প্রকৃত মানবধর্ম
সারদাবালা এখন ভিখারী। তীর্থ ভ্রমণে গিয়ে নৌকাডুবিতে স্বামী সন্তান হারায়। শোকে পাথর । কোনো কথা বলেনা। শুধু বলে নৌকাডুবিতে সব হারালাম , আমি পাপী তাই বেঁচে আছি।
চুপচাপ বসে থাকে, দিন রাত জ্ঞান নেই। গ্ৰামের নিধি বৈরাগী ভিক্ষে করে এনে খাওয়ায় , যত্ন নেয়।
বুঝিয়ে বলে কি করবি! ভাগ্যের পরিহাস। আমিও তো একা। বিয়ের পর সন্তান হয়নি বলে কত গঞ্জনা। স্বামী ভিনদেশে কাজে গেল , আর ফিরলো না। শাশুড়ি তাড়িয়ে দিলো।
সেই থেকে কৃষ্ণনাম করে ভিক্ষা করি। বুড়ো শিবের মন্দিরের পূজারীর করুনায় মন্দিরের বারান্দায় রাত কাটাই। দিনে ভিক্ষা করে যেমন পারি থাকি।
একটু ধাতস্ত হলে সারদাও বৈরাগীর সঙ্গে ভিক্ষে করতে যায়। স্বামী জমিদার বাড়ির কোষাধ্যক্ষ ছিল, অভাব ছিলনা।
তার না খেয়ে ঘুরে বেড়ানো সহ্য হবে কেন?
কয়েক মাসের মধ্যেই অসুস্থ হলো। শরীরে জোর নেই, হাঁটাচলার কষ্ট। ভিক্ষে করতে যেতে পারেনা।
বৈরাগী সময়ে সময়ে এসে খবর নেয়। খাবার দেয়।
দিন দিন অসুখ বাড়ে। ওষুধ খাওয়ানো, ডাক্তার খরচ কোথায় পাবে! কে দেবে?
একদিন বৈরাগী পাশের গ্ৰামে যে জমিদার বাড়িতে সারদার স্বামী কাজ করতেন সেখানে ভিক্ষে করতে গিয়ে জমিদার গিন্নিকে সমস্ত কথা জানায়।
গিন্নি ধার্মিক। আগেও স্বামীকে বলেছেন, সারদাবালার কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিতে। এবার ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বামীকে বললেন, “প্রকৃত মানবধর্ম দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো”। সারদা তো মরতে বসেছে!
জমিদারবাবু লোক পাঠিয়ে সারদার আয়ের ব্যবস্থা করলেন।