, উচিত দাম পেলে নিশ্চয় বিক্রি করব- কেনা-বেচাই তো আমার ব্যাবসা।”

“কবে উনি ফোন করেছিলেন স্যার?”

“কবে? দাঁড়ান একটু ভাবি। শনিবার? রাইট, শনিবার সকালে।”

“তারপর?”

“প্রথমে কথা ছিল তোশি আমার এখানে স্ট্যাম্পটা দেখতে আসবেন সন্ধে আটটা নাগাদ। আটটার একটু আগে আমি দোকানে এসে আনসারিং মেশিনে তোশির মেসেজ পাই, উনি কোবাই রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন, আমিও যেন সেখানে যাই।

“কোবাই কোথায় স্যার?”

“ঠিক কোথায় বলতে পারব না। এটুকু জানি হোবোকেনে। তোশি অবশ্য ডিরেকশনটা মেসেজে রেখেছিলেন, বেশ ঘুরপথ। তবে আমার আর যাওয়া হয়নি।”

“সেকি স্যার, পথ হারালেন নাকি?”

“না, না, তা নয়। আসলে বেরোতে গিয়েই গাড়িটা গড়বড় শুরু করল। তখন কোবাইয়ে ফোন করে বলি তোশি এলে ওঁকে জানাতে আমি দোকানে ওঁর জন্য অপেক্ষা করে থাকব— উনি যেন চলে আসেন।”

একেনবাবু মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললেন, “আচ্ছা স্যার, মিস্টার তোশির এখানে আসার কথা ছিল… হঠাৎ না এসে আপনাকে কোবাইয়ে যেতে বললেন কেন?”

“এর সঠিক উত্তর আমার জানা অসম্ভব। তবে আমি জানি তোশি কোবাইয়ে খেতে খুব ভালোবাসতেন। আমি কোনোদিন জাপানি রেস্টুরেন্টে যাইনি শুনে বলেছিলেন একদিন ওখানে নিয়ে গিয়ে আমাকে খাওয়াবেন।”

“উনি কি কোবাই থেকে আপনার এখানে আসেন?”

মিস্টার মেহেতা একটু চুপ করে রইলেন। “না, ওঁর সঙ্গে আমার আর দেখা বা কথা হয়নি।”

“উনি কোবাই থেকে আপনাকে ফোন করেননি?”

“যদি করেও থাকেন, কোনো মেসেজ রাখেননি। আমি বেশ কিছুক্ষণ এখানে ছিলাম না। গাড়িটা মেকানিক সারাচ্ছিল, সেখানেই ঘোরাঘুরি করছিলাম।”

“আপনি এখানে আবার কখন আসেন স্যার?”

“তা প্রায় সাড়ে আটটা।”

“আপনি শিওর মিস্টার তোশি এর মধ্যে আপনার এখানে আসেননি?”

“তোশি যা ডিরেকশন দিয়েছিলেন তাতে এখান থেকে কোবাই অন্তত চল্লিশ মিনিটের পথ। আমি নিশ্চিত উনি আসেননি।”

“আপনি কি জানেন স্যার উনি কোবাইয়ে গিয়েছিলেন কিনা?”

“না, আমার কোনো ধারণাই নেই। সেটা জানা কি খুব ইম্পর্টেন্ট মিস্টার সেন?” মিস্টার মেহেতা এবার যেন একটু বিরক্ত হয়েছেন মনে হল।

“ইউ আর রাইট স্যার। ভালোকথা, তোশি কি জানিয়েছিলেন কে আপনার প্রাইসলেস বুদ্ধ কিনতে চান?”

“না।”

“তাহলে আমিই আপনাকে খবরটা দিয়ে দিই স্যার। ভদ্রলোকের নাম মিস্টার মাৎসুয়োকা। আজ সকালেই আলাপ হল। মনে তো হল ওঁর এখনও খুব ইন্টারেস্ট ওটা কেনার।”

“তাই নাকি?” মিস্টার মেহেতার মুখটা এবার উজ্জ্বল হল।

“উনি বোধহয় স্যার অলরেডি প্লেনে- জাপানে যাবার পথে। যাই হোক, আমার কাছে ওঁর ঠিকানাটা আছে। আপনাকে আমি দিয়ে দেব।”

“বাঃ, তাহলে তো খুব ভালো হয়। থ্যাংক ইউ।”

“কী যে বলেন স্যার। আপনি হচ্ছেন দেশের লোক, এটুকু না করলে কি হয়!”

প্রমথ বলল, “স্ট্যাম্পটা বিক্রি হলে এঁকে না হয় একটু কমিশন দিয়ে দেবেন।

মিস্টার মেহেতা কথাটা শুনে হেসে ফেললেন, “নিশ্চয় দেব।”

একেনবাবু ইতিমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছেন, “স্যার, আপনার স্ট্যাম্পের কালেকশন কিছু দেখতে পারি?”

“নিশ্চয়, আসুন।” বলে শোকেসের সামনে নিয়ে গিয়ে আমাদের ঘুরে ঘুরে স্ট্যাম্প দেখাতে লাগলেন। শোকেসের স্ট্যাম্পগুলো শুনলাম খুব দামি নয়, তাও কিছু কিছুর দাম পাঁচশো ডলারের ওপরে! তার মধ্যে একটা স্ট্যাম্প দেখে একেনবাবু দারুণ উত্তেজিত। “স্যার, এটা তো হাওয়াইয়ান মিশনারি সিরিজের!”

মিস্টার মেহেতা মুচকি হাসলেন। “ঠিক ধরেছেন। কিন্তু এটা সেরকম দামি নয়!”

“সে কী স্যার, আমি তো শুনেছিলাম ওগুলোর দাম হাজার হাজার ডলার!”

“আপনি ভাবছেন হাওয়াইয়ান মিশনারির দু-সেন্টের নীল স্ট্যাম্পটার কথা।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “সেটার দাম কত?”

“তা প্রায় সাড়ে তিনশো হাজার ডলারের মতো হবে।”

“মাই গড!”

প্রমথ সবজান্তার মতো মুখ করে বলল, “এত অবাক হচ্ছিস কেন, ব্রিটিশ গায়ানার ওয়ান সেন্ট ম্যাজেন্টা তো এক মিলিয়ান ডলার।”

“ঠিক বলেছেন,” মাথা নাড়লেন মিস্টার মেহেতা। “আপনি মনে হচ্ছে স্ট্যাম্পের খবর কিছু কিছু রাখেন।”

আমার এক বার ইচ্ছে করল প্রমথর জ্ঞানের রহস্যটা ফাঁস করে দিই। কিন্তু দিলাম না। তার বদলে মিস্টার মেহেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার কাছে কি সেই দু-সেন্টের স্ট্যাম্পটা আছে?”

“খেপেছেন, অত টাকা কোথায় পাব? তা ছাড়া যে স্ট্যাম্প নিয়ে খুনখারাবি পর্যন্ত হয়েছে- ওর মধ্যে আমি নেই!”

“খুনখারাবি?” আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।

“সে কি, আপনি জানেন না?”

“না।”

“তাও তো বটে, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম স্ট্যাম্পে আপনার ইন্টারেস্ট নেই।

আমি বললাম, “এই ভয়েই কি ওয়ান সেন্ট ম্যাজেন্টা যিনি কিনেছেন তিনি তাঁর নাম কাউকে জানাননি?”

“এ খবর আপনাদের কে দিল?”

“মিস্টার মাৎসুয়োকা। কেন খবরটা কি ভুল?”

“না, ভুল নয়। তবে নাম লুকিয়ে স্ট্যাম্প কেনার উদ্দেশ্যটা অন্য।”

“কী উদ্দেশ্য?”

“এতে স্ট্যাম্প নিয়ে একটা রহস্য সৃষ্টি হয়, ফলে সেই স্ট্যাম্প সম্পর্কে লোকের আগ্রহটা বাড়ে। স্ট্যাম্পের তো আলাদা কোনো দাম নেই। লোকের ইন্টারেস্ট যত বেশি হবে, স্ট্যাম্পের দাম ততই বাড়বে। ওয়ান সেন্ট ম্যাজেন্টার কথাই ধরুন না। ওটা কোথায় কেউ জানে না, তাই ওটা পাওয়ার জন্য সবাই পাগল! ওটা যদি এখন নিলামে ওঠে, দেখবেন কত লোক বস্তা বস্তা টাকা নিয়ে সেখানে হাজির হবে।”

ইন্টারেস্টিং। মিস্টার মেহেতার কথাটা সত্যি ভাবার মতো। এঁকেই বলে ব্যবসায়ী বুদ্ধি!

“প্রাইসলেস বুদ্ধটা তো স্যার দেখলাম না,” একেনবাবু বললেন।

“ওটা আমি বাইরে রাখি না। আমার দামি স্ট্যাম্পগুলো সব ওই ভল্টে। আজ ভল্টটা খুলতে পারব না। চাবি বাড়িতে ফেলে এসেছি। আরেক দিন আসবেন, দেখাব।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *