Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পুজোতে ঢোল সানাই || Adrish Bardhan

পুজোতে ঢোল সানাই || Adrish Bardhan

পুজোতে ঢোল সানাই। ইন্দ্রনাথ রুদ্র

অদ্রীশ বর্ধনের গল্প নিয়ে গোয়েন্দা ধাঁধা ঘেঁটু
পুজোতে ঢোল সানাই। ইন্দ্রনাথ রুদ্র

সাংবাদিক তদন্তকে নিয়ে ইন্দ্রনাথ গিয়েছিল কলকাতার একটা বিখ্যাত প্রমোদ মহলে। সুরা এবং সাকীর জন্যে বিলক্ষণ সুনাম আছে প্রতিষ্ঠানটির। অবসর মুহূর্তকে রঙিন করে তোলার প্রয়াসে বহু গণ্যমান্য ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে এখানে।

সাংবাদিক তদন্ত অথবা ইন্দ্রনাথের সোমরস সম্বন্ধে খুঁচিবাই না থাকলেও পরি সম্বন্ধে অ্যালার্জি আছে। তা সত্ত্বেও এসেছে ক্যাবারে নাচে ছন্দিত, উদ্দাম জাজসঙ্গীতে মুখরিত হলঘরটির মধ্যে। দাঁড়িয়ে আছে ঘরের এককোণে–যেখান থেকে সবাইকে শ্যেনচোখে দেখা যায় কিন্তু ওদের দেখা যায় না।

হঠাৎ কাঁধে হাত রাখল ইন্দ্রনাথ। চোখ ফেরাল তদন্ত। ইন্দ্রনাথ গল গল করে ধোঁয়া ছাড়ছে নাকমুখ দিয়ে–চোখ দুটো কিন্তু ধোয়ার পরদা ভেদ করে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।

উর্দিপরা দ্বাররক্ষক দরজা খুলে ধরেছে সসম্মানে। খোলা দরজার মধ্যে দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ডানহাতে একটা ছড়ি নিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী পরেশনাথ পুরকায়স্থ।..

পরেশনাথ পুরকায়স্থ।…

তিনদিন আগে একটি অঘটন ঘটেছিল তার বাড়িতে।

ভদ্রলোক গবেষণা করছিলেন অন্য বিষয় নিয়ে কিন্তু কোত্থেকে কী যে হয়ে গেল–আবিষ্কার করে ফেললেন আর একটা জিনিস। জন্মনিয়ন্ত্রণ বটিকা–তাও এই বাংলারই ফেলে দেওয়া গাছগাছড়ার রস থেকে।

বুঝুন ঠ্যালা। একেই বলে পুরুষস্য ভাগ্যম…। অজ পাড়াগাঁয়ে টো-টো করে খাল বিল ডোবার ধার থেকে আজেবাজে আগাছা জোগাড় করে নিংড়ে রস বার করেছিলেন পরেশনাথ। সেই রস স্তন্যপায়ী জীবদের রক্তে ঢুকিয়ে দিয়ে দেখছিলেন গ্ল্যান্ডের ওপর কী রিঅ্যাকসন হয়। একদিন দু দিন নয় ঝাড়া দুটি বছর খালি রস নিংড়েছেন, সলিউসন বানিয়েছেন, চুঁচ, ফুটিয়েছেন।

বছর দুই পরে ডাইরির পাতায় নতুন করে চোখ বুলোতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল পরেশনাথ পুরকায়স্থর। ডাইরি তিনি দেখেন রোজই। রোজকার গবেষণা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখে রাখেন। যাদের গায়ে ওষুধ ফুড়ে এক্সপেরিমেন্ট করছেন, তাদের খবরাখবর মোটামুটি লিখে রাখেন। খুঁটিয়ে লিখতেন কেবল যা তার লক্ষ, সেই সম্পর্কিত তথ্যাবলী।

তাই একদম খেয়াল ছিল না আরেক দিকে–যা নিয়ে গবেষণা করার কথা তিনি স্বপ্নেও। ভাবেননি। বুঝতে পারছেন? জন্মনিয়ন্ত্রণ! এক…দুই…তিন…ব্যস আর না।

দুটি বছর এক নাগাড়ে এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে হিমসিম খেয়ে যাওয়ার পর আনমনে ডাইরির পুরোনো পাতা উলটোতে গিয়ে পুরকায়স্থ দেখলেন–কেয়া বাত। যাদের নিয়ে গবেষণা–সেই মহিলারা তো প্রত্যেকেই মাথায় সিঁদুর হাতে লোহা-শাঁখা পরে বসে আছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েছেলে-বছর বছর বাচ্ছা বিয়োনোর কথা। অথচ মা ষষ্ঠীর দুয়োর মাড়ায়নি কেউ।

কিমাশ্চর্যম। ভীষণ সন্দেহ হল পুরকায়স্থর। স্বামীগুলোকে ধরে দারুণ তদন্ত করে জানলেন, সত্যি সত্যিই কেউ পরমহংস হয়নি। অথচ…

খবরটা যেদিন কাগজে বেরোল, সেইদিনই সন্ধ্যায় কতকগুলো বদমাস লোক হামলা করে গেল তার ল্যাবরেটরিতে। লণ্ডভণ্ড হল কাগজপত্র চুরমার হয়ে গেল গবেষণার যন্ত্রপাতি কিন্তু কিছুতেই বার করা গেল না কোন আগাছাটির দৌলতে এত বড় আবিষ্কার করে ফেলেছেন পুরকায়স্থ।

বৈজ্ঞানিক হলেই যে কঁচাখোলা হতে হবে, এমন কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। পরেশনাথ পুরকায়স্থও ভারী গুছোনো মানুষ। আটঘাট না বেঁধে কাজে হাত দেন না। খবরের কাগজে খবর ছাপিয়ে বাহাদুরি নেওয়ার আগেই নিজের ঘর সামলেছিলেন। আগাছাটির নামধাম নিদর্শন–সব সরিয়ে ফেলেছিলেন।

বদমাস লোকগুলো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল সেয়ানা পাগলের হুঁশিয়ারিতে। বলল–ঠিক হ্যায়। গুলি মারো ফরমুলাকে। চলো হামারা সাথ! আঙুলের ডগা থেকে সাঁড়াশি দিয়ে নখ উপড়ে আনলেই সড়াৎ করে ফরমুলা হড়কে আসবে গলা দিয়ে।

নির্ঘাত কিডন্যাপড হয়ে যেতেন পুরকায়স্থ। কিন্তু ফটোইলেকট্রিক সেল চালিত অদৃশ্য চোখ স্পর্শ করেছিল একজন দুশমন। দুমদাম বোমা ফাটার আওয়াজ হতে লাগল বাড়িময়–ঢং-ঢং ঘন্টা বাজতে লাগল পাগলা ঘন্টির মতো সবই কিন্তু টেপরেকর্ডের খেলা–অদৃশ্য চোখ সংযুক্ত ম্যাগনেটিক টেপ-য়ের কারসাজি।

কিন্তু ভড়কে গেল দুশমনরা। ফস করে রিভলভার বার করে দড়াম করে গুলি চালাল বৈজ্ঞানিকের বাঁ-পায়ে এবং গাড়ি চেপে ভো করে মিলিয়ে গেল লোকজন ছুটে আসার আগেই।

চোট খেয়েও নিপাত্তা হয়ে গেলেন পুরকায়স্থ। পরের দিন থেকে সাংবাদিকরা শকুনির পালের মতো ছিঁড়ে খেতে এল তাঁকে। এসে দেখল ভেঁ ভা। বৈজ্ঞানিক হাওয়া।

মুখ চুন হয়ে গেল খবরের কাগজওয়ালাদের। এমনিতেই খবরের বাজার বড় মন্দা যাচ্ছে। মিথ্যে খবর সত্যির মতো করে ছেপেও চনমন করানো যাচ্ছে না পাঠকদের মস্তিষ্ক। আর এই তরতাজা খবরের পাঁপড় ভাজা উৎসটি কিনা ফুস করে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল বিনা নোটিশে।

কথায় বলে, একশোটা শকুন মরে একজন সাংবাদিক হয়। এত সহজে ছাড়বার পাত্র নয় তারা। খবরটা যে আগে জানতে পারবে–তার বরাতে লক্ষ্মী নাচবে আপনা থেকেই। কাজেই তদন্ত এসে ধরল ইন্দ্রনাথকে। বড়ি খেয়ে ব্যর্থ কন্ট্রোল করতে গিয়ে অনেকরকম বিভ্রাট খাস মার্কিন মুলুকেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পচা বাংলার আদাড়ে-পাঁদাড়ে এমন খাসা গাছড়া আছে কে জানত। প্রায় নিখরচায় স্বদেশি ভেষজে জন্মনিয়ন্ত্রণ কুফল নেই মোটেই।

এ হেন পরেশনাথ পুরকায়স্থকে চোখের সামনে দেখে তাই উত্তেজনায় দম আটকে এল তদন্তের। ইন্দ্রনাথ কিন্তু চোখ কুঁচকে দেখছিল পুরকায়স্থ মশায়ের বাঁ-পা টেনে-টেনে চলার ধরন…একটু পরেই দেখা গেল সে ফিকফিক করে হাসছে।

তদন্ত করল তদন্ত–হাসি কেন?

অভিনয় দেখে।

কার অভিনয়?

প্রাণকুমারের অভিনয়।

বলে হনহন করে এগিয়ে গিয়ে পরেশনাথ পুরকায়স্থর কাঁধে হাত রাখল ইন্দ্রনাথ–অভিনন্দন নিন।

বোঁ করে ঘুরে গিয়ে শুয়োপোকা ভুরুর তাণ্ডব নাচ দেখিয়ে ভস্মলোচন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন পুরকায়স্থ।

কিন্তু ভারী অমায়িক হেসে ইন্দ্রনাথ বললে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছি না– এত সুন্দর অভিনয়..এত নিখুঁত ছদ্মবেশ সাবাস প্ৰাণকুমার।

প্রাণকুমার। শুয়োপোকা ভুরুজোড়া মাথা ঠোকাঠুকি করে স্ট্রেটলাইন হয়ে গেল চক্ষের নিমেষে–আমার নাম পরেশনাথ…

নো ম্যান, নো–নেভার। ওটা আপনার বাইরের খোলস। রিপোর্টার এড়ানোর চমৎকার ফন্দি বানিয়েছেন ভদ্রলোক। পরেশনাথ পুরকায়স্থ আছেন ল্যাবরেটরিতেই। কিন্তু ঘেঁটু পুজোতে ঢোল সানাইয়ের দরকার কী? বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? তবে হ্যাঁ তদন্তকে বেশ ভড়কে দিয়েছেন। আমাকেও দিতেন–যদি না–।

যদি না…কি? পারলেন না তো?

গোয়েন্দা ধাঁধার সমাধান

পরেশনাথ পুরকায়স্থর বাঁ পায়ে গুলি লেগেছিল। সুতরাং বাঁ-দিকের দেহের ভর রাখার জন্যে ছড়িটা তার বাঁ হাতে থাকা উচিত। কিন্তু তিনি প্রমোদ মহলে ঢুকলেন ডানহাতে ছড়ি নিয়ে। সন্দেহ হল সন্দেহবাজ ইন্দ্রনাথের। তারপর পুরস্কার পাওয়া শ্রেষ্ঠ অভিনেতাকে চেনা কি খুব কঠিন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *