পেত্নীর বিয়ে
পোয়ামারার সেতুটা পেরোলেই ধুন্দুলের বিশাল মাঠের দখিণ কোনে তেঁতুল গাছের মগডালে ছিল– ওস্তাদ গাইয়ে ব্রহ্মদত্যির ঘর। রাতদুপুরে খোঁনাসুরে সে যখন রেওয়াজ করতো আর,গেছোভূত,মেছোভূত ও
মামদো ভূতেরা বসে তাল ঠুকতো ,তখন বাজনার তান্ডবে আর গানের গমকে ধুন্দুলের মাঠ কেঁপে উঠতো।
ধুন্দুলের পশ্চিমে প্রেতপাড়াতে অষ্টাদশী শ্যাওড়াপেত্নী- সেই ভরদুপুর রাতে বাদামী চুল উড়িয়ে শ্যাওড়াগাছের-
ডালে বসে পা নাচিয়ে ব্যাঙ ভর্তা খাচ্ছিলো তাড়িয়ে- তাড়িয়ে,হঠাৎ দখিণা বাতাসে মরমী সুর ভেসে আসতে-
শ্যাওড়াপেত্নীর কান খাড়া,আহা!কি মধুর!কে?কে গাইছে অমন প্রাণ মাতানো গান?।
ব্যাঙ ভর্তার মতো অমৃত ও তেতো লাগে,ব্যস,সেই থেকে বিরস বিষাদবালা শ্যাওড়াপেত্নী।
সখি মেছোনীপেত্নী উতলা হয়,কি হলো সই,কথাটি- কসনা,খাসনা,মুখে হাসি নেই,আমাকেও বলবিনে?
শ্যাওড়াপেত্নী দীর্ঘশ্বাস ফেলে,চোখ থেকে টস টস করে জল গড়ায়,হড়বড়িয়ে মনের কথাটুকু বলেই ফেলে প্রিয় সখিকে।
শোনামাত্র হেসে উঠে মেছোনি,ওমা! তুই বেম্মদার কথা কইছিস ,বেম্মদার গানের জাদুতে ভূতপাড়ার কতো মেয়েরাই ৩২৬তো পাগল, কিন্তু বেম্মদা যে পণ করেছে,বৌ চাইনে,গান নিয়েই জীবন কাটাবে, তবু দেখি , তুই চল আমার সাথে—
সুর সাধনায় তন্ময় ব্রহ্মদত্যি,ধবধবে পাদু’টো ঝুলে রয়েছে,আড়াল থেকে বিমুগ্ধ শ্যাওড়াপেত্নী বিড়বিড় করে,ওই দুগ্ধকমল চরণে আমাকে ঠাঁই দাও প্রিয়তম, প্রাণমন জুড়াবো সুরের ছোঁয়ায়–
,দেখতে দেখতে বাহ্যজ্ঞান লোপ পাবার মত দেখে মেছোনি টেনে আনে।
জলার ভূতের ঘটক হিসেবে খুব সুনাম ভূতসমাজে, মেছোনি গিয়ে তাকেই ধরে,ও ঘটক ঠাকুর,ঘটকালিতে তোমার জোড়া নেই তাই এলাম গো,একটা উপায় করে দাও দিকিনি।
প্রশংসায় কে না খুশি হয়,জলারভূত ও গলে মোম হন, বলছিসতো, কিন্তু বড্ড শক্ত ব্যাপার রে,শ্যাওড়াপেত্নী যে প্রেতপাড়ার মেয়েরে,ব্রহ্মদত্যি তো কুলীন ব্রাহ্মণ,জাত খোয়াতে রাজি হবে কি?
মেছোনি মিষ্টি হেসে মোটা দক্ষিণার টোপ ফেলে, তিনপুরুষ ঠ্যাং দুলিয়ে খেতে পারবেগো,তোমার
তো খুব চিকন বুদ্ধি,তাতে একটু শান দাওনা বাপু–
ঘটকমশাই হেসে তখুনি ছাতা বগলে, কাঁধে উড়নি ফেলে পলকে হাজির হতেই ঘটককে দেখে গেছো,মামদো,, মেছো ভূতেরা সবাই অবাক,ঠাকুর মশাই যে,আসুন,
আসুন,আপনি হঠাৎ কি মনে করে?
চতুর ঘটক জানায়,একটি মিষ্টি মেয়ে তোমার গান শুনেই মজেছে,নাওয়া-খাওয়া,ঘুম সব বাদ দিয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছে, বলছে,তোমার সাথে বিয়ে নাহলে নাকি জলে ডুবে সে- আত্মঘাতী হবে,তোমার গান শুনেইএকেবারে উন্মাদিনী গো, কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা,আমার তো হাড়গোড় কাঁপছে তাই ছুটে এলুম।
ব্রহ্মদত্যি আনমনা হয়ে ভাবে,এমন মেয়েও আছে তাতো জানতোনা,অদেখা মেয়েটিও প্রাণ দিয়ে গান ভালবাসে,ঠিক তারই মতো,ভাবছে ব্রহ্মদত্যি–
মেছোর দিকে ঘুরে বলে,যা্ শাকচুন্নীকে বলগে’ ভালো করে ‘ঘটকঠাকুরকে জলখাবার দিতে।
একগাল চতুর হাসি ঘটকের চোয়াল চুয়ে ঝরে– রামছাগলের মাথার ঘিলু চুষতে চুষতে কথা ছুঁড়লেন, তাহলে,রাজি তো,আসলে,মেয়েটি খুব সরলমনা,রংটা অমাবস্যা হলেও গড়ন খুব সুন্দর,আর চোখদুটো ভারী টানাটানা,হাসিটা ভারী মিষ্টি—
ব্রহ্মদত্যির চোখে তখন গানপাগলা অদেখা এক অষ্টাদশীর অপরূপ ছবি ভাসছে—-