Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রবাসে দৈবের বশে || Tarapada Roy

প্রবাসে দৈবের বশে || Tarapada Roy

সর্বাণীকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না।

বহু কষ্টে অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি সংগ্রহ করেছেন সর্বানন্দ। তাঁর প্রাণের ইচ্ছে এই এক সপ্তাহ কলকাতায় শুয়ে-বসে চুটিয়ে আড্ডা দেন, পান ভোজন করেন।

কিন্তু বাদ সেধেছেন সর্বাণী। তিনি ছুটির মধ্যে কলকাতায় থাকবেন না। একদিনের জন্যেও।

অনেক দাম্পত্য কলহ, ধ্বস্তাধ্বস্তি, রীতিমতো দর কষাকষির পর রফা হল যে ছুটির প্রথম ভাগ কলকাতায় এবং শেষ কয়েকটা দিন বাইরে কাটানো যাবে।

বাইরে মানে খুব একটা বাইরে নয়। চির নবীন, পরম পবিত্র পুরী। মন্দির, সমুদ্র, বাজার নিয়ে পুরীর আকর্ষণ আলাদা।

কিন্তু ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি এখন স্বর্গে ধান ভানার খুব ধূম। কারণ পৃথিবীর সব ঢেঁকিই স্বর্গে চলে গেছে।

সে যা হোক, অবান্তর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সোজা কথা, সর্বানন্দ পুরী গিয়েও প্রাণের আনন্দে মদ্যপান করতে লাগলেন তবে সর্বাণীর পক্ষে এখানে একটা স্বস্তি এই যে সর্বানন্দের মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরার সমস্যা নেই। যে হোটেলে তাঁরা আছেন তারই নীচতলায় বার কাম হোটেল।

দুপুরে এবং সন্ধ্যায় ভোজনের ঘণ্টাখানেক আগে সর্বানন্দ নীচে নেমে যান। তাঁরা পাঁচতলায় সমুদ্রের দিকে একটা ঘর পেয়েছেন। লিফটে করে নেমে গিয়ে সর্বানন্দ পান শুরু করেন। এই অবসরে সর্বাণী সাজগোজ, গোছগাছ করেন। জানালায় দাঁড়িয়ে লবণাম্বুরাশি পর্যবেক্ষণ করেন, মধ্য সমুদ্রের ঢেউয়ে দোল খাওয়া নৌকোর দিকে তাকিয়ে রজনীকান্তের গান গুনগুন করেন, ‘শাল কাঠের সেই অক্ষয় বজরা যাবে আপন বলে।’ তারপর ধীরে সুস্থে নীচে নেমে যান।

ততক্ষণে সর্বানন্দের রংয়ের উপর রং চড়েছে। সর্বাণী এসে যাওয়ার পরে আরও এক পাত্র পানীয় নিয়ে খাবারের অর্ডার দেন তিনি। অনেকদিন খাওয়া শেষ হওয়ার বাদে সর্বাণী চলে যাওয়ার পরেও সর্বানন্দ একাই টেবিলে বসে আরও একটু পান করেন।

এই বারেই এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। প্রথম দিন সন্ধ্যাতেই পরিচয় হল। সর্বাণী চলে যাওয়ার পরে পাশের টেবিল থেকে নিজের গেলাস নিয়ে উঠে এসে পরিচয় করেন। নিজের নাম বললেন, হৃদয় নাগ।

হৃদয়বাবুকে সর্বানন্দের ভালই লাগল। হৃদয়বাবু লোক খারাপ নয়, তদুপরি সুরসিক এবং পানরসিক। প্রথম দিনেই নৈশ ভোজনের শেষে দু’জনে মুখোমুখি বসে প্রায় ঘণ্টাখানেক আকণ্ঠ করলেন। তারপর টলতে টলতে লিফটে উঠে যে যাঁর ঘরে ফিরলেন টইটম্বুর অবস্থায়।

হৃদয়বাবুও সস্ত্রীক এই একই হোটেলে উঠেছেন। সর্বানন্দের তলাতেই আশেপাশে তাঁর ঘর। তবে হৃদয়বাবুর হৃদয়েশ্বরী ঘোরতর মদ্যপান বিরোধী। তিনি সর্বাণীরও এক কাঠি ওপরে। তিনি বারে মাতালদের সঙ্গে খাবার খেতে রাজি নন। তাঁর খাবার ঘরে নিয়ে যায় বেয়ারা। তবে হৃদয়েশ্বরীর একটা গুণ আছে, তিনি ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, হৃদয়বাবুর পান করা নিয়ে মাথা ঘামান না।

হৃদয়বাবুর মুখে তাঁর হৃদয়েশ্বরীর কথা শুনে সর্বানন্দের খুব কৌতূহল হল। পরের দিন মধ্যাহ্ন ভোজনের সময় এই কৌতূহল আরও বেড়ে গেল যখন হৃদয়বাবু বললেন, ‘ও মশায়, আমার স্ত্রী কিন্তু আপনাকে বিলক্ষণ চেনেন। আপনাদেরই চেতলার মেয়ে। বলল, আপনি নাকি একবার চোর ভেবে একটা সাদা পোশাকের পুলিশকে বেধড়ক পিটিয়ে ছয়মাস পাড়া থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন।’

‘দশ-বারো বছর আগের কথা, কিন্তু কথাটা পুরো সত্যি। আপনার স্ত্রীর নামটা বলবেন?’

বিকেলে ব্যাপারটা আরও জটিল হল। ইতিমধ্যে সর্বাণীর সঙ্গে হৃদয়েশ্বরীর আলাপ পরিচয় হয়েছে। সর্বাণী জানালেন, ‘ওগো তোমার নতুন বন্ধুর স্ত্রী তো তোমার গুণমুগ্ধ ফ্যান। তোমার সেই ধ্যাডধেড়ে চেতলার বাল্য সখী।’ সর্বানন্দ বিনীতভাবে জানতে চাইলেন, ‘নামটা কী?’ সর্বাণী বললে, ‘নাম? বিয়েওলা মেয়ের আবার নাম আছে নাকি? মিসেস নাগই যথেষ্ট। দেখো আবার নতুন করে লটঘট করে বোসো না।’

সেদিনই নৈশভোজের পরে পান করতে করতে প্রায় অন্যরূপ ইঙ্গিত দিলেন হৃদয় নাগ, ‘আমার স্ত্রী খুব উতলা হয়ে পড়েছেন আপনার জন্যে, আপনিও কি তাই?’ কিছুই উত্তর দিতে পারলেন না সর্বানন্দবাবু, তিনি কে, তাঁর কী নাম কিছুই জানা নেই, কী বলবেন।

আসল মজাটা হল গভীর রাতে। প্রচুর পরিমাণ পান করার পরেও হৃদয় মদ খেয়ে যাচ্ছেন, কোনও উপায় না দেখে সর্বানন্দ ‘গুড নাইট’ বলে বিদায় নিলেন। কিন্তু লিফটে উঠে প্রায়ান্ধকার বারান্দায় নেমে গুলিয়ে ফেললেন কোনটা তাঁর ঘর। কিছুক্ষণ এলোপাতাড়ি চেষ্টা করার পর তিনি বারান্দার একমাথা থেকে প্রত্যেক ঘরের দরজায় হোটেলের চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা করে যেতে লাগলেন, যেটা খুলবে সেটাই তাঁর ঘর।

এই সময় অঘটন ঘটল। একটা ঘরের দরজায় চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা করছেন, এমন সময় পিঠে একটা চাপড় খেয়ে মুখ ফিরিয়ে দেখেন, টলটলায়মান হৃদয়বাবু দাঁড়িয়ে।

একটু ঢোঁক গিলে, চিবিয়ে চিবিয়ে হৃদয়বাবু সৰ্বানন্দকে বললেন, ‘আপনার এই চাবি যদি এই দরজায় লাগে তা হলে কিন্তু কেলেঙ্কারি হবে।’

সর্বানন্দ বললেন, ‘কী কেলেঙ্কারি?’

হৃদয়বাবু বললেন, ‘এটা আমার ঘর। আপনার চাবি দিয়ে যদি আমার ঘর খোলে তবে আমার স্ত্রী এবং আপনাকে অনেক ব্যাখ্যা দিতে হবে আপনার স্ত্রী আর আমার কাছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *