পুরুষ, আমি নারী–তোমার পাঁজরের অস্থি দিয়ে গড়া
আমার কুল নেই, উদাস বিলাপে সব কুল আমি ভাঙ্গি
আমার চরে বসতি গড়ে তবু নই আমি উর্বরা
শিকারী আমি ঝলসে উঠে সহজে ঠকাতে পারি
শুষ্ক হৃদয়ের মায়াবী মরীচিকার সৈনিক আমি…..
তোমার পৃথিবীর রামধনু রঙ রক্তিম পদতলে দলি
ডাইনী আমি, অন্তরালে অন্তহীন কুহুকিনীর ডাকে
অচেনা স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে চলি, প্লাবন ডেকে আনি
তোমার ভালোবাসার মরুদ্যানে অভিশাপ আমি
আমার অশান্ত ঘূর্ণিজলের পাকে শূন্য তুমি।
হেলেন, সীতা, দ্রৌপদী কত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নায়িকা আমি
সেই নারী আমি যার গরিমায় হয়েছো কাঙ্গাল
তোমার চাঁদার কৌটয় চার-আনা, ছ’আনা, সিকি আধুলি আমি…..
আমার মুখের ভাঁজে ভাঁজে শতাব্দীর বহু প্রশ্ন
দেখছো না? পলে পলে আমি ইতিহাস গোলকধাঁধায়…..
পুরুষ, তুমি সেই সৃষ্টির আদি পুরুষ, আমি কলঙ্কিত নায়িকা
আদিম পিপাসার্ত পথিক তুমি, মেনে নাওনি লিলিথের প্রতিবাদ
আমি ভোগ্যবস্তু, তালগোল পাকানো জড় মাংসপিন্ড, কখনা হাড়ের সমষ্টি
আমার লজ্জা, অপমান ছুঁড়ে দিয়েছো শ্মশানের জ্বলন্ত কাঠ কয়লায়
নদীর ওপারে দাঁড়িয়ে তোমার ডাকে আপ্রাণ সাঁতার কাটি
ডুবতে থাকি, তুমি দূর হতে দূরে সড়ে যাও
সহসা হারিয়ে মন বিদ্রোহী হয়ে উঠে…..
অদ্ভুত কিছু জন্তু আমাকে পায়ের নীচে দলে
বিষযন্ত্রণায় আমি কাতরাই, তোমার উল্লাস বাড়ে তাতে
মুছে দেয় আমার জন্মসূত্র,শিক্ষা, বুদ্ধি, অধিকারের অভিমান
সাদা ক্যানভাসে সিঁথির লাল রঙ ঢেলে দেয় কালো আঁধার
সতীর চোলায় ঠেলে দাও সহমরণে জ্বলন্ত চিতায়।
উফ্! কি যন্ত্রণা!
আদম, তোমার পাঁজরের অস্থি–আমি ইভ
স্পর্ধার নেশায় ভুলে গেছ আমি অর্ধনারীশ্বর
“আমি যেরূপ জ্ঞানী, তুমিও সেরূপ জ্ঞানী,
আমি সামমন্ত্র, তুমি ঋকমন্ত্র
আমি দুল্যোক, তুমি পৃথিবী লোক”।