Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রতিবাদী আওয়াজ || Roma Gupta

প্রতিবাদী আওয়াজ || Roma Gupta

ঝন্টু রিক্সাওয়ালা
সহজ, সরল, প্রতিবাদী।
বৌ সুধা ও একটা মেয়ে নিয়ে সংসার।
বয়সের তুলনায় ঝন্টুকে একটু বুড়ো দেখায়।
নিত্যদিন দুবেলা রিক্সা চালিয়ে তার রোজগার।

সেদিন যাত্রী নামিয়ে ফিরছে। শীতের রাত, হাল্কা বৃষ্টি পড়ছে। ঝন্টু বড় রাস্তা ছেড়ে গলির ভিতর দিয়ে তাড়াতাড়ি আসছে। পথে এক জায়গায় ঝোপঝাড়ে ভরা বিস্তৃত বড় মাঠের থেকে কোনো মেয়ের গোঙানির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ায়। বৃষ্টি ভেজা শীতের আবহাওয়ায় চারদিক নিস্তব্ধ, শুনসান। সে ভাবে, শীতের রাতে এমন আওয়াজ! ভূত প্রেতের ইশারা নাতো! ঝন্টু রিক্সার প্যাডেল চালাতেই তার কানে ভেসে এলো মাগো– আর্তনাদ। মুহূর্তে সে লাফিয়ে নেমে টর্চ হাতে উর্ধ্বশ্বাসে সেদিকে দৌড়াতে থাকে আর চিৎকার করে বলে,কে আছেন সব বেরিয়ে আসুন, সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে গো, সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। মাঠের মাঝামাঝি ঝন্টু পৌঁছে গেলে মুখে কাপড় ঢাকা দুটো ছেলে ঝন্টুর দিকে তেড়ে আসে। ঝন্টু হাতের টর্চটা দিয়ে সজোরে বাড়ি মারে একটার মাথায়। তার সঙ্গে চিৎকারে আশপাশের লোকজন ডাকতে থাকে। ছেলে দুটো ভয়ে পিছটান দেয়। আর একটু এগোতেই দেখে তিনটে ছেলে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে দৌড়ে মাঠের শেষে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। ঝন্টু দাপটে চেঁচায় ‘ আয় শালা হায়নার দল, দেখি কেমন বাপের পুত তোরা।’ ঝন্টুর এরকম প্রতিবাদী আওয়াজে দুজন লোক মোটরসাইকেলে যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে যায়। ঝন্টু তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে দেখে, একটা পনেরো ষোলো বছরের মেয়ে হাত বাঁধা মুখে কাপড় গোঁজা অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। মুখের পাশ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। রক্তে ভেজা পোশাক

ঝন্টু মমতার সুরে বলে, ” মা রে–, তুই কোন বাড়ির মেয়ে রে! আহা শ্বাপদগুলোয় কী অবস্থা করেছে! ততক্ষণে মোটরসাইকেলের একজন চলে আসে। ঝন্টু মেয়েটির মুখ হাতের বাঁধন খুলে তাড়াতাড়ি কোলে তুলে রিক্সায় আনে। মোটরসাইকেলে আসা ভদ্রলোক দুজন বলেন, সামনেই হাসপাতাল আছে নিয়ে চলো, আমরাও যাচ্ছি । তাঁদের একজন মেয়েটিকে নিয়ে রিক্সায় বসলো আর ঝন্টু দ্রুত চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

লোক দুজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে মেয়েটিকে ভর্তি করালো। তারপর মেয়েটির ফোন থেকে তার ঘরে খবরটা জানিয়ে চলে গেলো নিজেদের গন্তব্যে। ঝন্টু কিন্তু বসে রইলো, আর নার্সদের কাছে আকুতি মিনতি করতে থাকলো মেয়েটার দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।

কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটির বাবা এসে পৌঁছায়। মেয়ের বাবা ডাক্তার। এই হাসপাতালেই বসে, ডাঃ মৈনাক বিশ্বাস।

মেয়ের কাছে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা করে প্রায় রাত দেড়টায় নিজের কেবিনে বসে শোনেন, যে রিক্সাওয়ালা তাঁর মেয়েকে নিয়ে এসেছে সে এখনো বসে আছে মেয়েটার খবর জানবার জন্য।

শুনেই মৈনাক বিশ্বাস নিজে দেখা করতে চলে আসেন রিক্সাওয়ালার কাছে। ঝন্টুকে দেখেই চিনতে পারেন তিনি , তাঁকে ছোটোবেলায় ইস্কুলে পৌঁছে দিতো এই রিক্সাওয়ালাই।

তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নাম কি? ঝন্টু বলে, আজ্ঞে আমার নাম ঝন্টু। ঝন্টু রিক্সাওয়ালা নামে পরিচিত। যেই শুনলেন নাম ঝন্টু অমনি আবেগে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন মৈনাক ডাক্তার। বললেন আজ আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে চিরঋণী করে রাখলে আমায় কাকু। হাত ধরে নিয়ে বসালেন নিজের কেবিনে। তারপর পরিচয় দিলেন নিজের। ছোটবেলায় প্রাইমারী পড়াকালীন ঝন্টুর রিক্সাতেই তিনি পাঁচবছর গিয়েছেন কলেজিয়েট স্কুলে। শুনে ঝন্টুরও অশ্রুসজল হয়। এরপর ঝন্টুর মুখে ঘটনা সব শুনলেন। ঝন্টুকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাড়িতে জানানো হয়েছে? ঝন্টুর সম্বিৎ এলো, সুধাকে তো জানানো হয়নি! তাড়াতাড়ি কোমরে লুঙ্গির ভাঁজ থেকে কাগজ বের করে লেখা নম্বর দেখিয়ে মৈনাকের বলে, একটু সুধাকে ফোনে জানাতে। মৈনাক কথা বলিয়ে দেয়। তারপর খাবার আনিয়ে খাওয়ায়।

ভোরবেলা ঝন্টু ফিরছে যখন মৈনাক ছোটবেলার মতোই সম্বোধন করে বলেন, ঝন্টুকাকু , কোনো অসুবিধায় পডলে জানিও, আমার বাড়ি তো চেনো। কথা দিলাম পাশে থাকবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *