প্রকৃতি পাঠ
ভোর বেলার মায়াবী আলোছায়া ঢাকা প্রকৃতির ঘুম ভাঙ্গে এক ঝাঁক পাখিদের সমবেত ভোরাই সুরে—- দোয়েল ফিঙে বুলবুলি টুনটুনি মোটুসীর সাথে স্বর মেলা তে আসে ঘুঘু বেনে বউ ডাহুক হাঁড়িচাচা ছাতারেরা। কোকিল ও পাপিয়া ও মাঝে মাঝে সংগত করে। বড় মনকাড়া ঐক্যতান। কাজ ভোলানোর সুর মনটাকে বড্ড আনমনা করে দেয়। শরৎ মেঘের ভেলায় ভেসে চলে বাউল মন। ছুটির বাঁশি যে বেজেছে প্রকৃতিতে। পরিযায়ী ডানা যে উড়ান টানছে। মন কি ঘরে থাকে? ওই পাখির ডানা কে অনুসরণ করে উড়ে চলে অচিনপুরের উদ্দেশ্যে। শ্বেতশিমুলের ডালে গাং শালিকের ঝাঁক এসে বসে আকাশ বাজির মন্ত্র জপে। তারপর আবার সদলবলে উড়ে চলে আকাশের উধাও মাঠে। মনটা বড় হু হু করতে থাকে। এই শরত্ প্রকৃতির বড্ড পিছু টানে। ঘর ছাড়া মন হারিয়ে যাবার মাঠ খোঁজে। নিঃসীম শূন্যের মাঝে চক্কর কাটা গেরোবাজ এর সাহসী ডানা কে অনুসরণ করতে চায় পাগল মন। দূর থেকে ভেসে আসা চিলে র তীক্ষ্ণ স্বর বুকে চমক তোলে। হঠাৎ দূর থেকে তীব্র স্বরে শিস দিতে দিতে উড়ে আসে বড় মাছরাঙ্গা দম্পতি। তুঁতে নীল লাল কমলা রঙের মিছিল তুলে সবাইকে সচকিত করে উড়ে চলে ঝিলের দিকে। ওর তীব্রস্বরে চমক ভাঙ্গে সবার। সচেতন হয় পাক পাখালি। অতিথি দুধ রাজরা ক্ষণিক দর্শনে সবাইকে মোহিত করে উড়ে চলে পুবের পানে। ওদের সাদাকালো ডানায় লাগে সোনালী রোদের চমক। ধীরে ধীরে চাকা গড়াতে থাকে। কর্মচঞ্চল পাখিকুল। কেউবা খাদ্য সংগ্রহে কেউবা বাকবিতণ্ডায়। দুপুর গড়িয়ে চলে। দূরে বড় রাস্তার পাশের শিরিষ গাছের সাথী হারা পাপিয়া পিউ কাঁহা পিউ কাহা বলে সারা প্রকৃতিতে ব্যথার লহর তুলছে। গভীর রাতে ওদের বেদনাতুর আর্তি ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় ।ক্লান্ত দুপুর ঘুঘু আর কুবোর ক্লান্ত স্বরে মাখামাখি। জল বাগানে গাং শালিকেরা স্নান করে ডানার জল ঝরিয়ে আম্রপালির ডালে গিয়ে বসে। দোয়েল ও সাথ দেয় ওদের। বুলবুলির মিষ্টি স্বরে নিস্তব্ধ বাগান আবার সরব হয়ে ওঠে। পায়রার ঝাঁক আকাশ বাজি শুরু করে। দূরে বিদ্যুতের তারে গাংশালিকেরা মিটিং বসায়। ধীরে ধীরে বিকেল গড়িয়ে চলে। নয়ানজুলির পাডে বসা বকের দল শেষ বিকেলের আলো ডানায় মেখে উড়ে চলে পশ্চিম দিগন্তের পানে। রাক্ষসী বেলার লালিমা ডানায় মেখে নিয়ে। দিনের শেষ আলো মুছে যায়। আঁধারের ওড়নায় ঢাকা পরে মাঠ । ধীরে ধীরে একটি দুটি তারা ফোটে আকাশে তামসী তপস্বিনীর জপমালার মোতির মত। পেঁচা দম্পতি নিশিটহলে বেরিয়ে এসে বসে নারকেল গাছের ডালে। কর্তা গিন্নির দাম্পত্য কলহ চলতেই থাকে। দূর থেকে ভেসে আসে একলা পাপিয়ার পিউকাহা স্বর । মনটা বেদনায় আতুর হয়ে পড়ে। পাখিদের পাঠশালায় দিবারাত্রির কাব্য চলে এভাবেই।